Everything I Know, I want to forget > আপনিও কি ইন্টারভিউয়ের জন্য এসেছেন ?
(খালি সিট পেয়ে একপ্রকার প্রায় উড়ে এসেই আমার পাশে এসে বসল মেয়েটি। লুইস ভুশনের ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছতে মুছতে ওর প্রথম কথা ছিলো এটি। আশ্চর্য ! মানুষের কথা বার্তার কি ছিড়ি। ইন্টারভিউ দিতে না আসলে কি কেউ এই ফ্যাক্টরির মধ্যে ওয়েটিং রুমে এসে বসে থাকে। )
> জ্বি।
আপনি ?
> আমিও সে জন্যই এসেছি। আসলে কি বোকার মত প্রশ্ন করে ফেললাম। বলার মত কিছু খুঁজে পেলাম না তো, তাই। আপনি কিছু মনে করবেন না
> না না, ঠিক আছে।
(মনে মনে অনেকটা লজ্জ্বাই পেলো নীলা।
ইন্টারভি্উ দেবার জন্য সেই সকাল বেলা বহু চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে গাজিপুরের এই ফ্যাক্টরিতে এসেছে নীলা। একটা চাকরি ওর ভীষন দরকার। মামার সংসারে বোঝা হয়ে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না। স্বনির্ভরতার স্বাদ পেতে চায় নীলা। মধ্যবিত্ত মামার অভাবের সংসারে বহু আত্বাহতি দেওয়া নীলা মুক্তির স্বাদ চায়।
> আপনি কি অনেকক্ষন ধরে বসে আছেন? আর কাউকে তো দেখছি না। পেপারেতো আ্যড ও দেয় নি। প্রার্থি কি শুধু আমরা দুজনেই?
(এবার মনে মনে চটে গেলো নীলা। কন্ঠে একটু বিরক্তি নিয়েই বললো )
> আপনার এতসব প্রশ্নের উত্তরতো আমার জানা নেই। আপনার বেশি জানতে ইচ্ছা হলে অফিসের কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।
> আপনি তো দেখি ক্ষেপে গেলেন ! আসলে আমি না কেমন জেনো, কিছু না বুঝেই কত কি বলে ফেলি। আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
(মেয়েটার বলার ভঙ্গিতে কেমন একটা সরলতা ছিলো। মুহুর্তেই আবার আপন করে নিলো। )
> আমি এসেছি সকাল ৯টার দিকে।
কালো করে শুকনা মতন একজন আমাকে এই রুমে বসতে দিয়ে সেই যে গেলো, এখন প্রায় সাড়ে দশটা বাজছে, কোনো খবর নেই। আমার একটু বাথরুমেও যাওয়া দরকার। যেতে পারছি না।
> সে কি? আপনি এখনি যান। আমি এদিকটা দেখছি।
(মেয়েটার আন্তরিকতা নীলার আবারো ভালো লাগলো। তাই বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে মেয়েটাকে পর্যবেক্ষনের দৃষ্টিতে মেয়েটাকে দেখতে লাগলো। মাঝারি উচ্চতা, শ্যামলা গায়ের রঙ, চোখ দুটো টানাটানা, স্বাহ্ব্য ভালো। তবে যে ব্যাপার টা উল্লেখ না করলেই নয়। মেয়েটার বুক।
শরীরের তুলনায় অনেক বড় বড়। চোখে পড়ার মত। মেয়েটা সব সময় কেমন সটান হয়ে থাকে। ফলে বুকগুলো ফুলে ফেপে অস্তিত্ব জানান দেয় বড় নির্লজ্জ্ব ভাবে। মেয়েটার নাম জানতে চায় নীলা এতক্ষনে।
> আপনার নাম টা তো জানা হলো না।
(মেয়েটা মনে হয় একটু লজ্জ্বা পেলো)
> আমার নাম অবনী। থাকি রামপুরা। আপনি ?
> আমি নীলা। থাকি মিরপুর, মামার বাসায়।
> আসলে ইন্টারভিউতে আসলে কেউ পাশের লোকের সাথে কথা বলতে চায় না। আপনি একটু ব্যাতিক্রম।
> আগে ইন্টারভিউ দেইনি তো, সে জন্য মনে হয়। পরের বার ঠিক হয়ে যাবে।
> হাহা, আপনি তো বেশ মজার মানুষ।
(অবনী বেশ মন খুলে হাসলো)। আপনি কি কোনো রেফারেন্সে এসেছেন ?
(উত্তর দেবার আগে নীলা একটু ভেবে নিলো)
> আসলে রেফারেন্স তো নেই। আমার এক বান্ধবী খোঁজ দিয়েছে।
> চাকরি টা কি আপনার খুবই দরকার?
> দরকার না হলে কি আসতাম, বলুন?
