আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহিংস রাজনীতির প্রতীক তারেক

সমকাল 'যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্যও ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর ব্যক্তি তিনি' সমকাল ডেস্ক বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভয়ঙ্কর রাজনীতিক এবং দুর্নীতি ও চুরির মানসিকতাসম্পন্ন সরকারের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাকে বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থের প্রতি হুমকি হিসেবেও দেখেছিল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় তারেক রহমানকে এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে। বার্তায় তারেকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়। গত ৩০ আগস্ট সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন মার্কিন নথি থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

মরিয়ার্টির পাঠানো তারবার্তায় বলা হয়, মার্কিন দূতাবাস মনে করে, রাজনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগে কুখ্যাতি পাওয়া তারেক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্যও ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রার ক্ষতিসাধন করতে পারেন তিনি। ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপন তারবার্তায় রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি তারেক রহমানের বড় বড় দুর্নীতির কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তারেক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে সক্ষম হলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কী কী বিরূপ প্রভাব হতে পারে সেটা তুলে ধরেও নিজের উদ্বেগের কথা জানান মরিয়ার্টি। উইকিলিকস বলেছে, তারেককে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।

তারেক লন্ডনেই অবস্থান করছিলেন ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এদিকে মরিয়ার্টির এ সুপারিশের ৬ মাস পর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি তারেকের বিষয়ে ওয়াশিংটনে আরেকটি তারবার্তা পাঠান। এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণার আওতায় পররাষ্ট্র দফতর তারেকের ভিসা বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করছে। রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি তার তারবার্তায় লিখেন, তারেক রহমানের দুর্নীতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। তার ভাঁড়ামি সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাকে দুর্বল করেছে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থিতিশীলতায় ক্ষয় ধরিয়েছে।

মরিয়ার্টি আরও লিখেন, আইনের শাসনের প্রতি তারেকের তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের কুখ্যাতি মার্কিন বৈদেশিক আর্থিক সাহায্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ। যে সাহায্য দেওয়া হয় আইন সংস্কার, সুশাসন জোরদার করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও লিখেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলের ঘুষ ও অর্থ আত্মসাৎ এবং দুর্নীতি কেলেঙ্কারি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সরাসরি ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। মরিয়ার্টির গোপন তারবার্তায় আরও বলা হয়, তার (তারেকের) কোটি কোটি ডলারের সরকারি অর্থ চুরি এই মডারেট মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত করেছে।

যা দেশটিতে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার শক্তিশালী করার মার্কিন উদ্যোগগুলোকেও দুর্বল করেছে। তাছাড়া তারেকের যথেচ্ছ দুর্নীতি মার্কিন মিশনের লক্ষ্যমাত্রার প্রতিও ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছিল। তারবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের তিনটি মূল অগ্রাধিকার কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে_ গণতন্ত্রায়ন, উন্নয়ন ও বাংলাদেশের আকাশ সন্ত্রাসবাদীদের ব্যবহার করতে না দেওয়া। কিন্তু তারেকের দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড এ তিনটি কর্মসূচিকেই ব্যাহত করেছে।

রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি লিখেন, তার (তারেকের) অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদাবাজি এবং বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ আইনের শাসন ব্যাহত করেছে এবং তা গণতান্ত্রিক স্থিতিশীল বাংলাদেশ গঠনের মার্কিন লক্ষ্যমাত্রায় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এছাড়া তারেক যে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসা ও ঘুষের সংস্কৃতি তৈরি করেছেন তা বহুল প্রত্যাশিত বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মার্কিন উদ্যোগকে থমকে দিয়েছে। আর এটা মার্কিন কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক তৎপরতাকেও জটিল করে তুলেছে। তারবার্তায় আরও বলা হয়, আইনের শাসনের প্রতি তারেকের তাচ্ছিল্য বাংলাদেশের মাটিতে জেঁকে বসতে সন্ত্রাসবাদীদের উৎসাহ জুগিয়েছে। এটা দেশটিতে দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করেছে।

