আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাডার টরন্টোর স্কুলে নামাজ পড়া নিয়ে প্রতিবাদ, এরপর যা ঘটলো...

কানাডার টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের অধীনে ৪০০ শিক্ষার্থীর ভ্যালি পার্ক পাবলিক স্কুলের ক্যাফেটেরিয়ায় শুক্রবারের নামাজ পড়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে কানাডিয়ান হিন্দু এডভোকেসীসহ সমমনা গ্রুপ। দ্রুতই তাদের এই প্রতিবাদের বিষয়টি স্কুল বোর্ডসহ স্থানীয় প্রাদেশিক এমপি ও অন্যদের মতামত প্রদানে একীভূত করে ফেলে। এতে টরন্টোর জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ‘সিপি টুয়েন্টি ফোর’ পাবলিক স্কুলে ‘প্রেয়ার সার্ভিস’ অনুমোদন দেয়া যায় কি না বিষয়টির ওপর একটি অনলাইন জরীপ গ্রহণ করে। ৭ জুলাই সকাল ২টা অবধি চলা জরীপের ফলাফলে ৬,৩৫৫ জন (৬৩ শতাংশ) ‘হ্যাঁ’ এবং ৩,৬৯৭ জন (৩৭ শতাংশ) ‘না’ ভোট দিয়েছে। অর্থাৎ পাবলিক স্কুলে ‘প্রেয়ার সার্ভিস’ অনুমোদন দেয়ার পক্ষে সর্বাধিক দর্শক মত প্রকাশ করেন।

কানাডার জনপ্রিয় বাংলা সাপ্তাহিক বেঙ্গলি টাইমস এই খবরটি বেশ ফলাও করে প্রকাশ করে। পাশাপাশি টরন্টো সান ৫ ও ৬ জুলাই এ বিষয়ে বিশদ প্রতিবেদন ছেপেছে। জানা গেছে, ডন ভ্যালি এলাকার ওই স্কুলের শুক্রবারের ৩০-৪০ মিনিটের এই নামাজ পড়ার বিরুদ্ধে কানাডিয়ান হিন্দু এডভোকেসীর পরিচালক রন ব্যানার্জি কঠোর সমালোচনাপূর্ণ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চার্চ ও রাষ্ট্রের পৃথকায়নের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তার বক্তব্য হচ্ছে, এই নামাজ পড়া বন্ধ করতে হবে, যেখানে অনেক আগে থেকেই স্কুলে ‘লর্ড’স প্রেয়ার’ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি এই নামাজ পড়াকে ‘এলার্মিং ও আনএকসেপ্টাবল’ আখ্যা দেন এবং নভেম্বর থেকে এই নামাজ পড়া চালু থাকলে পিকেটিংপূর্ণ প্রতিবাদ জানাবেন, কেননা হিন্দু ছাত্ররা ও অভিভাবকেরা এ বিষয়ে তাদের অভিযোগ করেছেন।

সে জন্য তিনি মনে করেন, টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডে ‘সেক্যুলার’ বা ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা পদ্ধতি বহাল থাকা চাই। তবে ভিন্ন মতামত জানা গেছে ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল নিকোলাস স্টেফানফ থেকে। তিনি জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে তিনি ইস্ট ইয়র্কের এই স্কুলে এলে শত শত ছাত্র অভিভাবকদের অনুমোদন নিয়ে তার কাছে স্থানীয় মসজিদে শুক্রবারের নামাজ পড়ার আবেদন জানায়। কিন্তু থর্নক্লিফে পার্ক ড্রাইভে অবস্থিত মসজিদ দারুস সালাম দূরে থাকায় কমিউনিটির সহযোগিতায় স্কুল ক্যাফেটেরিয়াতেই একজন ইমামের নেতৃত্বে এই নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়। তার মতে, এগার বছর আগে প্রণীত ভ্যালি পার্ক পলিসি অনুসারে ‘রিলিজিয়াস একোমোডেশন গাইডলাইন’-এর আওতায় তা করা হয়েছে।

আর এই পলিসি কানাডার চার্টার অব রাইটস এবং অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কোডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তথাপি কানাডিয়ান হিন্দু এডভোকেসীর সাথে এই স্কুলে শুক্রবারের নামাজ পড়ার বিরুদ্ধে একাত্মতা প্রকাশ করেছে মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেস, ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন এগেন্সট শারিয়া কোর্টস ইন কানাডা ও জুইশ ডিফেন্স লীগ। মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেসের সভানেত্রী ফারজানা হাসান মনে করেন, শুক্রবারের এই নামাজ পড়া ‘প্যান্ডোরা’স বক্স ওপেন’ করবে, কেননা মূলধারার মুসলমানরা ইসমাইলিয়া ও আহমেদিয়াদের মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। অপরদিকে, জুইশ ডিফেন্স লীগের মেয়ার ওয়েনস্টিন মনে করেন, কট্টর ও মৌলবাদী ইমামরা নামাজটির নেতৃত্ব দিলে শিক্ষার্থীদের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। সে জন্য এই নামাজ পড়াটি মনিটরিং হওয়া অত্যাবশ্যক।

আর ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন এগেন্সট শারিয়া কোর্টস ইন কানাডার হোমা আর্জুমান্দ মনে করেন, এই নামাজ পড়া এক অর্থে মুসলিম নেতাদের ‘পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট’। কিন্তু এই প্রতিবাদ সত্বেও এনডিপি এমপিপি চেরী ডি’নভো, যিনি ইউনাইটেড চার্চের একজন ধর্মযাজক, তিনি ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল থেকে নামাজ পড়াকে সমর্থন করেন, কিন্তু মনে করেন সকল ধর্মীয় নেতৃবর্গকে একত্রিত করে সরকারী স্কুলে সেটির প্রয়োজনীয়তা ও যথোপযুক্ততা আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ হওয়া চাই। পাশাপাশি অন্টারিও শিক্ষা মন্ত্রী লিওনা ডমব্রস্কি’র একজন মুখপাত্র জানান, ১৯৯৬ সালে গৃহীত অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কোড পরিপূর্ণভাবে ধর্মীয় প্রয়োজনীয়তাকে অনুমোদন দেয়। অন্যদিকে, টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের এডুকেশন ডিরেক্টর ক্রীস স্পেন্স ও বোর্ডের চেয়ারম্যান ক্রীস বল্টন এ বিষয়ে কোনো প্রকার মতামত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। মূল সূত্র... www.thebengalitimes.com  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।