আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সালাত আদায়ের পদ্ধতি - পর্ব ২

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম সালাত আদায়ের পদ্ধতি - পর্ব ২ ড. সায়িদ ইব্‌ন আলি ইব্‌ন ওহাফ আল-কাহতানি অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ সম্পাদনা : ড. মো: আব্দুল কাদের ১১. সূরা ফাতেহার পর ফজর ও জুমার দুই রাকাতে এবং জোহর, আসর, মাগরিব ও এশার প্রথম দুই রাকাতে কোন একটি সূরা মিলানো অথবা কোরআনের যেখান থেকে সহজ তিলাওয়াত করা। আর নফলের প্রত্যেক রাকাতে সূরা মিলানো। আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের প্রথম দু’রাকাতে ফাতেহা পড়তেন ও তার সাথে দু’টি সূরা মিলাতেন। প্রথম রাকাআত লম্বা করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআত ছোট করতেন। কখনো কখনো আয়াত শোনাতেন।

আর আসরের প্রথম দু’রাকাতে সূরা ফাতেহা ও দু’টি সূরা মিলাতেন, প্রথম রাকাত তিনি লম্বা করতেন। ফজরের প্রথম রাকা‘ত লম্বা করতেন, দ্বিতীয় রাকা‘ত ছোট করতেন”। [1] এ হাদিসটি এভাবেও বর্ণিত আছে যে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহর ও আসরের প্রথম দু’রাকাতে একটি করে সূরা মিলাতেন, কখনো তিনি আমাদেরকে আয়াত শোনাতেন”। [2] বিশেষ করে জোহরের সালাত সম্পর্কে আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় দু’রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অতিরিক্ত পড়েছেন। আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা জোহর ও আসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামের পরিমাপ করতাম, আমরা অনুমান করলাম জোহরের দু’রাকাতে তার দাঁড়ানোর পরিমাণ সূরা সাজদার অনুরূপ, দ্বিতীয় দু’রাকাতের অনুমান করলাম তার অর্ধেক।

আর আসরের প্রথম দু’রাকাতের পরিমাপ করলাম তারও অর্ধেক”। অন্য শব্দে এরূপ এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের প্রথম দু’রাকাতে ত্রিশ আয়াত পর্যন্ত পড়তেন, দ্বিতীয় দু’রাকাতে পনের আয়াত পর্যন্ত পড়তেন, (প্রত্যেক রাকাতে)। অথবা বলেছেন: তার অর্ধেক। আর আসরের প্রথম দু’রাকাতে পনের আয়াত পরিমাণ পড়তেন, দ্বিতীয় দু’রাকাতে তার অর্ধেক পড়তেন”। [3] এসব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের দ্বিতীয় দু’রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অতিরিক্ত পড়তেন।

[4] সুলাইমান ইব্‌ন ইয়াসার বলেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনার জনৈক ইমামের দিকে ইশারা করে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের সাথে তার সালাতের চেয়ে বেশী মিল কারো সালাতে দেখি না। সুলাইমান বলেন: “আমি তার পিছনে সালাত আদায় করি, সে জোহরের প্রথম দু’রাকাত লম্বা করত ও দ্বিতীয় দু’রাকাত ছোট করত, অনুরূপ আসরের সালাতও ছোট করত, মাগরিবের প্রথম দু’রাকাতে কিসারে মুফাস্‌সাল (মুফাস্‌সালের[5] ছোট সূরাসমূহ) এবং এশার প্রথম দু’রাকাতে আওসাতে মুফাস্‌সাল (মুফাস্‌সালের মধ্যম সূরাসমূহ) পড়ত। সকালে পড়ত তিওয়ালে মুফাস্‌সাল (মুফাস্‌সালের বড় সূরাসমূহ)। [6] অনেক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের সালাত পূর্বে বর্ণিত পরিমাণের চেয়ে অধিক লম্বা করতেন। আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “জোহরের সালাত এতটুকু লম্বা হত যে, কেউ ‘বাকি’তে প্রয়োজন সারতে যেত, অতঃপর অযু করে ফিরে এসে দেখত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাকাতেই আছেন, কারণ তিনি প্রথম রাকাত লম্বা করতেন।

”[7] আবু বারজা আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত শেষ করতেন, অতঃপর লোকেরা ফিরে যাওয়ার সময় একে অপরকে চিনতে পারত। তিনি ফজরের দু’রাকাতে অথবা তার কোন এক রাকাতে ষাট থেকে একশত আয়াত পড়তেন”। [8] আমাদের শায়খ ইমাম ইব্‌ন বায রহ.কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কিরাতের ব্যাপারে বলতে শোনেছি: “ফজরে উত্তম হচ্ছে তিওয়ালে মুফাসসাল পড়া[9], জোহর, আসর ও এশায় আওসাতে মুফাসসাল এবং মাগরিবে কিসারে মুফাসসাল। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এরূপ কিরাত পড়তেন, তবে সফরে অথবা অসুস্থতার কারণে ফজরের সালাতে কিসার সূরা পড়া দোষণীয় নয়, তবে উত্তম হচ্ছে উল্লেখিত পরিমাপ অনুযায়ী সালাত পড়া। দলিল সুলাইমান ইব্‌ন ইয়াসার সূত্রে আবু হুরায়ারা[10] থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস”।

