আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সনাতন ধর্ম (হিন্দু ) ও ইসলাম এর মধ্যে যোগ সম্পর্ক-৫ (কুরআনে হিন্দু জাতি )

"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
অনেক নিষ্ঠাবান হিন্দু, যারা ইসলামকে পছন্দ করেন এবং কুরআন শরীফের মহত্বকে স্বীকার করেন এবং অভিযোগ করেন যে, কুরআনে অন্যান্য বহু জাতির কথা আছে, কিন্তু আমাদের হিন্দু জাতির কোন উল্লেখ নেই । একথার জওয়াব দিতে গিয়ে আমরা যখন বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে থাকি, তখন কি, আমাদের অজান্তেই আমরা অভিযোগ আনয়নকারীদের দলে কিছু না কিছু শরীক হয়ে যাচ্ছি না ? নিঃসন্দেহে কুরআনের সর্বপ্রথম লক্ষ্য আরব জনতা, যাদের সামনে প্রথম উচ্চারিত হয়েছে । এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কি কখনও হিন্দু জাতির নাম বা পরিচয় কুরআন শরীফে সন্ধান করার চেষ্টা করেছি ? ঠিক আছে, কুরআন শরীফে হিন্দু শব্দটি কোথাও নেই, কিন্তু সেখানে কি ঈসায়ী বা খৃষ্টান শব্দ আছে ? এর দ্বারা কি আমরা বুঝব যে, কুরআনে ঈসায়ীদের কোন উল্লেখ নেই ? কুরআনে ঈসায়ীদের জন্য 'নাসারা' শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে । দুনিয়ার কোন ঈসায়ী (খৃষ্টান) নিজেকে নাসারা বলেনা ; কিন্তু আমরা জানি যে নাসারা শব্দটি কুরআনে ঐ জাতির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে , যারা নিজেদেরকে নাসারা বলে পরিচয় দিত । হতে পারে যে, যে জাতি নিজেদেরকে হিন্দুজাতি নামে পরিচয় দিচ্ছে, তাদেরকে কুরআনে অন্য নামে ডাকা হয়েছে ।

# আল-কুরআনে বিভিন্ন জাতিঃ কুরআন পাকে এমন অনেক কওমের উল্লেখ দেখা যায় যাদেরকে তাফসীরবিদগণ আজ পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেননি যে তারা কারা, যেমন- আসহাবুর রাস, কওমে তুব্বা এবং বিশেষ করে সাবেঈদের উল্লেখ এসেছে প্রায় ঐ সকল জায়গাতেই যেখানে মুমিন, ইহুদী ও নাসারাদের কথা বলা হয়েছে । ওদের কথাতো এতবার এসেছে যে মনে হয় ওরা পৃথিবীর খুব বড় ও প্রখ্যাত সম্প্রদায় ছিলো । যেমন- " নিশচয়ই যারা মুমিন, যারা ইহুদী, যারা নাসারা, যারা সাবেঈ, তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর উপর এবং শেষ বিচারের দিনের উপর ঈমান আনবে এবং ভাল কাজ করবে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের রব এর কাছ থেকে প্রতিদান । না তাদের উপর আসবে কোন ভয়-ভীতি, আর না তারা হবে দুঃখিত । ' সূরা -বাকারা (৬২) ।

দেখুন, উপরের আয়াতে সাবেঈদের উল্লেখ আছে মুমিন, ইহুদী ও নাসারাদের সাথে । তারা কারা ? আজ পর্যন্ত যাদের সন্ধান বের করতে পারিনি । আমরা চিন্তা করেলে পেয়ে যাব, কেননা অনুসন্ধানের পরিসর খুব সীমিত । মুসলমান, ইহুদী এবং নাসারাদের পরে দুনিয়াতে ধর্মীয় বড় বড় জাতি আর কয়টি আছে বলুন ! যারা আছে তাদের মধ্যে সাবেঈরা থাকবে না কেন ? হযরত নুহ (আঃ) এর জাতিই সাবেঈঃ এবার আর একটি দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করূন । শরীয়ত প্রচলনকারী যে সকল পয়গম্বর এসেছেন এবং বিশেষভাবে যাদের কথা কুরআন মজীদে বার বার বলা হয়েছে তাদের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা যেতে পারে- হযরত নূহ (আঃ), ইব্রাহীম (আঃ), মুসা (আঃ) , ঈসা (আঃ) এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা ।

