আমি মুক্তি "চাই" না কেউ আমাকে মুক্তি "দেবে" তাও চাই না আমি শুধু চাই মুক্ত "হব" Click This Link
কিছুদিন ধরেই একথা শুনছিলাম যে আমাদেরকে ক্লাসে ধরে রাখতে নাকি এবার রেজিস্টার্ড বিল্ডিং থেকে নিয়ম করা হবে নির্ধারিত পরিমান উপস্থিতি না থাকলে আমাদেরকে নাকি ৫০০০ টাকা জরমানা দিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। বলাই বাহুল্য বিশ্বাস করি নাই, কারণ আমাদের প্রতি সেমিস্টারে ভর্তি ফি এর চেয়ে কম। কিন্তু পত্রিকা পড়ে বজ্রাহত হতেই হল।
আমরা যারা ঢাবিতে ভর্তি হই মোটামুটি ধরা হয়ে থাকে আমরা ওই উচ্চমাধ্যমিক ব্যাচের সবচেয়ে ভাল ছাত্র-ছাত্রী, বিশাল স্বপ্ন, আশা, পরিকল্পনা নিয়ে আমরা পা দেই এখানে, প্রথম সেমিস্টারে হাসি আনন্দ গানের সাথে সাথে সবার মাঝেই থাকে পড়ালেখার আগ্রহ। কিন্তু ক্লাসে গিয়ে দেখি স্যার বা ম্যাডাম আসেননাই, আসলেও দেরিতে আসছেন, কারণ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়াসহ রাজ্যের সব রাজকাজে ব্যস্ত থাকার কারণে আমাদের মত অগুরুত্বপূর্ণ পাবলিকদের ভাগ থেকে সময় কেটেই নিতে হয়।
(আমরা অবশ্য ক্লাস না হওয়াতে খুবই মজায় থাকি, আড্ডা জমে ভাল )
শুধু ফাকিবাজি যে করেন শিক্ষকেরা তাই নয়, অনেক শিক্ষকের ক্লাসে গেলে মনে হয় উনি ফ্রেঞ্চ, হিব্রু ও সংসকৃতর মিশ্রণে এমন একটা ভাষায় কথা বলছেন যা বোঝার সাধ্য আমার বাবার বাবারও নাই, কেউ কেউ প্রথম দিন ইকোনোমিক্স পড়াতে এসে ডিমান্ড কার্ভ উলটো এঁকেছেন, কেউ ক্লাসে এসে আমাদের মাথায় বাড়ি দিয়ে কিভাবে তা থেকে মুড়িঘন্ট বানাবেন সেটা নিয়ে ফাপর ছেড়ে ছেড়েই পুরো সেমিস্টার শেষ করে দিয়েছেন, কেউ বই দেখে দেখে বা বই থেকে মুখস্থ করেও ভুল অঙ্ক করানোর খেল দেখিয়েছেন আমাদেরকে। পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেখে প্রায়ই আক্কেল গুড়ুম হয় সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন দেখে থুক্কু সিলেবাসের ভেতরে কিন্তু টিচারের পড়ানোর বাইরে থেকে প্রশ্ন চলে এসেছে দেখে (সবসময় যে এমন হয় তা নয় অবশ্য)। যাহোক দেখাদেখি করে বা না করে পরীক্ষা তো দিলাম, কিন্তু রেজাল্টের দিন গিয়ে দেখলাম এক বন্ধু হাসছে মনে আনন্দে, কারণ সে ৩০ এনসার করে পেয়েছে ৫০ আর আবার কেউ ৬০ এনসার করে পেয়েছে ৩০! তার মানে আমি কি লিখলাম সেইটা ব্যাপার না, মূল ব্যাপার হইল শিক্ষক আমাদের রোলের পাশে নম্বরগুলো বসানোর আগে তার সঙ্গীর সাথে রোমান্স করেছেন নাকি ঝগড়া করেছেন!!!