[11] ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম রহ. ফাতেহার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিরাতের ব্যাপারে বলেন: “তিনি সূরা ফাতেহা শেষ করে অন্য সূরা আরম্ভ করতেন, অধিকাংশ সময় দীর্ঘ কিরাত পড়তেন, তবে কোন কারণে যেমন সফর অথবা অন্য প্রয়োজনে ছোট করতেন, তবে সাধারণত তিনি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতেন”। [12] আমি বলি: কিরাতের ব্যাপারে সকল সময়, সকল অবস্থা ও সর্বক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা উত্তম। [13] ১২. সম্পূর্ণ কিরাত শেষ করে শ্বাষ ফিরে আসা পর্যন্ত সামান্য বিরতি নেবে যেন রুকুর সাথে কিরাত মিলে না যায়, ফাতেহার পূর্বের বিরতি এমন নয়, কারণ সেখানে সালাত আরম্ভের দোয়া পড়বে, তাই সেখানে দোয়া পরিমাণ বিরতি নেবে। হাসানের সূত্রে সামুরার সনদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত: «أنه كان يسكت سكتتين: إذا استفتح الصلاة وإذا فرغ من القراءة كلها». “তিনি দু’টি বিরতি নিতেন, একটি যখন সালাত আরম্ভ করতেন অপরটি যখন তিনি সম্পূর্ণ কিরাত থেকে ফারেগ হতেন”। [14] ইমাম তিরমিযি বলেন: “এটাই একাধিক আলেমের অভিমত, তারা মুস্তাহাব মনে করেন ইমাম সালাত আরাম্ভ করে ও কিরাত শেষ করে সামান্য বিরতি নেবে।

ইমাম আহমদ, ইসহাক ও আমাদের সাথীবৃন্দ অনুরূপই বলেছেন। ১৩. কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উভয় হাত উঠিয়ে রুকু করবে, মাথা পিঠ বরাবর রাখবে, উভয় হাত হাটুর উপরে রাখবে ও আঙুলগুলো ফাঁকা রাখবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন: ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱرۡكَعُواْ وَٱسۡجُدُواْۤ وَٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمۡ وَٱفۡعَلُواْ ٱلۡخَيۡرَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ۩ ٧٧﴾ [الحج:77 ] “হে মুমিনগণ, তোমরা রুক কর, সিজদা কর, তোমাদের রবের ইবাদাত কর এবং ভাল কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে”। [15] আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারী ব্যক্তির হাদিসে রয়েছে:«ثم اركع حتى تطمئنَّ راكعًا» “অতঃপর তুমি রুকু কর এবং রুকু অবস্থায় স্থির হও”। [16] আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «كان رسول الله ﷺ إذا قام إلى الصلاة يكبر حين يقوم، ثم يكبر حين يركع» ، وفي لفظ: «إنه كان يصلي بهم فيكبر كلما خفض ورفع فإذا انصرف قال: إني لأشبهكم صلاة برسول الله ﷺ»؛ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন তাকবির বলতেন, অতঃপর তাকবির বলতেন যখন রুকু করতেন”।

[17] এভাবেও বর্ণিত আছে যে, “তিনি তাদের সাথে সালাত আদায় করতেন এবং প্রত্যেক উঠা ও নামার সময় তাকবির বলতেন, অতঃপর বলতেন তোমাদের মধ্যে আমার সালাতই রাসূলের সালাতের সাথে বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ”। [18] আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমর থেকে বর্ণিত: «كان يرفع يديه حذو منكبيه إذا افتتح الصلاة، وإذا كبر للركوع...» “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আরম্ভ করতেন ও যখন রুকু করতেন উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন...”[19] «كان إذا كبر رفع يديه حتى يحاذي بهما أذنيه وإذا ركع رفع يديه حتى يحاذي بهما أذنيه»؛ মালেক ইব্‌ন হুয়াইরিস থেকে বর্ণিত: “যখন তিনি তাকবির বলতেন, উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন এবং যখন রুকু করতেন উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন”। [20] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত: «وكان إذا ركع لم يشخص رأسه ولم يصوِّبه ولكن بين ذلك»؛ “যখন তিনি রুকু করতেন মাথা উঁচু করে রাখতেন না আবার তাক করেও রাখতেন না, বরং মধ্যম পন্থায় রাখতেন”। [21] আবু হুমাইদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু কতক সাহাবিকে বলেন: «أنا كنت أحفظكم لصلاة رسول الله ﷺ، رأيته إذا كبر جعل يديه حذو منكبيه، وإذا ركع أمكن يديه من ركبتيه [وفرج بين أصابعه] ثم هصرظهره...». وفي لفظ: «ثم ركع فوضع يديه على ركبتيه،كأنه قابضٌ عليهما، ووتَّريديه فتجافى عن جنبيه..». “তোমাদের চেয়ে আমিই রাসূলের সালাত বিশুদ্ধভাবে সংরক্ষণ করেছি, আমি তাকে দেখেছি যখন তিনি তাকবির বলতেন উভয় হাত কাঁধ বরাবর করতেন, যখন তিনি রুকু করতেন উভয় হাত দ্বারা হাটু ধরতেন, (আঙ্গুলগুলো ফাঁকা রাখতেন) অতঃপর মাটির দিকে পিঠ ঝুকান...”। [22] এভাবেও বর্ণিত আছে, “অতঃপর তিনি রুকু করে উভয় হাত হাটুর উপর এমনভাবে রাখেন, যেন তিনি হাটুদ্বয় পাকড়ে ছিলেন এবং উভয় হাত দুই প্বার্শ থেকে পৃথক রাখেন...”[23] রিফাআ ইব্‌ন রাফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: «وإذا ركعت فضع راحتيك على ركبتيك وامدد ظهرك»، “যখন তুমি রুকু কর, তোমার হাতের কব্জিদ্বয় হাটুর উপর রাখ এবং পিঠ লম্বা কর”।

