শরীরে আচড়ের দাগ, নষ্ট হল বুঝি আবার মানবতা! দীর্ঘদিন হল ভাবছি পুরাণ ভিত্তিক পোস্ট দেব । কিন্তু দেয়া হচ্ছিল না । আজকে শুরু করলাম । আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে । আমি পুরাণ ভিত্তিক একটা সিরিজ করার চেষ্টা করছি যেটা ব্লগের বাকি পুরাণ ভিত্তিক পোস্ট গুলোর তুলনায় কিছুটা হলেও ভিন্ন হবে ।
আমার এই সিরিজের নাম দিলাম পুরাণের কথা ।
আমার আজকের পোস্টে থাকছে মহাকবি হোমার এবং তার রচিত অমর মহাকাব্য ইলিয়াড বিষয়ে কিছু আলোচনা । এর কাব্যমূল্য বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব ।
আপনারা যারা পুরাণ পড়ে অভ্যস্ত তারা হয়ত খেয়াল করেছেন প্রাচীণ যুগে মানুষের বংশ পরিচয়কে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হত । কোন বিখ্যাত ব্যাক্তির নাম নেবার আগে তার বাবা, দাদা এমনকি পরদাদার নামও বলা হত ।
তখনকার সমাজে এটাই কৌলিন্যের প্রতীক বলে ধরা হত । তো আমরাও মহাকবি হোমারের জন্ম পরিচয় থেকে আসি।
হোমার তার লেখায় মহাবীর একিলিস, এ্যাজাক্স, এগামেমনন, ডায়োমেডিস, ওডিসিয়াসের বংশ পরিচয়ের কথা সবিস্তারে বর্ণনা করলেও তার নিজের জন্ম সাল, পরিচয় এবং স্থান সব নিয়েই সন্দেহ আছে । বিখ্যাত ইতিহাসবিদ হিরোডোটাস এর মতে তিনি মোটামুটি খ্রীষ্টপূর্ব অস্টম শতকে জন্মলাভ করেন । কোন কোন সূত্র মতে তিনি ট্রয় যুদ্ধের সমকালীন অর্থাৎ খ্রীষ্টপূর্ব দ্বাদশ শতকে জন্মলাভ করেন ।
তার জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ আছে এবং যেহেতু তিনি ছিলেন বিখ্যাত চারণ কবি, তাই তার ব্যাপক ভ্রমণের জন্যে বিভ্রান্তি হয়েছে প্রকট । স্মর্ণা, ইথাকা, রোডস, সাইপ্রাস, আর্গস, এথেন, কিয়স এবং কলোফিন এই সাতটি জায়গার যে কোন একটিতে তিনি জন্মলাভ করেন বলে জনশ্রুতি আছে ।
লুসিয়ান নামক এক ইতিহাসবিদ দাবি করেন তিনি একজন ব্যবিলনীয়ান এবং তার নাম যে হোমার তা রাখা হয় পরে, যখন গ্রিক রাজা তাকে বন্দী করেন(হোমার=বন্দি বা আটক কৃত)। তবে এই মতের জনসমর্থন এবং ঐতিহাসিক ভিত্তি খুবই কম । অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে তিনি এশিয়া মাইনরের আইয়ন অঞ্চলের স্মর্ণা নামক এলাকা থেকে এসেছেন ।
এটিই সর্বাধিক প্রচলিত মত ।
হোমারের পিতা ছিলেন একজন চারণ কবি । সে যুগে পিতার কাছ থেকে সন্তান এভাবে পরম্পরায় মানুষ পেশা বা অর্জিত জ্ঞান ধরে রাখতেন । তো হোমার বড় হয়ে হলেন বিখ্যাত চারণ কবি । চারণ কবি বলতে মূলত বোঝায় যারা মুখে মুখে কবিতার পঙতি সৃষ্টি করতেন এবং সেগুলো জনগনের সামনে পরিবেশন করতেন ।
