ব্যাপক সংঘর্ষ-সহিংসতা ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, আনসার সদস্যসহ ২১ জন নিহতের মধ্য দিয়ে গতকাল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোট ঠেকাতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি অসংখ্য কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর, আগুন, বোমাবাজি ও ব্যালট বাঙ্-পেপার ছিনতাই করেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে এ সময় অধিকাংশ নিহতের ঘটনা ঘটে। কয়েকশ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সহিংস এই নির্বাচনে নিহতদের মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে ৪, দিনাজপুরে ৪, ফেনীতে ২, রংপুরে ২, নীলফামারীতে ২, চট্টগ্রামে ১, যশোরে ১, গাইবান্ধায় ১, নওগাঁয় ১, লক্ষ্মীপুরে ১, মুন্সীগঞ্জে ১ ও লালমনিরহাটে একজন।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে হামলা হয়েছে প্রায় ৫০টি কেন্দ্রে। সেখানে এক সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বিএনপির তিন কর্মী। দিনাজপুরে পিটিয়ে এক আনসার সদস্যকে হত্যা ছাড়াও সংঘর্ষ-গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনজন। গুলিতে এ ছাড়াও ফেনীতে ছাত্রদল-যুবদলের দুই কর্মী এবং জামায়াত-শিবিরের রংপুরে দুই, নীলফামারীতে দুই, চট্টগ্রামে এক, যশোরে এক, গাইবান্ধায় এক ও লক্ষ্মীপুরে এক কর্মী নিহত হয়েছেন।
নওগাঁয় র্যাব-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। মুন্সীগঞ্জে পুলিশের ধাওয়ায় ডোবায় পড়ে ছাত্রদলের এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। লালমনিরহাটে সংঘর্ষে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মারা গেছেন। ঝিনাইদহে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ চারজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। রাজশাহীতে ৫০টি দোকান ও ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছেন ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ভোট বর্জন করায় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। বাকি ১৪৭টি আসনে চার কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ ভোটারের ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকলেও নানা আশঙ্কা-আতঙ্কে উপস্থিতি ছিল কম। কিন্তু এর মধ্যেই ভোট বানচালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা। তাদের তাণ্ডবের মুখে রণপ্রস্তুতিতে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর পন্থাবলম্বন করেন। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
অনেক কেন্দ্রে যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর_ ঠাকুরগাঁও : সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে পিটিয়ে হত্যাসহ চারজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন কেন্দ্রে পুলিশসহ আহত হয়েছে শতাধিক। নিহতরা হলেন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার জবায়দুল হক (৫০), বিএনপি কর্মী জয়নাল আবেদিন (৩০), হারুন (৪০) ও আবু হানিফ (৩০)। প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে নাশকতার আশঙ্কায় বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র দুপুরের আগেই বন্ধ করে কর্মকর্তারা চলে যান।
দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার বাসুদেবপুর কেন্দ্রে হামলা চালালে পুলিশের গুলিতে বিএনপি কর্মী জয়নাল আবেদিন ও হারুন নিহত হন। গড়েয়া গোপালপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আবু হানিফ তীরবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সদর উপজেলার ছেপড়ীগুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবার রাতে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার জবায়দুল হককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঠাকুরগাঁও-১ আসনের প্রায় ৫০টি কেন্দ্রে হামলা চালান বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা। তারা ভাঙচুর ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে পুড়িয়ে দেন।
কয়েকটি স্থানে পুলিশের অস্ত্রও ছিনিয়ে নেন বিএনপি কর্মীরা। পরে ঠাকুরগাঁও সদরে ১৬২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৯টিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। জেলা রিটার্নিং অফিসার মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, 'ওইসব এলাকায় যৌথবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ' দিনাজপুর : বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর, নির্বাচনী সামগ্রী ছিনতাই, লুটপাট ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। চারজন নিহত ও প্রিসাইডিং অফিসারসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।