[24] ওবেসা ইব্‌ন মাবাদ বলেন: رأيت رسول الله ﷺ يصل، فكان إذا ركع سوَّى ظهره حتى لو صُبَّ عليه الماء لاستقرّ». “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাত আদায় করতে দেখেছি, তিনি যখন রুকু করতেন পিঠ বরাবর রাখতেন, এমনকি যদি তার উপর পানি রাখা হত তাও স্থির থাকত”। [25] রুকুতে স্থির অবস্থান করবে। কারণ হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু জনৈক ব্যক্তিকে দেখে বলেন, যে রুকু সেজদা ঠিকভাবে করছিল না: «ما صلَّيتَ، ولو مُتَّ مُتَّ على غير الفطرة التي فطر الله [عليها] محمدًا ﷺ»، “তুমি সালাত আদায় করনি, যদি তুমি মারা যাও তাহলে তুমি সে তরিকার উপরই মারা যাবে, যার উপর মুহাম্মদকে সৃষ্টি করা হয়নি”। [26] বারা ইব্‌ন আযেব থেকে বর্ণিত: «كان ركوع النبي ﷺ، وسجوده، وقعوده بين السجدتين، وإذا رفع رأسه من الركوع ما خلا القيام والقعود قريبًا من السواء». “রাসূলের রুকু, সেজদা ও দুই সেজদার মাঝখানে বসা এবং রুকু থেকে উঠে সোজা দাঁড়ানো সব সমপরিমাণের ছিল, কিয়াম ও বৈঠক ব্যতীত”। [27] ১৪. রুকুতে বলা: «سبحان ربي العظيم» তিনবার বলা উত্তম।

হুজায়ফাতুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু বলতেন: «سبحان ربي العظيم» এবং সেজদায় বলতেন[28]: «سبحان ربي الأعلى» অপর বর্ণনায় আছে: «سبحان ربي العظيم»তিনবার এবং সেজদায় বলবে: «سبحان ربي الأعلى» তিনবার। [29] এ ছাড়া অন্যান্য দোয়া পড়ারও অনুমতি রয়েছে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, যেমন: এক. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদিস, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সেজদায় বেশী বেশী বলতেন:[30] سبحانك اللهم ربنا وبحمدك، اللهم اغفر لي». দুই. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রুকতে বলতেন:[31] «سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ، ربُّ الملائكة والروح». তিন. আউফ ইব্‌ন মালেক আশজায়ি থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে বলতেন: «سبحان ذي الجبروت والملكوت والكبرياء والعظمة»، অতঃপর তিনি দাঁড়ানোর সমপরিমাণ সেজদা করতেন এবং সেজদায় অনুরূপ বলতেন। [32] চার. আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু করতেন বলতেন:[33] «اللهم لك ركعتُ، وبك آمنتُ، ولك أسلمتُ، خشع لك سمعي وبصري ومُخّي وعظمي وعَصَبي». নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সেজদায় কুরআন থেকে নিষেধ করে বলেন: «ألا وإني نُهيت أن أقرأ القرآن راكعًا أو ساجدًا، وأما الركوع فعظِّموا فيه الرب U، وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء فقَمِنٌ أن يُستجاب لكم». “আমি তোমাদেরকে রুকু ও সেজদা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিষেধ করছি, তোমরা রুকুতে আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা কর এবং সেজদায় বেশী বেশী দো‘আ কর। এটা দো‘আ কবুলের উপযুক্ত সময়”। [34] ১৫. রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় উভয় কাঁধ অথবা উভয় কান পর্যন্ত উভয় হাত উঠিয়ে বলা: سمع الله لمن حمده ইমাম কিংবা মুনফারিদ উভয়ের বলা।

