স¤প্রতি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুলোক ক্ষমতার লোভে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখার চেষ্টায় করে যাচ্ছে। যারা কখনো নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে পারবেনা তারা এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। আর নির্বাচিত সরকার হিসেবে তার তা করতে দিতে পারেনা। তার কথা শুনে মনে হচ্ছে তার কোন ক্ষমতার লোব নাই। তিনি একে বারে সচ্ছা ক্ষমতা বিমুখ ব্যক্তি।
জনগণতো কারো ক্ষমতার লোভে খারাপ হিসেবে দেখেনা। কারণ আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র কেউ না কেউ পরিচালনা করছেন। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে ক্ষমতার অধিকারী হন। আর এটি স্বাভাবিকও বটে। ক্ষমতা ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান চালনার কথা বললে তা বোকামি ছাড়া আর কিছু হবে না।
পরিবারে বাবা অথবা মা পরিবারের প্রধান হিসেবে পরিবার পরিচালনা করেন। পরিবারের মত দেশেও একজন প্রধান থাকেন । এই প্রধানরা অন্যান্য সদস্যর সাথে আলোচনা করে তারা তাদের প্রতিষ্ঠান চালান। গণতান্ত্রিক দেশে যারা নেতা হিসেবে সমাজ, রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেখানে পরিবারে প্রধান ব্যতীত আর সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত। এই নির্বাচনে যারাই নির্বাচিত হন না কেন তারা ক্ষমতার জন্য নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করেন।
যেহেতু তারা ক্ষমতা পাবার জন্য নিজ ইচ্ছাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাই এটি অন্তত স্পষ্ট যে তারা ক্ষমতা পেতে আগ্রহী। আর তাদের এই ক্ষমতা চাওয়া কেউ দোষেরও মনে করে না। যার কারণে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। কারণ মানব সমাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কাউকে না কাউকে নেতা হিসেবে মেনে নিতেই হবে এবং তাকে ক্ষমতাও দিতে হবে। আর তা না হলে যার যার মত করে চললে বিশৃঙ্খলা হতে বাধ্য।
সেটি ক্ষুদ্র পরিবারই হোক আর রাষ্ট্রই হোক। তবে এই নেতাকে হতে হবে জনগণের চাওয়া এবং সর্মথন অনুযায়ী। পরিবারের কোন সিদ্ধান্ত পরিবার প্রধানই নিবেন, তবে তা পরিবারের অন্য সদস্যদের পরার্মশ অনুযায়ী বা সর্মথন আদায় করে। কিন্তু যখনই পর্রামশ, সর্মথন ছাড়া কোন কাজ করেন তখনই তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। যার ফলশ্র“তিতে পরিবারে সমস্যা দেখা দেয় অথবা তিনি ক্ষমতা হারান।
তবে ক্ষমতার হারানোর ক্ষেত্রে কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং ক্ষমতায় গিয়ে টিকে থাকার জন্য আমাদের বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি প্রায় এক। অর্থাৎ কেউ ক্ষমতা হারাতে চান না। যে কোন উপায় ক্ষমতায় যেতে চান এবং ক্ষমতা টিকে থাকার নানা কৌশল অবলম্বন করেন। সেটি পরিবারের ক্ষমতা কিংবা রাষ্ট্রের ক্ষমতা।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আমরা সবাই অন্যের ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টাকে দোষের মনে করলেও নিজের বেলা তা বেমালুব ভুলে যাই।
যার কারণে এত বির্তক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ জুনের ১৫ তারিখ অভিযোগ করে বলেছেন, ‘কিছু লোক যারা কখনো নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে পারবে না তারা ক্ষমতা দখলের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সুযোগ নিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে। এই অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষতমায় যাবার পর আর ক্ষমতা ছাড়তে চান না। ’ এই অনির্বাচিত ব্যক্তিরা যাতে আর ক্ষমতায় না আসতে পারে তাই তিনি এই প্রথার বিলুপ্তি চান। তার অভিযোগ অবশ্য কিছুটা সত্য।
কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কারা এই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দেন এবং তাদের দ্বারা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ক্ষমতায় স্থায়ী ভাবে থাকার জন্য কারা আবার সেই প্রথা বিলুপ্তি চান সে কথা তিনি বলেননি। আর এর থেকে উত্তরণের উপায় কি তা আজ আমাদের কাছে অজানা। আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যারাই ক্ষমতায় গেছে তারাই আর ক্ষমতা ছাড়তে মানসিকভাবে কখনই প্রস্তুত ছিলেন না। এবং নিজ ইচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়েন নি। বরং কিভাবে নিজ ক্ষমতাকে আজীবন স্থায়ী করা যায় তার সব চেষ্টা করেছেন প্রত্যেক সরকার-প্রধান।
আর এই চেষ্টা কখনও জনগণের কল্যাণমূলক কাজ করে তাদের সর্মথন লভের মাধ্যমে করা হয়নি। প্রত্যেকেই জনগণকে পাশকাটিয়ে নির্বাচনকে ফাঁকি দিয়ে কিংবা নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন। তাদের এই অবৈধ-ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা চেষ্টার কারণে বার বার আমাদের এই বাংলাদেশ সম্মুখিন হয়েছে বিপর্যয়ের। এ ক্ষমতা দখলের চেষ্টা শুরু হয় সদ্য স্বধীন হওয়া দেশের স্বাধীনতার নেতা বঙ্গন্ধুর ১৯৭৫ সালে সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল কয়েমের মধ্য দিয়ে। তিনি ক্ষমতা স্থায়ী করার জন্য নিজেকে আজীবন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।