খানসামা, চিরিরবন্দর ও ঘোড়াঘাটে ৪৭টি কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলায় ৬৭২ কেন্দ্রের মধ্যে ১২৪টিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে ইসি। পার্বতীপুরের উত্তর শালন্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার পবন কুমার সরকার জানান, সকাল ৯টা থেকে ভোটকেন্দ্রে দফায় দফায় হামলা হয়। ছিনতাই করা হয়েছে ব্যালট পেপার। বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রে কর্মরত আনসার সদস্য আবদুল ওয়াহেদ আলীকে (৪৮) পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
হামলায় প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ছয়জন আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, ঘটনার পর তারা আত্দরক্ষায় নিরাপদে চলে যান। কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পার্বতীপুরের মমিনপুর হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রের সামনে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে উপজেলা যুব জাগপার সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রায়হান (২৪) নিহত হন।
আহত হয়েছেন ছয়জন। মাসুদ নিহত হওয়ার ঘটনায় জেলা যুব জাগপা আজ দিনাজপুরে অর্ধদিবস ও পাবর্তীপুরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। বীরগঞ্জের শিবরামপুর কেন্দ্রে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে কাটঘর মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র মো. সালাউদ্দিন (১৭)। সে মোহনপুর ইউপির ভগিরপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। স্বজনরা বলছেন, নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে সে ভোট দেখতে যায়।
সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হলে তাকে বীরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, পার্বতীপুরের মনমথপুর ইউপির খুরাই ভোটকেন্দ্রের সামনে সংঘর্ষে চিরিরবন্দরের হয়বৎপুর গ্রামের বাসিন্দা চুন্নু (৩০) নিহত হয়েছেন। তার বাবার নাম তফিউদ্দিন। স্থানীয়রা এ তথ্য জানালেও চুন্নু নিহতের ঘটনা স্বীকার করেনি পুলিশ।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহেনুল ইসলাম কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের কথা স্বীকার করে বলেন, 'ব্যালট পেপার উদ্ধারের কাজ চলছে। ' জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান বলেন, 'আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিতের খবর আসেনি। ' ফেনী : ফেনী-৩ আসনের সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চরচান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে হামলা চালান বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। পুলিশের সঙ্গে এ সময় তাদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ একপর্যায়ে গুলি চালালে যুবদল কর্মী জামশেদ আলম (২৮) ও ছাত্রদল কর্মী মো. শহিদুল্লাহ (২২) নিহত হন।
পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। সকালে একই উপজেলার পালগিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪০০ ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়। শনিবার রাতে উত্তর পশ্চিম চর দরবেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম লুট হওয়ায় সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) সামছুল আলম জানান, জামশেদ ও শহিদুল্লাহর লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে। রংপুর : ভোটগ্রহণের আগেই রংপুর-৪ আসনের পীরগাছা উপজেলায় ব্যালট পেপার ও বাঙ্ ছিনতাইয়ের সময় পুলিশের গুলিতে দুই জামায়াত-শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পাঁচজন। ব্যালট পেপার, বাঙ্ লুট ও অগি্নসংযোগের কারণে ৫১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত। আহত হয়েছেন ছয়জন প্রিসাইডিং অফিসার। তবে এ আসনে ১০৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। রংপুর-৩ ও ৬ আসনেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হয়েছে।
রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে পীরগাছা উপজেলার দেউতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে শনিবার রাতে হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ও বাঙ্ লুটের চেষ্টা করেন জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা। পুলিশের গুলিতে এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হন জামায়াত কর্মী মিরাজুল ইসলাম (৪৫) ও শিবির কর্মী হাদিউজ্জামান (১৪)। পীরগাছা থানার ওসি মকবুল হোসেন বলেন, 'মিরাজুল পারুল ইউনিয়নের আরাজিচালুনিয়া গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে। হাদিউজ্জামান একই ইউনিয়নের কুঠিয়ালপাড়া গ্রামের ওজারগোলের ছেলে ও মেকুড়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র। ' গুলিবিদ্ধ চারজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জামায়াত-শিবিরের হামলায় আহত হয়েছেন ছয়জন প্রিসাইডিং অফিসার। তারা হলেন দেওয়ান মোহাম্মদ সালেহ দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের আসাদ আলী, ইটাকুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সাবের আলী, ইটাকুমারী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের আরিফুর রহমান তোকদার, মহিষমুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের শফিউল ইসলাম, জ্ঞানগুরু উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের আইয়ুব আলী ও মকররমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের আনোয়ারুল ইসলাম। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌস জাহান বলেন, 'নিরাপত্তার অভাব, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাঙ্ লুট ও অগি্নসংযোগের কারণে ৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫১টিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। ' নীলফামারী : ভোটকেন্দ্রে আগুন ও দখলের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ডিমলা ও জলঢাকায় জামায়াত-শিবিরের দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। আগুন, হামলা ও সংঘর্ষের কারণে দশটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
শনিবার রাতে ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ব্যাপারীতলা আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে আগুন দেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালায়। শিবির কর্মী জাহাঙ্গীর আলম (২৫) এ সময় মারা যান। তিনি খালাশি চাপানী গ্রামের ইছামুদ্দিনের ছেলে এবং কারমাইকেল কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে, ভোট চলাকালীন জলঢাকা উপজেলার বালাপাড়া কাচারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালান জামায়াত কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ সময় সংঘর্ষ বাধে।
একপর্যায়ে গুলিতে জামায়াত কর্মী মমতাজ উদ্দিন (৫০) নিহত হন। তিনি কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল গ্রামের বাসিন্দা এবং ভেরভেরী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। এ ছাড়া জলঢাকা পৌরসভার বারোঘরি পাড়ায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা সংখ্যালঘু পরিবারের ঘরবাড়ি ও মন্দির ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ সুপার (চলতি দায়িত্ব) জোবায়েদুর রহমান জানান, জামায়াত-শিবির কর্মীরা কেন্দ্রে আগুন লাগাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ওই দুজন নিহত হন। নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাব দায়িত্ব পালন করছে।
সেনাবাহিনীর টহলও অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম : মহানগর অনেকটা শান্ত থাকলেও জেলার সাতটি উপজেলার বেশির ভাগই ছিল উত্তপ্ত। জামায়াত-শিবির কর্মীরা বিভিন্ন কেন্দ্রে তাণ্ডব চালান। তারা কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, ব্যালট বাঙ্ ছিনতাই, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। লোহাগাড়া উপজেলায় কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাঙ্ ছিনতাইকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শিবির কর্মী এনামুল হক (২২) নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল ৪টার দিকে বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জামায়াত-শিবিরের কিছু কর্মী হামলা চালান। তারা ককটেল ফাটিয়ে ব্যালট বাঙ্ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালান। লোহাগাড়া থানার ওসি মো. শাহজাহান বলেন, 'ব্যালট বাঙ্ ছিনতাইকালে গুলিতে ওই শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন। ' এদিকে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার কেড়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। বেলা ২টার দিকে তারা ওই কেন্দ্রে ঢুকে চারটি বুথের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে ব্যালট বই কেড়ে নেয়।
এরপর সিল মেরে বাঙ্ েঢুকিয়ে চলে যায়। কেন্দ্রটির সামনে এ সময় দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ডের মান্দারী তোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকে অতর্কিত চারদিকে ঘিরে ককটেল ছোড়েন শিবির কর্মীরা। তারা কেন্দ্রের বাইরে নির্বাচনী উপকরণবাহী একটি খালি পিকআপ ভ্যানেও আগুন ধরিয়ে দেন এবং কেন্দ্রের দিকে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছোড়েন। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার রতন চক্রবর্তী বলেন, 'পরপর ককটেল বিস্ফোরণ ও ?ইটপাটকেল ছোড়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
' সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার বিভিন্ন সড়কে শনিবার রাত থেকে গাছ ফেলে রাখায় ঘটনাস্থলে র্যাব, বিজিবিসহ সেনাবাহিনী পেঁৗছাতে দেরি হয়। দুপুরে সাতকানিয়ার ঢেমশা ইউনিয়নের উত্তর ঢেমশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসার জামাল উদ্দিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন জামায়াত-শিবির কর্মীরা। তারা তার দুই হাত থেঁতলে দেন। পরে পুলিশসহ আরও ১০ জনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ওই কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে ব্যালট বাঙ্ ছিনতাই করেন জামায়াত-শিবির কর্মীরা। যশোর : যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোট বাঙ্ ভাঙচুর, বোমাবাজি ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় ১২২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৭টিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার থেকেই বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীরা গোটা মনিরামপুরে মহড়া দেওয়া শুরু করেন। রাতে ছয়টি কেন্দ্র থেকে তারা ব্যালট বাঙ্ ও পেপার ছিনতাই করেন। বোমা হামলা ও আগুন দেওয়া হয় তিনটি কেন্দ্রে। সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। উপজেলার অন্তত অর্ধশত কেন্দ্রে তারা হামলা চালান।
এসব ঘটনায় একজন নিহত ও তিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বেলা ২টার দিকে বাজিতপুর কেন্দ্রে হামলা, বোমাবাজি ও ভাঙচুর করে ব্যালট বাঙ্ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এ সময় গুলি চালালে মতিয়ার রহমান নামে এক জামায়াত কর্মী আহত হন। গোপনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মতিয়ার ওই এলাকার বিপ্রকোনা গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে।
হামলায় আহত হাজরাকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার সরদার তরিকুল ইসলাম বলেন, 'সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভোটবিরোধীরা কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়ে তাণ্ডব শুরু করে। এ সময় মাত্র একজন পুলিশ ও একজন আনসার সদস্য ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। আমি নিজে ব্যালট পেপার লুটে বাধা দিতে গেলে ক্যাডাররা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। ' গাইবান্ধা : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সাহাবুল ইসলাম তারা (২৮) নামে এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া নিজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার মাসুদুর রহমান নিখোঁজ রয়েছেন। ভোটগ্রহণ শেষে টেম্পোতে ব্যালট বাঙ্ নিয়ে ফেরার পথে গোবিন্দগঞ্জের ভাগদরিয়া নামক স্থানে পেট্রলবোমায় পুলিশ কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদের শরীর ঝলসে গেছে। গাইবান্ধার চারটি আসনের ৪৬৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ২০১টিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে জামায়াত-বিএনপি কর্মীদের হামলা, ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেওয়া, সংঘর্ষ ও উপকরণ না পেঁৗছানোর কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা কেটে ও গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করায় পলাশবাড়ীতে ৪৮টি ও সুন্দরগঞ্জের ৩৫টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পেঁৗছানো সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর দেড়টার দিকে সুন্দরগঞ্জের বাজারপাড়া, মনমথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বামনডাঙ্গা এনএম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালান জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষে শিবির কর্মী সাহাবুল নিহত ও ২১ জন আহত হন। সাহাবুল মনমথ গ্রামের সলেয়া রহমানের ছেলে। একই গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে মশিউর রহমান লিটনকে (২০) গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া পলাশবাড়ী উপজেলার তিনমাথা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নওগাঁ : মান্দা উপজেলার চকদেবিরাম গ্রামে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী বাবুল হোসেন (৩৫) নিহত হয়েছেন। তিনি ওই গ্রামের নজর আলীর ছেলে। এ ঘটনায় বিএনপির সাত নেতা-কর্মী ও দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মান্দা থানার ওসি আবদুল্লাহেল বাকি জানান, সকাল থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা তীর, ধনুক, লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেন।
সেই সঙ্গে তারা গ্রামের পাশে একটি মাঠে সংঘবদ্ধ হয়ে মহড়া দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পেঁৗছলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে এ সময় তাদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ এসএমজির ১০ রাউন্ড ও শটগানের ২৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মকলেছুর রহমান জানান, তাদের নেতা-কর্মীরা কাউকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেননি।
দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে র্যাব ও পুলিশ গুলি চালালে আহত আটজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা ৩টার দিকে বাবুল হোসেন মারা যান। লক্ষ্মীপুর : পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিবির কর্মী মো. রুবেল (২২) নিহত হয়েছেন। রামগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাঙ্ ও পেপার ছিনতাইয়ের সময় বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। লামচর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আরিফ হোসেন, রামগঞ্জ থানার এসআই মো. ফরহাদ হোসেনসহ এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। রুবেলের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ চরমান্দারী এলাকায়।
