যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে. ১।
সকালে নাস্তার টেবিলে বসে কবির বেশ উশখুশ করতে লাগলো। কি একটা কারণে জানি সে বেশ টেনশনে আছে। ঘরের কেউ তার এই ব্যপারটি না বুঝলেও মায়ের দৃষ্টি সে এড়াতে পারে নি। এই বাসায় একমাত্র কবিরের মাই তাকে খুব ভাল মত চিনেন।
কবিরকে ছোটবেলা থেকেই কাছাকাছি রেখেছেন। কোন অভাব যাতে না হয় সে ব্যপারে সদা ততপর ছিলেন তিনি। এমন কি কোন সমস্যা হলে কবিরের মা ই সন্তানকে ভরসা দেন। সেই সমস্যা থেকে বের হওয়ার পথ বাতলে দেন। কবিরের বাবা নানারকম কাজে ব্যস্থ সময় পার করেন।
ব্যবসায়িক কাজে উনি বেশিরভাগ সময় থাকেন দেশের বাহিরে কিংবা দেশের ভিতরেই। আর তাই সংসারের প্রতি তাঁর উদাসিনতা চোখে পরার মত। সন্তানকে খেয়াল রাখার সময় তাঁর নেই। আর তাই কবিরের পৃথিবী গড়ে উঠেছে তার মাকে নিয়েই।
এদিকে আজ সকালে কবির বেশ কয়েকবার মোবাইলে বেশ জোরে জোরে কথা বলেছে যা তার মা বারংবার খেয়াল করেছেন।
উনি কিছু বলতে যেয়েও পারছেন না। তারপরও তাঁর একটা দ্বায়িত্ব থেকেই উনি ছেলের রুমে গেলেন ছেলের সাথে কথা বলতে। কবিরের রুমে ঢূকতেই উনি অবাক হয়ে গেলেন। তার ছেলে কাঁদছে হু হু করে। ছোটবেলা থেকে ছেলেকে উনি বেশ শক্ত আর মনের দিক থেকে কঠিন হিসেবেই জানতেন।
কিন্তু কি এমন হল যে আজ কবিরের সব ভেঙ্গেচুরে খান খান হয়ে গেল!!
উনি যখন কবিরের রুমে ঢুকলেন তখন কবির তার মোবাইল মাটিতে ফেলে ভেঙ্গে ফেলেছে। পিছন থেকে যে তার মা এসছে সেটা সে দেখে নি।
মাঃ কি রে!! কি করলি এটা?
কবিরঃ মা!! তুমি?
মাঃ হ্যা, আমি। কি হয়েছে তোর?
কবিরঃ কিছু না.........।
মাঃ কিছু একটা তো হয়েছে।
সকাল থেকেই তোকে অন্যরকম দেখছি। আমাকে বল। শুনি কি সমস্যা।
কবিরঃ মা, মানে ...... ইশরাতের পরিবার আমাকে মেনে নিচ্ছে না। তারা বলছেন যে আমি বেকার।
আর ছেলের পরিবার সম্ভ্রান্ত হলেও ছেলে এখনও পড়াশোনা শেষ করে নি। কবে নাগাদ সে প্রতিষ্ঠিত হবে আর কবে নাগাদ সে বিয়ে করে বঊ ঘরে তুলবে এ নিয়ে ইশরাত এবং তার পরিবার এখন খুব শংকিত। এদিকে মেয়ের বয়স হয়েছে। বিয়ে যত তারাতারি দেয়া যায় ততই ভাল।
সব শুনে কবিরের মা তাকে শান্তনা দিলেন।
আর চিন্তা না করতে বললেন।
২।
ইশরাতের সাথে আজকে বিকেলে দেখা করার কথা থাকলেও কবির দেখা করতে গেল না। নতুন সেটটাও বন্ধ করে রেখেছিল কবির। তার মনের অবস্থা এখন খুব খারাপ।
বিকেলের পর মোবাইল অন করার সাথে সাথেই ইশরাত ফোন দিল।
ইশরাতঃ কি ব্যপার? তুমি মোবাইল অফ করে রেখেছো কেন?
কবিরঃ এমনি ......
ইশরাতঃ এমনি মানে? আমি কতবার ফোন করেছি জানো তুমি?
কবিরঃ (চুপ করেই আছে)
ইশরাতঃ চুপ করে আছো কেন? তোমার প্রব্লেম কি?
কবিরঃ আমার কোন প্রব্লেম নেই (বেশ রাগত ভঙ্গিতে)
ইশরাতঃ আস্তে কথা বল। আধা পয়সার মুরোদ নাই আবার কথা বল! আমাকে তো কিছুদিন পর পাবা না। আমার পরিবার ছেলে দেখেছেন।
কবিরঃ ভাল।
এই বলেই ঠাস করে ফোন রেখে দিল কবির। এরপর বার বার ইশরাত ফোন দিলেও কবির ফোন ধরে নি।
৩।
শুক্রবার দুপুর ৩ টা,
দুপুরের খাবার খেয়ে মাত্র রেস্ট নিচ্ছে কবির। হঠাৎ জোরে শব্দ করে মোবাইলটা বেজে উঠলো।
চরম বিরক্তি নিয়ে কবির ফোনটা ধরলো।
ইশরাতঃ তোমার সাথে আমি দেখা করবো।
কবিরঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) কেন, কি দরকার?
