আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাটির পেয়ালায় চা, মজা আলাদাই...যেনো ভেজা মাটির গন্ধ পাই

বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না...
গত সপ্তাহে একটা মাটির মগ বানালাম...তাতে চা আর খাওয়া হয়ে উঠছিলো না। হঠাৎ করেই ঠান্ডা গরমে সর্দি, কাশি বাধিয়ে বসেছি। নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে, গলাটাও ব্যাথা, একটু জ্বরও আছে। মুখে রুচি নেই, কিছুই খেতে ভালো লাগছে না। এখন চা টাই একমাত্র ভরসা।

চা বানিয়ে মাটির মগ ভর্তি করে বসলাম সামুতে সবার লেখা পড়তে। চা খেতে খেতে হঠাৎ মনে হলো যেনো ভেজা মাটির গন্ধ পাচ্ছি...নাহ আজতো বাইরে ঝলমলে রোদ, বৃস্টির ছিটেফোটাও নেই। মাটির মগটা থেকেই মনে হয় গন্ধটা আসছে...দারুন ভালো লাগছে। নিজের বানানো মগে চা খাচ্ছি...এটা ভাবতেই মনে হয় গন্ধটা লাগছে, অথবা এমনও হতে পারে সম্পূর্ণ আমার মনের ভুল, সর্দি-জ্বরে হয়তো এমনটা মনে হচ্ছে। জ্বর হলেতো মানুষ কতোই না উল্টাপাল্টা ভাবে।

এই লেখা পড়ছি সেই লেখা পড়ছি...দিন দুই না আসাতে দেখি কত লেখা জমে গেছে। কখন যে চা শেষ হয়েছে টেরও পাইনি...কাপের তলানিটুকুও খেয়ে ফেলেছি। তবুও চায়ের তৃষ্না মিটেনি... যাকগে, অনেক তো বকবক করলাম....এবার আসুন দেখি কিভাবে মগটা বানানো যায়... প্রথমে বেশ আঠালো মাটি সংগ্রহ করতে হবে..যে মাটি সাধারনত বাসনপত্র তৈরীতে ব্যাবহার করা হয়। তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে মেখে মন্ড তৈরী করতে হবে। মন্ডটাকে আয়তাকার আকৃতি বানিয়ে তারপাশে ৫মিলিমিটারের কাঠের টুকরো রাখতে হবে।

এরপরে সুতো দিয়ে মাটির একপ্রান্ত থেকে কাঠের টুকরোটার উপর থেকে ঘুরিয়ে আরেক প্রান্তে নিয়ে আসতে হবে। সুতো দিয়ে কাটলে, মসৃনভাবে কাটা যাবে মাটি। এতে মাটির ৫ মিলিমিটারের পুরুত্বের আয়তাকার একটা প্লেট পেয়ে যাবো। নীচে দেখুন মাটির মন্ড থেকে কেটে নেওয়া মাটির আয়তাকার প্লেট টি। এরপরে দৈর্ঘ্য ২৬ সেঃমিঃ এবং প্রস্থ্ ৯ সেঃমিঃ, এই মাপের কিছুটা শক্ত কাগজ কেটে নিতে হবে।

সেই কাগজটা মাটির প্লেট টার উপরে রেখে চারপাশে কেটে ফেলতে হবে, নীচের ছবির মতো করে। কাটার পরে একই রকম ভাবে মগের নীচের মাপদিয়ে বৃত্তাকার করে শক্ত কাগজ কেটে সেটা বৃত্তাকার মাটির প্লেটটার উপরে বসিয়ে চারপাশ থেকে কেটে নিতে হবে। নীচে ছবিতে দেখুন কিভাবে কেটে নেয়া হয়েছে। কাটার কাজে ব্যাবহার করা হয়েছে, একটুকরো কাঠের মাথায় আটকানো সুচালো কাটার দিয়ে। আপনি এটা নিজেই বানিয়ে নিতে পারবেন।