মরিয়ার্টি লিখেন, সংক্ষেপে বাংলাদেশে যা কিছু খারাপ তার সব দায় তারেক ও তার সহচরদের। মরিয়ার্টি সুপারিশ করেন, তারেককে প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণা ৭৭৫০-এর বিষয়বস্তু করা হোক। এই ধারা বলে উলি্লখিত কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যে কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ করা যায়। তবে তারবার্তায় বলা হয়, তারেকের স্ত্রী জোবায়দা রহমান, তাদের কন্যা জাইমা রহমান এবং তারেকের মা খালেদা জিয়ার জন্য দূতাবাস প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণাটি প্রযোজ্য করার সুপারিশ করছে না। তারেক রহমানকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুষ্টু এবং ভয়ঙ্কর পুত্র অভিহিত করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেন, ২০০৭ সালে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তারেক গ্রেফতার হন।

এরপরের বছর ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। তারবার্তায় বলা হয়, সরকারি ক্রয় এবং রাজনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে তারেক প্রায়ই ঘুষ চাইতেন। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎ ও কর ফাঁকি অনেক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তারেক মুক্তি পেয়েছেন। মরিয়ার্টি লিখেন, সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে গভীর আঁতাতের মাধ্যমে তারেক বিচার প্রক্রিয়ায় কারসাজি করতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার জামিন আটকানোর যে চেষ্টা করেছিল তাকে জয় করতে সক্ষম হন।

বার্তায় বলা হয়, 'আমরা বিশ্বাস করি তারেকের বেশ কয়েকটি পাসপোর্ট আছে_ যুক্তরাজ্য যে পাসপোর্টে তাকে ভিসা দিয়েছে সেটিসহ। আরেকটি পাসপোর্ট ছিল ৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি বি-১/বি-২। যা ২০০৫ সালের ১১ মে ইস্যু করা হয়। আমাদের মনে হয় সেই পাসপোর্ট সরকার জব্দ করেছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি ডলার অর্জনের দায়ে গুরুতর অভিযোগ এনেছে।

তার বিরুদ্ধে কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলাও রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এ পর্যায়ে তারবার্তায় রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি মার্কিন কোম্পানি সিমেন্সের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণসহ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কয়েকটি মামলার সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে সিমেন্স মামলার বিবরণে মরিয়ার্টি বলেন, ওই প্রত্যক্ষদর্শী তারেক ও তার ভাই কোকোর কাছে সিমেন্সের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষ পেঁৗছে দেন। সিমেন্সের চুক্তির কাজের মোট অর্থ থেকে প্রায় ২ শতাংশ ঘুষ নেন তারেক।

যা মার্কিন ডলারে পরিশোধ করা হয়। মামলাটি এখন মার্কিন বিচার বিভাগ এবং এফবিআইও দেখভাল করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরাত দিয়ে তারবার্তায় মরিয়ার্টি আরও লিখেন, এসব ঘুষ ও চাঁদাবাজির বাইরেও তারেক ব্যাপক অর্থ তছরুপে জড়িত ছিলেন। কয়েকজন সহচরের মাধ্যমে তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ফান্ডের ৩ লাখ ডলার আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের বরাতে মরিয়ার্টি আরও বলেন, তারেক ছিলেন ওই তহবিলের সহ-স্বাক্ষরদাতা।

ওই ফান্ডের অর্থ দিয়ে তিনি নিজ শহরে একটি জমি কিনেছেন। এছাড়া ওই তহবিলের অর্থ তিনি ২০০৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির সদস্যদের মধ্যেও বিলি করেছেন। হাওয়া ভবনে 'ছায়া সরকার' চালাতেন তারেক রহমান : বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মধ্যে ছিল আরেক 'ছায়া সরকার'। এ সরকার চালাতেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন দল ও জোটের উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েক নেতা।

