ডাকে পাখি, খোলো আঁখি। দেখো সোনালী আকাশ, বহে ভোরেরো বাতাস। মণিপুর, আসাম ও প্রতিবেশী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং পরিবেশপ্রেমী সংস্থা টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের বিরোধিতা করলেও কেন্দ্রীয় ও আসামের রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, টিপাইমুখে বরাক নদীতে প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবেই। নর্থ-ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের (নিপকো) চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রেমচান্দ পংকজ গতকাল সরকারি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জানান, প্রস্তাবিত ১৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম টিপাইমুখ প্রকল্পের কাজ যথারীতি এগিয়ে নেয়া হবে।
নতুন নতুন প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি নির্মীয়মাণ প্রকল্পগুলোর কাজ অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ করতে বদ্ধপরিকর আসাম সরকার।
পরিবেশপ্রেমী সংগঠনসহ আসাম, মণিপুর এবং বাংলাদেশের বহু মানুষের আশঙ্কা, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ফলস্বরূপ অর্থনৈতিকভাবেও বিপন্ন হয়ে পড়বে এলাকার বাসিন্দারা। সংবাদসংস্থার সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে নিপকোর চেয়ারম্যান জানান, প্রকল্পটির আশু বাস্তবায়নে তারা সরকারি সহায়তা চাইছেন। কারণ বিলম্ব হলে ব্যয় বেড়ে যাবে।
প্রতিবাদী আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের একাংশ এবং তথাকথিত পরিবেশপ্রেমী সংগঠন প্রকল্পে বাধার সৃষ্টি করতে মরিয়া। সংগঠনগুলো আমজনতাকে অহেতুক ভয় দেখিয়ে বিভ্রান্ত করছে।
প্রসঙ্গত, পশ্চিম মণিপুরের চূড়াচান্দপুর জেলার অন্তর্গত ৮১৩৮ কোটি টাকার (১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এই প্রকল্পে এরই মধ্যে ৭৪টি পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বরাক নদী কুশিয়ারা ও সুরমায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে। মণিপুর ও আসাম ছাড়াও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ বরাক নদীর ওপর নির্ভরশীল।
আর এজন্য বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত এই প্রকল্পের সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থা আইএএনএস উল্লেখ করেছে। সংবাদ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের এই প্রকল্প যে বাংলাদেশের বিপদের কোনো কারণ হবে না,সে নিয়ে আশাবাদী।
নিপকোর সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার টিসি বরগোহাই জানান, এই প্রকল্প বরং বাংলাদেশের উপকারই করবে।
এদিকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছেন, বৃহৎ নদী-বাঁধ যে কোন মূল্যে হচ্ছেই। কেউ বাঁধের কাজ আটকাতে পারবে না।
আমার বক্তব্য:
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার আজ পর্যন্ত ভারতকে কি দেয় নি? ভারত ঠিক যেভাবে যেভাবে করিডোর চেয়েছে, কোন প্রকার অর্থনৈতিক লাভ ছাড়াই একান্ত অনুগত ও বাধ্যগতভাবে ঠিক সেভাবে সেভাবে ভারতকে করিডোর দিয়েছে আওয়ামী সরকার। সড়ক ও যোগাযোগ খাতে উন্নয়নের জন্য চাওয়া ঋণে ভারত যেসব অপমানজনক কঠিন শর্ত আরোপ করেছে তার সবগুলোই হাসিমুখে মেনে নিয়েছে আওয়ামী সরকার। ভারতের বাজারে নিজেদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের নিশ্চয়তা ও বাস্তবায়নের নমুনা না পেলেও বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে দিয়েছে আওয়ামী সরকার। বাংলাদেশের বেরুবাড়ি ইউনিয়ন ভারতকে দিয়ে দেয়ার বিনিময়ে নিজেদের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যোগাযোগের জন্য তিনবিঘা করিডোরের অধিকার আজও পায় নি বাংলাদেশ, সেটা নিয়ে আজও প্রশ্ন তুলে নি আওয়ামী সরকার।
উপরিউল্লেখিত সুযোগ-সুবিধাদি ছাড়াও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতকে আরও কি কি দিক থেকে প্রসন্নতা ও উদারতা দেখিয়েছে সেটা লিখতে গেলে আরব্য রজনীর গল্পের মতো এক হাজার এক রাত্রি কেটে যাবে।
এতদসত্তেও ভারতকে এতো সমীহ, তোয়াজ আর বন্ধুত্বসুলভ(!!) সম্মান প্রদর্শনের পরেও কেন মরণফাঁদ টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধে ভারত সরকারকে রাজি করাতে পারলো না আওয়ামী সরকার? এটা কি সরকারের ব্যর্থতা? নাকি নিজ দেশের প্রতি সরকারের রহস্যময় উদাসীন নীতি? নাকি বন্ধুরাষ্ট্র(!!) বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আরেকটি বন্ধুসুলভ(!!) নিদর্শন?
ভারতের নির্মিত ফারাক্কার বাঁধের প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল আজ প্রায় মরুভূমি। এর উপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অনুরূপ মরুকরণ হবে সেই ব্যাপারে কি কোনরূপ সন্দেহ আছে? দেশের একের পর এক অঞ্চল যদি মরুকরণ করা হয় তাহলে কৃষিনির্ভর এই বাংলাদেশের কৃষিকাজের মতো উপযোগী ক্ষেত্র আর কতটুকু বাকি থাকবে? কোথা থেকে আসবে আমাদের বেঁচে থাকার উপকরণ তথা আমাদের খাদ্যশস্য ও কৃষিউৎপাদন? আমাদের জলজ ও মৎস্যসম্পদের বিচরণস্থলের জন্য কতটুকু স্থান ও পরিবেশ অবশিষ্ট থাকবে? এটা কি দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র নয়? এই ষড়যন্ত্রে যদি কারও লাভ হয় তাহলে কার লাভ সব থেকে বেশি? আওয়ামী সরকারের? নাকি ’৭১ থেকে ওঁত থেকে থাকা কোন প্রতিবেশী শক্তির?
জাতির বিবেকের কাছে আরোপিত এইসব প্রশ্নের জবাব কে দেবে?
তথ্যসূত্র: আমাদেরদেশ.কম
তথ্যসূত্র: ইয়াহুনিউজইন্ডিয়া.কম
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ানিউজপোস্ট.কম
তথ্যসূত্র: সাউথএশিয়াননিউজ.কম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।