অতঃপর উভয়ের বলা: «ربنا ولك الحمد»؛ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম «سمع الله لمن حمده» বলে, বলতেন[35]: «اللهم ربنا ولك الحمد».যদি মুক্তাদি হয়, তাহলে রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় বলবে: «ربنا ولك الحمد»؛ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন ইমাম سمع الله لمن حمده বলে, তোমরা বলবে: اللهم ربَّنا لك الحمد؛ কারণ, যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করে দেয়া হবে। [36] اللهم ربَّنا لك الحمد চারভাবে বর্ণিত আছে: এক প্রকার: «ربنا لك الحمد» আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়িয়ে তাকবির বলতেন, অতঃপর তাকবির বলতেন যখন তিনি রুকু করতেন। অতঃপর বলতেন: سمع الله لمن حمده যখন তিনি রুকু থেকে পিঠ সোজা করতেন, অতঃপর তিনি দাঁড়িয় বলতেন[37]: «ربنا لك الحمد». দ্বিতীয় প্রকার: «ربنا ولك الحمد»؛ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: «إنما جُعل الإمام ليُؤتمَّ به، فإذا صلى قائمًا فصلوا قيامًا، وإذا ركع فاركعوا، وإذا رفع فارفعوا، وإذا سجد فاسجدوا، وإذا قال سمع الله لمن حمده فقولوا: ربنا ولك الحمد». “আনুগত্য করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যখন সে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর, যখন সে রুকু করে তোমরা রুকু কর, যখন সে উঠে তোমরাও উঠ, যখন সে সেজদা করে তোমরাও সেজদা কর, যখন সে বলে: سمع الله لمن حمده তোমরা বল[38]: ربنا ولك الحمد». তৃতীয় প্রকার: اللهم ربَّنا لك الحمد আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন ইমাম বলে: سمع الله لمن حمده তোমরা বল: اللهم ربَّنا لك الحمد، কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করে দেয়া হবে[39]। চতুর্থ প্রকার: «اللهم ربَّنا ولك الحمد»؛ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বলতেন: سمع الله لمن حمده، অতঃপর বলতেন:[40] «اللهم ربنا ولك الحمد»، সবগুলো যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তাই কখনো এটা কখনো ওটা পড়া উত্তম। ইমাম, মুক্তাদি ও একাকি সালাত আদায়কারীদের জন্য উত্তম হচ্ছে: «ربنا ولك الحمد» পড়ার পর, অতিরিক্ত বলা: «حمدًا كثيرًا طيبًا مُباركًا فيه»[41] «ملء السموات،وملء الأرض،[وما بينهما] وملء ما شئت من شيء بعد،أهل الثناء والمجد، أحقّ ما قال العبد،وكلنا لك عبد،اللهم لا مانع لما أعطيت،ولا مُعطي لما منعت،ولا ينفع ذا الجد منك الجد» «اللهم طهِّرْني بالثلج، والبَرَدِ، والماء البارد،اللهم طهِّرْني من الذنوب والخطايا كما يُنَقَّى الثوبُ الأبيضُ من الوسخ»[42] «لربي الحمد»؛ “লি রাব্বিল হামদ” বারবার বলবে।

ইমাম, মুক্তাদি ও একাকি সালাত আদায়কারীর জন্য উত্তম হচ্ছে বুকে ডান হাতের উপর বাম হাত রাখা, যেরূপ রুকুর পূর্বে রেখেছিল। কারণ ওয়ায়েল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: «رأيت رسول الله ﷺ إذا كان قائمًا في الصلاة قبض بيمينه على شماله» “আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়ানো থাকতেন, তখন তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাত পাকড়াও করতেন”। [43] রুকু থেকে উঠে স্থির হয়ে দাঁড়াবে। সাবেত থেকে বর্ণিত, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি তোমাদের সাথে সেরূপ সালাত আদায় করতে কার্পণ্য করব না, যেরূপ আমাদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছেন। তিনি বলেন: আনাস এমন কিছু কাজ করতেন, যা আমি তোমাদেরকে করতে দেখি না, তিনি যখন রুকু থেকে উঠতেন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, কেউ বলতে পারত তিনি ভুলে গেছেন, অনুরূপ সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে তিনি সোজা বসতেন, কেউ বলতে পারত তিনি ভুলে গেছেন।

[44] এসব স্থানে উল্লেখিত জিকির ব্যতীত অন্যান্য অনুমোদিত জিকির পড়াও বৈধ। ১৬. তাকবির বলে সেজদা করবে, সম্ভব হলে উভয় হাত হাটুর উপর রেখে, যদি কষ্ট হয় তাহলে হাটুর আগে হাত রাখবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱرۡكَعُواْ وَٱسۡجُدُواْۤ وَٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمۡ وَٱفۡعَلُواْ ٱلۡخَيۡرَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ۩ ٧٧﴾[الحج:77 ] “হে মুমিনগণ, তোমরা রুক কর, সিজদা কর, তোমাদের রবের ইবাদাত কর এবং ভাল কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে”। [45] সালাতে ভুলকারীর হাদিসে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত: “অতঃপর সেজদা কর, সেজদায় একেবারে স্থির হও”। [46] তার থেকে অপর হাদিসে রয়েছে: “সেজদার জন্য যখন ঝুকবে, তাকবির বলবে”।

[47] ওয়ায়েল ইব্‌ন হুজরের হাদিসে রয়েছে: “আমি দেখেছি, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা করেন, উভয় হাতের পূর্বে তিনি হাটু রেখেছেন, আর তার উঠার সময় হাটুর পূর্বে হাত উঠিয়েছেন”। [48] হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামূখী রাখবে। আবু হুমাইদ সায়েদি থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে: «فإذا سجد وضع يديه غير مفترشٍ ولا قابضهما، واستقبل بأطراف أصابع رجليه القبلة» “যখন সেজদা করবে উভয় হাতকে বিছিয়ে রাখবে না, আবার মুষ্টিবদ্ধ করেও রাখবে না, পাযের আঙ্গুলগুলো কিবলামূখী করে রাখবে”। [49] হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে কিবলামুখী রাখবে। কারণ আলকামা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সেজদা করতেন, তখন তিনি আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখতেন”।

