আগের দুই পর্ব-
১ম পর্বঃ Click This Link
২য় পর্বঃ Click This Link
*************************************************
কানাডা আসার পর এখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা দেখে একটু অবাক হয়েছিলাম। আমার ফ্রেন্ড এর সাথে হয়ত আর বড়জোর দুই এক জনকে পাব এরকম ভেবেই এসেছিলাম। আসার পর দেখি অনেক বাংলাদেশি। আমাকে রিসিভ করতে বাস স্ট্যান্ডে আমার ফ্রেন্ড এর সাথে আরও দুই বড় ভাই আসে। বাসায় আসার পর আশেপাশের আরও অনেকে পরিচিত হতে আসে।
ভার্সিটি গিয়ে আরও অনেক বাংলাদেশিদের সাথে পরিচিত হই। আসলে ঢাকায় আমি যে এলাকায় থাকতাম সেখানেও এত লোকজনের সাথে পরিচয় হয় নি। একই ফ্লোর এর দুই ফ্ল্যাট এ হয়ত থাকতাম, কিন্তু কোনদিন কথা হয় নি এরকম লোকজনের সংখ্যাই ঢাকায় বেশি ছিল। অপরিচিত কারও সাথে তো কেউ সহজে পরিচিতই হতে চাইত না। কিন্তু এখানে দেখি সবাই নিজ থেকেই আমার সাথে পরিচিত হতে আসছে।
এখানে আসার পর একটা ব্যাপার আবার নতুন করে শুরু হয়- ক্রিকেট খেলা। দেশে থাকতে শেষ কবে ক্রিকেট খেলেছিলাম ভুলেই গিয়েছি। বাড়িতে গেলে মাঝে মাঝে এলাকার ছোট ভাইরা হয়ত ডাকত খেলার জন্য , কিন্তু খেলার চেয়ে আড্ডাবাজিতে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করতাম আমি । কিন্তু এখানে আসার পর দেখি প্রতিদিন নিয়ম করে খেলাধুলা হচ্ছে। আমার ঘুমের সমস্যাটা কাটিয়ে উঠার পর আমিও তাতে যোগ দেই।
প্রতিদিন বিকালে ক্যাম্পাস থেকে ফিরেই সবাই মাঠে চলে আসত। খেলা চলত সন্ধ্যা পর্যন্ত। এর মধ্যে দেখি খেলোয়ার ভাগ করে একটা টুর্নামেন্ট এরও আয়োজন হয়ে গেল। অনেক দিন পর খেলার প্রতি আবার যেন সেই কৈশোরের আগ্রহ ফিরে পেলাম। লোকাল কানাডিয়ানরা অবশ্য খুব অবাক হত আমাদের এই 'অদ্ভূত' ধরনের খেলা দেখে।
এখানে আসার পর প্রথম যে কাজটা করি সেটা হচ্ছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ। এখানে দেখি কেউ ক্যাশ নিয়ে ঘুরে না, সবাই ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে। মনে আছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কিছুদিন পরে এক দোকান থেকে কিছু জিনিসপত্র কেনার পর অনেক দিনের পূরোন অভ্যাসবশত মানিব্যাগ খুলে দেখি সেখানে কোন ডলার নেই, শুধু অনেক দিনের পুরাতন একটা বাংলাদেশি ৫ টাকার নোট পড়ে আছে। প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে ক্রেডিট কার্ড এর কথা মনে পড়ে।
যাই হোক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে যত দেরি হয়, ক্রেডিট কার্ড পেতে তত বেশি সময় লাগে। কারন ডেবিট কার্ড সাথে সাথে পেয়ে গেলেও ক্রেডিট কার্ড পেতে একটু সময় লাগে। এই জন্য আমার ফ্রেন্ড আমাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজটাই প্রথম করতে বলে। আমার ফ্রেন্ডই আমাকে ব্যাংকে নিয়ে যায়। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আমাকে যেসব প্রশ্ন করে আমার ফ্রেন্ডই সব জবাব দিয়ে দেয়।
আমি ইংরেজি বুঝতাম হয়ত, কিন্তু ওরা প্রশ্ন করে ঠিক কি জানতে চায় সেটা অনেক সময় বুঝতে পারতাম না। যেমন আমাকে প্রশ্ন করা হয়, আমি কোন জব করি কিনা। আমার ফ্রেন্ড জবাব দেয়, আমি রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করি। এটাও যে এক ধরনের জব সেটা জানা ছিল না। বুঝতে পারছিলাম ফ্রেন্ড সাথে না থাকলে সমস্যা হত।