তিনি রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসায় পড়তেন। তার বাবার নাম বশির আহমেদ ওরফে বসু মেম্বার। লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরীফুল ইসলাম খান জানান, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। তবে রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, 'পুলিশের গুলিতে রুবেল নিহত হয়েছেন। ' রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মাহবুবুল আলম জানান, সহিংস ঘটনায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের ৮১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ : ধাওয়া খেয়ে ডোবায় পড়ে ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক কংকন মিয়া মারা গেছেন। শনিবার ভোর রাতে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা দক্ষিণ শিমুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে ধাওয়া করে। পুলিশ গতকাল সকালে তার লাশ উদ্ধার করে। তবে টঙ্গিবাড়ী থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, 'পুলিশের ধাওয়া নয়, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ' লালমনিরহাট : বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও হামলায় সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন ১৬ জন।
ভাঙচুর, ব্যালট বাঙ্ ছিনতাই ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় দুটি নির্বাচনী আসনের সাতটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পাটগ্রামের হোসনাবাদ কেন্দ্রে পুলিশের রাইফেল ছিনতাই করেন বিরোধী দলের কর্মীরা। পরে পুলিশ তা উদ্ধার করে। আগের দিন শনিবার সকালে সংঘর্ষে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ফারুক হোসেন গতকাল ভোর রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ-৩ আসনে কোটচাঁদপুর উপজেলার মামুনশিয়া ও কোলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শনিবার রাত ১১টার দিকে আগুন দেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা।
বাধা দিতে গেলে তারা সেখানে কর্তব্যরত এসআই মিলন, কনস্টেবল জাবিরুল ইসলাম ও আনসার সদস্য ওহিদুল ইসলামকে কুপিয়ে আহত করেন। কোটচাঁদপুর থানার ওসি শাহজাহান আলী জানান, আগুনে বেশকিছু ব্যালট পেপার ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। অন্যদিকে মহেশপুরে নাটিমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা অলিয়ার রহমানকে কুপিয়ে জখম করেছেন জামায়াত-বিএনপি কর্মীরা। নোয়ানিপাড়ার মোড়ে গতকাল সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজশাহী : রাজশাহী-৩ আসনের পবা উপজেলার নলখোলা বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১টার দিকে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের ৫০টি দোকান ও ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ওই কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে জামায়াত-শিবির কর্মীদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ। তারাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পরে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।
কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। রাজশাহী : চারঘাট ও পবার দুটি কেন্দ্রে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পবা এলাকা থেকে তিন শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ, সাহেরা গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়, অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, রামকানাই হাই একাডেমি, আনন্দময়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, তোফায়েল আজম কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অর্ধশতাধিক ভোটকেন্দ্রে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এছাড়া আশুগঞ্জের ৭টি ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা।
বিজয়নগর উপজেলার ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার মো. সেলিমকে মারধর করে সরকারদলীয় লোকজন। নাসিরনগর-১ উপজেলার চাতলপার ফুলকান্দি ভোটকেন্দ্রে ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও গুলি বর্ষণ করে। পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঝিনাইদহ : সকালে জামায়াত-বিএনপির একটি দল মহেশপুরে দাড়িয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও বাঙ্ ছিনতাই করে।
