আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ
ইংরেজীতে একটা কথা আছে Offense is the best defense! তথা আক্রমণই সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা। এই বিষয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে পারদর্শী হল হাসিনা। তার অন্ধ সমর্থকগণতো বটেই সাধারণ সমর্থকগণও মিন মিন করে। বর্তমান বাংলাদেশের বেহাল অবস্থার জন্য এই সাধারণ সমর্থকগণ কোন সংগত ও যৌক্তিক কারণ না থাকলেও খামাখাই ২০০১-০৬ মেয়াদে জোট সরকারের সমালোচনা করে। এদের নেত্রীর কথা বাদই দিলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে এরা বলেছিল আলীগ দিনবদলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।
আজকে হাসিনা বড় গলায় দাবী করছেন যে তার আমলে নাকি জঙ্গীবাদ দমন করা হয়েছে;
Click This Link
আর জোট আমলের বদনাম টেনে বললেন ৬৩টি জেলায় ৫০০ বোমা ফুটেছে। একেই বলে অর্ধসত্য-বিকৃত তথ্যের জোরাল গলাবাজির মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দীকে বেকায়দায় ফেলার সারিসি আক্রমণ। এর দ্বারা কি বুঝায় যে জোট সরকার জেএমবি তৈরি করে দেশে সন্ত্রাস তথা ধর্মীয় জঙ্গিবাদের রাজনীতি চালু করেছিল এবং তিনি ক্ষমতায় এসে বিগত আড়াই বছরে তীর মেরে হাতি ঘায়েল করেছেন অথচ এই জেএমবির প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। যার প্রতিষ্ঠাতা হল যুবলীগ নেতা মির্জা আযমের আপন দুলাভাই শায়খ আব্দুর রহমান। যারা ১৯৯৯ সালের মার্চে যশোরে উদিচী শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে।
এছাড়াও রমনা, সিপিবির সমাবেশ সহ আরো কয়েকটি জায়গায় সন্ত্রাসী-জঙ্গী হামলা চালালেও তাদের গ্রেফতারতো দূর তাদের জন্য ভারত হতে আসা বোমার রাসায়নিক দ্রব্য, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, অস্ত্র কিছুই লীগ সরকার বন্ধ করতে পারে নি। তারা সেই সময়কার আলীগের গোয়েন্দা সংস্থা গুলোকে ফাকি দিয়ে একের পর এক নাশকতা করে ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছিল। তারপর ২০০১এ জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে পরের বছর ২০০২ সালে কোরবানী ঈদের দিন ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলা করে জেএমবি। তারপর বজোট সরকার তৎপড় হয়ে উঠলে তাদের কার্যক্রম তেমন একটা সুবিধা করতে পারে নি ২০০৫ সালের ১৭ই আগষ্ট পর্যন্ত। ঐদিন বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে টাইম বোমা ফাটালে এবং ঝিনাইদাহ জেলায় দুই বিচারপতি জগন্নাথ পাড়ে ও সোহেল আহমেদকে হত্যা করা সহ বেশ কয়েকটি আত্নঘাতী হামলার ঘটনা ঘটায়।
তারপর জোট সরকার RAB এর মাধ্যমে জেএমবির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করলে ২০০৬ সালে শায়খ রহমান, সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাই, সানি সহ শীর্ষ ৭ জনের ৬ জনই গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে নিম্ন আদালতে ২০০৬ সালে জোট সরকারের মেয়াদেচ ফাসীর রায় হলে ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন সরকারের সময় তা কার্যকর হয়। এই ফখরুদ্দিনের সময়ও জেএমবি সহ অন্যান্য জঙ্গীদের বিরুদ্ধে জোট আমলের মতই কঠিন অভিযান চলে যার ফলে জেএমবি ২০০৮ সালের মধ্যেই ৯৯% নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু হাসিনা ও আওয়ামী-বাকশালী গংদের কথা হল ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্যই বিএনপি-জামাত জোট জঙ্গী হামলা করে দেশবাসীকে ভয় দেখাচ্ছে। অথচ জোটের ২০০টির বেশী আসন তথা ২/৩অংশ সমর্থন ছিল সংসদে তারা কোন দুঃখে এই হামলা চালিয়ে দেশবাসীর সমর্থন হারাবে? তারাতো ইচ্ছা করলেই বাকশাল ষ্টাইলে ইসলামিক রিপাব্লিক করে অথবা গণভোট করেওতো তা করতে পারত।
