আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাবি'র সহিংস ঘটনায় চাপা পড়া দু'টি কথা

সত্য প্রকাশে সবসময় নির্ভিক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার দিনের অনেক কথা চাপা পড়ে গেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রশিবির-পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে একজন ছাত্র নিহত হয়। আহত হয় উভয় সংগঠনের ২০ জনের মত। তারপর থেকে শুরু হয় গণগ্রেফতার।

যা আজ অবধি চলছে। সে দিনের পর থেকে শুরু হয় তুমুল মিডিয়ার ঝড়। মিডিয়া যেন বিষয়টি নিয়ে একটু বেশিই মেতে ওঠে। কিছু কিছু মিডিয়া অতি উৎসাহী হয়ে পৃথিবীর একটি প্রভাবশালী দেশের বরাত দিয়ে একটি সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসাবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। বিভিন্ন মিডিয়ায় ধারাবাহিক কয়েক দিন কাগজের প্রধান শিরোনাম ও টিভি চ্যানেলগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ বিশেষ প্রতিবেদন।

ঢাকা থেকে এসাইনমেন্ট নিয়ে অনেক মিডিয়ার শীর্ষ রিপোর্টাররা রাজশাহীতে এসেছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপানোর জন্য। অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছে। কিন্তু সেদিনের কিছু কথা না বলা থেকে গেছে। যা বিভিন্ন কারণে পত্রিকায় প্রকাশ হয়নি। একটি বিশেষ শ্রেণীর সাংবাদিকরা এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় বাদ দিয়ে দারুণ আনন্দ উপভোগ করেছে।

অন্যদিকে বিপরীত একটি শ্রেণীর সাংবাদিকরা ভয়ে অথবা সময়ের অভাবে এ সকল সংবাদ তাদের মিডিয়াতে দিতে পারেননি। ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দিনের পুরো ধারণা পেতে যে সকল তথ্য জাতির জানা দরকার সেগুলো সময়ের অভাবে নয় বরং কিছুটা ভয়েই হয়তো প্রকাশ করা হয়নি । সে রাত নিয়ে প্রথমে বলা যাক সংঘর্ষের পূর্বের কিছু আহতের কথা। রাত ১২টার দিকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে রাবি'র নবাব আব্দুল লতিফ হল তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি চালানোর শেষে পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল গেটে অবস্থান থাকা অবস্থায় আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক ও আরবী বিভাগের ছাত্র সানোয়ারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারাত্মক জখম করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

সানোয়ারের চিৎকারে লতিফ হল চত্বর ভারি হয়ে এলেও সামান্যতম বুক ফাটেনি রাবি প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের। মাথা থেকে রক্ত ঝড়া অবস্থায় নিজেই দৌড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের দিকে ছুটে। এই লৌহমর্ষক ঘটনার সময়ও রাবি প্রক্টরের মুখ থেকে মুচকি হাসি দেখে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পুলিশ প্রশাসন কি তল্লাশি করল জানিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবসিক হলসমূহ তল্লাশি করা হয় হলের ভেতরে কোন অস্ত্র আছে এমন তথ্য থাকলে।

অস্ত্র উদ্ধারই থাকে প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু সেদিন হল তল্লাশি চালিয়ে রাবি'র কতিপয় নিরস্ত্র শিক্ষার্থী গ্রেফতার করে যখন প্রক্টর ঘোষণা দেন ভেতরে কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। ঠিক সেই মুহূর্তে কিভাবে একজন ছাত্র ধারালো অস্ত্রের দ্বারা আহত হয়ে বের হয় তা গোটা জাতির সামনে প্রশ্ন হওয়ার কথা। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। সাংবাদিক ও সুধী সমাজের জানা উচিত ছিল কোথায় আছে সানোয়ার।

পরের দিন বেশ কয়েকটি মিডিয়াতে আহতদের যে নাম এসেছিল তাতে সানোয়ারের নাম ছিল না। অথচ রাবিচিকে'র ডাক্তাররা সানোয়ারের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পত্রিকাগুলো বেমালুম সানোয়ারের আহত হওয়ার কাহিনী বাদ দিয়ে নিজেদের মনমত রুমে বসে মোবাইল ফোনে হয়তো তথ্য সংগ্রহ করেছিল বলেই এমনটি ঘটেছে। কিন্তু কেন আহত সানোয়ারের নাম বাদ দিয়েছে সেটাও জাতির আজ প্রশ্ন। তবে সানোয়ারের আহত হওয়াকে ঢেকে রেখে যদি আসল ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত হয় তবে সে দায় ভার চেপে যাওয়া সচেতন! মিডিয়াগুলোকে নিতে হবে।

এছাড়াও প্রায় শতাধিক পুলিশের উপস্থিতিতে হাবিবুর রহমান হলের সামনে ইসরাফিল নামের একজন ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ। ১০ হাত দূরেই পুলিশ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। পরে ছাত্রলীগের মনের খায়েশ মিটে গেলে তারাই ইসরাফিলকে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশের কড়া প্রহরায় বেদম প্রহার করা হয় জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র সুমনকে। রাত ১০টার পর থেকে পুরো ক্যাম্পাস পুলিশে ছেয়ে গেলেও বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার খবর আসছিল।

