শব্দ খুঁজি, সৃষ্টির অদম্য নেশায় দিনে দিনে লোভী হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র। গণমানুষের সকল অধিকার লোপাট হয়ে গেছে আগেই। এখন তাদের চোখ পড়েছে মানুষের বাক স্বাধীনতার ওপর, ব্যক্তিগত জীবনের ওপর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে উন্মেষ ঘটে জঙ্গিবাদের। এরা কখনো দাবি করেছে সমাজতন্ত্রের, কখনো স্বাধীনতার, কখনো বা ধর্মের।
এই জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলো ভুঁইফোঁড় নয়। তাদের মাথার ওপর ছাতা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শক্তিশালী ও আধিপত্যকামী রাষ্ট্রসমূহ। এই কারণে রাশিয়ার সমর্থনে জাপানে গঠিত হয় রেড আর্মি, আমেরিকা-পাকিস্তান- সৌদি আরবের সমর্থন পায় তালেবান ও আল কায়েদা, ইরানের মদদে লেবাননে গঠিত হয় হিজবুল্লাহ, শান্তিবাহিনীর ‘শান্তি’ রক্ষার সরঞ্জাম প্রদানে উৎসাহী হয়ে ওঠে ভারত, আবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সহযোগিতা পায় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফা। এসবই বৃত্তের মতো এক বিন্দুতে মিলে যায়। রাষ্ট্রই সন্ত্রাসের প্রজননকারী।
উপরের উদাহরণগুলো ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের হলেও এদের নিজেদের জনগণের ওপর সন্ত্রাসের খড়গ নামিয়ে আনার ইতিহাসটাও পুরনো। এজন্যই গান্ধীবাদী নেলসন ম্যান্ডেলাকে অহিংস আন্দোলন করেও জেল খাটতে হয়েছিল। নিজ ভূমে পরবাসী হওয়ার পরেই জন্ম নেয় রোহিঙ্গা সোলিডারিটি অরগানাইজেশনের মতো সংগঠনের। এজন্যই চারু মজুমদার, সিরাজ শিকদাররা আদালতে যাওয়ার আগেই নিহত হন রাষ্ট্রীয় পেটোয়া বাহিনীর বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে। ‘বেলুচিস্তানের মুজিব’ আকবর আলী খান বুগতির প্রাণ কেড়ে নেয় দখলদার পারভেজ মোশাররফের সেনাবাহিনী।
এরকম অবস্থায় জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে সামনে এনে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতড়ানোর যে অভ্যাস বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে তা শুধু গা গুলানোর মতো নোংরাই নয় বরং সংবিধান ও প্রতিশ্রুত নাগরিক অধিকারের চুড়ান্ত লংঘন। নাগরিকদের টেলিফোনে আড়িপাতা, ভার্চুয়াল জীবন অনুসরণ, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ঘেরা বাস্তব জীবন এক একটা শেকল হয়ে নব্য দাসত্বের অন্ধকূপে ফেলে দিচ্ছে মানুষের চিরন্তন স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে। রাষ্ট্রের এই আচরণ যে খুব সাম্প্রতিক তাও নয়। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, ব্রাডলি ম্যানিং ও হাওয়ার্ড স্নাইডারের মতো কিছু প্রতিবাদী মানুষের সুবাদে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে জানতে পারছি ফোনে স্ত্রীর সাথে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ রেকর্ড করে নিচ্ছে সরকারি বাহিনী, ফেইসবুকে আমাদের চ্যাট হিস্ট্রি আতসি কাঁচের নিচে ফেলছে অন্য কেউ, ই-মেইলে প্রিয়তমার পাঠানো ব্যক্তিগত ছবি আপনার পাশাপাশি দেখে নিচ্ছে কুতকুতে সহস্রচোখ। এসবই নাকি করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য!
বলিহারি রাষ্ট্র! মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর গোপনে চালানো এই নজরদারীকে সাদা চোখে নিজ দেশের নাগরিকদের শোষণ ও বাক স্বাধীনতা হরণের উপকরণ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না।
ভিন্নমতের জন্য রাষ্ট্র যে কতটা নির্দয় হতে পারে ইতিহাস তার স্বাক্ষী। মানুষের প্রকৃত অধিকার ছিনিয়ে আনার জন্য একটা বৈশ্বিক বিপ্লবের সময় সম্ভবত এসে গেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।