লেপ, তোষক সেলাই করার যে মোটা, বড় সুইগুলো আছে, সেখান থেকে একটা বাছাই করে একটুকরো কাঠের মাথায় বসিয়ে আপনি বানিয়ে ফেলতে পারেন এই সয়েল কাটার। এটা দিয়ে খুব সুন্দর করে মাটি কেটে ফেলা যায়। এরপরে আসি মগের উপরে আপনি যদি কোনো নকশা করতে চান, তখন কি করবেন। মাটির মন্ডে আপনার ইচ্ছামতো কয়েক প্রকারের রঙ মিশিয়ে রঙিন মন্ড বানিয়ে ফেলুন। যেকোন রঙের মন্ড নিয়ে, হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চিকন করে, সেটা মাটির আয়তাকার প্লেট টার উপরের দিকে আপনার পছন্দ মতো কোনো নকশায় সাজিয়ে নিন।

নীচে দেখুন কিভাবে মাটিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নকশা বানানোর উপযোগি করা হচ্ছে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ন কথা, মাটি আর পানি মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করে নিতে হবে এবং সেটা তুলি দিয়ে যেখানটায় নকশাটা বসাবেন সেখানে বুলিয়ে নিতে হবে। এতে নকশাটা ভালোভাবে আটকে থাকবে। এরপরে নকশা করা শেষ হলে, মাটির প্লেট থেকে একটু বড় মাপের কাঠের ত্ক্তা দিয়ে চাপ দিয়ে নকশাটাকে মাটির প্লেটটার মধ্যে বসিয়ে দিতে হবে। নীচে দেখুন নকশাটা বসিয়ে দেবার পরে এমন হবে।

মাটি কেটেছি যে কাটার দিয়ে সেটা দিয়েই গোল প্লেট টার চারপাশ একটু দাগদিয়ে খাঁজ কেটে নিবো এবং একই ভাবে আয়তাকার প্লেট টার নীচের অংশে, দুইপ্রান্তে খাঁজ কেটে নিবো। এতে করে জোড়ার অংশটা খুলে যাবে না। গোল প্লাস্টিকের কাঠামোটা, আয়তাকার মাটির প্লেটটার উপরে রেখে প্লেটটার একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত ঘুড়িয়ে আটকিয়ে দিতে হবে, সেইসাথে গোল প্লেটটার উপরে বসিয়ে দিতে হবে। হাত দিয়ে চেপে চেপে প্রান্তগুলো শক্ত করে আটকাতে হবে, নইলে দেখা যাবে বানানোর পরে মগের নীচ থেকে খুলে পরে গেছে। নীচে ছবিতে দেখুন প্লাস্টিকের গোল কাঠামোটা।

এরপরে শুধু হাতল বানানো। প্লেট টার চারপাশ থেকে কেটে ফেলা মাটিটুকু দিয়েই আপনি বানিয়ে ফেলতে পারবেন মগের হাতল। এবার লাগিয়ে দিলাম হাতলটা মগের সাথে, ব্যাস হয়ে গেল মাটির মগ। এবার শুধু পোড়াবার পালা, প্রথমে কম তাপে পুড়িয়ে তারপর বেশি তাপমাত্রায় পোড়াতে হবে বিশেষ ভাবে তৈরি চুল্লীতে। পোড়ানোর কাজটা করেছেন এক জাপানিজ মৃৎ শিল্পী, নামটা ঠিক এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।

উনার কাছে আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। হঠাৎ করেই এই মগ বানানোর সুযোগটা পেয়ে গেলাম, একেবারে বিনামূল্যেই। উনি মাটিটা সরবরাহ আর পোড়ানোর কাজটুকু করেছেন, বাকিটুকু আমি নিজেই করেছি। তো এবার ঝটপট বানিয়ে ফেলুন মাটির মগ আর নিজের বানানো মগে চা খান। চীনামাটির বাসনের উপরে কিছু চিত্রকর্মের ছবি
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.