জীবনের উল্টো পিঠেও আমি বৃত্তের মত বাস্তবতার কাছে বন্ধী 'সম্পর্ক' খুবই বিচিত্র একটা বিষয়। আমাদের জীবদ্দশায় আমরা পরিচিত হই সম্পর্কের ভিন্ন ভিন্ন রুপের সাথে। কিছু কিছু সম্পর্ক নিয়েই আমরা জন্ম নিই। কখনো কিছু কিছু সম্পর্ক জীবনে চলার পথে আপনা আপনিই জন্ম নেয় আবার কখনো আমরা তা তৈরি করে নিই নিজের মতো করে। আর একবার যে সম্পর্কটার জন্ম হয় তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলতে থাকে অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিক ভাবে।
হ্য়ত মাঝে মাঝে কোন ক্ষেত্রে তার নামটা বদলে যায় কিন্তু সম্পর্কের পিঠে চড়ে চলতে চলটে আমরা হারিয়ে গেলেও সম্পর্ক কখনো হারিয়ে যায়না। এটা এমন একটা বিষয় যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই,যার মৃত্যু নেই,অবিনশ্বর।
সময়ের পরিবর্তনে আর পরিস্থিতির সাপেক্ষে কখনো কখনো হয়ত তার নামটা বদলে যায় কিন্তু সম্পর্কটা সম্পর্কের জায়গায়ই থেকে যায় আজীবন। সম্পর্কের আছে সাদা কালো সুতো আর রিপুর জটিল গ্রন্থি। জীবন চলার পথে ভাললাগা,বিশ্বাস,পারষ্পরিক সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি,মতামতের মিল,সামাজিক বন্ধন,নৈতিকতা,দায়িত্ববোধ আরো অনেক কিছুর ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় সম্পর্ক।
একমাত্রিক ধ্যানধারণার কারনে অথবা পারষ্পরিক দ্বন্ধে কখনো ঐ সম্পর্কের পুথির মালাটা ছিন্ন হয়ে হারিয়ে যায় বিশ্বাস অথবা নৈতিকতা অথবা পারষ্পরিক সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি অথবা আরো অনেক কিছু। শুরু হয়ে যায় পারষ্পরিক একটা সংঘর্ষ। ধিরে ধিরে সৃষ্টি হয় দূরত্ব অথবা কখনো হঠাৎ করে হয়ে ওঠে একজন আরেক জনের শত্রু। তবে যে নাম নিয়ে শুরু হয়েছিল সম্পর্কটা, পারষ্পরিক দূরত্ব অথবা শত্রুতার কারনে কি একদমই নিঃশ্বেষ হয়ে যায় সেই সম্পর্ক??না কখনোই তা হয়না!শুধু মাত্র সম্পর্কের নামটা বদলে যায়। আগে যেটাকে বন্ধুত্ব বলা হতো এখন সেটাকে বলা হয় অন্যকিছু।
আগে যেখানে ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখন তার নাম হয়েছে সংঘর্ষ অথবা শত্রুতার সম্পর্ক,আত্মিয়তার সম্পর্ক হয়েছে অনাত্মিয়তে!বন্ধুত্ব কিংবা শত্রুতা নামের পরিবর্তন যাই হোকনা কেন একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে সম্পর্কটা সম্পর্কের জায়গায়ই আছে শুধুমাত্র আগে যাকে ভালবাসা কিংবা শ্রদ্ধা করা হত এখন তাকে ঘৃনা করা হয়। এভাবে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই যে নামে সম্পর্ক শুরু হয় পরিবর্তনের কবলে পড়লে নামটা ঠিক বিপরীত দিকে চলে যায় অথবা ভিন্ন কোন নাম পায়,কিন্তু সম্পর্ক সম্পর্কের জায়গায়ই থেকে যায়। বিজ্ঞান বলছে, আলোকময় নক্ষত্রের তিমির মানে তারার মৃত্যুতে তৈরি কৃষ্ণগহ্বর। পৃথিবীর সাপেক্ষে বহু আলোকবর্ষের দূরত্বের কারণেই মৃত নক্ষত্রের আলো এবং মৃত নক্ষত্রের কৃষ্ণগহ্বর একই সঙ্গে বর্তমান। তারার মৃত্যুর অনেক দিন পরেও তার আলো পেতে থাকে পৃথিবী।
সম্পর্ক হলো সেই নক্ষত্রের তিমির। লোনা জলের দুস্তর ব্যবধান সত্ত্বেও মানুষে মানুষে সম্পর্কের আরোহী-অবরোহী তান সেই নক্ষত্রপ্রকৃতিরই প্রতিফলন। যে-নক্ষত্রের আলোকলগ্নের প্রশ্রয়ে সম্পর্কের জন্ম হয়, তার মৃত্যু বা অপমৃত্যুর পরেও বয়ে যেতে হয় বন্ধনের অবহ ছায়াশরীর।
জীবন চলার ক্ষেত্রে যত জায়গায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হ্য় তার মধ্যে সবচেয়ে সম্পর্কের ক্ষেত্র বেশি সাবধানতা অবলম্বন করে চলা উচিৎ বলে আমার মনে হয়,এই একটা জায়গায় সবচেয়ে বেশি হিসাব করে প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। কারন কোন ভুলের কারনে যদি একবার আমাদের সম্পর্কের নামটা বদলে যায় তাহলে মৃত্যু
অবদি সেই বদলে যাওয়া ভুলের বোঝাটাকে বয়ে বেড়াতে হয়।
চাইলেও তাকে আমরা শেষও করে দিতে পারিনা অথবা আগের জায়গায়ও নিয়ে যেতে পারিনা। অথচ এই স্পর্ষকাতর বিষয়টাকে আমরা কখনোই খুব বেশি গুরুত্বের সাথে দেখিনা। যে কোন একটা সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে যতটা উদ্দিপনা থাকে ঐ সম্পর্কটার ধারাবাহিকতাকে অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে
থাকে ততটাই উদাসিনতা!হুটকরে বলেফেলি কত অপ্রাসঙ্গিক কথা,রাগের বসে করেফেলি যা ইচ্ছা তাই,উদ্ব্যত হয়ে তছনছ করে ফেলি কত যত্ন করে তিল তিল করে গড়ে তোলা কোন এক মধুর নামের সম্পর্ক!!কিন্তু কখনো কি একবারও ভাবি যে 'সম্পর্ক কি এখানেই শেষ হয়ে গেল নাকি শুধুমাত্র নামটা আর ধরনটা বদলে গেল'?!?!? তাই যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে কোন পরিস্থিতিতেই আমাদের উচিৎ সুদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই যে কোন কথা বলা বা পদক্ষেক নেওয়া। হোক সে ছেলেবেলা থেকে গড়ে ওঠা কোন মজবুত বন্ধুত্বের সম্পর্ক অথবা কোন ভালবাসার সম্পর্ক,পারিবারিক সম্পর্ক অথবা কোন অচেনা মানুষের সাথে হঠাৎ জন্ম নেওয়া কোন অচেনা সম্পর্ক যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রেই আমাদের সবসময় সচেতন থাকা উচিৎ যে আমাদের সম্পর্কগুলোর কোন ধারাবাহিকতায় আমরা প্রবাহিত হতে চাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।