আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

[ভুলে যাওয়া নাটকগুলি] পাগড়ী (১৯৮৪)

হা হা হা পায় যে হাসি!!! পোস্ট উৎসর্গঃ ব্লগার রেজোওয়ানার কন্যা সোহা* বিঃদ্রঃ চরিত্রগুলির বেশিরভাগের নাম মনে না থাকার কারনে তাদের আসল নাম ব্যবহার করেছি। একজন অভিনেতার আবার আসল নাম মনে নাই, তবে চরিত্রের নাম মনে আছে। তাই তার ক্ষেত্রে চরিত্রের নাম ব্যবহার করছি। ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ আমাদের টেলিভিশন নাটক বা চলচ্চিত্রে যতটা এসেছে সাতচল্লিশপূর্ব ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তার কানাকড়িও আসেনি। সঙ্গত কারনেই আমরা ১৪ই আগস্ট (পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস) পালন করি না, তাই বিশেষ দিবসের নাটক হিসেবে ব্রিটিশ আমলের ইতিহাস আসার সম্ভাবনা নাই।

খুব ছোট পরিসরে ২৩শে জুন (পলাশী দিবস) পালন করা হয়। কিন্তু এই দিন উপলক্ষেও টেলিভিশনে সাধারনত বিশেষ নাটক প্রচারিত হয় না। বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটা কুমিরছানা আছে খান আতাউর রহমানের নবাব সিরাজউদ্দৌলা, সেটাই প্রায়ই ২৩শে জুন বা তার আশেপাশের শুক্রবারে দেখতাম। বিচ্ছিন্নভাবে সংশপ্তক, নুরুলদিনের সারাজীবন (এটা নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনায় একটি মঞ্চ নাটক, তবে বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছে) ইত্যাদি কিছু নাটকে ব্রিটিশের শাসনের কথা এসেছে। মামুনুর রশিদের এই পাগড়ী নাটকটা খুবই উল্লেখযোগ্য এ কারনে যে এটা আমার দেখা একমাত্র টেলিভিশন নাটক যা ১৮৫৭ এর সিপাহী বিদ্রোহের উপর নির্মিত।

নাটকটা তৈরী হয়েছে গল্পের ভিতর গল্প স্টাইলে। নাটকের শুরুতে মুহম্মদ জাকারিয়া দর্শকদের উদ্দেশ্যে এই গল্পটি লেখার পেছনের গল্প শোনান। তিনি এক মহাফেজখানার তত্ত্বাবধায়ক। সেখানকার প্রচুর পুরোনো দলিল-দস্তাবেজ, বইপত্রের ফাঁকে খুঁজে পেয়েছিলেন একটা পুরোনো পাগড়ী। আর এই পাগড়ীকে নিয়েই মুহম্মদ জাকারিয়া আমাদের আলোচ্য গল্পটি রচনা করেছেন।

১৮৫৭ সালের দিকে ঢাকার আশেপাশের কোন এক অঞ্চলের কোম্পানীবিরোধী বৃদ্ধ জমিদার আলী জাকের। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর আবার বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে সন্তান রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং দ্বিতীয় স্ত্রী নার্গিসের ঘরে সুরুজ (এই অভিনেতারই আসল নাম মনে নাই, চরিত্রটার নাম সুরুজ)। আসাদ দায়িত্ববান, সচ্চরিত্র এবং বাবার প্রিয় সন্তান। কিন্তু তার সৎভাই সুরুজের দিন কাটে মদের পেয়ালা আর নর্তকীদের নিয়ে।

নার্গিস এবং সুরুজ আসাদকে পছন্দ না করলেও আসাদ তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। নার্গিস বুঝতে পারছে যে আলী জাকেরের মৃত্যুর পর জমিদারি যাবে আসাদের হাতে। স্বভাবতই নার্গিস অসন্তুষ্ট এবং সুযোগ খুঁজছেন কিভাবে আসাদকে সরিয়ে সুরুজকে জমিদারি পাইয়ে দেয়া যায়। এই পারিবারিক ডামাডোলের মধ্যে খবর আসতে থাকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে সিপাহীরা একত্রিত হবার চেষ্টা করছে। আলী জাকের এবং আসাদ সুযোগ খুঁজছে সিপাহীদের সাথে যোগাযোগ করার যাতে প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে পারে।

এক সন্ধ্যায় অতি গোপনে সিপাহীদের একজন এসে দেখা করে আসাদের সাথে এবং তাদের শ্লোগান (নিচে বিস্তারিত দেখুন) পৌঁছে দেয়। আসাদ সাথে সাথেই ব্যাপারটা আলী জাকেরকে জানায় এবং দু'জনে মিলে সিপাহীদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সময় নার্গিস এবং সুরুজও বিদ্রোহের কথা জানতে পারে। কিন্তু জাকের-আসাদের সাথে সমর্থনে যোগ দেয়ার বদলে নার্গিস ব্রিটিশদের সাথে দেখা করে আলী জাকেরকে জমিদারী থেকে সরিয়ে দেবার জন্য সাহায্য চায়। ঢাকার ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কাজী খুরশীদউজ্জামান উৎপল ব্রিটিশের চিরকালীন ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি অনুসরন করে নার্গিসকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

