"এক ষ্টেশনের টিকেট কেটে অন্য কোন স্টপেজে নেমে পড়া আমার আজন্ম স্বভাব" ইয়াহু মেসেন্জার : ahmed_wpsi@yahoo.com আজ কয়দিন ধরে আমার মনের মধ্য একটি বিশেষ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে যদিও চিন্তাটা অনেকটা উদ্ভট ধরনের তারপরেও শেয়ার না করার লোভ সামলাতে পারছি না । আমার মনে হয় আজ থেকে কিছু বছর পর বাংলা অভিধানে "রাজনীতি" ও "রাজনীতিক/রাজনীতিবিদ" শব্দের অর্থ বদলে যাবে । আর বাংলা গালির ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়ে সেখানে একটি নতুন গালি স্থান পাবে । ইতিমধ্য অনেকেই হয়তো আমাকে ফালতু সম্বোধন করতে বসেছেন । তাদের কে বিনয়ের সাথে একটি তথ্য দিচ্ছি যাদের চরিত্রে একটু জটিলতা বা যাদের মধ্য একটু টালবাহানা করার স্বভাব আছে আমরা কিন্তু ইতি মধ্য সেই বিশেষ ব্যক্তিদের "পলিটিশিয়ান" বলে আখ্যা দিতে শুরু করেছি ।
তাহলে রাজনীতিবিদ শব্দের বাংলা সমার্থ "চিটার /বাটপার " হতে কি খুব বেশি দেরী আছে ? অনেকে মুখে স্বীকার না করলেও মনে মনে কিন্তু ঠিক এমনটিই ভেবে থাকেন । অপরদিকে আমাদের পাশের দেশটিতেও কিন্তু রাজনীতিবিদ বলতে একজন দেশপ্রেমিকের প্রতিচ্ছবিই ফুটে ওঠে । সেখানে এখনো স্কুল কলেজে অনেক মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী তাদের জীবনের লক্ষ্য হিসাবে "রাজনীতিবিদ" হবার কথা বিভিন্ন রচনা/প্রবন্ধতে উল্লেখ করে থাকে । অথচ ক্ষুদিরাম,তীতুমীর,ভাসানী,বঙ্গুবন্ধুর এই ভুমিতে এরকম হবার কথা ছিলনা । বেশিদিন আগের কথা নয় সত্তর বা আশির দশকে-ও আমরা দেখেছি মেধাবী, সৎ, দেশপ্রেমী ছাত্রদের ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত থাকতে ।
শুধু ছাত্র রাজনীতি কেন কিছুদিন আগেও আমরা একজন বাম রাজনীতিক শব্দের মানেই বুঝতাম সৎ আদর্শে বলীয়ান মাথা নত না করা একজন সৎ ,সাহসী ,মহান পুরুষ। সেই ধারণা-ও এখন এদেশে সোনালী অতীত। অশুভ কলুষতা বাম ঘরানাতেও ঢুকে গেছে র্দোদান্ড প্রতাপে। উনারাও এখন রুটি -হালুয়ার খোজে ব্যস্ত । বর্তমান সময়ে যারা রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন তারা সবাই কি আসলে রাজনীতিবীদ ? ক্ষমতার রাজনীতির সাথে পাল্লা দিতে দলে ঢুকেছে ব্যবসায়ী অরাজনৈতিক ব্যত্তিত্ব যারা দুদিনের বৈরাগী হয়ে ভাত কে এতই সুন্দর করে অন্ন বলছেন যে তাদের মিথ্যা মায়ায় ভুলে আমরা তাদের কেই জনপ্রতিনিধি করে বসেছি ।
কিন্তু দিনের শেষে তো তারা নিছক ব্যবসায়ী ছাড়া কিছুই নন । ফলে কলুষিত হচ্ছে রাজনীতি, দল , দেশ । দেশের দুই বৃহৎ দলেই এই রীতির প্রচলন রয়েছে। এমন কি ঐ বিশেষ ব্যবসায়ী শ্রেণীর কেউ কেউ দলীয় প্রধানের এতই প্রিয় ভাজন যে , তাদের ফটকা দলীয় প্রেমের কাছে বলীদান হচ্ছে প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের । বলতে দ্বিধা নেই এই বিশেষ চর্চা টা এক সময় বি,এন,পির ভেতরেই বেশী ছিল ।
