বিএনপিকে মাইনাসের পরিকল্পনা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নতুন ভাবনা! বাহ কি চমতকার পরিকল্পনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্খা বিলুপ্ত করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সরকারি প্রয়াসের সবচেয়ে বড় মিত্র এখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। ওই দলটিকে সামনে এনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক ভাবনাকে নতুন রূপ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। চলছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়েই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ।
এ দিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ ব্যাপারে তাদের অবস্খান স্পষ্ট করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোনো ‘মডেলের’ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে দলটি। বিএনপি স্খায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ১৯৯৬ সালে এই আওয়ামী লীগই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করেছিল। আর এখন দেশে এমন কী ঘটেছে যে, আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করবে বিএনপি! বিরোধী দলের এমন অবস্খানের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার রাতে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সাথে জরুরি বৈঠক করেন। ঘন্টাব্যাপী ওই বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্খা, মহাজোটে এরশাদের অবস্খান ও ভূমিকার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাতীয় পার্টি ও সরকারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাথে গাঁটছড়া বাধার পরও পাওয়া-নাপাওয়ার বেদনা থেকে জাতীয় পার্টিতে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছিল, বৈঠকে তা নিরসন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এরশাদের সাথে আলোচনায় শিগগিরই সরকারে জাপার অংশীদারিত্ব বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, মন্ত্রিসভার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক পদে জাপার মনোনীত লোকজন নিয়োগের মাধ্যমে এই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। সূত্র জানায়, এরশাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি মিলেছে। বৈঠকে সরকারের মনোভাব ধারণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বাতিল করার পক্ষে মত দেন এরশাদ।
১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী অংশ নিয়েছিল। ওই সংসদ থেকে জামায়াতে ইসলামীর ১০ জন সদস্য পদত্যাগ করলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। ১৯৮৮ সালে আরেক দফা সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদকে ‘প্রধান বিরোধী দল’ করা হয়। আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল তখন তাদের (জাসদ) ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ বলে ব্যঙ্গ করত।
বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ওরকম বিরোধী দলের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আগাম নির্বাচনী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ পরিস্খিতিতে এরশাদের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্খা তুলে দেয়ার উদ্যোগ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এরশাদের পক্ষ থেকে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘বিচারপতি সাহাবুদ্দীন থেকে শুরু করে লতিফুর রহমান পর্যন্ত কেউই আমার সাথে সুবিচার করেননি। আমি ওই পদ্ধতির তত্ত্বাবধায়ক সমর্থন করি না। ’ শেখ হাসিনার সাথে এরশাদের গত মঙ্গলবারের বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তবে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিংবা কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সরকার ভিন্ন পথে পা বাড়ালে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র শঙ্কা রয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।