আলী জাকের তার জমিদারীর পাগড়ী আসাদকে তুলে দেন এবং তার পেয়াদাবাহিনী নিয়ে সিপাহীদের সাথে যোগ দিতে বলেন। কিন্তু নার্গিস-সুরুজের চক্রান্তে ব্রিটিশরা আসাদকে ঘিরে ফেলে আত্মসমর্পন করতে বলে। আসাদ উত্তর দেয় - পাগড়ী মাথায় নিয়ে আত্মসমর্পন করে পাগড়ীর মর্যাদা ক্ষুন্ন করা তার পক্ষে সম্ভব না। ব্রিটিশ আমলকে নাটক-চলচ্চিত্রে নিয়ে আসার প্রধান অসুবিধা অবশ্যই অর্থনৈতিক। এত পুরোনো সময়কে ধরতে মেকআপ এবং সেট নির্মানের খরচ খুব বেশি।

তাছাড়া আরেক সমস্যা ব্রিটিশ চরিত্রগুলির জন্য অভিনেতা জোগাড় করা। এই নাটকে ম্যাজিস্ট্রেট চরিত্রে উৎপল এবং ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে মাসুদ আলী খান কাজ করেছেন। ভালই করেছেন বলা যায়। লম্বা উৎপল এবং ফর্সা মাসুদ আলীকে মোটামুটি ইংরেজ হিসেবে বিশ্বস্তভাবে উপস্থাপন করা গেছে। অভিনেতা আসাদ একদম নিম্নবিত্ত খেটেখাওয়া চরিত্রে যত সাবলীল, জমিদারপুত্র চরিত্রে ততটা নন।

তারপরও দুর্দান্ত অভিনয়গুনে মানিয়ে গেছেন। বাকিরাও উৎরে গেছেন। নাটক হিসেবে পাগড়ী বাংলাদেশ টেলিভিশনের খুব উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা বলা যাবে না। এর চেয়ে অনেক ভাল নাটক আমরা এমনকি মামুনুর রশিদের কাছ থেকেও পেয়েছি। তবে এই নাটকটা আমার দেখা সবচেয়ে পুরোনো সময়কালকে নিয়ে।

এই বৈশিষ্ট্যের কারনেই মূলত এখনও ভুলে যাইনি। (গল্পের কথক মুহম্মদ জাকারিয়াকে অনেকে নাও চিনতে পারেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রবীন অভিনেতা। কলকাতার বহুরুপী নাট্যসংস্থায় শম্ভু মিত্রের প্রযোজনায় রক্তকরবীতেও তিনি কাজ করেন। নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।

মারা গেছেন পনের-বিশ বছর আগে। সিপাহিদের দূত আসাদকে বিদ্রোহের যে শ্লোগান দিয়েছিল সেটা খুব আকর্ষনীয়। কিন্তু আমি এতদিন পর হুবহু মনে করতে পারছি না। উইকিপিডিয়াতে সিপাহিদের ব্যবহৃত একটা শ্লোগান পাওয়া গেল - খাল্‌ক খুদা কি, মুল্‌ক বাদশাহ কা, হুকুম সুবাদার সিপাহি বাহাদুর কা। খুব সম্ভব এই শ্লোগানটাই নাটকে ছিল।

) * বাচ্চাকাচ্চা আমি খুব পছন্দ করি। এই পাপ-পঙ্কিল পৃথিবীটা আল্লাহ এখনও বোধহয় টিকিয়ে রেখেছেন এই নিষ্পাপ শিশুগুলির জন্য। ব্লগার রেজোওয়ানা তার ব্লগে প্রায়ই সোহার ছবি পোস্ট করে। ফেসবুকেও প্রচুর ছবি আছে। খুবই কিউট আর হাসিখুশি একটি শিশু।

দেখলেই ইচ্ছা করে গাল দুটো টিপে দেই। যাই হোক। সোহা, এই লেখাটা তো তুমি কখনোই পড়বে না। কারন এত বড় লেখা পড়ার উপযুক্ত হতে তোমার অন্তত সাত-আট বছর সময় লাগবে। ইন্টারনেটে আট বছর দীর্ঘ সময়।

আট বছর পর হয়ত সামহোয়ারই থাকবে না,সামহোয়ার থাকলেও তোমার মা আর ব্লগিংয়ে থাকবে না, মা থাকলেও তোমার জন্মেরও পঁচিশ বছর আগের এক নাটকের রিভিউ পড়তেও তুমি আগ্রহী হবে না। কিন্তু আমার আন্তরিক শুভকামনা সবসময়ই তোমার জন্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.