দলীয় সরকারের অধীনে ‘প্রভাবমুক্তভাবে’ নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে সন্দিহান বিরোধী দলকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। আগের মতো কারচুপির সুযোগ নেই।
নবম সংসদের শেষ অধিবেশনে বুধবার সমাপনী বক্তব্যে বিরোধী দলের উদ্দেশে সংসদ নেতা হাসিনা বলেন, “নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। জনগণ যাকে ভোট দেবে সে জয়ী হবে।
“আমি যতক্ষণ আছি, ততক্ষণ কোনো কারচুপি হবে না।
জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসার নিয়ত আমাদের নেই। ”
“নির্বাচনে আসুন; অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। উনার (খালেদা) যদি আত্মবিশ্বাস থাকে জয়ী হবেন, তা হলে নির্বাচনে আসবেন,” বিএনপি চেয়ারপারসনকে ইঙ্গিত করে বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবি জানালেও তা উপেক্ষা করে নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠন করে তাতে যোগ দিতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শেখ হাসিনা বলেন, “এ সংসদে আমাদের সদস্য সংখ্যাই বেশি।
তারপরও বলেছিলাম বিরোধীদলীয় নেতাকে- নাম দেন, কত চান, কোন মন্ত্রণালয় চান। আসুন-একসঙ্গে সকলে মিলে নির্বাচন করি। আমার ডাকে সাড়া দেননি তিনি। ”
যে সব দল নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ। ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল-একসঙ্গে আছি।
”
“তারা (বিরোধী দল) এলে তাদের মনে যে সন্দেহ, তা থাকত না,” প্রধান বিরোধী দলকে না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসার পরও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বক্তব্যের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
“বিজয়ী মেয়রকে নিয়ে বলছেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি’;কত হাস্যকর কথা। তা হলে তিনি কী চান? দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে না? ২০০৭-০৮ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনরাবৃত্তি চান তিনি। তা হলে তো আর নির্বাচন হবে না।
”
‘নির্বাচন কমিশন আমরা করিনি,” উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান বিএনপিসহ সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে বর্তমান ইসি গঠন করেছে।
“নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে, আগামী নির্বাচনেও তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবে। নির্বাচন চলাকালে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ইসির নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কাউকে বদলি করলে তারা করবে, তাদের হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত থাকবে,” বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেন তিনি।
সঙ্কট এড়াতে বিরোধীদলীয় নেতাকে টেলিফোন করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যে বাচনিক আমি শুনলাম।
অন্য কেউ হলে ফোন ভেঙে ফেলত। আমি ধৈর্য ধরেছি। আল্লাহ যেন আমাকে আরো ধৈর্য দেন।
“তারপরও বলেছি-দাওয়াত অব্যাহত থাকল। যেদিন চান, আপনি আসতে পারেন।
”
বিরোধী দলের হরতালের সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘একবার শুরু করতে চাই’
সামরিক আইন জারি, অবৈধ পন্থায় ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর রায় ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর ৩৮ বছর জনগণ সাংবিধানিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত হয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করে ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে।
“এটা ছাড়া কখনো সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি।
আমরা চাই-এমন একটা পরিবর্তন হোক, যাতে ভোটের জন্য মানুষ হত্যা না করা হয়। ভোটের অধিকার যেন নিশ্চিত থাকে। ”
আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থা রেখে যাওয়ার প্রতিজ্ঞার কথা জানান শেখ হাসিনা।
“ আগামীতে যাতে কোনোভাবে ফাঁক-ফোকরে কোনো অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা দখল করতে না পারে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে; সংবিধান মোতাবেক গণতান্ত্রিক অধিকার অব্যাহত থাকে-সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ”
অব্যাহত রেখে আমরা শুরু করতে চাই,” বলেন তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।