যেমন কালামে পাকে বলা হয়েছে- "আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য সেই দ্বীন (জীবন-ব্যবস্হা) নির্দিষ্ট ও নির্ধরিত করে দিলেন যার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন নূহকে এবং যা আপনার কাছে আমি ওহী করে পাঠিয়েছি, আর যার হুকুম আমি ইব্রাহিম, মুসা ও ঈসাকে দিয়েছিলাম...বলেছিলাম কায়েম কর আদ্ব-দ্বীনকে তোমরা সবাই , আর খবরদার এর মধ্যে তোমরা মতভেদ করবেনা । ' (সূরা-শূরা-১৩) । চিন্তা করুন ! হযরত মুহাম্বদ (সাঃ) এর উম্মতরা হচ্ছেন মুসলমান, হযরত ঈসা (আঃ) এর উম্মত ঈসায়ী এবং মূসা (আঃ) এর উম্মত ইহুদী বলে পরিচিত । আর নূহ (আঃ) এর উম্মতকে কি বলা হয় ? কেউ জানে না । তাহলে এই উম্মতকে সাবেঈ বলা হয়েছে ? সাবেঈদের সম্পর্কে হযরত উমর (রাঃ) ও আবু হানীফা (রাঃ) সহ বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামের উক্তি নিম্নে পর্যায়ক্রমে দেয়া হলঃ ১. সাবেঈগণ ছিলেন ইরাকের সেই অন্চলের অধিবাসী যেখানে ইব্রাহীম (আঃ) পয়দা হয়েছিলেন ।

ইব্রাহীম (আঃ) এর জন্মস্হান উর এবং ভারতীয় সভ্যতার হরপ্পা এবং মহনজোদারোর ভগ্নস্তুপের মধ্যে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, এ দুটি সভ্যতার খুব নিকট সম্পর্ক ছিলো । ২. তারা লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বলতো , কিন্তু মুশরিক ছিলো । (অল্লোপনিষধ) ৩.সাবেঈ শব্দটি আজমী, আরবী নয় । ৪.এরা ছিলো ফেরেশ্তাদের পূজারী জাতি । হিন্দু ধর্মে যে বহু দেবতার কল্পণা এটার মূলে যে ফেরেশ্তা পূজা তা বুঝা যায়, কারণ অনেক কাল্পনিক মূর্তি এ ধর্মে রয়েছে, যাদেরকে ওরা পূজা করে ।

৫.একটা বর্ণনাতে এটাও আছে যে, এরা ছিলো তারাকা-পূজারী । বিশ্ব ইতিহাসে যেসব জাতির কথা উল্লেখ রয়েছে তাদের মধ্যে এই ভারতীয় হিন্দুজাতি নক্ষত্র সম্পর্কে যত বেশী উৎসাহী, সম্ভবতঃ আর কোন জাতি এমনটি নেই, না অতীতে না বর্তমানে । ৬. এরা ছিলো অগ্নি উপাসক । জন্ম, বিবাহ, মৃতের সৎকার ইত্যাদি উপলক্ষে হিন্দু ধর্মে অগ্নি-পূজা/প্রাধান্য আজও চালু আছে । ৭. এই সাবেঈরা ধর্মীয় কর্তব্য মনে করে দিনের বেলা কয়েকবার গোসল করে ।

সম্ভবতঃ পৃথিবীর মধ্যে হিন্দু ধর্মমত্ই গোসলের গুরুত্ব সবথেকে বেশী , এদের কোন পূজা স্নান ছাড়া শুদ্ধ হয় না । এ ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে সামষ্টিক স্নান (দল বেধে গোসল) করে । ৮. পরিবর্তনশীল এবং ঝোক প্রবণতা বা ঝুকে পড়ার স্বভাবের অধিকারী জাতি সম্পর্কে হাদিস শরীফে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে এই জাতির কথাই বুঝা যায় । বাইবেলের উদ্ধৃতিও বিবেচনা করে দেখুন--- 'উঁচু মর্যাদাবান সাবেঈগণ তোমাদের নিকট আসবে এবং তারা তোমাদের সাথে থেকে তোমাদের একান্ত আপনজনে পরিণত হয়ে যাবে । আগমণের শুরুতে তারা তোমাদের কাছে পোছুবে শিকলে হাত পা বাধা অবস্হায় এবং তারা তোমাদের সামনে মাথা নত করে দেবে ।

অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তারা তোমাদেরকে বলবে-অবশ্যই আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টিকর্তা আর কেউ নেই । ' (বাইবেল, ইয়াসীয়াহ নবীর কিতাব,১৪-৪৫) সাবেঈদের গুন বৈশিষ্টের কথাগুলি অতীতের অন্যান্য আরও জাতির উপর প্রযোজ্য হতে পারে । কিন্তু বর্তমানে ঐসব বৈশিষ্টের অধিকারী জাতি কোনটি তা দিনের আলোর মত পরিস্কার । --চলবে... সূত্র-- --জগদগুরু মুহাম্মদ (সাঃ) , শায়খুল উবুদিয়া ইমাম সাইয়েদ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুহু আল-হোসাইনী । রেনেসাঁ পাবলিকেশন্স ।

----আল-কুরআন ।
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.