সেদিন রাতে খন্ড খন্ড মারপিটে ৫ জন ছাত্র আহত হওয়ার খবর সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ছিল কিন্তু পরদিন অজ্ঞাত কারণে তাদের নাম পত্রিকায় আসেনি। তাদের নাম পত্রিকায় আসলে হয়তো বিশেষ মহলের বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হতে হতো। এবার বলা যাক মূল ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে। রাতে বঙ্গবন্ধু হলের ঘটনা থেকেই মূল ঘটনার উৎপত্তি। আমাদের জানতে হবে বঙ্গবন্ধু হলের ঘটনা কি পরিকল্পিত ছিল।

আমি বলবো বঙ্গবন্ধু হলে একজন অনাবাসিক ছাত্রের অন্যের সিটে জোরপূর্বক ওঠার চেষ্টা পরিকল্পিত হয় তবেই বুঝা যাবে হত্যাকান্ড পরিকল্পিত ছিল। ফারুক হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা তারাই করেছিল যারা বঙ্গবন্ধু হলের অনাবাসিক ছাত্র আসাদকে অবৈধভাবে হলে ওঠার জন্য পাঠিয়েছিল। ছাত্রলীগের রাবি'তে সবচেয়ে ভিত দুর্বল ছিলো বঙ্গবন্ধু হলে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ করা একমাত্র কর্মী কাউসার থাকতো বঙ্গবন্ধু হলে। ইতোপূর্বে কয়েকবার ঐ হলের অনাবাসিক (ছাত্রলীগ কর্মীরা) ছাত্ররা হলে ওঠার চেষ্টা করে পারেনি।

সেদিন কেন আসাদ একা হলে উঠতে গেল সে কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তবেই বের হবে ফারুক হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী কারা? তাদের চিহ্নিত করতে হবে এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের জন্য। ছাত্রলীগ গত ২৭ জানুয়ারি রাবি শাখার নতুন কমিটি গঠনের পর ক্যাম্পাসে তেমন কোন কর্মসূচি পালন না করলেও ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে কোন অপরাধ ছাড়াই ছাত্রদলের তিন নেতাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। সাড়ে ১২টার দিকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্যাম্পাসে আর কোন ছাত্রদল কর্মী আছে কিনা তা খোঁজার জন্য হন্য হয়ে বের হয়। পরিচিত কোন ছাত্রদল কর্মী না পেয়ে ছাত্রদল নেতাদের সাথে ক্যাম্পাসে কথা বলে বা চলাফেরা করে এমন ছাত্রদের খোঁজা শুরু করে।

এতে ক্যাম্পাসে একটি আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। পরের দিন দুয়েকটি পত্রিকায় খবরটি ছাপা হলেও অধিকাংশ পত্রিকা বিষয়টি চেপে যায়। নিজেদের ঘর গোছানোর কাছে যখন ব্যস্ত থাকার কথা সেই সময়ে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা অপরিকল্পিত হলেও পরের ছাত্রদলের সাধারণ কর্মী বা ছাত্রদল নেতাদের সাথে চলত এমন ছাত্র খোঁজাতে মনে হয় বিষয়টি অবশ্যই একটি পরিকল্পিত বিষয়। ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরের ঘটনার কথা মনে হলেই এটাই মনে হয় সে রাতের সমস্ত কাহিনী পরিকল্পিত আর সেই পরিকল্পনা করেছে ছাত্রলীগ ও তাদের সুধীমহল। ছাত্রলীগ ও তাদের সুধীমহলের পরিকল্পনার কথা আরও পরিষ্কার বোঝা যায় যখন ক্যাম্পাসে দু'টি ছাত্র সংগঠনের মিছিলের খবর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানায়।

ইতোপূর্বে কখনও এমন হয়নি। বরং আজ তারা জানতো ক্যাম্পাসে একটি হত্যাকান্ড হবে। আর এজন্য তারা পূর্বের পরিকল্পনা মোতাবেক সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। বিষয়টি আরও একটু পরিষ্কার হয় যখন জান যায়, একটি হলে আহত ১১ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ১০ জনকে মেডিকেলে নেয়া হলো বাকি একজন ঐ সময় কোথায় ছিল। আহতদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে সকলেই মার খেয়ে দৌড়ে এসে হল গেটের পুলিশের কাছে আসে এবং পুলিশ তাদের মেডিকেলে পাঠায়।

তাহলে ঐ সময় ফারুক কোথায় ছিল আর কাদের হাতে বন্দি ছিল ফারুক এটা তদন্ত কমিটিকে বের করতে হবে। আর যদি তদন্ত কমিটির অনেক সদস্য পূর্বের সাজানো নাটকের সাথে জড়িত থাকে এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্টও যদি পূর্ব থেকে তৈরি করে রাখা হয় তবে আপাতত ফারুক হত্যার আসামীরা পার পেয়ে যাবে। একই সাথে কিছু নির্দোষ ছাত্র এই সাজা ভোগ করবে। যদি ঘটনার আগে-পিছের কিছু ঘটনা খতিয়ে না দেখে তদন্ত অবহেলার মাধ্যমে জাতির সামনে একটি ভুল রিপোর্ট দেয়া হয়। আর এরই প্রেক্ষিত যদি বিচার করা হয় তবে এর দায়ভার সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে এবং এর মাশুল তাদের দিতেই হবে এ জাতির কাছে।

লেখক : ছাত্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.