আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রংপুরে মন্ত্রীর এপিএসসহ আ’লীগ নেতারা জেলে : অপ্রতিরোধ্য টেন্ডারবাজি

বেসামাল পরিস্থিতির কারণে চারদিকে সমালোচনার ঝড় উঠলে গা বাঁচাতেই প্রধানমন্ত্রী টেন্ডারবাজি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এতে কোনো কাজ না হওয়ায় ‘ডিজিটাল’ ব্যবস্থার জননী হিসেবে তিনি অন লাইনে টেন্ডার জমা দেয়ার কথা বলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ই-টেন্ডার চালুর খবরও মিডিয়াতে ফলাওভাবে প্রচার পেয়েছিল। কিন্তু সবই যে লোক-দেখানো এমন কথা সরকার বিরোধীদের অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না দলীয় নেতাকর্মীদের কারণেই। ক্ষমতার দাপটে তারা কতটা উন্মত্ত, সেটা আবারও প্রকাশ পেল সম্প্রতি রংপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার দাখিলে বাধা দেয়ায় হাঙ্গামা, ভাংচুর ও গ্রেফতারের ঘটনায়।

তিস্তা নদীর তীর সংরক্ষণে ৪টি গ্রুপে ২৩ কোটি টাকার কাজে টেন্ডার দাখিলের শেষ দিনে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অফিসের হাঙ্গামায় যারা গ্রেফতার হয়েছে, তারা সবাই সরকারি দলের লোক। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর এপিএস ও ভাগ্নে। আরও আছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, শ্রম সম্পাদক ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮ জন বিভিন্ন স্তরের নেতা। সরকার সমর্থক পরিবহন শ্রমিকরা অবশ্য তাত্ক্ষণিক ধর্মঘট শুরু করে তাদের নেতাসহ কয়েকজনকে ছাড়িয়ে নেয়। অন্য ১১ জনকে পুলিশ আদালতে হাজির করলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অর্ধশতাধিক সরকার সমর্থক আইনজীবী তাদের জামিনের পক্ষে দাঁড়ান।

আদালত অবশ্য তাদের আবেদন অগ্রাহ্য করে সবাইকে জেলে পাঠিয়েছেন। পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের এমন ভূমিকায় বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। সরকারি দলের একটি অংশ এতে উল্লসিত হয়ে সংশ্লিষ্টদের বাহবা জানালেও এর পেছনে আইনের শাসন বা বিচারকের স্বাধীন ভূমিকা কতটা সেটা পরিষ্কার হতে সময় লাগেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেন্ডারবাজির সঙ্গে মন্ত্রীর ছেলেও জড়িত ছিলেন। তিনি তার ফুফাতো ভাই, যিনি মন্ত্রীর এপিএস ও উপজেলা আ’লীগ আহ্বায়ক, তাকে নিয়ে আটঘাট বেঁধে সব টেন্ডার নিজের কব্জায় নেয়ার বিষয়টি ম্যানেজ করে ফেলেছিলেন।

অন্য ঠিকাদার, দলের নেতাকর্মী, প্রশাসন, পুলিশ, মিডিয়া সবার জন্য ১ কোটি টাকার বরাদ্দও ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সবকিছু ভণ্ডুল হয়ে যায় পাবনা থেকে দলবলসহ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজার টেন্ডার জমা দিতে আসায়। তাদের বাধা দেয়ায় সংঘর্ষ বেধে যায় আর পুলিশ প্রশাসনও কানখাড়া করে দায়িত্ব পালনে বাধ্য হয়। সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর বেধে যাওয়ায় চাকরি রক্ষাই তাদের কাছে প্রাধান্য পায়। এর ফলেই মন্ত্রীর এপিএসসহ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হাতে হাতকড়া ও জেলে যাওয়ার ঘটনা দেখার সৌভাগ্য হলো আমাদের।

দেশের সর্বত্র যদি পুলিশ প্রশাসনকে এমন নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকায় দেখা যেত, তবে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো নিঃসন্দেহে। তখন মন্ত্রীর এপিএসদের মতো সরকারের বেতনভুক কর্মচারীরা টেন্ডারবাজিতে উত্সাহী হতেন না। মন্ত্রী বা মন্ত্রীর ছেলেরা কিছুটা হলেও সংযত হতেন। মাত্রা ছাড়া ক্ষমতা আর প্রশ্রয় পেয়ে সবাই এখন ধরাকে সরাজ্ঞান করতে শুরু করেছে। এমন অবস্থা তো একদিনে সৃষ্টি হয়নি।

মন্ত্রী যখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে তার এপিএসকে সরকারি প্রতিনিধি দলে বিদেশ পাঠিয়েছেন, এমন খবর পত্রিকায় জানাজানি হওয়ার পর যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হতো, তবে নিশ্চয়ই আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতির সাগরে কীভাবে গা ভাসিয়েছে, সেটা রংপুরের ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। এপিএস, দলীয় নেতা, আইনজীবী সবার ভূমিকা ন্যক্কারজনক না বলে পারা যায় না। সরকার গঠনের দিন থেকে শুরু হওয়া দুর্নীতির মোচ্ছব এখন দেশজুড়ে কতটা ভয়াবহ ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুর্নীতির শিকড় এতটাই গভীরে প্রবেশ করেছে যে, চাইলেই যে তা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব সেটা বিশ্বাস করা কঠিন।

এমন দুর্নীতির জন্ম দিয়েছে যে সরকার, তাকে বিদায় না করে অন্য পথে কিছু করা সম্ভব সেটা বিশ্বাস করার লোকও দিন দিন কমছে। টেন্ডারবাজি-দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাইলে এখন জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে সুত্র :http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/09/09/104132 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।