বুদ্ধিজীবী হতে ডিগ্রী লাগেনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মপরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, মূলত তারাই হিজড়া। জীবনের স্বাভাবিক আনন্দ থেকে বঞ্চিত হিজড়াদের কামনা বাসনা আছে ঠিকই, ইচ্ছাপূরণের ক্ষেত্রটা নেই কেবল। এদের শারীরিক গঠন ছেলেদের মতো হলেও মন-মানসিকতায় আচার আচরণে সম্পূর্ণ নারীর মতো (she-male)। তাই তাদের সাজ-পোশাক হয়ে যায় নারীদের সালোয়ার কামিজ কিংবা শাড়ি।
অনেকে গহনাও ব্যবহার করে। কৃত্রিম স্তন ও চাকচিক্যময় পোশাক ব্যবহার করতে পছন্দ করে এরা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, হিজড়াদের নাকি বৈশিষ্ট্যগতভাবে দুইটি ধরন রয়েছে, নারী ও পুরুষ। নারী হিজড়ার মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য থাকলেও স্ত্রীজননাঙ্গ না থাকায় তার শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক। পুরুষ হিজড়াদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
তবে হিজড়ারা নারী বা পুরুষ যাই হোক, নিজেদেরকে নারী হিসেবেই এরা বিবেচনা করে থাকে। সারা বিশ্বে প্রকৃতি প্রদত্ত হিজড়াদের ধরন একইরকম। শারীরিকভাবে পুরুষ, কিন্তু মানসিকভাবে নারীস্বভাবের হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘অকুয়া’। অন্য হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘জেনানা’। এছাড়া সামাজিক প্রথার শিকার হয়ে আরব্য উপন্যাসের সেই রাজ-হেরেমের প্রহরী হিসেবে পুরুষত্বহীন খোজা বানানো মনুষ্যসৃষ্ট সেইসব হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘চিন্নি’।
হিজড়া থেকে কখনো হিজড়ার জন্ম হয় না। প্রকৃতিই সে উপায় রাখে নি। কুসংস্কারবাদীদের চোখে একে সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ কিংবা পিতামাতার দোষ বা প্রকৃতির খেয়াল যাই বলা হোক না কেন, আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা অন্যরকম। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী মাতৃগর্ভে একটি শিশুর পূর্ণতা প্রাপ্তির ২৮০ দিনের মধ্যে দুটো ফিমেল বা স্ত্রী ক্রোমোজোম এক্স-এক্স প্যাটার্ন ডিম্বানু বর্ধিত হয়ে জন্ম হয় একটি নারী শিশুর এবং একটি ফিমেল ক্রোমোজোম এক্স ও একটি মেল বা পুরুষ ক্রোমোজোম ওয়াই মিলে এক্স-ওয়াই প্যাটার্ন জন্ম দেয় পুরুষ শিশুর। ভ্রূণের পূর্ণতা প্রাপ্তির একটি স্তরে ক্রোমোজোম প্যাটার্নের প্রভাবে পুরুষ শিশুর মধ্যে অণ্ডকোষ এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে ডিম্বকোষ জন্ম নেয়।
অণ্ডকোষ থেকে নিঃসৃত হয় পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেন এবং ডিম্বকোষ থেকে নিঃসৃত হয় এস্ট্রোজন। পরবর্তী স্তরগুলোতে পুরুষ শিশুর যৌনাঙ্গ এন্ড্রোজেন এবং স্ত্রী শিশুর যৌনাঙ্গ এস্ট্রোজনের প্রভাবে তৈরি হয়। ভ্রূণের বিকাশকালে এই সমতা নানাভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। প্রথমত ভ্রূণ নিষিক্তকরণ এবং বিভাজনের ফলে কিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের সূচনা হতে পারে। যেমন এক্স-ওয়াই-ওয়াই অথবা এক্স-এক্স-ওয়াই।
এক্স-ওয়াই-ওয়াই প্যাটার্নের শিশু দেখতে নারী-শিশুর মতো। কিন্তু একটি এক্সের অভাবে এই প্যাটার্নের স্ত্রী-শিশুর সব অঙ্গ পূর্ণতা পায় না। একে স্ত্রী-হিজড়াও বলে। আবার এক্স-এক্স-ওয়াই প্যাটার্নে যদিও শিশু দেখতে পুরুষের মতো, কিন্তু একটি বাড়তি মেয়েলি ক্রোমোজম এক্সের জন্য তার পৌরুষ প্রকাশে বিঘ্নিত হয়। একে পুরুষ হিজড়াও বলে।
প্রকৃতির খেয়ালে হোক আর অভিশাপেই হোক, এই হিজড়াত্ব ঘোচাবার উপায় এখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নাগালে। চিকিৎসকদের মতে শিশু অবস্থায় চিকিৎসার জন্য আনা হলে অপারেশনের মাধ্যমে সে স্বাভাবিক মানুষের মতো পরিবারের মধ্যে থেকেই জীবন-যাপন করতে পারে। হয়তো সে সন্তান ধারণ করতে পারবে না, কিন্তু পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে না হয়তো। দেখা গেছে যে অসচ্ছল নিম্নশ্রেণীর পরিবার থেকেই বাইরে বেরিয়ে যাবার প্রবণতা বেশি। তখন তাদের জীবনধারা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
এরা না পারে নারী হতে, না পারে পুরুষ হতে। ফলে অন্যান্য অনেক অসঙ্গতির মতো হোমোসেক্স বা সমকামিতায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।