২০০৫ সালের ১১ মে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো হ্যারি কে টমাসের পাঠানো এক তারবার্তায় এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উইকিলিকস গত ৩০ আগস্ট বার্তাটি ফাঁস করেছে। ওই তারবার্তায় বলা হয়েছে, জোট সরকারের ভেতর অনুগত, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে ও দলের ভবিষ্যৎ কা ারি তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন। এ তালিকায় ১৭ জনের মতো রয়েছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার অবস্থানকে তিনটি স্তর ভেদে দেখানো হয়েছে_ ইনার সার্কেল, মিডল সার্কেল ও আউটার সার্কেল।

ইনার সার্কেলে রয়েছেন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাঈদ এস্কান্দার, লুৎফুজ্জামান বাবর, কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, সাইফুর রহমান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরা খালেদা জিয়ার খুব কাছের ব্যক্তি। কোনো বিষয়ে তাদের কথাকে বেশি গুরুত্ব দেন তিনি। মিডল সার্কেলে রয়েছেন রিয়াজ রহমান, মোসাদ্দেক আলী ফালু, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ হায়দার, মীর নাছিরউদ্দিন ও মতিউর রহমান নিজামী। আউটার সার্কেলে রয়েছেন মওদুদ আহমদ, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, মোরশেদ খান ও সেনাবাহিনীর প্রধান লে. জে. হাসান মশহুদ চৌধূরী।

তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে পৃথক মূল্যায়নও পাঠান রাষ্ট্রদূত। খালেদা জিয়া : সমালোচকরা তাকে অলস, অশিক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে দলের মূল ক্ষমতা তার হাতেই। তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হওয়ায় সাধারণ মানুষের আন্তরিকতা লাভ করেছেন সহজেই। তিনি দলের সর্বোচ্চ পদে না থাকলে বিএনপিতে ভাঙন দেখা দেবে বলে মনে করেন দলের অনেকেই।

তারেক রহমান : তিনি জিয়াউর রহমানের কুখ্যাত বড় ছেলে এবং মায়ের উত্তরসূরি। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠন ও নির্বাচনে জয়লাভে কৌশলগত বুদ্ধির প্রয়োগের কৃতিত্ব তার। ৬০ জনের মন্ত্রিপরিষদের এক-তৃতীয়াংশই তিনি পূরণ করেছেন বা বিক্রি করেছেন। সমালোচকরা বলেন_ তিনি খুবই নির্দয়, দুর্নীতিগ্রস্ত, একাডেমিক পড়াশোনার অবস্থাও খুব ভালো নয়, রাজনীতিতে অপরিপক্ব। তার অনুসারীরা বলেন, তিনি স্মার্ট, ডায়নামিক ও নতুন প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব।

তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে রয়েছেন। 'হাওয়া ভবন' নামে একটি বাসা থেকে তিনিই মূলত সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ওই ভবনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে 'ছায়া সরকার'। হারিছ চৌধুরী : খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন তিনি। দলের ভেতর তার পরিচয় তারুণ্যের রাজনীতিক হিসেবে, তার আচার-আচরণ অমার্জিত এবং বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নে তার সম্পৃক্ততা বেশ আলোচিত ঘটনা।

তিনি যে কোনো বিষয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত মন্তব্যে পারদর্শী, যাতে সহজেই অন্যকে প্রভাবিত করতে পারেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা হলেও সরকারের সব বিষয়েই তার হাত রয়েছে। সাকা চৌধুরী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মানুষ হত্যা ও অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগও রয়েছে। বহুল প্রচলিত ধারণা, তিনি চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।

কামাল সিদ্দিকী এবং তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত শমসের মোবিন চৌধুরীর ধারণা, ওই সংশ্লিষ্টতার কারণেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দায়িত্ব থেকে তাকে সরানো হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তিনি বেশ ভালোই বুঝতে পারেন। সাঈদ এস্কান্দার : খালেদা জিয়ার ভাই তিনি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর হিসেবে সেনা কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করা ও সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে তার হাত রয়েছে।

তিনি নিজে সংসদ সদস্য। ভাগ্নে তারেক রহমানের সঙ্গে তার ব্যবসা-বাণিজ্যও রয়েছে। লুৎফুজ্জামান বাবর : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠনের পেছনে তার ভূমিকা অনেক। তারেক রহমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা চোখে পড়ার মতো।

