আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিয়মিত নিঃশ্বাস-০৩

বিশ্বসাহিত্যের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীটা তখন নতুন চালু হইছে । মেম্বার হওয়ার পর প্রথম যে বইটা নিছিলাম অইটার নাম মনে আছে খালি “শয়তান”... রাইটার ছিলো রাশিয়ান । বইটা ভালোই ছিলো , ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার যেটা ছিলো সেটা হলো এই বইয়ের দুই ধরনের এন্ডিং ছিলো । সো পাঠকের হাতে অপশন ছিলো যেকোন একটা বেছে নেয়ার । লাইফের অনেক বিশাল বিশাল সমস্যার সৃষ্টি হয় এই অপশনের availability ’র কারণে ।

স্কুলে থাকতে মাল্টিপল চয়েস দাগাইতাম । সারাজীবন ধরে যে এতো এতো বার এই কাজটা করতে হবে (খুব সম্ভবত স্কুলের চেয়েও অনেক কঠিন কঠিন জায়গায় ) সেটা কোনদিন আমি ভাবি নাই-এইটা হইতেই পারে । কিন্তু আমার চার বছরের ছোট মামাতো বোনও যে বুঝে নাই সেটাই ভয়াবহ ব্যপার । আমার অতিশয় মেধাবী (খুব শীঘ্রই ভার্সিটির টিচার হতে যাওয়া) বোনটা তার বয়ফ্রেন্ড আর বেস্টফ্রেন্ডের মধ্যে বিয়ের জন্য কাকে বেছে নিবে সেটা নিয়ে ব্যাপক টেনশিত । এই ব্যাপারে সে এই অধমের পরামর্শও গ্রহন করতে রাজী ।

হাতের রিমোটটার উপর কিছুক্ষন অত্যাচার চালিয়ে আমি প্রতিদিন একবার করে শিউর হই যে, পৃথিবীতে বর্তমানে সকল বয়সী মানুষের প্রধান কাজ “প্রেম” করা । অ্যাড থেকে শুরু করে নাটক, গান ...সব কিছুতে এতো এতো ভালোবাসা উপচাই পরে যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এমনিতে দুই তিন ইঞ্চি বেড়ে যাবে । আর রাস্তাঘাট, রেস্টুরেন্ট, পার্কের কথা “বলিয়া লজ্জা দিবেন না ” টাইপ অবস্থা । একবার গ্রামে গিয়ে পুথি-টাইপস একটা আসরে বসছিলাম । অইখানেও মূলকথা ছিলো প্রেমের টানে বাড়িঘর-বাপ মা ছেড়ে ছেলে চলে গেছে সাত-সমুদ্র তের নদী পার হয়ে অচীন দেশের রাজকন্যার খোঁজে ।

গল্প-ঊপন্যাস-নাটক জুড়েতো প্রেমশক্তির জয়-জয়াকার । ইভেন নিজের চোখেও কি কম দেখছি... চার মাসের পরিচিত একজন মানুষের জন্য একজীবনের ঋন যে বাপ-মায়ের কাছে তাইতো চোখের সামনে কতজন অস্বীকার করল । এইসব ভাবতে ভাবতে ভিতর থেকে আরেকজন চিল্লাই উঠে, আসছে...নীতিবান...নিজে একবার প্রেম কর, দেখা যাইব কত ধানে কত চাল । প্রেমের নাম ত্যাগ নাকি বেদনা কি জানি একটা...বুঝছো জীবনে নিজে...? এই যে নামের ব্যপারটা...এইটা নিয়ে একটা সময় আমার ঘোরতর আপত্তি ছিল । কেন সব জিনিসেরই একটা নাম থাকতে হবে ।

না হয় মানলাম...মানুষ-গরু-ছাগল এইসবের নাম দরকার । কিন্তু তাই বলে কয়েক সহস্র আলোকবর্ষ দূরে যেসব গ্রহ অইগুলারেই বা কেন নাম দেয়া (অইগুলারে গুতানেরই বা কি দরকার । ৬৪০০ কি.মি. ব্যসার্ধের পৃথিবীতে কি গুতানোর মত কম জিনিস আছে ?)। তখন মনে হইত, মানুষ হয়তো পরিচয়হীনতাকে ভয় পায় । সব সময় মানুষ একটা ফিক্সড পরিচয় খুঁজে ।

অর্থহীন চিন্তাভাবনা ...যত্তোসব...!!! এইসব অর্থহীন চিন্তা-ভাবনার কুফল হইলো অনেক বেশী নিউরন সেল এইসব কাজে বিজি থাকলে স্বাভাবিক কাজ কামের কথা আমরা অল্প অল্প ভুলে যাইতে থাকি । ভুলে যাওয়ার সাথে মানুষের ইচ্ছাশক্তির সম্পর্কটা সমানুপাতিক না ব্যাস্তানুপাতিক তা নিয়ে মাঝে মাঝেই কনফিউশন সৃষ্টি হয় । কখনো দেখা যায় চাইলেও অনেক জিনিস ভোলা যাচ্ছে না । আবার কখনো কখনো অনেক দরকারি এবং মনে রাখার ঘটনাও বেমালুম ভুলে যায় মানুষ । মনে হয় ব্যাস্তানুপাতিক রিলেশন্টাই বেশী খাটে ।

কিছুদিন আগে ইমনের গলায় ফাঁসি পড়লো । কেন জানি বন্ধু-বান্ধবের বিয়েতে যাইতে ইচ্ছা করে না । ফেবুতে ছবি দেখলাম সেদিন । ঘুরে ফিরে কেমনে জানি শারমিনের একটা ছবি থেকেই যায় সবখানে । কত জিনিস ভুলে যাই ...অথচ এই অর্থহীন মেমোরিগুলা কেন চাইলেও ভুলতে পারি না...?? নাকি আমি আসলে অনেস্টলি কখনো চাই-ই না ।

ম্যাসোকিসম টাইপের মেমোরি অবসেশনে ভোগার লক্ষণ...!!থাকুক ...এইসব ফিলিংসেরে বেইল দেয়ার টাইম নাই !! দুনিয়ার করার মত বহুত কাম আছে । !! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।