বরং তাদের সৃষ্ট ষড়যন্ত্র তথা মির্জা আযম সহ জেএমবির পিছনে আলীগ ও ভারত জড়িত তা আড়াল করার জন্যই দেশকে ইসলামী জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। কারণ আজকের যে নদী, সড়ক-রেল এবং সুমুদ্র করিডোর চুক্তি দেশবাসী ও সংসদকে না জানিয়েই আলীগ করছে তা ঐ জোটের মেয়াদেও ভারত বাংলাদেশের পানি, সীমান্ত, বাণিজ্য ঘাটতি, নেপাল-ভুটান-চীনকে ট্রানজিট বিষয় গুলো মিমাংসার কথাতো বটেই নাম মাত্র মূল্যে করিডোর ফি দিয়ে চুক্তি করতে চাইছিল। কিন্তু জোট দৃঢ় ভাবে ভারতের এই আবদার প্রত্যাখান করলে ভারত তার দালাল আম্লীগের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে এই জেএমবি উখ্যান সৃষ্টি করে। আর জোট সরকার এদেরকে দমন করলে এখন কৃতিত্ব দাবী করছে হাসিনা।
২০০১ সালের নির্বাচনে বাজে ভাবে হেরে গিয়ে হাসিনা কাহিনী করলেন যে গ্যাস রপ্তানীতে রাজী হন নি বলেই তাকে ষড়যন্ত্র করে স্থূল কারচুপির মাধ্যমে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অথচ ২০০১-০৬ সময়ে খালেদা জিয়া কোন বিদেশী কোম্পানীর সাথে রপ্তানীর সুযোগ রেখে তেল-গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনের চুক্তি করেন নি। উপরন্ত সেই ১৯৫০ সাল হতে ১৯৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মোট ১২ টি গ্যাস ফিল্ড বেশীর ভাগই দেশীয় তিতাসকে দেওয়া হয়। খালেদার প্রথম আমলে ১৯৯১-৯৬ হেলিবার্টন, অক্সিডেন্টালকে মাত্র ২-৩টি ক্ষেত্রে প্রথমবারের মত বিদেশী কোম্পানীর কাছে গ্যাস উত্তোলন করতে দেওয়া হয়। আর পক্ষান্তরে হাসিনার প্রথম আমলে ১৯৯৬-২০০১এ তড়িঘরি করে ১১টি ফিল্ডের সব গুলিই বেশী মূল্যে বিদেশী কোম্পানী ইউনিকল, নাইকো, শেভরণ, তাল্লো, কেয়ার্নকে দিয়ে দেওয়া হয়। ঐ সময়েই বিদেশী বেনিয়াদের শকুনী দৃষ্টি কারে অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার তথ্য যে বাংলাদেশ গ্যাসের উপর ভাসছে।
খালেদার প্রথম আমলে তিতাসের অনেক যত্ন নিলেও হাসিনার আমলে তিতাসকে চরম অবহেলা করা হয়। অথচ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশতো বটেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত নিজস্ব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজেরাই তেল-গ্যাস ও কয়লা উত্তোলন করে। তার উপর টাটা ও রিলায়েন্স বেসরকারী কোম্পানীতো আছেই। মাত্র ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের অভাবে কানকো-ফিলিপসকে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশী মূল্যের গ্যাসের ৮০% মালিকানা দিয়ে দেওয়া হল। এভাবেই ১৯৯৮ সালে ফুলবাড়ী কয়লা ক্ষেত্রে প্রায় ৩ বিলিয়ন কয়লার মজুদ আবিস্কৃত হলে এই বর্তমান হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক এলাহীর প্রভাবেই অষ্ট্রেলিয়ার বিএইচপি হতে বৃটেনের এশিয়া এনার্জির কাছে রাষ্ট্রের মাত্র ৬% মালিকানা রেখে ফুলবাড়ী কয়লা উত্তোলনের চুক্তি করা হয়;
Click This Link
১৯৯১-৯৬ মেয়াদে খালেদার বিএনপির সময় বিএইচপিকে স্রেফ সার্ভের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
কোন রকম মালিকানাতো দূর উত্তোলনের বিষয়েও কোন চুক্তি হয় নি। কিন্তু নাটের গুরু তৌফিক এলাহী বাংলাদেশের স্বার্থের জাঞ্জালি দিয়ে এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী খনির কয়লার ৯৪% মালিক করা হয়। কি এশিয়া এনার্জি, কি হ্যালিবার্টন-শেভরণ, নাইকো এরা সবাই বহুজাতিক ও বিশ্বে দোর্দান্ড প্রতাপশালী কোম্পানী। তাদের সাথে একবার চুক্তি করে বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর কোন তৃতীয় বিশ্বেরই সাধ্য নেই তা বাতিল করার। এর জন্যই বলে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ডঃ কামাল হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন যে হাসিনার সরকার দেশবাসী ও সংসদকে গ্যাস-কয়লা উত্তোলন শর্তের বিষয়াদি না জানিয়েই বিদেশী কোম্পানীর সাথে চুক্তি করছেন। হাইকোর্ট অবশ্য রুলিংও দেয়। কিন্তু যে কারণেই হৌক রিটটি এখন হিমাগাড়ে। আর এর পরে জোট সরকার আসলে এশিয়া এনার্জি বার বার তাগাদা দেয় যে ফুলবাড়ীর কয়লা উত্তোলনের জন্য। কিন্তু অসম শর্ত বিধায় জোট সরকার অনেক বাহানা করেও শেষমেশ আমেরিকার চাপের জন্য ২০০৬ সালে তাদেরকে ফুলবাড়ী হতে কয়লা উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গাতে মাইনিং অবকাঠামো বসানোর অনুমতি দেয়।
