অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
আদিবাসীদের উন্নয়নের সুশীলিয় হাঁকডাক এবং তৎপরতা দেখে আমার মাঝে মাঝে একটা কথাই মনে আসে, আদৌ এগুলোর ভেতরে আন্তরিকতার পরিমাণ কতটুকু? বিষয়টা অনেকটা গণধর্ষণ করে কারো যৌনচাহিদার পরিতৃপ্তি দেওয়ার মতো অশালীন আয়োজন মনে হয় আমার কাছে। অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক যৌন চাহিদা আছে, এবং এটা নিয়মিত পুরণ হওয়াও উচিত, কিন্তু গণ ধর্ষণ এই চাহিদা পুরণের বিকল্প পন্থা হতে পারে না।
টিপাইমুখ বাধ সম্পর্কেও একই কথা খাটে, মনিপুরের আদিবাসীদের যে ভুখন্ডে এটা নির্মিত হবে, সেটা পরিত্যাক্ত কোনো ভুখন্ড নয়, বরং সেখানে পাহাড়ীরা জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে, মাত্র ১০টা গ্রাম এতে আক্রান্ত হবে এমনটাই াওভিমত বিশেষজ্ঞদের। এবং এই বিশেষজ্ঞদের নিয়েই আমার যাবতীয় আশংকা সব সময়ই, এটা পয়সার জন্য নিজস্ব প্রতিবেদনে লিখতে পারে না, এমন মিথ্যা নেই। তামাকবিরোধী দল পয়সা দিলে তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো উম্মোচন করে এমন একটা প্রতিবেদন ছাপাবে ভয়ে পুটকির পানি শুকিয়ে যাবে।
আবার যখন সেই একই গবেষণার অর্থ আসবে কোনো সিগারেট কোম্পানীর বিপনন খাত থেকে তখন সাথে সাথেই তামাকের মানসিক ও শাররীক উপকারিতাগুলো আমরা তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ সমেত পেয়ে যাবো। সুতরাং বিভ্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জলশক্তি সঞ্চয় ও সংরক্ষণের জন্য বাধ নির্মান করতে হয়, সেখানে সঞ্চিত পানির স্থিতি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরে এবং বিদ্যুত উৎপাদিত হয়, এই সঞ্চিত পানি বিভিন্ন খাল-নালা দিয়ে চাষাযোগ্য জমিতে সেচের কাজে লাগানো যায়- কিংবা পুনরায় পুরোনো খাতে ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
অন্য সব জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কারণ পৃথিবীতে জীবাশ্ম জ্বালানি কমে আসছে, এবং বর্তমান হারে ব্যবহৃত হতে থাকলে আগামি ৫০ বছরে জীবাশ্ম জ্বালানীর সঞ্চয় শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে। প্রতিটা দেশই প্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত ঝুঁকি অবহেলা করেই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থ সংস্থান বাড়াচ্ছে এবং নতুন নতুন নদী ও পানি প্রবাহে বাধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে।
অবশ্যই এই পরিকল্পনাগুলো করা হয় পার্বত্য অঞ্চলে, সেখানে বাস করে আদিবাসী এবং উপজাতী জনগোষ্ঠী, তাদের নিজস্ব অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং সেখানের যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরাবস্থায়, তাদের জীবন যাপনের মান শহুরে মানুষের মতো উন্নত নয়, তাদের আধি-ব্যধির প্রকোপ বেশী, এবং তারা কমতে কমতে টিকে আছে সামান্যই, এই সামান্য মানুষের অধিকার লুণ্ঠিত হলে তথাকথিত সংখ্যাগরিষ্টের তেমন বেশী ক্ষতি হয় না। বরং বৃহত্তর মানুষের জন্য আত্মত্যাগের মহিমা কীর্তনের জন্য কেউ কেউ বেঁচে থাকে।
তাদের জবিরল বসতিতে তারা প্রকৃতির সাথে সমঝোতা করেই বসবাস করে, এবং এখানে নগরায়নের ছাপ পড়লে প্রথমেই আক্রান্ত হয় তাদের সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক বিপন্নতা, উন্মুল হয়ে যাওয়া কয়েকশত উপজাতিদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ব্যতীত আদতে বৃহৎ জলবিদ্যুত প্রকল্পগুলো বড় কোনো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় নি।
আন্তঃদেশীয় জলবিদ্যুত প্রকল্পের সংখ্যা সামান্যই পৃথিবীতে, নায়াগ্রা বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার সীমান্ত গড়ে উঠেছে এবং সেটা পৃথিবীত অন্যতম বৃহৎ জলবিদ্যুত প্রকল্প। চীনে ৫০০০ মানুষকে খুন করে নির্মিত হচ্ছে ২০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, এই প্রকল্পের কারণে সেখানে পানি দুষণ বাড়বে মারাত্মক ভাবে, এবং সঞ্চিত জলের কারণে উদ্বাস্তু হবে ২০ লক্ষ মানুষ।
প্রায় ১ কোটি মানুষ বসতি হারিয়েছে পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে। তবে প্রকল্পের গ্রহনযোগ্যতা এবং বাস্তবতা নিরুপনের সময় এইসব নিয়ামককে কখনই আমলে আনে না বিশেষজ্ঞেরা, এমন কি ১৯৯৫ সালে অসম্মতি জানানোর পরে হঠাৎ করেই টিপাইমুখ বাধ বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপনের কোনো কার্যকারণ দর্শায় নি সেখানকার সরকার। ভারতের আভ্যন্তরীণ জনগোষ্ঠী কিভাবে আক্রান্ত হবে এটা আমাদের বিবেচনায় আনবা প্রয়োজন নেই কোনো, আমরা তাদের আশ্রয় দিবো না কোনোভাবেই। তবে এটার প্রভাব কিভাবে পড়বে বাংলাদেশে,