এবার বলেন, ক্লাসে গিয়ে আমি বুঝিনা "ব্যাটা/বেটি কি কইতে চায়?",পড়ায় ভুল, হেরা ফাপরের জ্বালায় অস্থির বানায়া ফেলে, আজাইরা হ্যারাস করে এমনভাবে যেন আমরা তাদের স্টুডেন্ট না প্রতিপক্ষ, তার উপর আমার খাতা আমার মেধা রিফ্লেক্ট করেনা, ওই বেটা বা বেটির মুড আর মানসিকতা রিফ্লেক্ট করে, তাহলে আমি ক্লাসে থাকব ক্যান। তার উপর এত অত্যাচারের পরেও যেই পোলাপাইনেরা ক্লাস করে ধৈর্যের সাথে তাদের কারো যদি জরিমানা হয় ডিপার্টমেন্টের বা শিক্ষকদের কোন ভুলের কারণে, বা ডিপার্ট্মেন্টে অসুস্থতার জন্য দরখাস্ত জমা দেয়ার পরেই সিম্পলি হারিয়ে ফেলা এবং জীবনেও সে ভুল স্বীকার না করার কারণে,তাহলে আমরা যাই কোথায়? গত সেমিস্টারে আমাদের ডিপার্টমেন্ট মোটামুটি ৮০% স্টুডেন্টের জরিমানা করেছিল। জরিমানা করার ধরণ দেখে মনে হল তারা ২০০ জনের রোল একটা বাটির মধ্যে রেখে ২০/৩০ টা নাম উঠায়ে বলছে "we have our lucky winners who wont be fined!!!"
অথচ আমরা এমন অনেক শিক্ষকের ক্লাস করেছি যাদের এটেনডেন্স নিয়ে হ্যারাসমেন্ট এড়াতে ক্লাসে উপস্থিত থেকেছি আর গল্পের বই পড়েছি বা ঘুমিয়েছি, কাটাকুটি খেলেছি, গল্প করেছি।
আবার এমন অনেক শিক্ষকের ক্লাস পাগলের মত করেছি যারা নিয়মিত এটেন্ডেন্স নেননা, এমন জিনিসপত্র পড়ান যা মাথার উপর দিয়ে যায়, অথচ ক্লাসে স্টুডেন্ট ধরেনা। শিক্ষক যদি ভাল হয়, অন্ততপক্ষে বুঝতে পারার মত উচ্চারণে যদি তারা কথা বলেন, ফাপর না ছেড়ে প্রাসঙ্গিক কথা বলেন, নিজের পরানোর স্কিলকে উন্নত করার চেষ্টা করেন, আমাদের মেধাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেন, নিজের পেশার প্রতি সৎ থেকে দায়িত্বটুকু পালন করেন তাহলে ৫০০০টাকা জরিমানা লাগবেনা এমনিতেই আমরা ক্লাস করব। আর দায়িত্ব ঠিকমত না পালন করলে ৫০,০০০ টাকা জরিমানাতেও কাজ হবেনা।
কর্তৃপক্ষ এটা খেয়াল্ করেছেন আমরা ক্লাসে আসছিনা, আমাদের রেজাল্ট হুহু করে নামছে, কিন্তু তারা এটা কখনো ভাবার চেষ্টা করেছেন কি যে একটা ক্লাসের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী কেন ক্লাসে আসছেনা বা খারাপ রেজল্ট করছে? একটা ক্লাসের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী কি নিছক ফাকিবাজির জন্য একাজ করতে পারে? সমস্যার গোড়ায় নজর না দিয়ে উপরে পানি ঢাললে কোন কাজ হবেনা। আমাদের মাঝে কজনের ৫০০০টাকা জরিমানা দেয়ার সামর্থ্য বা ইচ্ছে আছে? আর এর মাধ্যমে কি ঐ উচ্চারণে সমস্যা থাকা , ওই ভুল পড়ানো, ওই ফাকিবাজ শিক্ষককে সহ্য করতে আমাদেরকে বাধ্য করা হলনা?
বিঃদ্রঃ এখনো অনেক শিক্ষক আছেন, সত্যিকারের শিক্ষক, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর তাদের কাছে শেখার কামনা রইল।
অনেকে হয়তো বলবেন আজকালকাল ছেলেমেয়েরা শিক্ষকদের সম্মান করতে ভুলে গেছে। কথাটা ভুল। ভাল শিক্ষকের সম্মান সবসময়েই আছে, থাকবে। যেসব অযোগ্য ছাগলরা শিক্ষকতা পেশাটার অবমাননা করবে তাদেরকে শুধুমাত্র তাদের পদের জন্য সম্মান দেয়ার কোন দরকার আমি মনে করিনা, এতে আসল শিক্ষকদের অপমান হয়। প্রতিদিন অনেক শিক্ষককে সালাম দেই, মন থেকে সালামটা পায় কিন্তু যোগ্যরাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।