তারা কিন্তু কোন কিছু আগে থেকে লিখে রাখতেন না এবং সেভাবে পরিবেশন করতেন না। হোমার অত্যন্ত সুকন্ঠের অধিকারী ছিলেন । তাই তিনি যখন বীণাবাদন সহকারে গাইতেন তখন এক ঐন্দ্রজালিক পরিবেশের সৃস্টি হত । বীণাবাদন সহকারে তার এই পরিবেশনা একাধারে সাতদিন পর্যন্ত চলত মাঝে মাঝে । পদ রচনা করতে গিয়ে প্রায়শই তিনি জাতীয় বীরের জীবনালেখ্য নিয়ে দীর্ঘ আলেখ্য রচণা করতেন।
এরই ফলম্রুতিতে আমরা পাই ইলিয়াড এবং ওডিসির মত মহাকাব্যগ্রন্থ ।
সবাই নিশ্চয়ই জানেন হোমার ছিলেন অন্ধ কবি । তিনি কিন্তু জন্মান্ধ ছিলেন না । প্রত্যেক সভ্যতা এবং প্রত্যেক জগদ্বিখাত সৃষ্টির পিছনে আছে হারাণোর বেদনা আর সীমাহীন অসভ্যতার নগ্ন থাবা । সে কালের রাজারা কবিদের কে জোরপূর্বক আটকে রাখতেন।
সামন্তবাদী রাজারা চারণ কবিদের গীতসুধা পানে উন্মত্ত হয়ে উঠত । যদি তারা মুক্তভাবে তাদের কাব্যচর্চা করতে চাইতেন তাদের আটকে রেখে অন্ধও করে ফেলা হত । হোমার হয়ত সেভাবেই অন্ধ হয়েছিলেন । বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয় ।
আমরা জানি পৃথিবীতে জাত মহাকাব্য বা (Epic of Growth) হচ্ছে মাত্র চারটি ।
এরা হল বাল্মীকি রচিত রামায়ন, মহর্ষি বেদব্যাস রচিত মহাভারত এবং মহাকবি হোমার রচিত ইলিয়াড এবং ওডিসি । এবারে আমরা আসি জাত মহাকাব্য কি ? সে সকল মহাকাব্য আদি রচনার সময় থেকে আজ পর্যন্ত ধাপে ধাপে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হয়ে আজকের পর্যায়ে এসে পৌছেছে সে গুলোকে বলা হয় জাত মহাকাব্য । এ সকল রচনা যুগে যুগে বিভিন্ন পরিবর্তণের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় কিছুটা পরিবর্ধিত রূপ লাভ করেছে । অনেক ক্ষেত্রে এ পরিবর্তন এত প্রগাঢ় হতে পারে যে মনে হতে পারে, এ গুলো একক কোন কবির লেখা নয় ।
হোমারের রচনাগুলো প্রথমে এলোমেলো অবস্থায় ছিল ।
আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ২৫০ অব্দে সামোথাসের এ্যারিস্টার্কাস সর্বপ্রথম ইলিয়াড এবং ওডিসি সম্পর্কিত রচনাগুলো সংকলিত এবং সুসঙ্ঘবদ্ধ করেন । তিনি দুটি মহাকাব্যে এ রচনা গুলো কে রূপ দেন এবং প্রত্যেকটি মহাকাব্যকে ভাগ করেন চব্বিশটি অধ্যায় বা পর্বে । ট্রয় যুদ্ধ নিয়ে রচিত মহাকাব্যটির নামকরণ করা হয় ইলিয়াড এবং ওডিসিয়াসের নিজ রাজ্যে বা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে রচিত মহাকাব্যটির নামকরণ করা হয় ওডিসি ।
মজার ব্যাপার হলো ইলিয়াড এবং ওডিসি যে একই ব্যাক্তি হোমার রচিত -সেই ধারণাটি খ্রীষ্টপূর্ব ৩৫০ সাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করেনি । এই সময়কালের পূর্ব পর্যন্ত ধারণা করা হত মোটামুটি কাছাকাছি সময়ের দুজন বিখ্যাত কবির রচনা এই মহাকাব্য দুটি ।