[50] আবু হুমাইদের হাদিসে রয়েছে: “হাতের আঙ্গুলগুলো কিবলামূখী রাখবে”। [51] পায়ের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখবে, কারণ আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে: “অতঃপর দু’বাহুকে পার্শ্ব থেকে পৃথক রাখবে ও পায়ের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখবে”। [52] সাত অঙ্গের দ্বারা সেজদা করবে, কপালের সাথে নাক, দু’হাত, দু’হাটু, উভয় পায়ের আঙ্গুলের ভেতরের অংশ। ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «أمرت أن أسجد على سبعة أعظم: على الجبهة – وأشار بيده على أنفه – واليدين، والركبتين، وأطراف القدمين، ولا نكفُت الثياب والشعر» وفي لفظ لمسلم: «ولا أكفّ ثوبًا ولا شعرًا» “আমাকে সাত অঙ্গের উপর সেজদা করার নিদের্শ দেয়া হয়েছে: কপাল- এর সাথে তিনি ইশারা করে নাকের দিকে ঈঙ্গিত করেছেন- দু’হাত, দু’হাটু, দু’পায়ের সম্মুখভাগ, আর আমরা কাপড় ও চুল আটকে রাখব না”। মুসলিমের বর্ণনায় আছে: “আমি যেন কাপড় ও চুল আটকে না রাখি”।

[53] পার্শ্বদ্বয় থেকে বাহুদ্বয় পৃথক রাখবে। কারণ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মালেক ইব্‌ন বুহায়না বলেন, «كان إذا صلَّى فرَّج بين يديه حتى يبدو بياض إبطيه» “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতেন, তখন উভয় হাত এমনভাবে পৃথক রাখতেন যে, তার বোগল পর্যন্ত দেখা যেত”। [54] পেট রান থেকে ও রান পায়ের গোছা থেকে পৃথক রাখবে এবং উভয় রানের মধ্যে ফাঁকা রাখবে। আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: “যখন সেজদা করে তখন যেন উভয় রান পৃথক রাখে, পেটের ভর যেন রানের উপর না দেয়”। [55] উভয় হাতের কব্জি কাঁধ বরাবর রাখবে।

কারণ আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: “অতঃপর তিনি সেজদা করেছেন, যমীনের উপর নাক ও কপাল স্থির করেছেন, উভয় পার্শ্ব থেকে হাত পৃথক রেখেছেন ও উভয় হাতের কব্জিকে কাঁধ বরাবর রেখেছেন”। [56] অথবা উভয় হাত কান বরাবর রাখবে। যেমন ওয়ায়েল ইব্‌ন হুজরের হাদিসে এসেছে। “অতঃপর তিনি সেজদা করেছেন এবং উভয় হাতের কব্জি কান বরাবর রেখেছেন”। [57] এটা মূলত বারার হাদিসের অনুরূপ, যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সেজদার সময় রাসূল কোথায় চেহারা রাখতেন? তিনি বলেছিলেন: “দুই হাতের কব্জির মাঝখানে”।

[58] উভয় হাতের বাহু যমীন থেকে আলাদা রাখবে। কারণ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা সেজদার মধ্যে স্থির হও, তোমাদের কেউ তার বাহুদ্বয় কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে রাখবে না”। [59] বারা থেকে একটি মরফু হাদিসে রয়েছে: “যখন তুমি সেজদা কর, তোমার হাত মাটিতে রাখ ও বাহুদ্বয় উপরে রাখ”। [60] উভয় পা মিলিয়ে রাখবে। আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: “আমি তাকে সেজদা অবস্থায় পেলাম, তার দু’নো গোড়ালি মিলানো ছিল এবং পায়ের আঙ্গুলগুলো ছিল কিবলামুখী”।

[61] উভয় পা খাড়া করে রাখবে। আয়েশার হাদিসে রয়েছে: “আমি তাকে তালাশ করলাম, আমার হাত তার পায়ের উপর পরল, তিনি তখন সেজদায় ছিলেন, তার পাগুলো ছিল খাড়া”। [62] ১৭. সেজদায় বলবে: «سبحان ربي الأعلى» তিনবার বলা উত্তম। যেমন হুজায়ফার হাদিসে এসেছে। ইচ্ছা করলে অন্যান্য হাদিসে বর্ণিত দোয়াও পড়তে পারে।

যেমন: এক. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিস মোতাবিক[63]: «سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفر لي» দুই. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিস মোতাবেক[64]: «سُبُّوحٌ، قُدُّوسٌ، ربُّ الملائكة والروح»؛ তিন[65]. «سبحان ذي الجبروت، والملكوت، والكبرياء، والعظمة». চার. আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস মোতাবেক[66]: «اللهم لك سجدتُ، وبك آمنتُ، ولك أسلمتُ،سجد وجهي للذي خلقه وصوَّره،وشق سمعه وبصره،تبارك الله أحسن الخالقين»؛ পাঁচ. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিস মোতাবেক[67]: «اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك، وبمعافاتك من عقوبتك،وأعوذ بك منك،لا أحصي ثناءً عليك أنت كما أثنيت على نفسك»؛ ছয়. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস মোতাবেক[68]: «اللهم اغفر لي ذنبي كله، دقّه وجلّه، وأوّله وآخره، وعلانيته وسرّه» ؛ সেজদায় খুব বেশী দো‘আ করবে এবং আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করবে। হোক সালাত ফরজ কিংবা নফল। কারণ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “সেজদা অবস্থায় বান্দাগণ তার রবের অতি নিকটবর্তী হয়, অতএব তোমরা সেখানে খুব বেশী করে দোয়া কর”। [69] ইব্‌ন আব্বাসের হাদিসে আছে: “আর তোমরা রুকুতে আল্লাহর খুব বড়ত্ব বর্ণনা কর এবং সেজদায় খুব দো‘আ কর, তাহলে তোমাদের দো‘আ কবুল করা হবে”। [70] ১৮. তাকবির বলে সেজদা থেকে মাথা উঠাবে এবং স্থির হয়ে বসবে।

