অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
জীবন আর মৃত্যুর ব্যবধান কতটুকু? হয়তো মাত্র আধা সেকেন্ড, এই ব্যবধানটুকু অতিক্রম করতে না পারলে হয়তো আজকেই খেলা সাঙ্গ হয়ে যেতো, হয়তো পরদিন কিংবা ঈদের পরের দিনের সংবাদপত্রে রিপোর্ট আসতো, ঈদের এই বন্ধে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের তালিকায় আমার নামটাও যুক্ত হতো। হয়তো এরবেশী কিছু আসা করা যায় না বাংলাদেশে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আরও সোচ্চার হওয়া উচিত মনে হয়।
২০০৭এর ঈদের পর থেকে আর বাসে দিনাজপুর যেতে দেই না বাসার কাউকেই। হাইওয়েতে যারা গাড়ী চালায়, সেইসব দায়িত্বজ্ঞানহীন চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং পারস্পরিক গতির লড়াই আরোহীদের জীবনকে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ করে রাখে এটার সংবেদ হয়তো তাদের থাকে না, তবে যখন ক্ষতি হয় তখন একটা পরিবার উজার হয়ে যায়।
সেবার যাচ্ছিলাম ঈদের দুদিন আগে। সিরাজগঞ্জ পার হওয়ার পর বগুড়ায় ঢুকবার পর থেকেই রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ, সম্পূর্ন চাঁদের পিঠ হয়ে থাকা রাস্তায়ও বাসড্রাইভার কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এলোপাথারি গাড়ী চালাচ্ছে। বাসের যাত্রীদের চিৎকার এবং আপত্তিগ্রাহ্য না করেই।
মনে হচ্ছিলো বাস থামিয়ে নামিয়ে পিটাই। চুতমারানী গাড়ী চালাইতাছো তুমি, এইটা ফর্মূলা ওয়ান রেসিং ট্রাক না যে তুমি ১০০ কিমির উপরে চালাইবা।
নিরাপদ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার, সেইটাও শহরের বাইরের রাস্তায়, শহরের ভেতরে নিরাপদ গতিসীমা এখনও ৪০ কিমি। সেটা মেনে গাড়ী চালাও সমস্যা নাই, আমাদের এত তাড়াও নেই যে পৌঁছে যেতে হবে সবার আগে।
তবে পরবর্তী ঈদ থেকে দিনাজপুর যাওয়া মানেই ট্রেনে যাওয়া, অনেক বেশী নিরাপদ ভ্রমন। তবে গত ঈদের আগে আগে মেজাজটা আরও খারাপ হলো, যখন পেপারে পড়লাম রেল লাইনের ফিশিংপ্লেট খুলে নিয়ে যাচ্ছে মানুষ, এবং হঠাৎ করেই ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, মনে হলো এইসব অপরাধী যারা এত এত মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে তাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া উচিত। দেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও, যাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবার কথা এইসব।
আজ রাতে যাচ্ছিলাম ওয়ারী, বঙ্গভবনের পাশ দিয়ে বের হয়ে গ্যাস স্টেশনের সামনের রাস্তায় দেখলাম একটা প্রাইভেট আরেকটা প্রাইভেটের সাথে চুম্মাচুম্মি করতেছে, সেইটাকে আমলে না নিয়ে জয়কালী মন্দিরের সামনের রাস্তাটা অতিক্রম করবো যখন, তখনও আড়াআড়ি রাস্তায় কোনো গাড়ীর দেখা পাই নি। একটা বাস অলস ভঙ্গীতে বাঁক ঘুরছিলো, সেটার পাশ দিয়ে রাস্তায় উঠামাত্রই একটা গাড়ী অন্তত ৬০ কিমিতে ছুটে আসলো, সামনে রিকশা আর বাস, নড়বার উপায় নেই, তাড়াতাড়ি চালিয়ে চলে যাবো এমন পরিস্থিতিও না, আমার রিকশা রাস্তার উপরে, আর যেটুকু ফাঁকা জায়গা সেটুকু দিয়ে একটা বাস কোনো ভাবেই পার হতে পারবে না, কিন্তু খুনে গতির নেশায় ধেয়ে আসছে গাড়ীটা।
কোনোমতে রিকশার চাকা ঘুরিয়ে সংঘর্ষ এড়ানো গেলো, আমি হঠাৎ করেই খেয়াল করে দেখলাম আমার গলা সম্পূর্ন শুকনো, দ্রিদ্রিম দ্রিদ্রিম হৃদপিন্ড লাফাচ্ছে, আমি শক্ত করে ধরে আছি রিকশার হুড, গাড়ীটা চোখের পলকে অতিক্রম করে যাওয়ার পর জয়কালী মন্দিরের সামনে গিয়ে রিকশাওয়ালাকে বললাম, ভাই আরেকটু হইলে তো মাইরাই ফেলাইছিলা আমারে।
ঐ শালা এমনে গাড়ী চালাইলে কেমনে হইবো কন?
কথা সত্য, একটা ন্যুনতম নিয়ম না মেনে চললে কোনো সড়কই নিরাপদ না, আমি ট্রাফিক আইন মেনে চললেই যে আমার জীবনটা নিরাপদ হয়ে উঠবে এমন না, বরং আমাকে নির্ভর করে থাকতে হবে অন্য সব গাড়ীচালকদের উপরে,তারা নিয়ম মেনে বিবেচনাবোধকে কাজে লাগিয়ে চলাচল করলে হয়তো সম্ভব আমাদের নিরাপদ সড়ক পারাপার।
রিকশা থেকে নেমে সিগারেট ধরিয়ে হাঁটলাম কিছুক্ষণ ঈদের ভীড়ের ভেতরেই।
কয়েক ইঞ্চির ব্যবধানে মৃত্যুকে দেখে কিঞ্চিৎ অসস্তিতে পড়েছি, ইদানিং খুব ঘনঘন দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছি, সিঁড়ি থেকে পড়েছি বার তিনেক, মৃত্যু নিয়মিত টহল দিচ্ছে মনে হয়। কতদিন এড়িয়ে থাকা যাবে বলতে পারছি না।
বাসা ফিরে থিতু হয়ে বসবার আগেই আমার এক পরিচিত পরিবারের সংবাদ পেলাম, তাদের সম্পূর্ণ পরিবারই সড়কদুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে দুপুরে। বাঁচবার মধ্যে বেঁচে তার ছোটো সন্তান। মনে হলো আর একটু হলে হয়তো তাদের সাথে আমার নিজস্ব মৃত্যুর সংবাদও পৌঁছাতো পরিবারের কাছে।
ভালো থাকুন সবাই, নিরাপদে বাসা গিয়ে ঈদের আনন্দ শেষে ণিরাপদে ফিরে আসুন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।