যদিও লেখনীর এবং গঠনগত মিলের জন্য অনেকেই ধারণা করতেন একই ব্যাক্তির রচনা ।
এবারে আমরা আসি ইলিয়াড এবং ওডিসি রচনার প্রেরণা হোমার কি করে পেলেন ?? হোমারের মহাকাব্য দুটি রচিত হয়েছে খ্রীষ্টের জনেম্র ৮৫০ বছর পূর্বে । সবাই জানেন ইলিয়াড এবং ওডিসি আলাদা দুটি মহাকাব্য হলেও ঘটনাক্রম মোটামুটি একই আর তা হচ্ছে রাণী হেলেনের অপহরণ এবং তৎসংশ্লিষ্ট ট্রয়ের যুদ্ধ । ট্রয় যুদ্ধ সংঘটন কাল হিসেবে পুরাকালের ইতিহাসবিদেরা যে সময়কে চিহ্নিত করেছেন তা হল মোটামুটি খ্রীষ্টপূর্ব ১২০০। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ (ইতিহাসের জনক ) হিরোডোটাস এর মতে সময়টা হল খ্রীষ্টপূর্ব ১২৫০ সাল ।
তাই আমরা ধরে নিতে পারি এ যুদ্ধের সময় কাল মোটামুটি চারশ বছর পূর্বে হোমারের ইলিয়াড এবং ওডিসি রচনার ।
কিছুদিন পূর্বে পর্যন্ত ট্রয় যুদ্ধের সত্যতা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সন্দেহ এবং অবিশ্বাস ছিল । কিন্তু ১৮৭০ সালে জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ হাইনরিশ শ্লিমান আনাতোলিয়া এলাকায় খনন কাজ শুরু করেন। এর ভৌগলিক অবস্থান তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কানাক্কাল প্রদেশের সমুদ্র সৈকতের নিকটে এবং আইডা পর্বতের নিচে দার্দানেলিসের দক্ষিণ পশ্চিমে। এই খনন চলতে থাকায় এক সময় প্রমাণিত হয় যে, এখানে একের পর এক বেশ কয়েকটি শহর নির্মিত হয়েছিল।
সম্ভবত এই শহরগুলোরই একটি হোমারের ট্রয় (ট্রয় ৭)। অসামান্য সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও মোটামুটি নিশ্চিত ভাবে বলা যায় হোমারের ট্রয় এই অঞ্চলেই ছিল ।
রক্তক্ষয়ী এবং দীর্ঘ এক দশক ব্যাপী চলতে থাকা এই যুদ্ধ এমন সর্বাত্ত্বক এবং ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে তাতে প্রায় সকল গ্রীক রাজন্যবর্গ যোগদান করেন । যারা সরাসরি যোগদান করতে পারেন নি, তারা সৈন্য এবং অস্ত্রশস্ত্র বা জাহাজ পাঠিয়ে সাহায্য করেন । ছোটবেলা থেকেই এই যুদ্ধের কাহিনী হোমারের কাছে এক অন্যরকম দ্যোতনা নিয়ে ধরা দিত ।
কালের সন্তান হিসেবে বীর্যবান পুরুষদের এসব কাহিনী তাকে মুগ্ধ করত, তাই তিনি পরবর্তীতে আমাদের মুগ্ধ করার জন্য এই সব কাহিনীকে একত্রিত করে রচনা করেন অমর মহাকাব্য ইলিয়াড এবং ওডিসি ।