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারীর হাদিসে আছে: “অতঃপর তুমি মাথা উঠিয়ে স্থির হয়ে বস”। [71] বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসবে, ডান পা খাড়া রাখবে এবং আঙ্গুলগুলো কিবলার দিকে রাখবে। কারণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: “তিনি বাম পা বিছিয়ে রাখতেন ও ডান পা খাড়া রাখতেন”। [72] উভয় হাত রানের উপর রাখবে। কারণ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জুবায়ের তার পিতা থেকে মারফূ সনদে বর্ণনা করেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বসতেন তখন তিনি দো‘আ করতেন এবং ডান হাত ডান রানের উপর ও বাম হাত বাম রানের রাখতেন”।

[73] অথবা উভয় হাত হাটুর উপর রাখবে। কারণ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন, তখন তিনি তার দু’হাত হাটুর উপরে রাখতেন”। [74] অথবা ডান হাত ডান রানের উপর, বাম হাত বাম রানের উপর এবং বাম কব্জি দ্বারা হাটু পাকড়াও করে রাখবে। যেমন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জুবায়ের থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে। মুদ্দাকথা হাত রাখার তিনটি পদ্ধতি জানা গেল: এক. ডান হাত ডান রানের উপর ও বাম হাত বাম রানের উপর।

দুই. ডান হাত ডান হাটুর উপর ও বাম হাত বাম হাটুর উপর। তিন. ডান কব্জি ডান রানের উপর ও বাম কব্জি বাম রানের উপর এবং বাম কব্জি দ্বারা হাটু আঁকড়ে ধরবে। [75] উভয় হাতের কব্জি রাখার পদ্ধতি: মুসল্লি তার বাম হাত বিছিয়ে রাখবে। যেমন ইব্‌ন ওমর থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: “তার বাম হাত ছিল হাটুর উপর বিছানো”। [76] আর উভয় বাহু রানের উপর রাখবে।

কারণ ওয়ায়েল ইব্‌ন হুজরের হাদিসে আছে: “তিনি তার দু’বাহু রানের উপর রেখেছেন”। [77] আর ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি ও অনামিকা দ্বারা মুষ্ঠি বানাবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা আঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানাবে, অতঃপর ডান হাতের কব্জি ডান রানের উপর রাখবে। ওয়ায়েল ইব্‌ন হুজরের হাদিসে আছে: “অতঃপর কিবলা মুখী হয়ে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠান এবং ডান হাত দিয়ে বাম হাত পাকড়াও করেন। যখন তিনি রুকু করার ইচ্ছা করেন, অনুরূপ করেন এবং উভয় হাত হাটুর উপর রাখেন, যখন তিনি রুকু থেকে নিজ মাথা উঠান অনুরূপ হাত তোলেন। যখন তিনি সেজদা করেন, তখনও তিনি অনুরূপ করেন।

অতঃপর বাম পা বিছিয়ে বসেন এবং তার বাম হাত বাম রানের উপর রাখেন। আর ডান হাতের কব্জি রাখেন ডান রানের উপর। দুই আঙ্গুল দ্বারা হালকা বানান। আমি তাকে বলতে দেখলাম: “এরূপ”, ‘বিশর’ (বর্ণনাকারী) বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানিয়ে ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করলেন”। [78] ইমাম ইব্‌ন কাইয়ূম এটাই গ্রহণ করেছেন যে, মুসল্লি দুই সেজদার মাঝখানে অনুরূপ করবে”।

[79] ১৯. দুই সেজদার মাঝখানে বলবে: «ربِّ اغفرْ لي، ربِّ اغفر لي»؛ হুজায়ফা থেকে একটি মারফূ হাদিসে বর্ণিত: “তিনি দুই সেজদার মাঝখানে সেজদার সমান বসতেন এবং বলতেন[80]: «ربّ اغفر لي رب اغفر لي» এর চেয়ে অধিক পড়ারও অনুমতি রয়েছে, যেমন: «اللهم اغفر لي، وارحمني [وعافني، واهدني] واجبرني، وارزقني، وارفعني»؛ কারণ ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে বলতেন[81]: «اللهم اغفر لي وارحمني وعافني واهدني وارزقني» ، ইব্‌ন মাজাহ নিম্নের শব্দে বর্ণনা করেছেন[82]: «ربِّ اغفر لي وارحمني، واجبرني، وارزقني، وارفعني». নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রুকনটি সেজদা পরিমাণ লম্বা করতেন। যেমন বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুকু, সেজদা, দুই সেজদার মাঝখানে বসা এবং রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে স্থির থাকা সমান ছিল, শুধু কিয়াম ও বৈঠক ব্যতীত”। [83] ২০. তাকবির বলে দ্বিতীয় সেজদা করবে, যেমন প্রথম সেজদাতে করেছিল। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারীর হাদিসে রয়েছে: “অতঃপর তুমি সেজদা কর, সেজদা রত অবস্থায় স্থির হও, অতঃপর মাথা উঠিয়ে স্থির চিত্তে বস, অতঃপর সেজদা কর এবং স্থির হও। অতঃপর তোমার অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাক”।

