আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাংসদ রনি, সংবাদ মাধ্যম ও জবাবদিহিতা

একদিন হয়তো তুমি পড়বে এই লেখা, তাই লিখি দুজন সাংবাদিককে মারধর করে হাসপাতালে পাঠানোর পরে গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, তাকে এই সাংবাদিকরা তাকে চারদিন ধরে অনুসরণ করছিল। তারা দশ বারোজন লোক নিয়ে তার উপর হামলা করতে এসেছিল, তখন তার অফিসের লোকজন তাদের মেরেছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে মি. রনি এই একটি ঘটনা নিয়ে নানা ধরণের ভাষ্য দিয়েছেন। একজন জনপ্রতিনিধি যদি ফ্রুটিকা টাইপের ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলেন, তাকে কতটা বিশ্বাস করা যায়, জনপ্রতিনিধি হিসাবে তার গ্রহণযোগ্যতা কতখানি থাকে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। কিন্তু এখানে আর সেই প্রশ্নটা তুলছি না।

বরং এখানে মি. রনির ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আর সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলব। সংবাদ মাধ্যম অবশ্যই যা ইচ্ছা তা করতে পারে না। আরেকজনের অফিসের ভেতরে অবশ্যই তারা প্রবেশ করে সংবাদ মাধ্যম বসে থাকতে পারে না। কেউ কেউ বলছেন, তারা অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান তৈরি করছিলেন। কিন্তু অনুসন্ধানী মানেই তো যা ইচ্ছা তা করা না।

তাদের্ও অবশ্যই এথিকস মেনে, অন্যের গোপনীয়তা, ব্যক্তিগত সম্মান মেনেই কাজ করতে হব। কিন্তু গোলাম মাওলা রনির ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এখানে কতটুকু? তারা কি তার বেডরুমে আড়ি পেতেছে? না। কি করেছে? তাকে অনুসরণ করেছে? তার অফিসের সামনে ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছে। মি. রনি যদি একজন সাধারণ ব্যক্তি হতেন, তাহলে এতেও তিনি অবশ্যই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গর অভিযোগ তুলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তো একজন জনপ্রতিনিধি।

তার জবাবদিহিতার বিষয় আছে, স্বচ্ছতার বিষয় আছে। তিনি কি করছেন, তার কর্মকান্ড, ব্যবসা বানিজ্য, চলাফেরা কিন্তু জনগণ দেখতে চাইতে পারে। তার বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই গণমাধ্যম সেটি পরীক্ষা করে দেখতে পারে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাকে অবশ্যই স্বচ্ছতার মধ্যে থাকতে হবে। এবং সেজন্য ক্যামেরা তাকে অনুসরণ করবে, তাকে সবাই নজর রাখবে, এটুকু তো তাকে মানতেই হবে।

একটা সময়ে বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিদের ধরা ছোয়ার উপরে ভাবা হতো। কিন্তু সেই যুগ তো পাল্টে গেছে। সভ্য হতে হলে আমাদের সেটা পাল্টাতেই হবে। এ কারণেই পাপারাজ্জিদের এতো অত্যাচারের পরেও লেডি ডায়না কিছু করতে পারেননি। মি. ক্লিনটনকে তার অনেক ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে জবাবদিহি করতে হয়েছে।

কিন্তু মি. রনি বলছেন, তার অফিসের সামনে ক্যামেরা বসিয়ে রাখায় তার সমস্যা হয়েছে। যদি ধরেও নেই যে, সাংবাদিকরা এথিকস ভেঙ্গেছে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে কি তিনি তাদের গায়ে হাত (নাকি পা বলাই ভালো) তুলতে পারেন? এটাতো ছাত্রলীগের মাস্তানির মতো হয়ে গেলো না?? একজন আইনপ্রণেতা যদি নিজেই আইন ভঙ্গ করেন, তাহলে তিনি কি আইন তৈরি করবেন? যতই গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ করা হোক না কেন, কোন ভাবেই গায়ে হাত তোলার বিষয়টি যুক্তসঙ্গত করা যাচ্ছে না। সে শুধুমাত্র সংবাদকর্মী বলে নয়, কোন সাধারণ ব্যক্তির গায়েই কেউ হাত তুলতে পারেন না, আর একজন জনপ্রতিনিধি তো কখনোই নয়ই। মি. রনির এই আচরণ শুধূ যে তার জন্যে ক্ষতিকর হবে তা হন, এটি সংসদ সদস্যদের ইমেজ, আওয়ামী লীগের ইমেজের জন্য সমস্যার তৈরি করবে।

আওয়ামী লীগের উচিত, এই বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য দেয়া এবং ব্যবস্থা নিয়ে এটা পরিষ্কার করা, যে দলটি এ ধরণের কাজ সমর্থন করে না। সেটা করা না হলে, এর দায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উপরই এসে পড়বে। নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাস বাকি আছে, এত কমসময়ে মানুষ এটা ভুলতেও পারবে না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।