ঠা ঠা করে হাসতে থাকা ক্রমবর্ধমান ঘন অন্ধকারের মাঝে, আলোকবর্তিকা হাতে দাড়িঁয়ে নিঃস্বার্থ ভাবে আলো বিলিয়ে গেছেন ডঃ জামাল নজরুল ইসলাম স্যার। যেন আরেক নিঃসঙ্গ প্রমিথিউস। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দেবদূত প্রতিম চেহারার অধিকারী স্থিতধী এ গুণী মানুষের সেমিনারে ছুটে যেতাম ব্যাপক মুগ্ধতা নিয়ে। এক পবিত্র ধ্রুপদী হাসিতে সব সময় উদ্ভাসিত থাকত স্যারের চেহারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের কাছাকাছি অবস্থিত ভৌত বিজ্ঞান গবেষণাগারে নীরবে
নিভৃতে বিজ্ঞান সাধনা করে গেছেন নিঃশেষিত জীবনী শক্তির শেষ বিন্দু অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত ।
যখন শুনতাম স্টিফেন হকিং তাঁর বাড়িতে এক সময় সকাল বিকাল আসা যাওয়া করতেন, প্রফেসর আবদুস সালাম স্যারের পারিবারিক বন্ধু আর অমর্ত্য সেন বাংলাদেশে আসলেই স্যারের বাড়িতে উঠেন তখন স্যারের প্রতি মুগ্ধতা আরও বেড়ে যেত। ডঃ জামাল নজরুল ইসলাম স্যার কেন ইউরোপের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার প্রস্তাব মাড়িয়ে এখানে পড়ে আছেন ?- এ প্রশ্ন প্রায়ই আমার মনে উকি-ঝুঁকি দিত তখন ।
ডঃ জামাল নজরুল ইসলামের জীবনে অর্জন অনেক। তার এসব অর্জন আন্তঃর্জাতিকতার মানদণ্ডে কালোত্তীর্ন। স্যারের এসব অর্জনের কথা অনেকেই জানেন না।
সন্দেহ নেই নিতান্ত দেশপ্রেমের কারনেই স্যার দেশে ফিরে এসেছিলেন। এদেশের বিজ্ঞান চর্চায় আবদান রাখার মহান ব্রত নিয়েই কেমব্রিজের অধ্যাপনার চাকুরীটি ছেড়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। আর আমরা তাকে ফেলে রাখলাম লোক চক্ষুর অন্তরালে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এককোণে। ডঃ জামাল নজরুলের মতো ব্যক্তিত্বকে ফোকাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ও সুযোগ ছিল আন্তঃর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফোকাসড (Focused) হওয়ার। সে সুযোগ কেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করল না? এদেশের শিক্ষা অথবা গবেষণা সংক্রান্ত কোন নীতিনির্ধারনী ফোরামে ডঃ জামাল নজরুলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল কিনা আমার জানা নাই।
দেশের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি একবার বলেছিলেন, ‘মেধা দেশে নর্দমায় পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার চেয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া ভালো”। সন্দেহ নেই অনেক দুঃখ আর আক্ষেপ থেকে কথাটি বলেছেন তিনি। কথাটি কি একেবারে অমূলক?? দিনকে দিন প্রলম্বিত হচ্ছে ‘brain drain’ এর মিছিল। যে হারে মেধাবীরা বাইরে যাচ্ছেন তার খুব কমসংখ্যকই ফিরে আসছেন। প্রচলিত ‘brain drain’ কথাটির বিপরীতে ইন্ডিয়াতে নতুন একটি শব্দ চালু হয়েছে তা হলো ‘brain gain’।
ইউরোপ, আমেরিকা ও আন্যান্য উন্নতদেশ থেকে শিক্ষা ও প্রযুক্তি তে উন্নত জ্ঞান লাভ করে অনেক ইন্ডিয়ান দেশে ফিরে আসছেন। এ প্রবণতাকে তারা ব্রেইন গেইন বলে অভিহিত করছেন। নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে ঋদ্দ করে চলেছেন ইন্ডিয়ার উন্নয়নের গতির চাকা। বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এ লিংকে যেতে পারেন (Click This Link)। এদের সবাই যে নিছক দেশ প্রেমের টানে দেশে ফিরে আসছেন তা কিন্ত নয়।
প্রবাসীদেরকে দেশে ফিরে আসায় আশ্বস্ত করার মতো একটি Infrastructure ইন্ডিয়া তৈ্রি করতে পেরেছে যা আমরা পারিনি।
বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে তরান্বিত করতে হলে ব্রেইন গেইনের জন্য প্রয়োজনীয় Infrastructure তৈরি করতে হবে। ব্রেইন গেইনের জন্য কি কি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন এ বিষয়ে সৃষ্টিশীল বিতর্কের এখনই উপযুক্ত সময়। ডঃ জামাল নজরুল ইসলামের মতো অবহেলার উদাহরণ ব্রেইন ড্রেইনকেই উৎসাহিত করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।