কানাডা আসার আগে সবচেয়ে বেশি যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটা হচ্ছে এখানকার ওয়েদার। কানাডার শীত নিয়ে অনেকের কাছ থেকে অনেক কথা শুনেছি। এখানে আসার আগে আমার প্রিপারেশও ছিল সেরকম। মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়েই ছিলাম যে ভয়াবহ শীতের মধ্যে পড়তে হবে। এসে দেখি ভয়াবহ গরম।
ভ্যাংকুভার এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই অবাক হয়ে দেখি গা পুড়ে যাওয়ার মত রোদ চারদিকে। গায়ের জ্যাকেটটা খুলে রাখতে বাধ্য হই।
ট্যাক্সি করে বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার পথে কিছুটা অবাক হই আশেপাশে তেমন উচু দালান কোঠা দেখতে না পাওয়ায়। বুঝতে পারি এখানে জায়গার তেমন অভাব নেই, এই জন্যই হয়ত হাইরাইজ দালান কোঠা তেমন নাই। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে বাড়িঘরগুলা ইট-রডের না, কাঠের।
কাঠের ঘরগুলা শীতকালে গরম থাকে, এই জন্যই এভাবে বানান। আরেকটা জিনিস খুব অবাক করেছিল, সেটা হচ্ছে এখানকার নীরবতা। ঢাকার পরিচিত কোলাহলের সাথে প্রতিনিয়ত মেলানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কোলাহলের দিক দিয়ে তার ধারে কাছেও না এই সিটি। তবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক।
আমাদের ট্যাক্সি একটু পরপর সিগনাল এ পড়ছিল। বুঝতে পারছিলাম জ্যাম না থাকলেও সিগনালে পড়ে অনেক সময় নস্ট হয় এখানে। তবে এখানে এক জায়গায় যাওয়ার অনেক বিকল্প পথ থাকায় হেভি ট্রাফিক রোড সহজেই এড়ানো যায়। লোকজন গুগল ম্যাপ এ ট্রাফিক ইনফো দেখে তারপর পথ সিলেক্ট করে। বসবাসযোগ্য নগরীর দিকে দিয়ে বিশ্বের মধ্যে ২য় অবস্থানে ভ্যাংকুভার, এরকম কিছু প্ল্যান না থাকলে সেটা হওয়ার কথা না।
বাসে করে আমার গন্তব্যে যাওয়ার পথে আশে পাশের প্রকৃতি দেখে ভয়াবহ মুগ্ধ হয়ে গেলাম। যতদূর চোখ যায় খালি পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের ঢালেই মানুষের বসবাস। রাস্তাগুলাও সব পাহাড়ের উপর। আসলে পুরো এলাকাটার সব কিছুই পাহাড়ের উপরে।
পাহাড়ি উপত্যকার ঢালে এভাবে এত অসাধারণ একটা নগরী গড়ে উঠতে পারে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। রাস্তায় যেতে যেতে এই অবারিত সৌন্দর্য দেখে প্রথম বারের মত কিছুটা ভাল লাগার জন্ম নিল কানাডার প্রতি। বাসের জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম দূরে অনেক উচু পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চলছে। ভাবছিলাম এত উপরে কিভাবে গাড়িগুলো যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর দেখি আমাদের বাসও ওই উচ্চতায় উঠে গেছে।
নিচে চোখ যেতেই চমকে যাই। তবে আমি বেশিক্ষন চোখ খোলা রাখতে পারি নি। ভয়াবহ ক্লান্তিতে পাশে বসা অচেনা অজানা লোকটার কাঁধে মাথা রেখে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি। ঘুম থেকে উঠে দেখি রাত ৮টা বাজে। আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছাই রাত ৮-৩০ এর দিকে।
কানাডা আসার পর প্রথম যে সমস্যাটায় পড়ি সেটা হচ্ছে ঘুমের সমস্যা। বাংলাদেশে যখন দিন, এখানে তখন রাত, আবার বাংলাদেশে যখন রাত, এখানে তখন দিন। সময়ের চক্র পুরো উলটে গেছে, কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমার ঘুমের অভ্যাসটা সেই বাংলাদেশ সময়েই রয়ে গেছে। রাতে আমার ঘুম হয় না, ঘুম আসে সকালের দিকে। তাও অল্প কিছুক্ষন ঘুম হয়।
আসল ঘুম আসে বিকালের দিকে, মানে বাংলাদেশ সময় গভীর রাতের দিকে। ঘুম থেকে উঠি মধ্যরাতে। এই অদ্ভূত ঘুমের অভ্যাসটা ক্লাস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত রয়ে যায়। (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।