ফ্রেন্ড এর সহায়তায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজটা বেশ তাড়াতাড়ি শেষ হয়। একটু অবাক হই। কারন বাংলাদেশে একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে নিজের ডকুমেন্ট, ছবি, আরও ২/১ জনের ছবি, সাইন এইসব নিয়ে তারপর যেতে হয় ব্যাংকে। কিন্তু এখানে দেখি শুধু পাসপোর্ট আর অফার লেটার নিয়ে গেলেই হয়। ছবি লাগে না।
আরেকটা কাজ খুব তাড়াতাড়ি করেছিলাম, SIN নাম্বার নেয়া। আমার প্রফ আমাকে প্রথম দিনই বলে, এটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, কারন SIN নাম্বার ছাড়া এখানে তোমার কোন পেমেন্ট হবে না। আমি ইউনিভার্সিটিতে জব (RA/TA) করি এরকম একটা ডকুমেন্ট দেয় আমাকে ইউনিভার্সিটি থেকে। আমার পাসপোর্ট আর ওই ডকুমেন্ট নিয়ে গিয়েছিলাম কানাডা সার্ভিস নামে একটা অফিসে। এখানেও আমার ফ্রেন্ড আমার সাথে যায়।
আসলে প্রথম দিকের সব কাজেই আমার ফ্রেন্ড আমার সাথে যেত। এই কারনে অনেক কৃতজ্ঞতা আমার ফ্রেন্ড এর প্রতি। এখানেও কোন ছবি লাগে নি।
আমি এখানে আসার এক সপ্তাহ পর আমার ইউনিভার্সিটি খুলে যায়। অনেক দিন পর আবার ছাত্র হয়ে ইউনিভার্সিটি যাচ্ছি ভাবতে ভালই লাগছিল।
এখানকার ইউনিভার্সিটিগুলোর একটা নিয়ম হচ্ছে প্রথম সপ্তাহ কোন ক্লাস হয় না। এই কারনে আমার ভাল লাগা আরও বেড়ে যায়। প্রথম সপ্তাহে এখানে ভার্সিটির বার খোলা থেকে শুরু করে নতুন ছাত্রদের ওয়েলকাম জানানোর জন্য কনসার্ট, ডিজে পার্টি ইত্যাদি অনেক কিছুর আয়োজন হয়। অনেক কোম্পানী ক্যাম্পাসের ভিতর স্টল সাজিয়ে বসে নিজেদের প্রচারের জন্য। খাতা, কলম, পেন্সিল থেকে শুরু করে টি-শার্ট, ব্যাগ, পেন ড্রাইভ ইত্যাদি অনেক কিছুই ফ্রি দেয় ওরা।
সাথে ফ্রি খাবার দাবার তো আছেই। ফ্রি জিনিসপত্র পেয়ে আমি অবশ্য প্রতিটা জিনিসই নিয়েছিলাম একাধিক করে। এখনও সেই ফ্রি খাতা,কলম দিয়েই চলছে, নতুন করে কিছু কিনতে হয় নি।
তবে কানাডায় আসার পর একটা জিনিস খুব মিস করি- টং দোকানের চা। দেশ থেকে আসার সময় আমি ১০ প্যাকেট সিগারেট নিয়ে এসেছিলাম সাথে করে।
আসলে ২০০টার বেশি সিগারেট ভ্যালিডভাবে আনা যায় না। বেশি আনলে ধরা খেলে আবার জরিমানা দিতে হয়। যাই হোক, সিগারেট সাথেই ছিল, কিন্তু আশেপাশে কোন চায়ের দোকান পাই না। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কোন চায়ের দোকানে বসে চা-সিগারেট খেয়ে যে কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনাহীন সময় কাটাব এরকম উপায় দেখি না। দেশে থাকতে তো বাসা থেকে নেমে অফিসে যাওয়ার পথে বাসে উঠার আগে একবার চা-সিগারেট খেতাম, বাস থেকে নেমে আবার একবার চা-সিগারেট খেয়ে তারপর অফিসে ঢুকতাম।
অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে তো চলতই। আর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডাবাজিতে বসলে তো চা-সিগারেটের হিসাব রাখাই কষ্টকর হয়ে যেত। এখানে টিম হর্তন কিংবা স্টার বাকস আছে হয়ত, কিন্তু দোকানগুলা ছিল বেশ দূরে দূরে। আর দামটাও মনে হত বেশি।
যাই হোক, ক্লাস না থাকায় প্রথম সপ্তাহটা বেশ আনন্দেই কাটে।
কিন্তু এই আনন্দ বেশি দিন থাকে নাই, দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়ে যায়।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।