..............জানেত চাই জানাতে চাই..................
-ছোট বেলায় আমি খুব বাবা ভক্ত ছিলাম । পৌষ মাসের প্রচন্ড শীতের রাতে ভোরের আলো দেখা যাওয়ার আগেই বাবা ঘুম থেকে উঠে খড় কুটো সংগ্রহ করে আগুন ধরাতেন। যদিও আমার কাছে আগুন পোহানোর চেয়ে লেপ কাথার নীচে শুয়ে থাকাটা অনেক আরমদায়ক মনে হতো তবুও বিছানা ছেড়ে বাবার সাথে খড়কুটো সংগ্রহে ব্যস্ত হতাম। তারপর একটা সুবিধামতো জায়গার খড়কুটো গুলো একসাথ করে আগুন ধরাতাম এবং বাপ-ছেলে মিলে আগুন পোহাতাম। পুরো পৌষ মাস জুড়ে বাবার এটা একটা কমন কাজ ছিল্।
কিন্তু বাবাকে কোনদিনও দেখেনি কোন গাছের নীচে বা গাছের আশেপাশে আগুন ধরাতে। কারণ জিঙ্গেস করলে বলতেন যে আগুনের ধোয়া গাছের ক্ষতি করে তাই গাছের ধারে কাছে আগুন না দেওয়াই ভাল।
-ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে শীতকালের রুক্ষ-সুক্ষ ধুলোবালি ময় শালবন দেখে আমার খারাপ লাগে। সুন্দর প্রকৃতির উপর মানুষের সৃষ্ট এই কুৎসিত আবরণ অপরিহার্য হলেও মেনে নিতে পারিনা। আবার বর্ষা কালে শালবনের ঘন সবুজ বন দেখে প্রশান্তিতে বুকটা ভরে উঠে।
সারাক্ষন জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি প্রকৃতির এই অমূল্যদানের দিকে।
-সুন্দরবন আমার যাওয়া হয়নি। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গলের পায়ের ছাপ কেমন তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি অথবা দেখা হয়নি নতুন আগুন্তকের দিকে বিষ্ময়দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকা দুটো হরিণী চোখও। তবে সিডর যখন সুন্দরবনকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় আমি তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রাকৃতিক সপ্তামাচার্যের তালিকায় সুন্দরবনকে স্থান দিতে যখন আসল ভোটের পাশাপাশি নতুন নতুন একাউন্ট খুলে নকল ভোট দেয়া শুরু হয় তখন আমিও নিজের দুটো একাউন্টের পাশাপাশি আরও দুটো একাউন্ট খুলেছিলাম।
এদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রক্ষাকারী পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনকে প্রাকৃতিম সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় দেখার জন্য আমিও অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতেছিলাম। কিন্তু সুন্দরবন বাদ পড়ে যাওয়াতে ষোল কোটি বাঙালীর মতো আমিও কষ্ট পেয়েছিলাম।
আমি একজন সামান্য চুনোপুটি। থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে খুব বেশী জ্ঞান আমার নেই। কেউ যখন যুক্তি দিয়ে বলে যে থার্মাল বিন্দুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনকে ধংস করে দিবে তখন তা বিশ্বাস করি।
আবার অন্য একজন যখন পাল্টা যু্ক্তি দেয় যে থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবেনা বরং ঐ এলাকার তথা দেশের মানুষের উপকার হবে তখন খুশিতে গদগদ হই। তাই যুক্তিতর্কের এই জটিল জায়গাটা এড়িয়ে চলি এবং চলতেও চাই। তবে শুধু একটি কথা বার বার মনে হয়-
যে সুন্দরবন পৃথিবীর সম্পদ,যে সুন্দরবন এই দেশের সম্পদ, যে সুন্দরবন বিলুপ্তপ্রায় টাইগারের একমাত্র আবাসস্থল; ক্ষমতাধরদের কোন হঠকারী সিদ্যান্তে যদি সেই সুন্দরবনের এতটুকু ক্ষতি হয় তবে হয়তো কোনদিন তাদের ক্ষমা করবেনা এদেশের ষোলকোটি জনগন। ঠিক যেমনটি ক্ষমা করেনি একাত্তরের বিশ্বাসঘাতকদের। আদালতের কাঠগড়ায় তারা কোনদিন না দাড়ালেও প্রতিটা মানুষের বিবেকের কাঠগড়ায় তাদের দাড়াতেই হবে এবং প্রতিটা মানুষের স্বতন্ত্র আদালতে তাদের সর্ব্চ্চ শাস্তিটাই হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।