ইশরাতঃ দরকার আছে।
কবিরঃ বিকেল ৫ টায় শাহবাগ আস। দেখা হবে।
এই বলে ফোন কেটে দিল কবির।
শাহবাগের জাদুঘরের সামনে যেয়ে দাঁড়ানোর ৫ মিনিট পর ইশরাত ফোন দিল। মিনিট দশেক অপেক্ষার পর ইশরাত এসে পৌছালো গন্তব্য স্থানে। ইশরাত এসেই কবিরকে সবার সামনেই গালমন্দ করতে লাগলো। কিছুই বললো না কবির।
কারণ কবিরের মা তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে আর বুঝে শুনে পথ চলতে বলাতে সে কোন শব্দ করে নি।
ইশরাত চরমভাবে অপমান করতে লাগলো কবিরকে। কবির নাকি ইশরাতকে ভালই বাসে না। অলস, বুদ্ধিহীন, গোয়ার, মোটা, ছোটলোক এসব বলতেও একটুও বুক কাঁপে নি। তাদের ৪ বছরের সম্পর্ক আজ হুমকির মুখে এসে পড়েছে।
যদিও তাদের এমন ঝগড়া কম বেশি হয়েছে আগেও কিন্তু এবারের ঝগড়াটা বেশ কঠিন আর কষ্টদায়ক। নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছে কবিরের। তারপরও নিজেকে অনেক কষ্টে ধরে রেখেছে সে।
ইশরাত চলে যাওয়ার আগে কবিরকে ১ সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিল যদি চাকরি না পায় সে, তাহলে তাদের সম্পর্ক এর ইতি টানবে। কারণ ইশরাত পরিবার বিয়েরে জন্য চাপ দিচ্ছে তাকে আর সে তার পরিবারকে মানাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।
ভগ্ন হৃদয় নিয়ে কবির বাসার পথে হাঁটা দিল।
৪।
২০ দিন পর কোন এক সকালে
কবির অফিসে যাচ্ছে তারাহুড়া করে। ৫ দিন আগে একটি প্রতিষ্ঠিত মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরি হয়েছে তার। কবির এবং অবশ্যই তার মা এই চাকরিতে খুব খুশি হয়েছেন।
খুশি হওয়ারই কথা। অনেক কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া এই চাকরি। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই চাকরি।
অফিসে যেতে বাসে উঠতেই ইশরাতের সাথে দেখা হয়ে গেল হঠাৎ করে। ইশরাত বেশ অবাক হল কবিরকে দেখে।
কবির এ সময় কখনো বের হয় না। তার ক্লাস হয় বিকেলে। আর এদিকে কবির এভাবে ফরমাল হয়ে কই যাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারলো না সে। কবির যে চাকরি পেয়েছে সেটা ইশরাতকে একবারও ফোন করে জানায় নি সে।
কবিরকে ডেকে ইশরাত জানতে চাইলো -
ইশরাতঃ কই যাচ্ছো?
কবিরঃ অফিসে।
ইশরাতঃ কি?? বল কি!! কবে? কখন? কোথায়?
কবির কোথায় আর কবে পেয়েছে চাকরি সব জানালো ইশরাতকে।
ইশরাতঃ আমাকে একবারও জানালে না!!
কবিরঃ প্রয়োজন পরে নি।
ইশরাতঃ কি বললা তুমি?
কবিরঃ (বেশ রাগী ভঙ্গীতে) চুপ, একদম চুপ! বেয়াদব মেয়ে। আমাকে সেদিন তো অনেক কথা শুনেয়েছিলা। এখন তোমার সেই বাণী কই? আমার ভুল হয়েছিল তোমার মত একটা মেয়েকে ভালবেসে।
তুমি আমার ভালবাসার যোগ্য নও। একটুও ধৈর্য্যও তুমি আমার জন্য ধরতে পারো নি তখন। কি এমন করেছিলাম আমি যে তুমি সেদিন আমার সাথে এমন আচরণ করেছিলে? তোমার সাথে আমার আজ থেকে কোন সম্পর্ক নেই। আমাকে আর তুমি পাবে না।
ইশরাতঃ আমি ভুল করেছি।
আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।
কবিরঃ কোনদিনও না। গুড বাই!!!
এ বলেই বাস থেকে নেমে সোজা রাস্তা পার হয়ে ওপারে চলে গেল কবির। বাসের সব যাত্রী তখন একবার ইশরাত আর একবার কবিরের দিকে তাকাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।