বৃথা হয়রানি ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারগুলোতে মা যেন কী লুকিয়ে রাখত। মাটিতে শক্ত করে পা দেয়ার পর থেকে সেই গুপ্তধনের প্রতি আমার অপার আগ্রহ। একবার কোন এক ছুঁতোয় একটা ড্রয়ার খুলে ফেলি। ওমা, এ দেখি আলিবাবা চল্লিশ চোরের গুহা! গুহাভর্তি মজার মজার সব জিনিস। মায়ের স্নোর কৌটো, আলতার শিশি, সিঁদুরের পট ইত্যাদি ইত্যাদি।
অল্পদিনের মধ্যে এসবের নানাবিধ ব্যবহার রপ্ত করে ফেলি। আলতার বোতল শোভা পেল শখের ডিসপেন্সারির কেসে। পাউডারের পাভ হলো রোগীর বিছানা। স্নোর কৌটোটাও সুন্দর স্টেথস্কোপ তৈরিতে কাজে লেগে গেল। ডিসপেন্সারির একমাত্র রোগী ছিল আমার দিদি।
রোগীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার গায়ে বিভিন্ন ঔষধ লাগানো হত। রোগী সংক্ষুব্ধ হয়ে নিয়মিত ডাক্তারের ওপর চড়াও হত। এতো লাঞ্ছনার সত্ত্বে জনসেবার মহৎ পেশা চালিয়ে যেতাম। কিন্তু ক'দিন যেত না যেতেই রসভঙ্গ ঘটল। নতুন রসদের সন্ধানে হামলা হলো মায়ের গুপ্তধনে।
আরেকটা দেরাজ মেলল। কল্পনার আরেকটা জগৎ উন্মোচিত হলো। আমার উৎপাতে বাসার সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। প্রথমে বকুনি, তারপর হাত থাকতে মুখে কী পদ্ধতি-। আমাকে সৎ পথে আনার প্রাণান্তকর চেষ্টা চলল।
কিন্তু আমার হাতেও ছিল এক অব্যর্থ হাতিয়ার। মা যখন কখনো সাজে না তখন এসব ড্রেসিং টেবিলে রেখে নষ্ট করার মানে কী! দিদি তখন তার মাতৃধন রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠল: বাহ, আমি বুঝি সাজব না!
- বড়ো হয়ে আমি যখন চাকরি করব, তখন তোকে অনেক অনেক স্নো পাউডার কিনে দেব। চিন্তা করিস না।
-তোকে কে চাকরি দেবে; তুই তো একটা গাব্বু।
কোটি টাকার প্রশ্ন: গাব্বুকে কে চাকরি দেবে? গাব্বু অংকে ফেল মারে, বাংলায় ফেল মারে, ইংরেজিতে তো...।
এর মধ্যে হঠাৎ একদিন গাব্বু বিরাট প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে আবির্ভূত হলো। কোত্থেক একটা জাদুর বাক্স খুঁজে পেল। এটার চৌক-গোল খোপগুলোতে গূড়ো গূড়ো রং থাকে। সেই রং পানিতে গুলালে দিব্যি ছবি আঁকার রং হয়ে যায়। কাঠির মাথায় তুলো জড়িয়ে সেই রং দিয়ে চমৎকার সব ছবি আঁকা যায়।
এই রং দিয়েই আমার ছবি আঁকার হাতেখড়ি। মধ্যবিত্ত টানাপোড়েনের সংসারে সবার অগোচরে রাফ খাতার পৃষ্ঠা নষ্ট করে আমার শিল্প চর্চা চলত। দেখলাম এটা ওটা নকল করে আঁকাতে কী মজা। মনে মনে এসবের মধ্যে আমি প্রাণ সঞ্চার করে আমি আমার একটা সাম্রাজ্য গড়ি তুলি।
পরে জেনেছি, এই জাদুর বাক্সটা আমার মায়ের বিয়েতে দেয়া বিউটি বক্স।
যে রং দিয়ে আমার মা সাজার কথা ছিল, কিন্তু কোন দিন সাজা হলো না, সেই রং দিয়ে আজ আমার জীবন সেজেছে। এখনো আমি রাফ খাতায় রং বুলিয়ে সময় কাটাই। এই রঙের কৃপাতেই খেয়ে-পরে আছি। ভালোই আছি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।