আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'সামান্য' ৫০০০ টাকা এবং অসামান্য কিছু কথা

““Do not believe in anything simply because you have heard it. Do not believe in anything simply because it is spoken and rumored by many. Do not believe in anything simply because it is found written in your religious books. Do not believe in anything me জ্বি, আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ৫০০০ টাকা ‘উন্নয়ন ফি’ এর কথাই বলছি। অনেকে হয়ত ভাবছেন ভর্তির জন্যে নির্ধারিত এই ৫০০০ টাকা কি খুব বেশী? আসলে আমারা যারা পিসিতে বসে, কিম্বা ইন্টারনেট সুবিধাসম্পন্ন মোবাইল থেকে এই নোটটা পড়ছি, তাদের জন্যে এটা হয়ত তেমন কোন বড় ব্যাপার নয় । কিন্তু ভুলে যাবেন না এটা আমাদের দেশের ৮৫% মানুষের অবস্থা নয়। একবার ভাবুন তো সেই গারমেন্টস কর্মীর কথা, যার বেতনই ২,৫০০ টাকা। কিম্বা আপনার বাসার কাজের লোকটা, কত বেতন তার? অথবা কোন সরকারী চাকুরে যে ৭০০০ টাকা বেতনে সংসার চালাতে মাস শেষে হিমসিম খায়, দেনার দায়টা যে মেটাতে পারেনা কখনই।

দিনমজুর, কৃষক – এরাই তো এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ । তাদের ছেলেমেয়েরা কি পাবেনা উচ্চ শিক্ষার স্বাদ? শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার, এটা আমরা কে না জানি। কিন্তু আমরা কি এটা জানি মৌলিক অধিকার হল সেসব অধিকার যা একটা দেশের নাগরিককে দিতে রাষ্ট্র বাধ্য থাকবে ? অথচ আমাদের সংবিধানে শিক্ষাকে এখনো মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দেয়া হয়নি। প্রাইমারি পার হয়ে যার সামর্থ্য হবে সে শিক্ষার সুবিধা পাবে, আর যার সে সামর্থ্য নেই তার কথা ভাবতে আমাদের রাষ্ট্র সাংবিধানিক ভাবে বাধ্য নয় ! জানি অনেকেই এখন বলে উঠবেন আমাদের হতদরিদ্র্য অবস্থার কথা । যেখানে বিদেশি সাহায্য ছাড়া আমরা নিজেদের বাজেটই সামলাতে পারি না, সেখানে এসব কেবলি ফাঁকা বুলি, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা শুধু ! আপনার জন্যে বলছি আমাদের বিশাল পৌনে দুশ হাজার কোটি টাকার বাজেটে বিদেশী সাহায্যের পরিমান ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি নয়, এবং এর পুরটাই ঋণ সাহায্য, দান নয়-যা তারা কড়ায় গণ্ডায় (সুদসহ) আদায় করে নেয় ।

“আমাদের দ্বারা কিছু সম্ভব না” এটা এদেশের সরকারের খুব সুন্দর একটা অজুহাত এবং সরকার আমাদের মাথায় তা সাফল্যের সঙ্গে গেঁথে দিয়েছে। অথচ যে দেশের কোন বিষয়ে মাথা ঘামায় না আজ সেও এটা জানে যে দেশের অভ্যন্তরে যে পরিমান দুর্নীতি হয় তা এই সাহায্যের তুলনায় ঢের বেশী। প্রধান সমস্যাটা হল আপনি নিজেই যদি আপনার মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন না থাকেন, রাষ্ট্র যে আপনার শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব নিতে সক্ষম এবং বাধ্য এই বিশ্বাস না রাখেন এবং আপনার অধিকার আদায়ে সচেষ্ট না হন, তাহলে গদিতে আসীন ক্ষমতালোভীদের দল যে তার সুযোগ নেবে এ আর এমন কি বেশি কথা। তাই প্রশ্নটা শুধু ৫০০০ টাকার ‘সামান্যতা’ নিয়ে নয়, প্রশ্নটা হল আমাদের রাষ্ট্র আমাদের শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক কিনা? রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি কি শিক্ষাকে আর দশটা পণ্যের মত বেসরকারিকরণেরে কথা বলে, নাকি ধনী দরিদ্র্য সকলের জন্যে শিক্ষাকে নিশ্চিত করার কথা বলে? মুখে সবার জন্যে শিক্ষা আর কাজে আর্থিক দায়িত্ব জনগণের উপর চাপানো – এভাবেই কি চলবে সরকার? আর আমরা ‘বুদ্ধিসম্পন্ন’ মানুষেরা সেটা বুঝেও চুপ করে থাকব? ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’ , ‘শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো’ এই কথাগুলো কি কেবলই বলার জন্যে বলা? নিজের ভাল নাকি পাগলেও বোঝে । আমরা কি আমাদের ভালোটা বুঝবোনা? আসুন কেবল ৫০০০ টাকার কথা ভেবে নয় , শিক্ষাকে তার মৌলিক অধিকারের মর্যাদা এনে দিতে, এদেশের সকল মানুষের জন্যে শিক্ষার আলো নিশ্চিত করার সংগ্রাম হিসেবে আমারা যে যে যার যার জায়গা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াই।

টাকায় বিক্রিত পণ্য নয়,স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে শিক্ষা হোক সকলের অধিকার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।