আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন থেকে নেয়া, আমি এবং আঁকা (পর্ব-২)

একলা মানুষ মাতৃ গর্ভে একলা মানুষ চিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায় আর, মধ্যে খানে বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয় [এই পর্বে ভালবাসার ৫ টি বছর খুব দ্রুত শেষ করব কারণ প্রবাসের স্মৃতি গুল লিখার তাগিদ অনুভব করছি পরের পর্বে ] কেরানীগঞ্জ থেকে ৩ দিন পর ঢাকায় ফিরলাম। যথেষ্ট সময় ও সুযোগ পাওয়ার পরও ভালবাসি বলতে পারলাম না। ঢাকায় আসার ৭ দিন পর আমরা দেখা করলাম আইডিয়াল কলেজের সামনে। রজি আপা বলল যা বলার তোমরা সরাসরি কেনো বলনা। আমি বললাম হারাবার ভয়ে।

ও আমার সাথে কিছুটা দুড় হেটে আসলো। হাটতে হাটতে জানাল এখন সে ভালবাসতে প্রস্তুত নয়। আমি ব্যথিত চিত্তে ফিরে আসলাম। আমি কি ওর যোগ্য নই, তবে কি সে অন্য কার সাথে.. আর কত কি মনের মাঝে জমতে লাগলো। অবশেষে প্রায় ২ মাস পর মারুফ আমার ইম্পিরিয়াল কলেজে আসে আমাকে নিয়ে যেতে কারণ ওদের বাসায় আঁকা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

ছুটি নিয়ে মারুফের বাসায় গেলাম। আকা জিন্স আর সবুজ জামা পরেছে। আমি বরাবরের মত মুগ্ধ। দুজন বসে আছি কেও কথা বলছি না। আঁকা নিরবতা ভাঙল - আমার কয়েকটা শর্ত আছে।

কিসের সর্ত ভালবাসার? মুচকি হেসে, আমরা বছরে ২ দিন দেখা করব। ২ ঈদের পরের দিন। এটা তুমি কি বল? একবার দেখা হওয়ার পর আবার দেখা হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকব তো ? আকা জবাব না দিয়ে পরের শর্তে চলে গেল। আপনার সিগারেট খওয়া বন্ধ। মানে? সিগারেটের সাথে কি সম্পর্ক।

আমার মাথা ছুয়ে কছম করতে হবে। আর কখনো সিগারেট খাবেন না। নাসর বান্দা। তাই করতে হল। "তিন দিন সিগারেট না খেয়ে ছিলাম।

৫৫৫ থেকে নেমে গেলাম সোজা আকিজ বিড়িতে। লোক চক্ষুর অন্তরালে বিড়ি খেয়েছি টানা এক বছর। ধরা খেয়েছি আঁকার কাছে। আমার NIIT'র ব্যাগে বিড়ি পায়া গেল। বুঝালাম আমি তাকে কত ভালোবাসি যে এত কষ্ট করে সিগারেট ছেড়ে এক বছর বিড়ি খেয়েছি।

পারমিশন পেলাম দিনে ২ টা সিগারেট খাওয়ার। এবারও চালাকি, দিনে ২ টা, রাতে? সন্ধা নামতেই শুরু আনলিমিটেড সিগারেট খাওয়া। ধরা খেয়ে গেলাম ৬ মাসে। তবে রাগে দুঃখে আমার উপর থেকে সিগারেটের আবরোধ তুলে নেয়া হল" আঁকা চলে গেল। কেটে গেল ৯ মাস, কোন দেখা নাই।

যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম পত্র। দেখা হল ঈদের পর। আবার আরাই মাস কোরবানির ঈদের পর। এইভাবে দেড় বছর পার হওয়ার পর। চিঠি আর গিফট সহ আকা ধরা খেল ছোট চাচার কাছে।

আঁকা এসে দেখা করল মিরপুর ১০ এ। আমার কাছে ওর দেয়া সকল চিঠি আর ছবি নিয়ে গেল , সম্পর্কে ইতি। কেটে গেল আর ৭ টি মাস। আমি ধৈর্য হারায়নি। অপেক্ষায় ছিলাম জানতাম ফিরে আসবে।

ফিরে আসল উল্টো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। আমি কেন তাকে বোঝালাম না। আমি কেন আগে তার কাছে গেলাম না। কোন উত্তর দিলাম না। বললাম না সেদিন কতটুকু চোখের জল ফেলেছি, বললাম না কত রজনী নির্ঘুম কাটিয়েছি।

বললাম না কোন দিন না আসলেও, তিলে তিলে শেষ হয়ে গেলেও আমি তোমার কাছে আর যেতাম না। ভালবাসা অর্জন করতে জান দিয়ে দিতে প্রস্তুত কিন্তু অর্জিত ভালবাসা চলে গেলে পিছন থেকে ডাকতেও প্রস্তুত নই। আমার ভালবাসা ফিরে আসল আমার কাছে। আমার জন্মদিন মিরপুর ১০ থেকে ওকে তুলে নিলাম গন্তব্য ওয়াটার পন্ডস। নেমে হটছি ও শাড়ি পরেছে সবুজ রং এর।