এ সময় পুলিশ ছিনতাইকারীদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি করে। উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের গোয়ালহুদা ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও বাঙ্ পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল নিক্ষেপের সময় জনতা মোমিন নামে একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আবদুর রশিদ (২৩), সাইফুল ইসলাম (৪০) ও যুবদল নেতা জিয়াউর রহমান আটক করা হয়। এদের মধ্যে আবদুর রশিদ ও সাইফুল ইসলামকে গোমস্তাপুর উপজেলার মকরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এবং একটি ককটেলসহ ভোলাহাট সদর ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবদল সেক্রেটারি জিয়াউর রহমানকে চরধরমপুর ভোটকেন্দ্র এলাকা থেকে আটক করা হয়।
মেহেরপুর : গাংনী উপজেলার দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা কালে আবুল বাশার নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। হবিগঞ্জ : বানিয়াচং উপজেলার কবিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের এক কর্মী জাল ভোট দিতে গেলে জাতীয় পার্টির এজেন্টের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়। কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত রয়েছে। উপজেলা সদরের বিএসডি মাদ্রাসা কেন্দ্রে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটনায় দুর্বৃত্তরা। উপজেলা সদরের চৌধুরীপাড়া কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগ কর্মী আরফান আলীকে (৪৫) আটক করেছে যৌথবাহিনী।
বগুড়া : গাবতলী উপজেলায় ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ায় ৮৮টির মধ্যে ৪৬টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। গাবতলী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে অগি্নসংযোগের পর পুলিশ ব্যালট পেপার ও বাঙ্ গাবতলী মডেল থানায় নিয়ে আসে। এ সময় ১৮ দলের নেতা-কর্মী থানায় ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে অবরোধে করলে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ ২ জনকে আটক করে। পুলিশের রাবার বুলেটে ১৮ দলের ১২ কর্মী আহত হয়।
শাজাহানপুর উপজেলার মানিকদীপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যকাতুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দড়িনন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে অগি্নসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের বড়নগর সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাঙ্ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। একই সময়ে কৈগাড়ি এলাকায় সিও অফিস ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২টি ব্যালট বাঙ্সহ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। জামালপুর : ভোরে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গাড়া ডোবা সিরাতুন্নবী আলেয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ব্যালট বাঙ্ ছিনতাই ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরে কেন্দ্র ২টির ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
ইসলামপুর (জামালপুর-২) আসনের সাপধরী ইউনিয়নের উত্তর জোরডোবা রেজিস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অগি্নসংযোগের কারণে কেন্দ্রটি উলিয়া হাইস্কুলে স্থানান্তর করা হয়। সরিষাবাড়ীর আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। জেলা সদরে ৭ বিএনপি কর্মীকে আটক করা হয়েছে। মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে জুড়ী বড় ধামাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বিছরাবাজার, রতুলী কেন্দ্রে ফটকা ফুটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়।
সকালে কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আনসার সদস্যদের পোশাক পরে ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীরা হামলা করলে পুলিশ সদস্য আনোয়ার হোসেন ও আনসার সদস্য মনসুর মিয়া ও একজন ভোটার আহত হয়। এ সময় পুলিশ ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করলে হামলাকারীরা রাইফেল ছিনিয়ে নেয়। যৌথবাহিনী এসে রাইফেল উদ্ধার এবং আসুক উদ্দিন (২৬) ও শিপার আহমদ (২৩) নামে ২ জনকে আটক করে। নান্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলা চালালে পুলিশ ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে, আবারও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করলে পুলিশ ৭ রাউন্ড গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় শাহবাজপুরের আতুয়া গ্রামের সাইদুর রহমান নামে ১ জনকে আটক করে যৌথবাহিনী।
দিনাজপুর : সহিংসতার কারণে জেলার ৬৭২টির মধ্যে ১২৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে সদরের ১২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১টি, খানসামা উপজেলার ৫২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩২টি, চিরিরবন্দরের ৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৫টি, পার্বতীপুরের ৮৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি, বীরগঞ্জের ৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫টি, ঘোড়াঘাটের ৩৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫টি, কাহারোলের ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১টি এবং নবাবগঞ্জের ৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১টি কেন্দ্র। মাগুরা: মাগুরা-২ আসনের মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রাহাতপুর ও নিত্যানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা ভাঙচুর ও ব্যালট বাঙ্ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভোটকেন্দ্র দুটি বাতিল করা হয়। দুর্বৃত্তদের হামলায় ইরফান ও দুলাল নামের দুই আনসার সদস্য আহত হন।
