আজকের একটি জাতীয় প্রত্রিকায় প্রকাশিত মাওলানা রফিক বিন সাঈদীর রচনা থেকে কিয়াদংশ উদ্ধৃতি দেয়া হলো।
ঢাকা থেকে যে তদন্ত সংস্থা পিরোজপুরে গিয়ে তদন্ত(!) করে আমার আব্বার নানা অপরাধ আবিষ্কার করলেন, তাদের কাছে বিনয়ের সঙ্গে কিছু প্রশ্ন রাখছি
এক. স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার সারাদেশের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করেছিল এবং তদন্তের আওতায় ছিল পাকবাহিনী এবং তাদের সহযোগী বাহিনীগুলো। তদন্তের মাধ্যমে ১৯৫ জন পাক সামরিক অফিসারকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের বিচারের কথা জানানো হয়। কিন্তু বর্তমান তদন্ত দলের তদন্তে আমার আব্বাকে প্রকারান্তরে দেশের শ্রেষ্ঠতম যুদ্ধাপরাধী বলা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম তদন্ত দলের অনুসন্ধানী তালিকায় আমার আব্বা আল্লামা সাঈদীর নাম নেই কেন?
দুই. পাকবাহিনীর সহযোগীদের অপরাধমূলক কাজের শাস্তি বিধানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি দালাল আইন জারি করা হয় এবং এ আইনের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ লোককে গ্রেফতার করা হয়।
এদের মধ্যে ৩৭,৪৭১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় এবং ২,৮৪৮ জনকে বিচারের আওতায় আনা হয়। ৭৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ২,০৯৬ জন বেকসুর খালাস পায়। এসবের কোনো একটি তালিকাতেও আমার আব্বার নাম নেই কেন?
তিন. আমার আব্বা যদি মুক্তিযুদ্ধকালে পিরোজপুরে কোনো রকম যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকতেন, তাহলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরে অর্থাত্ বিজয় দিবসের মাত্র ২ মাস ৭ দিন পরে পিরোজপুর শহরে তাফসির মাহফিলের আয়োজন করে এলাকার লোকজন কীভাবে আব্বাকে প্রধান অতিথি হিসেবে বরণ করেছিল? স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে কীভাবে লোকজন আব্বার কথিত অত্যাচারের কথা ভুলে গিয়ে তাঁর মুখ থেকে পবিত্র কোরআন হাদিসের বাণী শুনেছিল?
চার. ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে আব্বার প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ও পার্লামেন্টারিয়ান প্রয়াত বাবু সুধাংশু শেখর হাওলাদার। তিনি তার নির্বাচনী জনসভার একটিতেও কেন আব্বাকে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, রাজাকার বলে অভিযুক্ত করেননি বরং আমি স্বচক্ষে দেখেছি তিনি আব্বাকে দেখামাত্র শ্রদ্ধাভরে গভীরভাবে আলিঙ্গন করতেন।
উল্লিখিত এমন ধরনের অগণিত প্রশ্ন শুধু আমার নয়, দেশ-বিদেশে অবস্থানরত অগণিত বাংলাদেশীর।
কিন্তু কে দেবে এসব প্রশ্নের জবাব? এসব প্রশ্ন তোলারও কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বরং প্রতিবাদী সবাইকে রাখা হয়েছে গ্রেফতার আতঙ্কে। আমি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে এসব প্রশ্ন উত্থাপন করলাম। হয়তো এ অপরাধে(!) কোনো না কোনো অজুহাতে আমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হতে পারে জেনেও আমার আব্বার সর্বোপরি পবিত্র কোরআনের একনিষ্ঠ ও নির্ভীক একজন মুফাস্সীরের পক্ষে আল্লাহর কাছে বিনিময়ের আশায় আমি এসব প্রশ্ন উত্থাপন করলাম।
পরিশেষে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ার উদ্দেশে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করছি, দয়া করে প্রকৃত সত্য না জেনে বা মিথ্যাচারে প্রভাবিত হয়ে আমার আব্বার বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য প্রকাশ করবেন না।
সাংবাদিক হিসেবে প্রকৃত সত্য জানা এবং তা বিশ্ববাসীর সম্মুখে তুলে ধরা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব—এ অনুভূতি আপনাদের জীবন্ত রয়েছে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ‘সত্য ব্যতীত মিথ্যা প্রকাশ করব না’ এ শপথ নিয়ে যারা সংবাদ জগতে প্রবেশ করেছেন, তাদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, আমার আব্বা সম্পর্কে প্রকৃত সত্য তুলে ধরুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।