আপনারা যদি উপরোক্ত এশিয়া এনার্জির লিংক দেখেন তাতে দেখা যায়;
WikiLeaks cable
On Dec. 21, 2010, a WikiLeaks cable revealed US diplomats had secretly pushed the Bangladeshi government to re-open plans for the mine. The cable includes comments by US Ambassador to Bangladesh James Moriarty stating that “Asia Energy, the company behind the Phulbari project, has sixty percent US investment.” In the cable, sent in July of 2009, Moriarty also states that he urged the prime minister’s energy advisor to authorize coal mining, saying the “open-pit mining seemed the best way forward.”[6]
Nearly 40% of all GCM shares are owned by the four companies that make up the Luxor Capital Group, all of which are owned by Christian Leone, a US citizen who also operates a New-York-based hedge fund in his own name.[6]
যেখানে মূলে মার্কিনিরা ৬০% এশিয়া এনার্জির পিছনে বিনিয়োগ করে রেখেছে তাতে খালেদা জিয়ার পক্ষে সম্ভব ছিলনা হাসিনার আমলের চুক্তির দায়ভার এড়ানো। একে ইংরেজীতে বলে Legacy তথা হাকিম নড়লেও হুকুম নড়ে না। ফলে শেষমেশ তেল-গ্যাস-কয়লা ও বন্দর রক্ষা কমিটি ফুলবাড়ীর জনগণকে নিয়ে রুখে দাড়ালে ২০০৬ সালে পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে ৬ জন মানুষ নিহত হয়। তাতে জোট সরকারতো বটেই মার্কিনিরাও পিছু হটে। কারণ এর কয়েক বছর পূর্বে বলিভিয়ার গ্যাস মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করার উদ্যোগ নিলে সে দেশের জনগণ গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে মার্কিন চামচা সরকারকে উৎখাত করে।
মাঝখান দিয়ে বদনাম হল জোট সরকারের। তখন আওয়ামী-বাকশালী ও তথাকথিত সুশীল মিডিয়া জোট সরকারকে দুষলেন। কিন্তু ভুলে একবারও তখন বলেনি যে এটা আসলে হাসিনা-এলাহী গং এর জন্য দায়ী। এরা নাকি আবার স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি। আজকে তারা উচ্চ আদালতকে কব্জা করে রেখেছে।
এখন এশিয়া এনার্জি, ভারতকে করিডোর কি গোপন শর্তে দেওয়া হয়েছে তাকে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হলে এটর্নী জেনারেলের ইশারাতেই রায় হয়ে যাবে যে হাসিনার মহাজোট সরকার যে চুক্তি করেছে তা বৈধ। আর দেশের যারা আলীগের সমর্থক তাদের এ বিষয়ে তেমন গরজ আছে কিনা সন্দেহ। যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে করা করিডোর ও খনি সমূহ উত্তোলন চুক্তিকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে হাসিনার রাজনৈতিক সন্ত্রাসের তথা বিরোধী দলকে দমনের তেমন একটা পেশী শক্তির দরকার নেই বরং বাক শক্তির আক্রমণেই জ্বলজ্যান্ত মিথ্যা, শঠতা ও প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশের বারোটা বাজানো হচ্ছে। আর হাসিনা গত পরশু দিন ২৭শে জুন প্রথম আলোতে লিখছেন আমি সারাজীবন দেশের এত ভালো করলাম তারা আর কি ভাল চায়! ১০ টাকা কেজির চাউল আজকে ৪০ টাকা তারপরেও নাকি আমরা অনেক ভাল আছি।
এর জন্য বিএনপি জামাতও কম দায়ী নয় ক্ষমতা থাকতে তো হাসিনা ও আলীগের দেশের ক্ষতি কারক কর্মকান্ড নিয়ে গণ-সংযোগতো করেই না বিরোধী দলে গেলেও খুব একটা পদক্ষেপ নেই। আজকে যে জনসংযোগ মাত্র শুরু করছে তা যদি ২০০৯ সালে যখন প্রথম সাগরের গ্যাস ব্লক নিয়ে কথা উঠে এবং ২০১০ সালের হাসিনার ভারত সফরে পর হতে নিয়মিত জনসংযোগ করা হত তাহলে আজকে হাসনিার মহাজোট এতদূর আসতে পারত না। কারণ একবার এই চুক্তি কার্যকর হয়ে গেলে বিএনপি-জামাত সহ চারদল দুই-তৃতীয়াংশ সংসদীয় আসন জিতলেও খনি ও করিডোর চুক্তি বাতিলতো দূর সংশোধনও করতে পারবে না। আর আমরা ম্যাঙ্গো পাব্লিকদেরও বসে বসে তামাশা দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।