> আসলে, আমি ভেবে পাচ্ছি না কথাটা আপনাকে কিভাবে বলবো। আমার মনে হয়, আপনি এখানে চাকরি করতে পারবেন না।
(নীলা মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। এখন শুরু হবে জ্ঞান দেওয়া)
> আসলে না পারার তো কিছু দেখি না। সেক্রেটেরিয়াল কাজ এমন কঠিন তো কিছু নয়।
> দেখুন নীলা। আমি বোঝাতে চেয়েছি চাকরীর পরিবেশ আপনার পছন্দ হবে না।
অনেক সময় বসেরা সেক্রেটারির কাছ থেকে অনেক এক্সট্রা সার্ভিস আশা করে। ক্ষেত্র বিশেষে তা ভদ্রতার সীমা অতিক্রম করতে পারে।
(এইবার নীলা দমে গেলো। শীলা এইসব ব্যাপারে কিছু বলে নি। ওর আপন দুলাভাই বলে পাঠিয়েছে।
ভদ্রলোককে আগে দেখেনি, নীলা। তবে নাম শুনেছে অনেক। শীলা অনেক প্রশংসা করে। প্রায়ই এটা সেটা উপহার দেয়, শীলাকে। )
তাহলে তো আমার পক্ষে এখানে কাজ করা সম্ভব না।
আপনি কি করবেন?
> আমার মনে হয়, আমার আর আপনার পোস্ট এবং পজিশন দুটোই ভিন্ন। আর সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কি ভয়।
> তাই বলে সামান্য চাকরির জন্য, ইয়ে মানে নিজের শরীর বিকিয়ে দেবেন?
> দেখুন, আপনি যদি আমাকে খুব অভাবী মনে করে থাকেন, তাহলে ভুল করবেন। আর আমি আধুনিকাও নই। আসলে আমার অবস্থান আপনি বুঝবেন না।
আর আমার মনে এতসব সংকোচ নেই।
> কিন্তু, এ যে পাপ ?
> পাপ, পাপতো শরীরের হয় না। হয় মনের। মনের সাথে বোঝাপড়া টা অনেক আগেই সেড়ে ফেলেছি।
> বাঃহবা, আপনার তো অনেক সাহস।
> ব্যপার টা সাহসের নয়। আমি নিজেকে পণ্য ভাবতে দেই না। তাছাড়া, কিছু কিছু ব্যাপারে নিজের সাথে বোঝাপড়া করে নিয়েছি, আর ব্যাপারটা সমভাবে উপভোগ্যও বটে।
(নীলা আর কথা না বলে, চুপ করে থাকলো। মাথার ভেতরে ভাবনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
অবনীর কথাগুলো ওকে দারুন ভাবে আঘাত করেছে। ওকে সে দোষও দিতে পারছে না, আবার ওর কথাগুলো পুরোপুরি মেনেও নিতে পারছে না। ভাবতে ভাবতেই ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক এলো অবনীর। নীলার দিকে একবারো না তাকিয়ে মেয়েটা গটগট করে হেঁটে চলে গেলো। ব্যাপারটা ভালো লাগলো না, নীলার।
মনে মনে একটু আঘাত পেলো। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে না নিতেই ভেতর থেকে ওকে ডাকতে এলো স্বয়ং অবনী নিজেই। )
ফ্যাক্টরির ভেতরে দোতলায় প্রকান্ড একটা রুম। রুমের একপাশে বিশাল আরামদায়ক সোভা, এলসিডি টিভি সহ সৌখিন অনেক কিছউ দিয়ে পরিপাটি সাজানো। আরেকটা পাশ পুরোদস্তুর অফিসের মত, গোছগাছ করা, পরিপাটি।
বিশাল এক টেবিলের এক পাশে যিনি বসে আছেন, তাকে দেখেই চিনতে পারলো নীলা। শীলার দুলাভাই। মধ্যবয়সী, স্বাস্থ্যবান, হাসিখুশি একজন মানুষ। অন্যপাশে বসে আছে অবনী। ঘরের মধ্যে খুব আরামদায়ক এসি চলছে।
তবুও গরমের অজুহাতে অবনী ওর কামিজের ওড়না টা খুলে কাঁধের এক পাশে রাখলো। চেয়ারে টানটান হয়ে বসার কারনে ওর ভরাট বুক, নির্লজ্জ্ব ভাবে উপস্থিতি জানান দিতে থাকলো। এই প্রথম অবনীর চেহারা্য আকর্ষনীয়তা খুঁজে পেলো নীলা। কোনো লাজ নেই, নেই সংকোচ, সাবলীল ভাবে কথাবলে যাচ্ছে। মনে মনে ঈর্ষান্বিত হলো খুব।
নিজের ছোট ছোট বুকগুলোর দিকে চেয়ে আজ খুব হতাশ হলো ও নিজে। পাশের চেয়ারটি তে চুপচাপ বসে পড়লো।
(চলবে)
ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস - ১ম পর্ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।