একটি পৃথিবী ৭০০ কোটি মানুষ, তবুও আমি একা সংবিধান সংশোধনে বিশেষ কমিটির সুপারিশ প্রতিবেদনটি সংসদে তোলার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বিশেষ কমিটির প্রস্তাবে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তাতে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই অনুমোদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির বিষয়সহ ৫১টি সুপারিশ সম্বলিত ওই সুপারিশ প্রতিবেদন গত ৮ জুন সংসদে উপস্থাপন করে সংবিধান সংশোধনে গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটি।
বিশেষ কমিটির ৫১টি সুপারিশের মধ্যে তিনটি বিষয় (বিছমিল্লাহ রাখা.., রাষ্ট্রধর্ম ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি- ১, ৩ ও ১৭ নম্বর সুপারিশ) নিয়ে দুই সদস্যের আপত্তিসহ এ প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়।
স্পিকার তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংবিধান সংশোধনের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে স¤প্রতি রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সংবিধান সংশোধন বিষয়ক সংসদীয় বিশেষ কমিটিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করেছে।
ব্যবস্থা বাতিলের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে খালেদাসহ দলটির শীর্ষনেতারা ইতিমধ্যে হুমকি দিয়েছেন।
ব্যবস্থাটি পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে চলতি মাসে দুই দফায় ৪৮ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।
সরকার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রস্তাব নিয়ে বিএনপিকে আলোচনায় আসতে বলেছে। তবে বিএনপি বলেছে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থা রাখার ঘোষণা না এলে তারা আলোচনায় যাবে না।
আদালতের রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভ্রান্ত বলে গত ১৬ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
পরদিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংসদ বা বাইরে যে কোনো স্থানে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় আওয়ামী লীগ প্রস্তুত।
৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণা
৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণের গুরুত্ব অনুধাবন করে ভাষণটি এবং এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়ার নির্দেশনা তথা ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া টেলিগ্রাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে সুপারিশ করেছে সংবিধান সংশোধন কমিটি।
মুজিবনগর সরকারের ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিটি।
কমিটিতে যারা ছিলেন
গত বছরের ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতার প্রস্তাবে সংবিধান সংশোধনে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২৬৬ বিধি মোতাবেক ১৫ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়।
এ পর্যন্ত ওই কমিটি ২৭টি বৈঠক করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। এর আগে পাঁচজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, মূল সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণপরিষদ সদস্যসহ ১৮ জন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ২৬ জন বুদ্ধিজীবী, গণমাধ্যমের সম্পাদক, সংসদে প্রতিনধিত্বকারী রাজনৈতিক দল ও সেক্টর কমাণ্ডারদের মতামত নেয় কমিটি।
বিশেষ কমিটির কো চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মো. রহমত আলী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, রাশেদ খান মেনন, আব্দুল মতিন খসরু, হাসানুল হক ইন, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, হাছান মাহমুদ ও শিরিন শারমিন চৌধুরী।
কমিটি বিলোপ ও পরবর্তী কার্যক্রম স্পিকারের সিদ্ধান্তে
বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সর্বশেষ বৈঠকে সাংবাদিকদের জানান, এ প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপনের পর পরই কমিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে। কমিটির সুপারিশের এ প্রতিবেদন কীভাবে পরবর্তী আসবে, কবে বিল আকারে উঠবে এ বিষয়ে স্পিকারই সিদ্ধান্ত নেবেন।
স্পিকার আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে জানান, পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে পাস হবে।
মন্ত্রিসভায় আরো যেসব আইন অনুমোদিত
মন্ত্রিসভার সোমবার বৈঠকে 'মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১১' এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন এবং ইউএন কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম (পালের্মো কনভেনশন) অ্যাক্সেশন'-এর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
'ট্রেড প্রিফারেন্সিয়াল সিস্টেম অ্যামোং দি মেম্বার স্টেটস অব দি অর্গানাইজেশন অব দি ইসলামিক কনফারেন্স'র (টিপিএস-ওআইসি) 'রুলস অব অরিজিন' অনুস্বাক্ষরের প্রস্তাবও অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
তবে দুর্নীতিসহ জাতীয় আচার সংশোধনের 'জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (ন্যাশনাল ইনটিগ্রিটি স্ট্রাটেজি- এনআইএস)'-এর খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
মানি লন্ডারিং আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, অর্থ পাচার রোধে ২০০২ সালে সর্বপ্রথম একটি আইন প্রণয়ন করা হয়।
যা ২০০৯ সালে সংশোধন করা হয়। কিন্তু এ সংশোধনী বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরো সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়।
"এ জন্য আইনটি নতুন করে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনটি অনুমোদন ও পাস হলে অর্থ পাঁচার রোখে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।