কি কি বলেছিলাম মনে নেই কিন্তু, সারাদিন কেটে গেল ৫০ টাকায় ভারা করা পাটিতে বসে এটা মনে আছে। সেই আবেগ সেই ভালবাসা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। এটা শারীরিক প্রেম নয়। আমি তখনও আকার হাতও ধরিনি। প্রেম শুধু চোখে চোখে, প্রেম শুধু আবেগে, প্রেম শুধু অনুভবে।

এর পর আসল সেই দিন যে দিন থেকে প্রেম স্পর্শে ও হয়ে গেল। ২০০১ রোজার ঈদের পরের দিন আশুলিয়া সড়ক। আমরা পাশাপাশি হাঁটছি। আঁকা আমার বা দিকে। ওর বাদিকে খারা ডাল তার পরেই পানি।

। আঁকা বলল, আমি যদি এখন পরে যাই আমার বুকের ভিতর হাহাকার করে উঠল। আমি আমার নিজের অজান্তে হাত বাড়িয়ে দিলাম। গ্রীষ্মের প্রখর রোদে আমরা দুজন হাত ধরা ধরি করে আশুলিয়া সড়কের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত হেটে গেলাম একটি বাক্যও কার মুখ দিয়ে বের হলনা। একটি অজানা অনুভুতি আমাকে গ্রাস করে ফেলল ।

বুকের মাঝখানে শিতল হাওয়া বইতে লাগল। কতক্ষণ হেঁটেছি বলতে পারব না। একটা টেক্সিতে উঠলাম আমরা হাত ধরেই আছি ও শুধু একবার বলল শক্ত করে ধর কখনও যেন ছুটে না যায়। আমি আর শক্ত করে ধরলাম। এরপর থেকে দুজনেই মিলিত হওয়ার জন্য ছট ফট করতে লাগলাম।

এখন শুধুই কাছে পাওয়ার নেশা। একটু স্পর্শের নেশা। আমরা দুই দিন পরেই দেখা করলাম এক বন্ধুর বাসায়। প্রথম বারের মত ঠোঁটের উষ্ণতা অনুভব করলাম। কিন্তু সংযমী ছিলাম।

কখনই শিমা অতিক্রম করিনি। কেটে গেল আর দুটি বছর। এবং সময় হল ক্লাইম্যাক্স এর। আকা এখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পরে। ওর ছোট আর দুই বোন আছে।

সংগত কারণেই ওর বিয়ের জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। এদিকে আমি হচ্ছি সবার ছোট আমার বড় ভাই এখন বিয়ে করেনি। তাছাড়া আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পরি। ছোট একটা ISP ব্যবসা করতাম তাতেও লস হয়েছে অনেক টাকা। ব্যবসা ক্লস করতে হবে।

সিদ্ধান্ত নিলাম ব্রেক আপের। ও শুধু কাঁদল। আমি আঁকার মুখের দিকে তাকাতে পারিনি। ও চলে যাচ্ছে আমি তাকিয়ে দেকছি আর আমার ভিতরটা শূন্যতায় ডুবে যাচ্ছে। কি করব এখন? জীবনের লক্ষ্যই ছিল একটা।

আমরা বিয়ে করবো সংসার করবো বাবা মা হব। এখন, এখন আর জীবনের লক্ষ্য কি রইল? ৫টি দিন কাটল ঘোরের মাঝে, না পারব না । আঁকা আকার কাছে খবর পাঠালাম কিন্তু ও আসবেনা। একটা চিঠি পাঠালাম আমার শেষ ইচ্ছের কথা বলে। আঁকা ছুটে আসল জরিয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদল।

আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিলাম । আমরা বিয়ে করব। তারপর আমি দেশের বাইরে চলে যাব। আঁকা চেষ্টা করবে ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করতে। আমরা বিয়ে করলাম।

টেনশন হচ্ছিল আবার প্রশান্তি ও পাচ্ছিলাম এই ভেবে যে হারানোর আর কোন ভয় নেই। ব্যবসায়ের প্রয়োজনে আমার ২ টা বন্ধুকে একটা ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভারা নিয়ে দিয়েছিলাম। ওখানে আমার একটা রুম ছিল। আমাদের বাঁশর হল ঐ ফ্ল্যাটে। আমার ভিসা টিকেট হয়ে গিয়েছে বিদায় ঘন্টা বেজে উঠল।

আঁকা আমার বুকের উপরে শুয়ে আছে। ওর চোখের জলে আমার বুক ভেসে যাচ্ছে। জীবনটা এমন কেন। সুখ কেন ক্ষণস্থায়ী ?????????? চলবে...... জীবন থেকে নেয়া, আমি এবং আঁকা - সম্পূর্ণ (পর্ব- ১ থেকে পর্ব-৭) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.