জেগে থাকি, ঘুমাবো ভেবে... আজ হঠাৎ করেই মনে হলো এই লেখাটি এখানে পোস্ট করলে কেমন হয়.?
আমি ভালো লিখতে জানি না, কিন্তু এই লেখাটি আমি যতবার পড়ি আমার চোখ ভিজে যায়, অদ্ভুত কোনো কারণে ।
সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা যে, এই লেখাটি আমি আজ এখানে আমার খোলা ডায়েরিতে তুলতে পারলাম । বেশ কিছুদিন আগের লিখা, পুরোটাই উঠিয়ে দিলাম ।
জীবন এবং মৃত্যু, মাঝখানে একটি চাঁদ
যে ছিলো আমার স্বপ্নচারিনী তারে বুঝিতে পারিনি.....গানের লয়ে মৃদু পা দিয়ে ঘুম এসে কেড়ে নেয় দূ’চোখের দৃষ্টি । সফেদ বিছানায় সফেদ চাঁদনী তখন আমায় জড়াজড়ি করে আমায় আরো নিবিষ্ট করে দিচ্ছে ঘুমের সাথে ।
মারা গেছে ??..এমন একটা শব্দ হঠাৎ কানে এসে চোখের ঘুমটাকে সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেললো ।
সচরাচর এমনটি আমার হয়না । আমি ভীষণ ঘুমকাতুরে, মরার মতো ঘুমাই।
আট তলার জানলা দিয়ে নিচে তাকাই; একটা এম্বুলেন্স থেকে ভেসে আসছে অস্পষ্ট হৃদয়-আত্মা-শরীর নিংড়ানো চিৎকার;.......”আম্মা !...মা ..!...ও আম্মা....মা গো.....!” পাশের বেডের একজনকে জিগ্যেস করলাম “কি ব্যপার”, বললো 'রোগীটি মারা গেছে ।
কোন্ রোগী, কার রোগী, কার মা, কার বউ, কার সন্তান কিছুই জানিনি ।
শুধু জেনেছি মানুষকে মরে যেতে হয় ।
কি হয় আমার; জানি না ! আমার চেয়েও কম বয়সী একজনকে হুট করে জিগ্যেস করে ফেলি.....”মানুষ কেন মরে ?”
সেও হতভম্ব হয়ে যায় আমার উদ্ভট প্রশ্ন শুনে । আমি নিজেও বোধয় ।
অনেক উপরে, অন্ধকারে, কোনো এক ওয়ার্ডের খোলা জানলায় আমি; উপরে আমাকে মাখিয়ে নিচ্ছে নিশ্ছিদ্র হাওয়া আর জোসনা । আর অনেক অনেক নিচ থেকে ভেসে আসছে........”আম্মা...আম্মা গো....ও...মা......”!
আমি নির্বাক হইয়ে রই ! স্তব্ধ ! পলক পড়েনা চোখে, এই ভয়ে যদি পলকেই হারিয়ে ফেলি আমার আম্মাকে ?
গত ক’দিন যাবত আম্মু এখানে ভর্তি; গাইনী ডিপার্টমেন্ট এ ।
ছোট্ট একটা অপারেশন ! আর এই ছোট্ট শব্দটাই আমার বুক-আত্মায় শেঁলের মতো এসে হুড়োহুড়ি করছে ।
মাকে বেশি ভালো বোধয় বাসতে পারিনি, কিন্তু অজানা আশংকায় বুক কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে । চোখের অবাধ্য নালাকে থামাতে পারছিনা টানা গত পাঁচ মিনিট যাবত ।
ঘুমন্ত মায়ের পা জড়িয়ে ধরে মনে মনে ভাবছি, যেন ঈশ্বরের পা ধরে কাঁদছি আর বলছি-“তোমাকে অনেক অসন্তুষ্ট করি মাগো ! তবুও ছেড়ে যেওনা কখনো....প্লিজ । অনেক বছর বেঁচে থাকো, তোমার করুনা না, কিছুই না, শুধু বকে দেয়ার জন্যই বেঁচে থাকো ।
”
বুকের হাপড়টাকে টানতে পারছিনা, ইচ্ছে করছে আমার সমস্ত বাহুর শক্তি দিয়ে আম্মার পা’দুটি অনেক শক্ত করে মুখে চেপে ধরে রাখি । কিন্তু পারিনা; পাছে মায়ের ঘুম ভেঙ্গে ধরা পড়ি । আমি যে শামুকের মতো; নিজের অন্তরাত্মার কথাটি কখনই প্রকাশ করতে পারিনা যথাসময় ।
আমি আমার কাছে পানির মতই স্বচ্ছ । মাকে চিন্তিত করতে পারি, কষ্টও দিতে পারি, মাকে আনন্দও দিতে জানি, মায়ের জন্যে অঝোরে কাঁদতেও পারি নিশ্বব্দে পুরোটা রাত . কেবল বলতে শিখিনি – “মা, তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি ।
“
তুমিই তো কখনো শেখাওনি, কখনো কি বলেছো-“আমার ছোট্ট মা টি, তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি.” আমার মা-ও যে একজন ভালোবাসার কিষ্ণগহ্বর; কেবল গ্রাস করতে পারেন ভালোবাসা দিয়ে, প্রকাশ করতে জানেন না ।
মায়ের এই সরূপহীন ভালোবাসার স্ব-রূপ তুলে ধরবার লেখনী শক্তি যে আমার একেবারেই শুন্যের কোঠায় । আম্মাকে নিয়ে লিখতে গেলে কলম কাগজ সবই বিট্রে করবে ক্লান্তিত । এতবেশী ইচ্ছাশক্তি, মনোবল সমৃদ্ধ একজন মা, যাকে সারাটাজীবন দেখেছি ত্যাগের মধ্যেই ছিনিয়ে নিয়েছেন তাঁর স্বপ্নগুলোকে । অন্তত চেষ্টা করেন এবং সফলও হোন ।
একটা ধৈর্যের আধার । জীবন-মরণ জাতীয় সমস্যাতেও যাকে কখনো দেখিনি নিরাস, কিংবা ভীত । তাঁর একটি বিশ্বাস; "এর মধ্যেই ভালো থাকবে । ”
আম্মাকে নিয়ে লিখবো কই ? কে আছে, কি আছে আমার মায়ের মতন সহনশীল যে, কলম কাগজেরা শুধু সইবেই ?
মায়ের এই অদম্য শক্তি, সরলতা, সাহসিকতা, বিচক্ষণতা আমি ধরবো কোথায়? আমি যে ভীষণ ছোট । আমি যে নগন্য ।
শুধু দূ’হাত ভরে ঈশ্বরের কাছে চাইবো - আমার এই ছোট্ট চোখের সীমানা যেন তাদের শেষ পলক পর্যন্ত এই মায়ের চোখ দুটি দেখতে পায় . যেন শেষ মুহূর্তেও এরকম নিশ্বব্দে বলতে পারি....:"আম্মা, তোমাকে অনেক ভালবাসি.”
আমি যে ভয়ানক স্বার্থপর ! তাই তোমায় হারাবো; ভাবতেও দুঃস্বপ্নের মতো লাগে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।