আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পার্বত্য এলাকায় ভূমি বিরোধের বিষবৃক্ষ রোপণ করেন জিয়া: ড. মিজান

পার্বত্য এলাকায় ভূমি নিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে যে বিরোধ সে সমস্যার বিষবৃক্ষ রোপণ করেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সে ঘটনার সূত্র ধরেই সেখানে আজও রক্তারক্তি চলছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। গতকাল রাজধানীর এলজিইডি-আরডিইসি ভবন কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ভূমি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমি কমিশনের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েসন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহি পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, তথ্য কমিশনার ড. সাদেকা হালিম, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ।

মিজানুর রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান কিছু বাঙালির হাতে কাগজ ও দলিল দিয়ে পার্বত্য এলাকায় বসিয়ে সেখানকার চিরাচরিত নিয়ম ভঙ্গ করে। পার্বত্যবাসীদের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে। তিনি বলেন, আদিবাসীরা কাগজে ও দলিলে বিশ্বাস করে না। তারা বংশে বিশ্বাস করে, ঐতিহ্যে বিশ্বাস করে। তিনি অভিযোগ করেন, সমতল এলাকায় সামাজিক বনায়নের নামে আদিবাসীদের জমি দখল করা হচ্ছে।

পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষের মাধ্যমে সমস্ত জমি চাষের আওতায় এনে সর্বহারা করা হচ্ছে আদিবাসীদের। তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে দেখছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমেই পার্বত্য জনগণের ভূমি অধিকার রক্ষা করতে হবে। ড. মিজান আরও বলেন, পার্বত্য ভূমি কমিশনের প্রক্রিয়াগত কারণে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে তা জটিল আকার ধারণ করবে এবং তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না করে উক্ত অঞ্চলে ভূমি জরিপ করার যে উদ্যোগ কমিশন নিয়েছে তা কোনওক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সরকারকে আন্তরিকতার সঙ্গে পার্বত্য ভূমি কমিশনকে কার্যকর করতে হবে। পার্বত্য চুক্তির আলোকে পার্বত্য ভূমি কমিশনকে কার্যকর করার জন্য আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ও সরকারের পারস্পারিক আলোচনায় আস্থার ক্ষেত্র তৈরিতে প্রয়োজনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, মানুষের চেতনার মূল শক্তি তার মাটি। মাটির বিরাট ভূমিকা মানুষকে মাথা উঁচু করে মানুষকে চলতে সাহায্য করে কিন্তু আদিবাসীদের সেই মাটি অন্যায়ভাবে জোর জবরদখল করা হচ্ছে। কোন-কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বর্তমান পার্বত্য ভূমি কমিশনের সংস্কার এবং এর বাস্তবায়নের জন্য একটি কার্যকর বিধিমালা প্রণয়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি সমস্যা সমাধানে আরেকটি ভূমি কমিশন গঠন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে সেখানে সকল মানুষের প্রাপ্য অধিকার, মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে বাঁচার বিষয়টি রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিতে হবে। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে কাজ করার নৈতিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সেখানে কথা বলছে ভুক্তভোগী ক্ষমতাহীন মানুষ। আধুনিক রাষ্ট্রে কুচক্রি মহলের মার প্যাঁচে পড়ে আদিবাসী জনগণ আজ দিশেহারা। আজ রাষ্ট্রের মূলনীতি হচ্ছে অপগণতন্ত্র, সা¤প্রদায়িকতা, পুঁজিবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ।

তিনি বলেন, ভূমি কমিশন সঠিকভাবে পার্বত্য এলাকার ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ বাস্তবায়ন না করলে পার্বত্য চুক্তি এবং পার্বত্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে মারাত্বক অবিচার করা হবে। সভাপতির বক্তব্যে সন্তু লারমা বলেন, কোনও সরকারই পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন চায় না। পার্বত্য অঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত করার লক্ষ্যে এ এলাকার ঝামেলাগুলো দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভূমি, বন ও পাহাড় নিয়ে আদিবাসীদের জীবন। ভূমি ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না।

অথচ তাদের ভূমি সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে উপজাতীয়তাবাদী, উগ্র দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি ভূমি কমিশনার সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলামের নানা কাজের সমালোচনা করে বলেন, ভূমি কমিশনের নামে তিনি (খাদেমুল ইসলাম) যা ইচ্ছা তাই করছেন। নিজেকে আজ বিচারপতি ভাবছেন। যেন এজলাসে বসে বিচার পরিচালনা করছেন। এতে করে আদিবাসী জনগনের স্বার্থরক্ষা দূরে থাক মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে।

সন্তু লারমা পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন এর সংস্কারের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গৃহীত খসড়া বিল অবিলম্বে পাশের আহবান জানান। এছাড়া প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আদিবাসী, বাঙালি সকল মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। যঃঃঢ়://িি.িধসধফবৎংযড়সড়ু১.পড়স/পড়হঃবহঃ/২০১১/০৮/১১/হবংি০৮৩১.যঃস ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.