আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুন চাকুরীপ্রার্থীদের জন্য রেফারেল সিস্টেম

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! [কালরাতে ফেসবুকে এই নোটটি লিখেছিলাম। আজ সারাদিনে সময়ের অভাবে এখানে শেয়ার করতে পারি নাই। এখন করলাম] যখন আমি পাস করে বের হই, তখন পকেটে এন সংখ্যক জীবন বৃত্তান্ত ব্যাগে করে ঘুরতাম। যখন যেখানে সুযোগ হতো সেখানে সিভি দিয়ে আসতাম।

আসায় থাকতাম ডাক পাবো। তা একটি আইটি কোম্পানি থেকে ডাক পেলাম। মহা খুশী। প্রথম ইন্টারভিউতে অনেক কারিগরি প্রশ্ন জিজ্ঞাষা করা হলো। অনেককে দেখলাম দিল।

যাহোক দ্বিতীয় ইন্টারভিউ‌এর জন্য ডাক পেলাম। এবার মালিক পুত্র, সম্প্রতি আমেরিকা থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসেছে। যাহোক গেলাম। টেকনিক্যাল তেমন কিছু বললেন না। খালি বললেন, আসলে আমরা একজন অভিজ্ঞ লোককে খুঁজছি।

অন্তত কয়েকবছরের অভিজ্ঞতা আছে সেরকম। আমি বললাম - আমার তো চাকরির অভিজ্ঞতা নেই। তখন তিনি বললেন- আপনার অন্যান্য একটিভিটিগুলো বেশ ভাল। সেজন্য আমি আপনার সঙ্গে আলাপ করতে চেয়েছি। যাহোক, আমি বলে আসলাম যে, আমার যেহেতু অভিজ্ঞতা নেই কাজে এব্যাপারে আমার কিছু করার নাই।

যাহোক ভুলে গেছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন পরে আবার ডাক পেলাম। এবং অবাক হলাম। কারণ আমাকে কেন ডাকবে। গেলাম।

দেখলাম এবার মালিক স্বয়ং, তার ছেলেরা এবং আরো কয়েকজনের একটা বোর্ড। বাইরে দেখলাম ৫/৬ জন। একজনের পিইচডি আছে, বাকীদের কমপক্ষে ৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা আর আমি খালি ফ্রেশ। মাফলার পড়া, হাফ শার্ট আর স্যান্ডেল পরা। প্রথমে বড় সাহেব সরাসরি এটাক।

মাফলার পরে এসেছেন কেন? বললাম- ঠান্ডা লাগছে। এই শীতে মাফলার ছাড়া আমার চলে না। তারপর হাফ শার্ট কেন? বললাম একদিন আগে ইন্টারভিউ‌এর জন্য ডাকলে প্রস্তুতির বেশি সময় পাওয়া যায় না। তারপর বললেন আসলে আমরা একজন অভিজ্ঞলোককে খুজছি। এবার আমি ফেটে পড়লাম- এসবের মানে কী? আগেরবারতো আমি আপনার ছেলেকে বলে গেলাম যে আমি সদ্য পাস করেছি।

আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাহলে ডাকেন কেন? প্রথম আমাকে সিভি দেখে বাদ দিলেন না কেন। তারপর দ্বিতীয়বার ডাকলেন কেন? আর সর্বশেষ আমি যখন আজকে সকালে ফোন করে বললাম আমি ৩টায় আসতে পারবো না, ৬টায় আসবো, তখন বললেন না কেন? তা ওনারা কিছু বললেন না। যে মালিকপুত্র আমার ইন্টারভিউ নিলেন তিনি বললেন, “আমরা এই পোস্টে আপনাকে নিতে পারবো না। কিন্তু আমাদের যদি কোন সযোগ হয়, তাহলে আপনাকে আমরা আবার ডাকবো।

“ ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে আসলাম। ঐটি আমার প্রথম চাকরি ইন্টারভিউ, যা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আরো অনেক পরে আমি অনেক ভেবেছি এই অভিজ্ঞতার ব্যাপারটা কীভাবে সমাধান করা যাবে? অভিজ্ঞতা না থাকা স্বত্ত্বেও আমাকে কেন ওরা ৩৫০ জন থেকে শেষ ৬ জন পর্যন্ত রেখেছে? (পরে জেনেছিলাম আমার সিভি দেখে ওনারা আমার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন। কিন্তু পরে বুঝেছেন আমার বয়স বেশি কম। মানে আমাকে অভিজ্ঞতার জন্য বাদ দেননি, দিয়েছেন বয়স কম বলে!!!) এখন আমি এর সমাধান জানি।

