লেখাই আমার অনুভূতির অনুবাদ...... কার্জন হল। আমার নিজের ডিপার্টমেন্ট টা মোকাররম হোসেন ভবনের নিউ সায়েন্স কমপ্লেক্স বিল্ডিং এ হলেও কার্জন হলের প্রতি আমার অস্বাভাবিক মনের টানের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা আমি আজও খুঁজে পাইনি। অথচ আমার একাডেমিক রেজাল্টের উপর কার্জন হলের অবদান মোটেই সুখকর নয় ! বিঞ্জান অনুষদের সব পরীক্ষা কার্জন হল কেন্দ্রে হওয়ার সুবাদে শুধুমাত্র প্রতি ইয়ার ফাইনালের সময়ই আমাদের ঢোকা হত কার্জন হলের অভ্যন্তরে। যথারীতি আমার সব ইয়ারের রেজাল্টই ভয়াবহ। ভীতির পরিবর্তে তবুও কেন এই কার্জন হল প্রীতি?
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে প্রায় প্রতিদিন রাতের বেলা ১০ টার পর থেকে শুরু করে আমি আর হেদু ( হেদায়েত এর সংক্ষেপ, মানুষের নাম সংক্ষেপ করার ব্যপারে আমার খ্যাতি ছিল একসময় ) রাত ১টা-২টা পর্যন্ত কাটাতাম কার্জন হলে।
লম্বা রাস্তাটায় আমাদের কলেজ জীবনের গল্প করতে করতে কিংবা শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে প্রাণী বিঞ্জান ডিপার্টমেন্টের সামনে বসে হাওয়া খেতে খেতে। হেদু বলত 'মামা এই বাতাসের দাম দিতে হইলেতো আমার চৌদ্দ গুষ্ঠি ফতুর হইয়া যাইতো'। মনে আছে আড্ডা মারার পর হেদু আমাকে পৌছে দিত একুশে হলে। রাস্তায় টহল পুলিশ আমাদেরকে বলত 'ভাই এত রাইতে রাস্তায় কি করেন? হলে চলে যান' । হেদু বলত 'আমি এত রাইতে রাস্তায় থাকলে আপনার কোন অসুবিধা আছে?'।
চুপ করে যেত পুলিশ। তুলনামূলক শারিরীকভাবে দুর্বল এই আমিও বুঝে গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইডি কার্ডের ক্ষমতা।
এবারে আসল কথায় আসি। অনেকদিন পর ঐদিন সন্ধ্যায় সাব্বির ভাইয়ের সাথে গিয়েছিলাম কার্জন হলে। কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের সামনের সেই পরিচিত জায়গাটা।
সবুজ ঘাসে পা দিতেই গোড়ালী পর্যন্ত ডুবে গেল ঘাসের ভেতর। সামার ভেকেশান চলাতে মামারা ঘাস কাটতেছেন না নিয়মিত। ভালই হল। সবুজ মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে থাকা Christmas Tree টার নিচে বসতেই মনে হল কোন নরম গালিচার উপর বসেছি। আলো-আধারি এই শান্ত আর নিবির পরিবেশে সবুজ নরম ঘাসের উপর শুয়ে পড়তেই দেখলাম আকাশে চাঁদ।
কেমন যেন অদ্ভুত ভালোলাগার একটা অনুভূতি। ভাষায় প্রকাশ করার মত না । চাঁদ আর আমার মাঝখান দিয়ে দৌড়বেগে ছুটে যাওয়া মেঘগুলোর দিকে যখন চোখ পড়ল তখনই মনে হল- আজ আর ফিরে যাবোনা !
দিন বদলে গেছে। বদলে গেছে অনেক কিছুই। এখন আর রাত ১টা-২টা করা যায়না।
পরদিন অফিস যাবার তাড়া থাকে। বাসার কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেয় ১১টার দিকেই। তবুও যেটুকু সময় ছিলাম যেন পুরোটা সময় ধরেই ছিলাম । চলে আসার সময় কেমন জানি লাগতেছিল। আসতে ইচ্ছা হচ্ছিলনা একেবারেই।
ছাত্র জীবনে এমন লাগেনিতো কখনো?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।