পরে দুর্বৃত্তরা নিত্যানন্দপুর স্কুলকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালট নষ্ট করে। নীলফামারী : সহিংসতার কারণে নীলফামারী-১ আসনের ১১টি কেন্দ্র এবং নীলফামারী-৩ আসনে ৪টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। লালমনিরহাট : লালমনিরহাট-৩ আসনের মোগলহাট কেন্দ্রে ভোট দিতে এলে ওসমান গনি (৫৪) নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেয় জামায়াত-শিবির। একপর্যায়ে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় তারা। কুমিল্লা : শনিবার রাতে ও গতকাল মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে আগুন, ব্যালট বাঙ্ ছিনতাই, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, বাড়িঘর ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
বিভিন্ন স্থানে এ সহিংসতায় পুলিশ, আনসার, প্রিসাইডিং অফিসারসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। সহিংসতা ও নাশকতার ফলে রাতেই মনোহরগঞ্জের ৪টি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নাশকতার ফলে গতকাল আরও ১০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়নি। উপজেলার বিনয়ঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির ব্যালট ভর্তি ৭টি বাঙ্ নিয়ে যায় ও কেন্দ্রে ভাঙচুর চালায়। তাদের হামলায় সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল এবং পুলিশ ও আনসারের ৫ সদস্য আহত হয়।
পরে ওই কেন্দ্র স্থগিত করা হয়। কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম মোস্তফা আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। মুন্সীগঞ্জ : সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের চান্দের চর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয় ১৮ দলীয় জোটের কর্মীরা। এ সময় ২ পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হয়। জোটের নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে একাত্দতা প্রকাশ করলে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাধে। বাগেরহাট : বাগেরহাট-৪ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ড. আবদুর রহিম খানের নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট এসএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভোট গণনা শুরুর পর নৌকার প্রার্থী ডা. মোজাম্মেল হোসেনের সমর্থকেরা উপজেলা সদরে নির্বাচনী অফিস ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় গাড়ি চালক এছাহাক আহত হয়। সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা-২ সদর আসনের আগরদাঁড়ি ও শিবপুর ইউনিয়নের ৪টি কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি। তবে প্রার্থীরা বলছে, জামায়াত অধ্যুষিত ওই কেন্দ্রগুলোর পাশে রাতভর ককটেল বিস্ফোরণ হওয়ায় আগরদাঁড়ি আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা, গোদাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিবপুর ইউনিয়নের শিয়ালডাঙ্গা মাদ্রাসা সরকারি প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে পলিং এজেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি।
কাশেমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি টিম গেলে সেখানে ৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় দুর্বৃত্তরা।
রাজধানীতেও ককটেল বিস্ফোরণ, কারচুপির অভিযোগ : উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে গতকাল রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোট উপলক্ষে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় সড়কগুলো ছিল অনেকটা ফাঁকা। তবে রিকশা চলাচল করেছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে সকালের দিকে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রগুলোর সামনে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে ছিল উঠতি বয়সের যুবকদের ভিড় ছিল।
সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা পর্যন্ত বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। কিছু কেন্দ্র ছিল একেবারেই ফাঁকা। বেলা ১২টার পর দু-একজন করে ভোটারকে কেন্দ্রে আসতে দেখা যায়।
সকালের দিকে ঢাকা-৪ (শ্যামপুর, কদমতলী) আসনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে বেলা ১১টার পর ভোটার আসতে থাকে। তাতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের ভোট দিতে দেখা গেছে। এই আসনে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।