এর পর আসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। এর পর কয়েকটি সেনা অভ্যূত্থান। এই সেনারা প্রত্যেকই তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নানা কৌশল এবং নির্যাতনের আশ্রয় নিলেও শেষ পর্যন্ত তারা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। এর পর গণতান্ত্রিক সরকার বিএনপি এল। তারাও তাদের ক্ষমতা স্থায়ী করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল।
যার কারণে বিরোধী দলগুলোর দাবি অনুযায়ী নিরপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিয়ে নিজেদের সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাইল। যাতে তারা তাদের ইচ্ছা মত যেন তেন ভাবে নির্বাচন করে আবারও সরকার গঠন করতে পারে। যার ফলশ্র“তি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দাবিতে ৯৪ থেকে ৯৬ পর্যন্ত ৭০ দিন হরতাল ডাকে। এই হরতালের দিনগুলোতে বিরোধী দল আর সরকারের পেটোয়া বাহিনী পুলিশের সংঘর্ষে প্রাণ দেয় কয়েকশ যুবক। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করলে বাংলাদেশে বিরোধী দল কখনও ক্ষমতায় যেতে পারবে না এটি আওয়ামী লীগ ভালভাবেই জানত।
আর বিএনপির অন্যায় ভাবে নিজেদের অধীনে নির্বাচনে চেষ্টা জনগণ ভালভাবে নেয়নি। যার কারণে জনগণের সমর্থনেই বিরোধী দলগুলোর দাবী অনুযাই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা ক্ষমতা পাবার সুযোগ পেল। এর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা আবার ক্ষমতায় আসার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাতে তাদের সহায্যে করে তার ব্যবস্থা করে গেলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান, রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান , তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যদের দোষ দিতে থাকেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার পর আওয়ামী লীগের মত একি উপায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিজেদের পক্ষের তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নির্বাচন করার জন্য ২০০৪ সালে সংবিধান সংশদন করে বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৬৭ করেন। যা আওয়ামী লীগ ভালভাবে নেয়নি।
যার করণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কে এম হাসন বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে বিএনপি সর্মথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলন করে যায়। যার ফল ১/১১ এবং পরোক্ষ সেনা শাসন ত্রিউদ্দিন সরকার। আর ক্ষমতায় যাবার জন্য এই সরকারকে পূর্ণ সর্মথন দেয় আওয়মী লীগ। তাদের অবৈধ কাজের বৈধতা দেয়ার নিশ্চয়তা দেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। পরস্পর আস্থাহীনতার কারণে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে অনির্বাচিত সরকারের প্রবর্তন দাবি করেছিল আওয়মী লীগ, এবং সে জন্যে দিনের পর দিন হরতাল করেছিল তারা।
প্রাণ দিয়েছিল প্রায় একশ এর কাছা কাছি মানুষ। তারাই আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেই পদ্ধতি বিলুপ্ত করে নিজেদের অধীনে নির্বাচনের কথা বলছে, আর এ জন্য তারা দোহাই দিচ্ছে আদালাতের রায়ের একাংশের । আর বলছেন অন্যের ক্ষমতার লোভের কথা। তারা আদালাতের রায়ের একাংশের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাংবিধানিকভাবে অবৈধ বলে নিজেদের ক্ষমতার লোভকে আড়াল করছেন। আর বলছেন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সমর্থন কারীরা আদালাত অমান্য কারী।
তাই আদালত মান্য করী হিসেবে ! আওয়ামী লীগ! কখনো এই পদ্ধতি রাখতে পারেনা। অবশ্য “রায়ের অপর অংশের কথা” যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুই মেয়াদে নির্বাচন করতে পারবে বলে আদালাত যে অভিমত দেন তা আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীর গণমধ্যমে কথা বলার সময় বেমালুম চেপে যান। আর এমন ভাবে কথা বলেন যে আদালাতের রায়ের প্রথম অংশ যেন ঐশীবাণী যা লঙ্ঘনে পাপ হবে। উল্লেখ্য ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বির্তকে শেখ হাসিনা বলেছিলেন. সংবিধান কুরআন কিংবা বাইবেল নয় যে তা পরির্বতন করা যাবেনা। সেই আওয়ামী লীগের আদালাত আর সংবিধানের প্রতি এত ভক্তি যে কি কারণে তা কারোই বুঝতে বাকি নেই।
তবে মজার বিষয় হল বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যে যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা সবাই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে ধরনের কৌশল বা অপকৌশল অবলম্বম করেছিলেন শেষ পর্যন্ত তা আর কাজে লাগেনি। আর এর রকম অভিজ্ঞতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরও আছে। তার পরও আমাদের মানুষের সহজাত স্বাভাব ইতিহাস ভুলে যাওয়া সেই সহজাত স্বভাবের ঊর্ধ্বে না উঠতে পেরে তিনি আবারো সেই একই পদ্ধিতে ক্ষমতায় থাকার অপকৌশল অবলম্বল করে যাচ্ছেন। তার এই কৌশল তাকে এবং তার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে কতটা সাহায্যে করবে তা সময়ই বলে দেবে। ক্ষমতায় তিনি আসুন আর নাই আসুন তিনি যে কিছু লোকের ক্ষমতার লোভের কথা বললে কিন্তু কার যে ক্ষমতার লোভ নেই সে কথা তিনি বলেননি।
লোভ যে কার নেই তা আমরা এখনও বুঝতে পারছিনা ভবিষ্যতে পারব কিনা তাও সন্দেহ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।