দুটো পথ আছে। প্রথমটা হলো শিক্ষা জীবনে নানান বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা। যেমন ধরা যাক যে প্রতিষ্টান কোন পণ্য বিক্রি করে, তার সেলসের জন্য এমন লোক দরকার যে কীনা যুক্তি বোঝে এবং সেটা উপস্থাপন করতে পারে। শিক্ষাজীবনে এ অভিজ্ঞতা কীভাবে হতে পারে? বিতর্ক। যে কখনো জীবনে বিতর্ক করে নাই সে কীভাবে আমার পণ্য বিক্রি করবে? সে তো কখনো যুক্তির পিঠে যুক্তি সাজাতে শেখ নাই।

আমার পন্যের গুন দিয়েতো পন্য বিক্রি করা যাবে না। যে কখনো রচনা প্রতিযোগিতায় নাম দেয়নি, সে কীভাবে বুঝবে কীভাবে লিখলে লোককে কনভিন্স করা যায়? যখন কেহ মিড লেবেলের লোক খোঁজে তখন সে এমন কাউকে খোজে যার টিম স্পিরিট আছে। তা যে কী না কখনো দলবেধে কিছু করে নাই, এমনকী একটি পিকনিকও সংগঠিত করে নাই, সে কোন ঘোড়ার ডিমটা করতে পারবে? আবার যে কীনা রাজনৈতিক বা কোন সংগঠন করে নাই সে কেমন করে লিডারশিপের পরীক্ষায় পাস করবে? এরকম হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যায়। এটি হলো প্রথম বুদ্ধি। পাস করার সময় নিজের টুপিতে নানান রকমের পালক নিয়ে বের হওয়া।

সেটা উপরের গুলো যেমন তেমনি পড়াশোনা রিলেটেডও হতে পারে। যেমন আইটির শিক্ষার্থীরা যখন বের হবে তখন একটি বিসএসসি ডিগ্রী ছাড়াও তার থাকতে পারে সিসকোর সার্টিফিকেট, তার থাকতে পারে দুটি গবেষণা প্রবন্ধ, তাকতে পারে একটি কোন প্রোগ্রামের প্রোটোটাইপ। এগুলো অর্জন করা কঠিন নয়! দ্বিতীয়টি হলো রেফারেল সিস্টেম। অভিজ্ঞতা মানে কী? কারো সার্টিফিকেট যে সে এই কাজ জানে বা করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে এটি কী সদ্য পাস করা কাউকে কেহ দিতে পারে? পারে।

এক হলো তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পারে। ওনারা দেনও। মুশ্কিল হলো চাকরিদাতকরা স্যারদের কাছে জানতে চান না বা সে সংস্কৃতিটা আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। আর একটা হলো এমন কেহ যে তাকে চেনে। যেমন কেহ একজন ভাল পিএচপি পারে।

এটি হয়তো আমি জানি। কারণ তাকে আমি কিছু কাছ করতে দেখেছি। আমার কাছে কেহ যখন পিএইচপির কোন লোক খোঁজে তখন তাকে আমি রেফার করতে পারি। এটি হলো রেফারেল সিস্টেম। এখানে চাকরীদাতার আমার ওপর আস্থা থাকতে হবে।

কারণ আমি যখন সার্টফাই করবো, তখন তিনি আমাকে বিশ্বাস করবেন। এখন এটা আমি, সুবিন, শেহাব সহ কয়েকজন হরহামেশা করি। কিন্তু রেফার করি শুধু তাদের যাদের আমরা চিনি। এই সিস্টেমটাকে কী সিস্টেমেটিক করা যায়? আমার মনে হয় যে যায়। আমি এখন এই ধরণের একটি প্রফেশনাল রেফারেল সিস্টেম তৈরি করার জন্য কাজ করছি।

আপাতত আইডিয়া হলো আমাদের কিছু রেফারী থাকবে। যারা রেফারেল সিস্টেমে যুক্ত হতে চায়, তারা আমাদের সিস্টেম যুক্ত হবে। এটি মুক্ত মানে যে কেহ অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে করতে পারে। অথবা অন্য কোনভাবে হতে পারে। তার ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আমরা তাকে অনলাইনে ইন্টারভিউ করতে পারি, কোন কাজ দিতে পারি বা তার কোন কাজ দেখে মূল্যায়ন করতে পারি।

আমাদের রেফারীরা তাঁকে রেটিং করে রাখবে। যখন কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে ফ্রেস লোক চাইবে, তখন আমরা তার চাহিদা অনুসারে ১:৩ (এটা একটি আর্বিটারি সংখ্যা) হিসাবে রেফারেণ্স দিতে পারবো। সেক্ষেত্রে যারা চাকরি দেবেন তাদের সাশ্রয় হচ্ছে। একটা লম্বা লিস্ট থেকে সর্ট লিস্টিং এর কাজটা তাদের করতে হচ্ছে না। তার চাকরী প্রার্থীরাও তাদের কম্পিটেন্সি সম্পর্কে চাকরি দাতাকে জানাতে পারছেন।

তবে, ঝামেলা হচ্ছে, আমাদের দেশে কী এমন সিস্টেম দাড় করানো যাবে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.