সেটা নির্ধারণ করবার জন্য একটা সংসদীয় কমিটি তৈরি হয়েছে, তারা টিপাইমুখ পরিদর্শনে যাবে, এবং সেখান থেকে এসে এখানে রিপোর্ট প্রদান করবে।
আমাদের বাংলাদেশের আইনুন নিশাত, তিনিই সম্ভবত একমাত্র পানি বিশেষজ্ঞ, এবং তিনি পানির রাজনীতিতে জড়াতে নারাজ।
তো কোন খানকির পোলা গিয়ে এইসব লাভক্ষতির খতিয়ান নিয়া আসবে। আর কোনো বিশেষজ্ঞের জন্ম দিতে পারে নি বাংলাদেশের ৩ কোটি রমণী যারা পনি এবং পরিবেশের উপরে এর প্রভাব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করতে পারে। একজন মাত্র বিশেষজ্ঞ তিনি টিপাইমুখে যাবেন না, কারণ এটা পানির রাজনীতি, এমনও হতে পারে এই বৃদ্ধ বয়েসে প্রায় স্ফীত প্রোটেস্ট গ্লান্ডে কেউ চিপি দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে বলেই তিনি যাবেন না।
যেহেতু বিশেষজ্ঞ নই সুতরাং আমরা অবিশেষজ্ঞরা নিজেদের মতো ধারণা করে নেই কি ঘটতে পারে-
প্রস্তাবিত প্রকল্পে সঞ্চিত জল সেচের জন্য ব্যবহার এবং এর উপকারীতার বিশদ বর্ণনা রয়েছে, এটাতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে তার ১২ শতাংশ পাবে মনিপুর এবং বাকি ৮৮ শতাংশ চলে যাবে শহরে, যেখানে বিশেষজ্ঞরা বসে এইসব লাভক্ষতির অঙ্ক করবেন। তাদের মাথা ও গা ঠান্ডা করতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের জোগান দিতে গিয়ে কয়েকটা গ্রাম ভেসে গেলে, কিংবা ডুবে গেলে সেটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠির জন্য সহৃদয় আদিবাসী উপহার হতে পারে বড়জোর।
এর সেচের আঁওতায় আসবে বিশাল পরিমাণ জমি, এবং সমস্যাটা বাধবে এখানেই, যদি পানি প্রত্যাহার করা হয়, সেটা বাংলাদেশের কুশিয়ারায় আসবে না, আসবে না বারাক নদীতে, সুরমা কিংবা কুশিয়ারায় যদি পানি না থাকে তাহলে এখানে পানিশুন্যতা ঘটবে, এবং মরুভুমিকরণ ঘটতে পারে।
যেহেতু এটা ভুমিকম্প প্রবন এলাকায় নির্মিত হচ্ছে সুতরাং বড় মাপের ভুমিকম্পে যদি কখনও বাধ ভেঙে যায় তবে ভেসে যাবে এখানের জনপদ। সেসব সাম্ভাব্য ক্ষতির কথা বাংলাদেশ বিবেচনা করবে, কারণ বাংলাদেশের জন্য এটা কোনো সুসংবাদ বয়ে আনছে না।
এটা নিয়ে মনিপুর সরগরম, আন্দোলনকারীদের একাংশ দাবি জানিয়েছে, যদি প্রতিটা জেলায় তাদের জন্য আলাদা বসতি গড়ে তোলা হয় তবে তারা এটা মেনে নিবে। এবং আন্দোলন থেকে ফিরে আসবে।
যেকোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নির্ধারণ করে নেতার সততা ও আন্তরিকতার উপরে, নেতা সৎ ও আন্তরিক না হলে যেকোনো গণজোয়ারও মুখ থুবড়ে পরে, দাবি যতই ন্যায় সঙ্গত এবং যৌক্তিক হোক না কেনো, সেটাকে চুড়ান্ত পরিণতি দিতে একজন নিরপেক্ষ ও নির্লোভ নির্লিপ্ত নেতার প্রয়োজন।
মানুষ এবং মানুষের সততা বিক্রয়যোগ্য, এখানে বাৎসরিক ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত নয় বরং প্রায় আজীবন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তায় কয়েক সহস্য কোটি টাকার লাভের অঙ্ক বিবেচনায় আনতে হবে। এবং যারা বড় বড় বিশেষজ্ঞ এবং যারা আন্দোলনকারী তাদের কাউকে কাউকে কিনে নিতে চাইবে এর সপক্ষের মানুষেরা।
এইসব আন্দোলনে সাধারণ মানুষ যুক্ত হয় প্রাণের দাবিতে, নেতা যায় নিজস্ব ব্যক্তিগত সাফল্যের হিসাব চুকাতে। সুতরাং এখানে সরব হয়ে আখেরা লাভবান হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশী।
বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিকদের নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা নেই, বরং টুপাইসের সম্ভবনা দেখলে তারা পাজামার ইজের খুলে পুটকিতেও উপঢৌকন এবং উৎকোচ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন।
পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বীচি হারাণের চিন্তায় যেহেতু যাবেন না, সেহেতু আপাতত প্রবাসী পানি বিশেষজ্ঞ, যিনি এখন কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রে, তার সাথে যোগাযোগ করবার প্রস্তাব দিচ্ছি, তার নাম আমার মনে নেই, সম্ভবত তিনি নর্থ ক্যারোলিনার কোথায় কাজ করছেন।
তবুও একটা নিরপেক্ষ এবং বিশেষজ্ঞ মতামত পাওয়ার আগে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাচ্ছে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।