হোমারের লেখনী শক্তি এমনই ছিল যে তিনি বছর, যুগ কিংবা শতাব্দীর বাধন থেকে বের হয়ে সহস্রাব্দের বাধন পার করেছেন অবলীলায় । তাই আজো আমরা রস সুধা আহরণ করি হোমারের রচনা থেকে । মানব জাতির ইতিহাস যতদিন থাকবে ততদিন হোমারের লেখা থাকবে আমাদের মাঝে । বলাবাহুল্য হোমারের রচনাই গ্রীক সাহিত্যের মূল উৎস ।
কেননা পরবর্তী কালে যত গ্রীক লেখক কবি এসেছেন তারা প্রত্যেকেই ট্রয় যুদ্ধ বা তৎসংশ্লিষ্ট কাহিনী নিয়ে কিছু না কিছু কাব্য, নাটক ইত্যাদি রচনা করেছেন । প্রত্যেক লেখকের লেখাতেই হোমারের লেখনীর প্রভাব ছিল ।
হোমারের লেখনীর বিষয়ে প্রথম যে কথাটা বলতে হয় সেটি হল মধ্য বা শেষ দিকের কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা থেকে কাহিনীর শুরু করা । আমরা সবাই জানি ট্রয় যুদ্ধ সংঘটিত হয় প্রধানত হেলেন এবং প্যারিসের জন্য এবং ট্রয় যুদ্ধ সংঘটনে প্রধাণ ভূমিকা পালন করেন অ্যাগামেমনন, সমস্ত গ্রীক রাজন্যবর্গকে একত্র করে । কিন্তু যেহেতু একিলিস ছিলেন গ্রীক পক্ষের সর্বাধিক শক্তিশালী যোদ্ধা, দেবতাদের প্রিয়পাত্র এবং জিউসের অনুগ্রহভাজন, তাই একিলিসের সাথে এ্যাগামেমননের কলহ ট্রয় পক্ষের যুদ্ধের ক্ষণিকের জয়ের জন্য ভীষণ সুবিধার ব্যাপার হয়ে দাড়ায় ।
ফলশ্রুতিতে হেক্টরের নেতৃত্বে ট্রয় বাহিনী গ্রীক অর্ণবপোত গুলোতে অগ্নি সংয়োগ ঘটাতে সক্ষম হয় । মহাকবি হোমার নিশ্চিত ছিলেন মূল ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে তিনি পেলেউস পুত্র একিলিসকে দেখাবেন নায়ক হিসেবে । তাই তিনি কাহিনী শুরু করেন একিলিস এবং এ্যাগামেমননের সাথে কলহ নিয়ে । (কি নিয়ে কলহ বেধেছিল সেগুলো আগামী পোস্টে বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে) । চমৎকার ভাবে কাহিনীর শুরুতেই তিনি নিয়ে এসেছেন টানটান উত্তেজনা ।
পুরো ইলিয়াড পড়বার সময় পাঠক কূলের পক্ষে সে উত্তেজনা থেকে বের হওয়া আর সম্ভব হয় না । এখানেই হোমারের কৃতিত্ত্ব ।
হোমারের রচনাশৈলীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল দেব দেবীর মধ্যে মানবীয় চরিত্রের বিকাশ । পুরাণে দেব দেবীর উপস্থাপনের জন্য দেবদেবীর মানবিকীকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল । দেবদেবী সব কিছুর নিয়ন্তা হলেও তারা যে তাদের মানবীয় আবেগ দ্বারা চালিত হতেন, এই জিনিস গুলো হোমারের লেখাতেই সর্বপ্রথম এত সার্থক ভাবে ফুটে ওঠে ।