[84] তার থেকে অপর হাদিসে আছে: “অতঃপর যখন সেজদায় ঝুকবে তাকবির বলবে, অতঃপর সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে তাকবির বলবে। অতঃপর সেজদার সময় তাকবির বলবে। অতঃপর মাথা উঠানোর সময় তাকবির বলবে, অতঃপর অনুরূপ করতে থাকবে অবশিষ্ট সালাতে এবং যখন দু’রাকাত শেষে বৈঠকের পর দাঁড়াবে তাকবির বলবে”। [85] -------------------------------------------------------------------------------- [1] বুখারি: (৭৫৯), মুসলিম: (৪৫১) [2] বুখারি: (৭৬২) [3] মুসলিম: (৪৫২), আহমদ: (৩/৮৫), বন্ধনীর অংশ মুসনাদে আহমদ থেকে নেয়া: (৩/৮৫) [4] দেখুন: নাইলুল আওতার: (১/৮০২) [5] সূরা ক্বাফ বা হুজুরাত থেকে সূরা নাস পর্যন্ত সূরাগুলোকে মুফাস্‌সাল বলে। —সম্পাদক [6] নাসায়ি: (৯৮৩), আহমদ: (২/৩২৯), বুলুগুল মারাম ও ফাতহুল বারিতে এ সনদটি ইব্‌ন হাজার সহিহ বলেছেন।

দেখুন: নাইলুল আওতার: (১/৮১৩), ইমাম ইব্‌ন বাজও এর সনদটি সহিহ বলেছেন, রওজুল মুরবি: (২/৩৪), সহিহ সুনানে নাসায়িতে আলবানী হাদিসটি সহিহ বলেছেন: (১/২১২), হাদিস নং: (৯৩৯) [7] মুসলিম: (৪৫৪) [8] বুখারি: (৫৪৭), মুসলিম: (৬৪৭) [9] মুফাসসাল হচ্ছে সূরা কাফ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত। তিওয়ালে মুফাসসাল হচ্ছে সূরা কাফ থেকে সূরা নাবা পর্যন্ত, আওসাত হচ্ছে নাবা থেকে দোহা পর্যন্ত, তারপর থেকে শেষ পর্যন্ত কিসার। দেখুন: হাশিয়াহ রওজুল মুরবি লি ইব্‌ন কাসেম: (২/৩৪), তাফসিরে ইব্‌ন কাসির, তিনি বলেন: “বিশুদ্ধ মতে এটাই মুফাসসালের আরম্ভ, কেউ বলেছেন সূরা হুজুরাত: (৪/২২১) [10] নাসায়ি: (৯৮৩), আহমদ: (২/৩২৯) [11] এ কথা আমি শায়খ ইব্‌ন বাযের মুখে ‘রওজুল মুরবি’র ব্যাখ্যার সময় বলতে শোনেছি: (২/৩৪) [12] যাদুল মায়াদ: (১/২০৯) [13] বিভিন্ন সালাতে পঠিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক কিরাত এখানে আমরা উল্লেখ করছি: এক. ফজরের সালাতে তিনি পড়েছেন: সূরা মুরসালাত, বুখারি: (৭৬৩), মুসলিম: (৪৬২), সূরা আরাফ, বুখারি: (৭৬৪), সূরা তুর, বুখারি: (৭৬৫), মুসলিম: (৪৬৩), সূরা দুখান, নাসায়ি: (৯৮৮), কিসারে মুফাস্‌সাল, নাসায়ি: (৯৮৩), আলবানী বলেছেন, ইমাম তাবরানি তার ‘কাবির’ গ্রন্থে একটি সহিহ সনদে উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’রাকাতে সূরা আনফাল পড়েছেন। সিফাতুস সালাত: (১১৫) দুই. এশার সালাতে তিনি পড়েছেন: সূরা ইনশিকাক, বুখারি: (৭৬৬), সূরা আত্-তিন, বুখারি: (৭৬৭), মুসলিম: (৪৬৪), নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজকে এশার সালাতে পড়ার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সূরা আলা, সূরা লাইল, সূরা শামস, সূরা দোহা ও অনুরূপ সূরাসমূহ, মুসলিম: (৪৬৫) তিন. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাতে অথবা এক রাকাতে ষাট থেকে একশত আয়াত পর্যন্ত পড়তেন, বুখারি: (৫৪৭), মুসলিম: (৬৪৭), সূরা মুমিনুন পড়েছেন, বুখারি কিতাবুল আযান, মুসলিম: (৪৫৫), সূরা কাফ, মুসলিম: (৪৫৭), সূরা তাকবির, মুসলিম: (৪৫৬), সূরা রূম, আহমদ: (৩/৪৭২), নাসায়ি: (২/১৫৬), সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়েছেন, নাসায়ি: (৯৫২), বিদায় হজে তাওয়াফে বিদায় তিনি ফজরের সালাতে সূরা তুর পড়েছেন, বুখারি। সূরা ওয়াকিয়া ও অনুরূপ সূরা পাঠ করেছেন, সহিহ ইব্‌ন খুজাইমাহ: (১/২৬৫), জুমার দিন ফজরের সালাতে সূরা আলিফ লাম মিম সাজদাহ ও সূরা দাহার পড়তেন, বুখারি: (৮৯১), মুসলিম: (৮৭৯) চার. জোহরের সালাতে তিনি পড়তেন, সূরা লাইল, মুসলিম: (৪৫৯), সূরা আলা, মুসলিম: (৪৬০), সূরা তারেক, সূরা বুরুজ ও অনুরূপ সূরা, আবু দাউদ: (৮০৫), তিরমিযি: (৩০৭), নাসায়ি: (২/১৬৬), জুমার সালাতে সূরা জুমা ও সূরা মুনাফিকুন পড়তেন, মুসলিম: (৮৭৯), অথবা সূরা আলা ও গাশিয়াহ, মুসলিম: (৮৭৮), অথবা সূরা জুমা ও গাশিয়াহ, মুসলিম: (৮৭৮) পাঁচ. আসরের সালাতে তিনি পড়তেন, সূরা তারেক, সূরা বুরুজ ও অনুরূপ সূরা, আবু দাউদ: (৮০৫), তিরমিজি: (৩০৭), নাসায়ি: (৯৭৯) ছয়. ঈদের সালাতসমূহে তিনি পড়তেন, সূরা কাফ ও সূরা কামার, মুসলিম: (৮৯১), অথবা সূরা আলা ও গাশিয়াহ, মুসলিম: (৮৭৮), এ হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত, এতদ সত্বেও তিনি হালকা সালাত আয়াদের নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ “মুসল্লিদের মাঝে ছোট, বড়, দুর্বল, অসুস্থ ও ব্যস্ত লোক রয়েছে”।