বিগত বি, এন,পি-এর শাষনামলে আমরা দেখেছি অনেক আসনে তারা প্রকৃত রাজনীতিবিদ উপেক্ষা করে একজন ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে । এতে তারা যেমন স্বল্পমেয়াদী লাভবান হয়েছে ঠিক তেমনই আবার দীর্ঘমেয়াদী লোকসানের কবলে পড়েছে। একজন ব্যবসায়ীর হাতে সাংগাঠনিক শক্তি কখনোই মজবুত হতে পারে না । কিন্তু পরিতাপের বিষয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল আওয়ামী লীগ পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে তাদের এই শাষণামলের সময় বি,এন,পির কাছে ঐ কুশিক্ষাটাই ভাল করে রপ্ত করেছে। যার কুফল ইতিমধ্য টের পাওয়া যাচ্ছে ।
বিগত ইউনিয়ন নির্বাচনের ফল তার বড় প্রমাণ । দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইউনিয়ন নির্বাচনের ফল ভাল করে পর্যবেক্ষন করলে যে কথা বেড়িয়ে আসে তা আওয়ামী লীগ এর জন্য অত্যান্ত দু:সংবাদ। তাই বলে কি বিগত আড়াই বছরে আওয়ামী লীগ কোন ভাল কাজ করেনি ? অবশ্যই করেছে। কিন্তু এই ভাল কাজের ঠিকমত এক্সপোজ করতে পারেননি আওয়ামী লীগ-এর নয়া জনপ্রতিনিধিগণ অথবা নয়া রাজনীতিক এই ব্যবসায়ী গণের আত্বীয়,শুভানুধ্যায়ীদের আচরণে এতটাই বিরক্ত যে জনগণ নিম রাজী হয়ে বি,এন,পি , জামায়াতের প্রার্থী কে ভোট দিয়েছেন কিন্তু আর ভাংগা নৌকায় পা দেননি । আওয়ামী লীগ-এর যারা নীতি নির্ধারক বা যারা জনপ্রতিনিধী আছেন তারা হযতো ভাবতে পারেন ইউনিয়ন লেভেলের নির্বাচনের ফলে এত কি এসে যায় ? আমি শুধু বিনয়ের সাথে দু;টি তথ্য দিয়ে যেতে চাই ।
এক. আমাদের দেশের মত ভারতের রাজনিতিবিদ গণ বা প্রধাণমন্ত্রী কিন্তু হুট করে কোন বেফাস মন্তব্য করে বসেন না ; বিশেষ করে স্বল্পভাষী মনমোহন সিংহ এর বেলায় তো এ কথা ১০০% সত্য । । ।
দুই.. তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মহোদয় কিন্তু বাংলাদেশের ইউনিয়ন নির্বাচনের ঠিক পরপর উনার বহুল আলোচিত বাংলাদেশ সর্ম্পকিত মন্তব্যটি করেছিলেন ।
(যদিও পরবর্তীতে ওয়েব সাইট থেকে সেটা তুলে নেয়া হয় )।
।
যাহোক , এবার আসি অতি সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে । গত ৬-৭-ই জুলাই বিরোধী দলের ডাকা ৪৮ ঘন্টার হরতালের প্রথম দিনেই বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ ,সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ফারুক পুলিশী নির্যাতনের শিকার হলেন । ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশবাসী সে দৃেশ্যর ভিডিও চিত্র দেখতে পেলেন। উভয় দল থেকে পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য দেওয়া হলো ।
