আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষুদ্রঋণের কার্যকারিতা প্রমাণিত নয়

ব্রিটিশ সরকারের এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, দারিদ্র্য দূর করা ও নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্রঋণের ইতিবাচক ভূমিকা নেই। নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্রঋণের ইতিবাচক ভূমিকার পক্ষে বহুল প্রচারিত সমীক্ষাগুলোকে নাকচ করেছে এই 'পদ্ধতিমূলক পর্যালোচনা'ধর্মী সমীক্ষাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল" ও "অপর্যাপ্ত পরিসংখ্যানের" ওপর ভিত্তি করে করা "কার্যকারিতার ভিত্তিহীন অনুমানের" ফলে ক্ষুদ্রঋণ কার্যকর বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। এটি বলছে, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে যে গল্পগাথা তৈরি হয়েছে তার ভিত্তি ক্ষমতাশালী ক্ষুদ্রঋণ শিল্পের প্রচার করা 'বিচ্ছিন্ন কিছু কাহিনী'। 'এভিডেন্স অব দ্য ইম্প্যাক্ট অব মাইক্রোফিন্যান্স: এ সিস্টেমেটিক রিভিউ' শিরোনামের প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা দিয়েছে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় (ডিএফআইডি), ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ও ইউনিভার্সিটি অব অ্যাংলিয়া।

সমীক্ষা প্রতিবেদনটির একটি কপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সংগ্রহে রয়েছে। এতে বলা হয়, "দৃশ্যত ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে এর ইতিবাচক প্রভাবের পক্ষে এখনো স্পষ্ট কোনো প্রমাণ মেলেনি। " এটি তৈরি করেছেন মারেন ডুভেনড্যাক, রিচার্ড পামার-জোন্স, জেমস জি কোপস্টেক, লি হুপার, ইয়ুন লোক ও নিত্য রাও। প্রতিবেদনটি দৃশ্যত ক্ষুদ্রঋণের পক্ষে পশ্চিমে চলমান প্রচারণায় জল ঢেলে দিলো।

একইসঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ অতিদরিদ্রদের দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে ব্যর্থ বলে দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকা ধারণাকে আরো শক্ত করেছে এ প্রতিবেদন। ডেনিশ অনুসন্ধানী সাংবাদিক টম হাইনম্যান গতবছরের শেষ দিকে তার 'ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে' ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রামাণ্যচিত্রটিতে বলা হয়, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন গ্রামীণ ব্যাংককে দাতাদের দেওয়া সাহায্য থেকে প্রায় ১০ কোটি ডলার নিয়ম ভেঙে সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণে স্থানান্তর করা হয় দাতাসংস্থা নোরাডকে না জানিয়েই। ক্ষুদ্রঋণের ধারণাটি নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে প্রথম চালু করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। "গ্রামের দরিদ্রদের ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র্য কমানোর লক্ষ্যে ৩০ বছরেরও বেশি আগে অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করেন।

" ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থাপনা এবং চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়া নিয়ে কাজ করে থাকে ব্রিটিশ মন্ত্রণালয় ডিএফআইডি। "ক্ষুদ্রঋণের প্রভাব নিয়ে এ পর্যন্ত চারটি উল্লেখ্যযোগ্য পর্যালোচনা হয়েছে,"-একথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, "নানা গল্পগাথার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে যে ক্ষুদ্রঋণ মানুষের জীবনে সত্যিকার পরিবর্তন আনতে পারে। "তবে ক্ষুদ্রঋণের প্রভাবের ধরন, পরিধি ও ভারসাম্য বিষয়ে এখনো অপর্যাপ্ত ও অসম্পূর্ণ। "সর্বোপরি, ক্ষুদ্রঋণের প্রবল প্রভাব রাখে- এমনটা প্রমাণ করার মতো কোনো বহুল প্রচারিত গবেষণা যে নেই তা অনেকেই স্বীকার করেছেন। " বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট (এএসএ), গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক।

প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের হার ৯৮ শতাংশ যা বিস্ময়কর। সমালোচকরা বলে থাকেন, ঋণ আদায়ের জন্য গ্রামবাসীদের হয়রানি করা হয়। কেউ কেউ বলে থাকেন, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে মানুষ দ্রুত ঋণের চক্রে ডুবে যেতে পারে। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে ঋণের দায়ে অনেক মানুষের আত্মহত্যার খবর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খবর হয়েছে। ব্রিটিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ক্ষুদ্রঋণের বিস্তার হচ্ছে এবং নীতি নির্ধারক, দাতা গোষ্ঠী ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ক্ষুদ্রঋণকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

এ কারণে ক্ষুদ্রঋণের কার্যকারিতা পুনঃঅনুসন্ধান করা প্রয়োজন। "ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য দূর করে এবং নারীদের ক্ষমতায়ন করে- এ দাবি আরো সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখা দরকার। " নারীদের অবস্থার পরিবর্তনে এর ভূমিকার যথেষ্ঠ প্রমাণ পাওয়া যায়নি- বলা হয় প্রতিবেদনে। "আমাদের প্রতিবদেনে দেখা গেছে ক্ষুদ্রঋণের কার্যকারিতা নিয়ে যত পর্যালোচনা তার প্রায় সবই পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল এবং অপর্যাপ্ত তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই কার্যকারিতা নিয়ে যে অনুমান সেক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে।

"এর ফলে ক্ষুদ্রঋণের সত্যিকার কার্যকারিতা নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে। ফলে দারিদ্র্য বিমোচনে আরো কোনো পদ্ধতি খুঁজে বের করার দিক থেকে মনোযোগ অন্যদিকে সরে যেতে পারে। " তাই উন্নয়ন সহযোগীদের উচিত [ক্ষুদ্রঋণ] পর্যালোচনা কৌশলে সম্পৃক্ত হওয়া এবং এগুলোর সীমাবদ্ধতা বোঝা- এ কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, "এর ফলে কার্যকারিতার আরো বেশি বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেওয়া সম্ভব হবে; যার মধ্য দিয়ে দরিদ্রদের জন্য আরো ভালো কিছু হওয়া সম্ভব। " Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.