দেবদেবীরা অবশ্য নিজেরাই মানবিক হয়ে ওঠেন যখন তারা অলিম্পাস পর্বত থেকে নেমে এসে বিয়ে করেন মর্ত্যমানব পেলেউসকে (জলপরী= নিম্ফ থেটিস) । এর ফলে জন্ম লাভ করে মহাবীর একিলিস । জিউস. পসেডন, এ্যারিস, আফ্রোদেইতি প্রভৃতি সকল দেব দেবীর আরো অসংখ্য মানব সন্তান দেবতাদের আরো মানবীয় আরো ঘনিষ্ঠ করে তোলে গ্রীক বাসীর সঙ্গে । তাদের অসম্মান যেন হেরা এথেনার অসম্মান । আফ্রোদেইতির প্রতি হেরার ক্রোধ যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় গ্রীকদের জাত্যাভিমানের সঙ্গে ।
এতক্ষণ যে সব আলোচনা হল এগুলো ছিল ইলিয়াড বিষয়ক । এবারে আমরা ওডিসিয়াস বিষয়ে আলোচনায় আসি । গ্রীক বীরদের মধ্যে সবচেয়ে চতুর এবং বাগ্মীশ্রেষ্ঠ ওডিসিয়াস ট্রয় যুদ্ধ শেষে বেশ কিছু ভুল করে বসেন । তার খেসারত হিসেবে তাকে দশ বছর সময় সমুদ্র জলে পার করতে হয় । তাকে বন্দী থাকতে হয় ক্যালিপসোর কাছে, সিল্লা ও চ্যারিবডিসের কাছে, পদ্মভোজীদের কাছে ইত্যাদি ।
নানাবিধ বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে তিনি অবশেষে তার প্রিয়তমা অঙ্কশায়িণী পেনিলোপের কাছে পৌছান । দর্শন পান নিজের সন্তানের এবং পিতার । ট্রয় যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে রচিত হলে এইটিই একমাত্র জাত মহাকাব্য যাকে মিলনাত্নক এবং প্রেমের পটভূমিতে ফেলা যায় ।
হোমারের রচনার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে যে সকল বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তার বর্ণনায় সেভাবে উল্লেখ নেই এমন বিষয় গুলো তিনি দু চারটি ছোট ছোট সংলাপের মাধ্যমে বর্ণনা দিয়েছেন । যেমন এপিয়াস নির্মিত কাঠের ঘোড়ার বর্ণনা কিন্তু আমরা ইলিয়াডে পাই না ।
আমরা পাই ওডিসিতে । তাও একিলিস আর ওডিসিয়াসের মধ্যে মৃত্যুপুরীতে সংঘটিত কথোপকথনে, যখন একিলিস পুত্রেরে বীরত্ত্বের প্রশংসা করা হচ্ছিল । এই রকম অংশ খন্ড খন্ড অংশ নিয়ে হোমারের মহাকাব্য রচিত হবার পর থেকে লেখা হচ্ছে নাটক যা সেই পুরাকাল হতে আজো চলে আসছে ।
হোমারের রচনায় একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে ঘটনা পরম্পরার কার্যকারণ অনুসন্ধান । খেয়াল করলে দেখা যায়, তিনি লেখক হিসেবে যে পক্ষ নেন না কেন, সে পক্ষে কেউ যদি অন্যায় করতে শুরু করে হোমারের রচনা শৈলীর কুশলতার ফলে আমাদের পাঠক হৃদয় অজান্তেই সেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে শুরু করে ।
এর ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই, হেক্টর বধ কল্পে বীরবাহু একিলিসের অবিশ্বাস্য রকমের মানব বধ, এক সময় সীমা ছাড়িয়ে গেলেও আমাদের মনে হয় সদ্য ভ্রাতৃহারা কোন এক ব্রাঘ্য শার্দুল নেমেছে প্রতিশোধের আগুন বুকে নিয়ে । অবশেষে দেবতা অ্যাপোলোর কৃপায় একিলিসের হাত থেকে বেচে ফিরতে পেরে ট্রয় বাসীরা নিজেদের স্ত্রী সন্তানদের মুখ শেষবারের মত দেখতে পায়- যা আমাদের স্বস্তি দেবার বদলে পীড়া দেয়, কেননা এ্যাপোলো এমন প্রতারক সবসময় ? এখানেই কৃতিত্ব হোমারের ।