কিন্তু এই বেদনা দায়ক ঘটনার সারমর্ম কি হলো ?? একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ শারিরীক ভাবে নির্যাতিত তো হলেন-ই সেই সাথে অপমানীত হলেন যা সমগ্র রাজনীতিবিদ গণের-ই জন্য পরম লজ্জ্বার বিষয় । এ লজ্জ্বা সকলের । আমাদের দেশে এরকম ঘটনা নতুন কিছু নয় এর আগেও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মো: নাসিম, মতীয়া চৌধুরী র মত ব্যত্তিত্ব-ও পুলিশের হাতে বেদম প্রহারের শিকার হয়েছেন । শুধু এখানেই শেষ নয়, এবার এই অনাকাংখিত ঘটনার পর অভিযুক্ত পুলিশ মহোদয় আবার বিবৃতি দিলেন ---"চুমু খাওয়ার জন্য তো সরকার আমাদের হাতে লাঠি তুলে দেয়নি"। একজন এ,ডি,সি পদস্হ কর্মকর্তার কত সুন্দর কথা !এই এ,ডি,সি হারূণ এবং তার সহকারী বিপ্লব সরকার আমাদের এই সক্রমিত রাজনীতির স্কুল থেকেই পাশ করা ।
ছাত্রলীগের পরবর্তী সংস্করণ। যে সংগঠন থেকে একজন তোফায়েল আহমেদ, একজন মাহমুদুর রহমান মান্না , একজন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের জন্ম হওয়ার কথা সেখানে আমরা এখন পাচ্ছি এক একজন কোহিনুর মিয়া, এ,ডি,সি হারুনের মত পুলিশ অফিসার। একান থেকেই মাপা যায় কোথায নেমে গেছে আমাদের রাজনীতির মান। সৎ, উদার,মেধাবী, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষেরা রাজনীতি থেকে নিজেদের দুরে সরিয়ে রাখছেন। আর তারই নেতিবাচক প্রভাব আমাদের আজকের চলমান রাজনীতিতে।
বর্তমানে দেশের রকমারী টিভি চ্যানেলের কল্যাণে 'টক' শো অনুষ্টান গুলি অত্যান্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজ কয়দিন ধরে এই সকল অনুষ্ঠানের উপষ্হাপকের মুখে অতিথির প্রতি একটি কমন প্রশ্ন করতে শুনছি । আর তা হলো ---- রাজনীতির এই বেহাল দশা থেকে চলমান নোংড়া কালচার থেকে রাজনীতিক রা আদৌ বের হতে পারবেন কিনা ? পারলেও কিভাবে ? আসলে , এ প্রশ্ন এখন দেশের সকলের । পাশাপাশি একটি সম্পুরক প্রশ্ন-ও এসে যায় ---এ দেশের রাজনীতিবিদ রা কি পারবেন তাদের সম্মান ফিরিয়ে আনতে যা তারা নিজেরাই হারিয়েছেন ? আসুন একটি গল্প শুনি ---
"বাংলাদেশের এক গহীন বনে দিন দিন বৃক্ষ নিধনের মাত্রা বেড়েই চলছিল। বনের ছোট বড় সকল বৃক্ষ অত্যান্ত চিন্তায় পড়ে গেলেন ! অবশেষে তারা সবাই মিলে বৃক্ষ নিধনের বিপক্ষে একটি সভা আহ্বাণ করলো ।
সভাতে সবাই যে যার মত বৃক্ষ নিধনের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ক আলোচনা রাখলো । সবার শেষে মঞ্চে এলো সভার সভাপতি বট গাছ। বট গাছ গম্ভীর মুখে জানালো এ বৃক্ষ নিধন ঠেকানো অত্যান্ত কঠিন !!! সভাপতির এ কথায় সবাই সমম্বরে বলে উঠলো কেন ? বট গাছ গোমরা মুখে ব্যাখা দিলো ---- মানুষ যে কুড়াল দিয়ে আমাদের দেহে আঘাত করে তার পেছনে আমাদের জাত ভাই-রাই কুড়ালের আছাড় হয়ে তাদের কে কাজে সাহায্য করে । প্রত্যেকটি কুড়ালের আছাড়(হ্যান্ডেল)-ই আমাদের দেহ দিয়েই তৈরী । যদি এই আছাড়(হ্যান্ডেল) না থাকতো তবে শুধু মানুষের পক্ষে আমাদের কে শেষ করা অনেক কঠিন হতো ! "
---- এই গল্পের মমার্থ নাই বা ভেঙ্গে বল্লাম ।
সব কিছু ভেঙ্গে না বলাই ভালো না ?? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।