তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত অভাব অনটনের মধ্য দিয়েই কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবন পার করে দিলেন। মাঝখানে কিছু সময় সুখ এসেছিল সত্য, তবে তা স্থায়ী হয়নি। জীবনের অর্ধেক তো নির্বাক হয়েই কাটিয়ে দিলেন।
মাত্র দু দশক তিনি সাহিত্য সাম্রাজ্যে বিচরণ করেছেন। আর এ অল্প সময়েই তিনি যে আগুন জ্বালিয়ে গেলেন, তা জ্বলছে আজো।
কলকাতার পথে ঘাটে নজরুল তখন অসংখ্য মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বাংলা এবং বাংলাদেশের তরুণরা চেয়ে থাকতো তার পথপানে, কবে আসবেন তিনি। তার নতুন কবিতা বের হতেই পাঠক হুমড়ি খেয়ে পড়তো।
এমন বিস্ময়কর মানুষটিও জীবনধারাও ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। অভাবে থেকেও তিনি রুচি ও সৌন্দর্যবোধ ছাড়তে পারেননি।
হাতে পয়সা নেই তো খাবেন না, খেলে ভালো জিনিসই খাবেন। প্রচুর পান খেতেন তিনি। বাজারের সেরা জর্দা মিশিয়ে। সোনালী রুপালী তবক দেয়া ঐ জর্দামাখানো পান মুখে দিয়ে গান কবিতা লিখতেন। পান-জর্দার সুঘ্রাণে মোহিত হতেন আশপাশের ভক্তরা।
তার অনেক বন্ধুও নজরুলের পান খাওয়ার আয়োজন থেকে শখ করে পান খেতেন তার বাটি থেকে।
কোথাও যাওয়ার সময় পকেটে পয়সা থাকলে ট্যাক্সীতে চড়তেন। না থাকলে ট্রামে। কিন্তু টানা রিকশায় তিনি চড়েন নি কখনো। ট্রামে বসতে লজ্জা হতো তার।
ট্যাক্সী ভাড়ার পয়সা না থাকলে তিনি ট্রামে উঠে এক কোণায় চুপচাপ বসে থাকতেন। তাতে কাজ হতো না। লোকজন চিনে ফেলতো। একে অন্যকে ডেকে আঙুল উঁচিয়ে দেখাতো, ঐ দেখ দেখ, কবি নজরুল যায়। ’
কখনো মানুষের এসব কৌতুহলে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন।
এ কারণে বেশ কয়েকবার তিনি নির্ধারিত গন্তব্য আসার আগেই নেমে গেছেন ট্রাম থেকে। এমনও হয়েছে, তিনি কলেজ স্ট্রীট থেকে ডি.এম লাইব্রেরী পর্যন্ত সামান্য পথ যেতে তিনবার ট্রাম পরিবর্তন করেছেন। একটি থেকে নেমে আরেকটিতে উঠেছেন। তারপর আবার নেমে আরেকটিতে।
মুক্ত জীবনে তো বটেই, বন্দী জীবনেও তিনি সবার চেয়ে আলাদা হয়ে থাকতেন।
জেলবন্দীদেরকে যে কাপড় দেয়া হয়, তা সবার জন্য এক। নতুন বন্দীদের জন্য যে কাপড় দেয়া হতো তাতে সাদা কাপড়ে চিকন চিকন নীল সুতোর রেখা টানা ছিল। সবার থেকে একটু আলাদা থাকার জন্য তিনি বসে বসে তার কাপড় থেকে টেনে টেনে সব নীল সুতো বের করে ফেলেছিলেন। এতে তার কাপড় ধবধবে সাদা হয়ে গিয়েছিল। কাজটি আইনবিরোধী হলেও জেলার তাকে কিছু বলেননি।
বাজার থেকে দশ টাকা দিয়ে তিনি এক সেট চায়ের কাপ পিরিচ কিনেছিলেন। এর ভেতর একটি কাপ এবং পিরিচ ছিল খুব সুন্দর ডিজাইন করা। পাইল ভরে ছোট একটি নৌকা এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে, একটি গাছের ডাল এসে পড়েছে নদীর উপর, সেই ডালে বসে আছে একজোড়া ছোট পাখি। ঠোঁটের উপর ঠোঁট দিয়ে তারা বসে আছে ডালটিতে। ’
সবমিলিয়ে অপূর্ব এ প্রাকৃতিক দৃশ্যটি কবির খুব পছন্দ ছিল।
এ কাপ-পিরিচে অন্য কাউকে চা খেতে দিতেন না। শুধুই তার জন্য বরাদ্দ ছিল। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় তিনি এ কাপটিকে আলাদা করে রাখতেন। একবার তার বন্ধু মঈনুদ্দিন ঐ কাপটির দিকে হাত বাড়ালেন। কবি নজরুল স্নেহমাখা সুরে চেঁচিয়ে উঠলেন, এ্যাই থাম, ওদিকে লোভ দিসনে।
’
অভাব আর টানাটানিতে খুব বেশি দামী কাপড় তিনি পরার সুযোগ পেতেন না। কিন্তু সাধারণ যে খদ্দরের পাঞ্জাবী কিংবা নিমাই অথবা চাদর তিনি গায়ে দিতেন, তা যেমন থাকতো ধবধবে সাদা পরিস্কার, তিনি সেগুলোকে গায়ে দিতেন চমৎকারভাবে। খুব সহজেই অনেক মানুষের ভীড়ে চেনা যেত তাকে। একটু ভিন্নভাবে। মানুষ তাকিয়ে থাকতো- ঐ যে কবি সাহেব !!
প্রিয় কবির ব্যক্তিজীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে ধারাবাহিকের আগের পর্বগুলো
ভদ্রতা দেখাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন কবি নজরুল
কেন এবং কীভাবে এ ধারাবাহিক..
চলুন, কাজী নজরুলকে দেখে আসি কলকাতা থেকে..
নজরুলের রক্ত নেয়া হলো না... কিন্তু কেন??
পাগলের গলায় গান ধরালেন কবি নজরুল
কবি কাঁদলেন এবং বদলে গেলেন যে ঘটনায়
কবি নজরুলের অদ্ভূত কান্ড কারখানা
যেভাবে তৈরী হতো তার গান-গজল....
কাজী নজরুলের খেয়ালখুশী
কবির ঢাকা ভ্রমণের বিচিত্র কান্ড কারখানা
নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন কবি কিন্তু ফলাফল!!!
এ পোস্টগুলো কপি পেস্ট নয়, নানা সূত্র এবং গ্রন্থ থেকে আমার সংকলন- তারপর আপনাদের সামনে উপস্থাপন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।