হোমারের লেখনী পরবর্তী তিন সহস্র বছর ধরে প্রভাবিত করে গেছি তার উত্তরসূরী বিখ্যাত লেখক কবিদের । এরিষ্টটলের মতে, হোমারের ইলিয়াড কেবল মহাকাব্য নয়- বিশ্বের প্রথম সার্থক ট্রাজেডি । এই হোমারেরই রচনা ওডিসিতে বর্নিত মৃত্যুপুরীর কাহিনী নিয়ে রোমান কবি ভার্জিল রচনা করেন “ইনিড” ।
পরবর্তীতে ভার্জিলের অনুসরণে দান্তে রচনা করেন “ডিভাইনা কম্মেদিয়া” । পরবর্তীতে নবজাগরণের যুগে আবারো কবি সাহিত্যিক গন ইলিয়াড এবং ওডিসি দ্বারা প্রভাবিত হন । ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত কবি মিল্টন, কীটস এবং টেনিসন প্রমুখ হোমারের চমতকার লেখনী শৈলী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন । বলাবাহুল্য বাংলার কবি মাইকেল মধূসুদনের লেখনীতেও হোমারের লেখার লক্ষ্যনীয় প্রভাব ছিল ।
আশা করি আপনাদের ভাল লাগল হোমারের উপরে এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা ।
এখন থাকছে পুরাণের উপর ভিত্তি করে আমার লেখা ছোট্ট একটি কবিতা - হায় হেলেন
হায় হেলেন
হায় সুন্দরী শ্রেষ্ঠা হেলেন !
যেদিন দেবরাজ হংস বলাকার ছলে,
মিলিত হন লেডার অঙ্কশয়ানে !
সেদিন কি ঘোর অন্ধকার
গ্রাস করেছিল সমগ্র গ্রীসের আকাশ
ভবিষ্যতের শোকে ? কে জানত-
তোমার গুপ্ত প্রণয়ের বলি হবে,
হাজার হাজার অসি, বর্শা কিংবা বল্লমধারী ?
কে জানত দেবোপম একিলিস,
এ্যাজাক্স কিংবা হেক্টরের রক্তে রেঙে উঠবে
তোমার দেহবল্লরী । হায় হেলেন
কলঙ্ক তুমি পৃথিবীর সব ভালবাসার ;
সবাই জানে সে কথা । তবু কেন
তোমার প্রেমের আরাধনা ?
অন্ধ এ কবির আজ তৃপ্তি ; চোখ নেই বলে !
তোমার অগ্নিবাণের মতন
প্রবল রূপের তোড়ে ভষ্মীভূত হবার থেকে
বেচে থাকা অনেক বড় আমার কাছে ।
সর্বনাশা মেডুসার গহ্বরে গেলে
তবু লাশটুকু পাওয়া যায়, তোমার ছলনায়
কত বীরের লাশ ভেসে গেল স্কামান্দারের জলে ।
সেখানে সামান্য কবি আমার
কোথায় হত ঠাই ? এ ভাবনা অবান্তর জানি
তবু শিহরিত করে আমায় ;
হে রক্তপায়ী জিউস কন্যা, তুমি
নরকের বিষবাষ্প আর ঢেলনা যেন,
পৃথিবীর সুপেয় জলে ।
প্রিয় ব্লগার ইমন জুবায়েরকে এই পোস্ট টা উৎসর্গ করলাম । উনি কোন দিনই আমার লেখায় কমেন্ট করেন নি । আমি এক সময় আশা করতাম কোন একদিন হয়ত করবেন । কিন্তু এখন আর আশা করি না । তবে আশা করব পোস্ট টা যেন উনার চোখে পড়ে ।
না পড়লেও অবশ্য কিছু আসবে যাবে না । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।