পাগল ও প্রিয়তমেসু (৩)
‘প্রিয়তমেসু’
তোমার প্রিয় ‘শ্রাবণ’ এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা নিও। জানিনা কোথায় আছো। শুধু জানি ও বিশ্বাস করি তুমি ভালো আছো, সুখে আছো। আর যাই হোক অন্তত তোমার এই “পাগলের’’ মত থেকোনা। অবশ্য তোমাকে এসব বলে লাভ নেই।
তুমি অনেক অনেক শক্ত একটা মানুষ। কোন দুঃখই তোমাকে স্পর্শ করতে পারেনা। এতদিন পাশে থেকেও কেন আমি তোমার এই মহাগুনটা নিজের মাঝে আনতে পারলাম না জানিনা। হয়তো আমি “পাগল’’ বলে এসব মহাগুণ আমি রাখতে পারিনা। যাই হোক সেইটা আমারি ব্যর্থতা।
যাকগে এসব বাজে কথা। “পাগল’’এর আবার সফলতা কি আর ব্যর্থতা কি সব সমান।
আজ কয়েকদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছে। বুঝতে পারলাম যে আমার মত ঐ ‘আকাশ’ সাহেবের অনেক দুঃখ। তাই তিনি গত কয়েকদিন ধরে অবিরাম কেঁদে যাচ্ছেন তো যাচ্ছেন।
কবে নাগাদ উনার এই কান্না থামবে জানিনা। এই যা! আমি কাকে কি বলছি! আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম যে তোমার আবার ঐ “আকাশ” সাহেবের কান্না খুব পছন্দ। তুমি সারাবছর এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করতে। একবার তো তোমার অনুরোধ রাখতে গিয়ে সারাদিন দুজন ভিজলাম। সেইদিন বাসায় ফিরার পর থেকে আমার শরীরটা আস্তে আস্তে অনেক খারাপ করলো।
এরপরে কি ঘটেছে তাতো তুমি জানোই। আমি জীবনের সবচেয়ে বেশী কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই সপ্তাহ ঘরে পড়ে ছিলাম। অবশ্য জ্বর হওয়াতে ভালোই হয়েছিলো। কারন তুমি প্রতিদিন আমাকে বাসায় দেখতে আস্তে। কয়েকটা দিন সব পাগলামি ফেলে তোমাকে সেই প্রথম ও শেষ একটানা সময় দেয়া।
আমার মাতো তোমার আসার দেরি দেখলে উনি নিজেই তোমাকে ফোন দিতেন। এই জ্বরের মধ্যে তোমাকে একদিন প্রস্ন করেছিলাম যে “তোমাকে সময় না দেয়ার কারনেই কি তুমি আমাকে বৃষ্টিতে ভিজালে যাতে আমি অসুস্থ হয়ে কয়েকদিন ঘরে থাকি আর তোমাকে সময় দিই!?” তুমি তার কোন উত্তর না দিয়ে শুধু মুচকি হেসে বললে “তোমার যা ইচ্ছে ভাবো”। সেইবার আমি প্রথম বুঝতে পারলাম যে তুমি কত শক্ত মনের মানুষ। দুজনে একসাথে ভিজলাম কিন্তু তুমি ছিলে পুরো সুস্থ আর আমি ঐ দিনেই অসুস্থ হয়ে পরলাম। আজ ভাবি যে তোমার কথা রাখার গুনটি না পেয়ে এই শক্ত মনের মানুষ হওয়ার গুনটি যদি আমি পেতাম তাহলে আজ আমার জীবনটাও এমন ‘নিরামিষ’ ও কষ্টের হতোনা।
আজ তোমাকে একটি প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছে, তুমি যে সবসময় ‘আকাশের কান্না’ পছন্দ করতে তাই বলে কি যাবার সময় আমাকে ‘আকাশ’ এর মত এত অসিম জলরাশি চোখ দিয়ে ঝরানোর জন্য দিয়ে গেলে? তুমি কি কখনো কেঁদেছো? কাঁদনি, তাই বলে হয়তো তুমি জানোনা যে কান্নার কি কষ্ট! কত কষ্ট পেলে একটা মানুষ কাঁদতে পারে? যদি জানতে তাহলে কখনো কারো কান্না তোমার ভালো লাগতো না। ঐ ‘আকাশ’ আর আমার মাঝে পার্থক্য একটাই, তা হলো আকাশের কান্নাটা সবাই দেখে কিন্তু আমার কান্নাটা পৃথিবীর কেউ দেখে না। ‘আকাশ’ এর বুকে ধীরে ধীরে জমতে থাকা কষ্টগুলো সে ‘বৃষ্টি’ নামে ঝড়িয়ে দেয় আমিও আমার বুকের জমে থাকা কষ্টগুলোকে সবার আড়ালে কান্না নামে চোখ দিয়ে ঝড়িয়ে দেই।
ভালো থেকো সবসময়।
ইতি
তোমারি হতভাগা ‘পাগল’ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।