তিনি পরিচিত চোরাকারবারি এবং জামায়াত বা ইসলামপন্থি। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নয়। তিনি নিয়মিত থাইল্যান্ডে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে আসেন। সাইফুর রহমান : তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। সামগ্রিক অর্থনীতি, উন্নয়ন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তিনি ভূমিকা রাখছেন।

রাজনৈতিক কিছু বিষয়েও তার বেশ প্রভাব রয়েছে। তার ছেলে অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত। তিনি ছেলেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন না। খন্দকার মোশাররফ হোসেন : স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ আনুকূল্য যারা পেয়েছেন, তিনি তাদের একজন।

তার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ঘুষের টাকার জন্য ২০০২ সালে ইউএসএইডের অর্থায়নে আসা কনডমের চালান এক মাস আটকে রেখেছিলেন তিনি। মোসাদ্দেক আলী ফালু :তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সচিব। তিনি ২০০৪ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা-১০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তিনি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির মালিক। মতিউর রহমান নিজামী : শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার রাজনৈতিক পরিচয় তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক তার দল। আগামী ২৫ বছর পর বাংলাদেশ ইসলামী শাসনভিত্তিক দেশ হবে বলে তার দল আশা করে।

বাংলাদেশে টাটার ২৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের বিষয়ে প্রথম দিকে তিনি কঠোর বিরোধিতা করেন। কারণ এটি ভারতীয়। পরে তার এলাকাতেও কিছু অংশ বিনিয়োগ হবে জানার পর তিনি এটি সমর্থন করেন। ব্রিগেডিয়ার বারীকে চিনতে পারেন তারেক : বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার ওপর কঠোর নির্যাতন চালানো হয় অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, 'নির্যাতনকারীদের' মধ্যে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চৌধুরী ফজলুল বারীকে (ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন পরিচালক) চিনতে পারেন। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেছেন বলে ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় বলা হয়েছে।

তারবার্তায় আরও বলা হয়, লন্ডন থেকে খুব শিগগির দেশে ফেরার পরিকল্পনা নেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের। দেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ওপর তার আগ্রহ আছে, কিন্তু নিজে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় কোনো ভূমিকা রাখছেন না। তারবার্তা অনুযায়ী, ওই মার্কিন কর্মকর্তা ২০০৯ সালের ১ মে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে চার ঘণ্টা কথা বলেন। এতে বলা হয়, তারেক মার্কিন কর্মকর্তাকে বলেন, আটক থাকার সময় নির্যাতনের কারণে তার মেরুদ ে জখম হয়। সেই চিকিৎসা এখনও চলছে।

নির্যাতনকারীদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল বারীকে চিনতে পারেন তিনি। বার্তায় এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করা হয়, তারেকের পরিবারের পক্ষ থেকে এর আগে বলা হয়েছিল, তাকে সত্যি পেটানো হচ্ছে কি-না তা নিশ্চিত হতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারবার্তার মন্তব্য অংশে বলা হয়, রাজনীতি নিয়ে আপাত অনাগ্রহ সত্ত্বেও তারেক যে এখনও বাংলাদেশে শক্তিশালী এক রাজনৈতিক শক্তি, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই বললেই চলে। তার অনেক সমর্থক ২০০৯ সালের এপ্রিলে এক উপনির্বাচনে তারেকের অংশগ্রহণ চেয়েছিলেন। দৃশ্যত ছেলের রাজনীতিতে ফেরা অনেক তাড়াতাড়ি হয়ে যায়, এ কথা বিবেচনা করেই খালেদা জিয়া তাতে সম্মত হননি।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আগামী নির্বাচনে তারেকের প্রমাণিত সাংগঠনিক দক্ষতা কাজে লাগাতে চাইবেন। এতে আরও বলা হয়, এখন নির্বাসনে থাকলেও তারেক রহমান যে একদিন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে পারেন, সে ব্যাপারে তেমন সংশয় নেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.