মুসলিম: (৪৬৬), “তবে যখন একাকি সালাত পড়বে, তখন যেভাবে ইচ্ছা পড়বে”। মুসলিম: (৪৬৭), নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি সালাতে থেকে তা লম্বা করতে ইচ্ছা করি, কিন্তু বাচ্চার কান্না শোনে তার মায়ের কষ্টের কথা মনে করে হালকা করে ফেলি”। মুসলিম: (৪৭০), হালকা করা একটি তুলনামূলক বিষয়, এর পরিমাপ করতে হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের কর্ম থেকেই, মুক্তাদিদের প্রবৃত্তির দিকে লক্ষ করে নয়, তার আদর্শই এ ব্যাপারে ফয়সালাকারী, যেমন নাসায়িতে ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হালকা সালাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন, তিনি আমাদের সাথে সূরা সাফফাত দ্বারা ইমামতি করতেন”। নাসায়ি: (২/৯৫), হাদিস নং: (৮২৬), ইব্‌ন কাইয়ূম রহ. বলেন: “সূরা সাফফাত পড়া হালকা সালাতের অন্তর্ভু্ত, যে হালকা সালাত তাকে পড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আল্লাহ ভাল জানেন”। যাদুল মা‘আদ: (১/২১৪), “তিনি প্রত্যেক সালাতের প্রথম দু’রাকাত লম্বা করতেন ও শেষের দু’রাকাত ছোট করতেন”।

বুখারি: (৭৭০), মুসলিম: (৪৫৩) [14] আবু দাউদ: (৭৭৮), তিরমি: (২৫১), তিনি হাদিসটি হাসান বলেছেন। আহমদ: (৫/২৩), ইমাম তিরমিযি বলেন: মুহাম্মদ বলেছেন: আলি ইব্‌ন আব্দুল্লাহ বলেছে: “সামুরা থেকে বর্ণিত হাসানের হাদিস সহিহ, হাসান থেকে শ্রবণ করেছে”। (১/৩৪২) [15] সূরা হাজ: (৭৭) [16] বুখারি: (৭৫৭), মুসলিম: (৩৯৭) [17] বুখারি: (৭৮৯), মুসলিম: (৩৯২) [18] বুখারি: (৭৮৫), মুসলিম: (৩৯২) [19] বুখারি: (৭৩৫), মুসলিম: (৩৯০) [20] বুখারি: (৭৩৭), মুসলিম: (৩৯১) [21] মুসলিম: (৪৯৮) [22] বুখারি: (৮২৮), বন্ধরি অংশ আবু দাউদ: (৭৩০ ও ৭৩১) থেকে সংগৃহিত। আলবানী হাদিসটি সহিহ বলেছেন: সহিহ আবু দাউদ: (১/১৪১) [23] আবু দাউদ: (৭৩৪), সহিহ আবু দাউদ লিল আলবানী: (১/১৪১), তিরমিজি: (২৬০), সহিহ সুনানে তিরমিজি লিল আলবানী: (১/৮৩) [24] আবু দাউদ: (৮৫৯), সহিহ সুনানে আবু দাউদ: (৭৬৫), (১/১৬২) [25] সুনানে ইব্‌ন মাজাহ: (৮৭২), মাজমাউ‘য যাওয়াদে: (২/১২৩) [26] বুখারি: (৭৯১), (৩৮৯), (৮০৮), [27] বুখারি: (৭৯২), (৮২০), (৮০১), (৮২০), মুসলিম: (৪৭১) [28] মুসলিম: (৭৭২), আবু দাউদ: (৮৭১) [29] ইব্‌ন মাজাহ: (৮৮৮), সিফাতুস সালাত: (১৩৬), সহিহ ইব্‌ন মাজাহ: (১/১৪৭) [30] বুখারি: (৭৯৪), (৮১৭), মুসলিম: (৪৮৪) [31] মুসলিম: (৪৮৭) [32] আবু দাউদ: (৮৮৩), নাসায়ি: (১০৪৯), সহিহ সুনানে আবু দাউদ: (১/১৬৬) [33] মুসলিম: (৭৭১) [34] মুসলিম: (৪৭৯) [35] বুখারি: (৭৯৫) [36] বুখারি: (৭৯৬), মুসলিম: (৪০৯) [37] বুখারি: (৭৮৯), মুসলিম: (৩৯২) [38] বুখারি: (৭৮৯), ম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।