অনন্তের ঘরে সুখ ছিল না। কিন্তু মিথিলার জন্য অনন্তের প্রচন্ড ভালবাসা ছিল। শহুরে চাকচিক্যময় পরিবেশে বেড়ে ওঠা মিথিলা। সেজন্য অনন্তের কুটির তার ভাল লাগেনি।
বড়লোক বাপের মেয়ে তাই অনন্তের ঘর ছেড়ে একদিন চলে যায়।
সেদিন অনন্ত তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনি।
কিন্তু মিথিলা যেখানে দ্বিতীয় সংসার বাধল। সেখানে সে ভালবাসা পেল না। তাই সে অনন্তকে খুব মিস করতো। মাঝে মাঝে অনন্তকে দেখতে আসতো।
কী এক ছন্নছাড়া জীবন অনন্তের! তা দেখে মিথিলার খুব মায়া হতো। খুব কষ্ট হতো। তাছাড়া মিথিলা চলে যাবার পর অনন্ত আর কখনও বিয়েও করেনি।
একদিন দ্বিতীয় স্বামীর সংসার ছেড়ে অনন্তের কাছে ফিরে আসবে বলে মিথিলা স্থির করলো। এজন্য অনন্তকে উদ্দেশ্য করে একটা চিঠিও লিখলো।
আজ শনিবার মিথিলা আসছিলো। অনন্তের কাছে। আসার পথে মিথিলা ট্রেনে চাপা পড়ে মারা যায়।
শোকে মুহ্যমান অনন্ত খবর পেয়ে মিথিলার সৎকারে অংশ নেয় আজ দুপুর ১২টায়।
মিথিলা বকুল ফুল খুব পছন্দ করতো।
তাই অনন্ত মিথিলার কবরের উপর বকুল ফুলে ফুলময় করলো। এছাড়া একটু বকুল ফুল্ও লাগালো।
অতঃপর নিজের বাড়িতে ফিরে আসলো। বাড়িতে ঢুকতেই আজ দুপুর ১টায় মিথিলার লেখা একটা চিঠি পেল।
চিঠিটা ছিল কাব্যিক ভাষায়।
“অনন্ত, মেহিদি পাতা দেখেছ নিশ্চয়?
উপরে সবুজ, ভেতরে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত
নিজেকে আজকাল বড় বেশি মেহেদি পাতার মতো,
মনে হয় কেন?
উপরে আমি অথচ ভিতরে কষ্টের যন্ত্রনার
এমন সব বড় বড় গর্ত যে
তার সামনে দাড়াতে নিজেরী ভয় হয়, অনন্ত।
তুমি কেমন আছো?
বিরক্ত হচ্ছ না তো?
ভালোবাসা যে মানুষকে অসহায়ও করে তুলতে পারে-
সেদিন তোমায় দেখার আগ পর্যন্ত
আমার জানা ছিলো না।
তোমার উদ্দাম ভালোবাসার দূতি
জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলেছে আমার ভিতর-
আমার বাহির-
আমার হাতে গড়া আমার পৃথিবী।
অনন্ত, যেই মিথিলা শুখী হবে বলে
ভালোবাসার পূর্ণ চঁন্দ গিলে খেয়ে
ভেজা মেঘের মতো উড়তে উড়তে চলে গেল,
আজ অন্য শূন্য, অনন্তকে আরো শূন্য করে দিয়ে
তার মুখে এসব কথা মানায় না,
আমি জানি
কিন্তু আমি আর এভাবে এমন করে পারছি না
আমার চারদিকের দেয়াল জুড়ে থই থই করে-
আমার স্বপ্ন খুনের রক্ত।
উদাস দুপুরে বাতাসে শিষ দেয়
তোমার সেই ভালোবাসা
পায়ে পায়ে ঘুরে ফেরে ছায়ার মতোন
তোমার স্বৃতি।
আমি আগলাতেও পারি না,
আমি ফেলতেও পারি না।
শুখী হতে চেয়ে এখন দাড়িয়ে আমি
একলা আমি
কষ্টের তুষার পাহারে।
অনন্ত তোমার সামনে দাড়ানোর কোন
যোগ্যতাই আজ আমার অবশিষ্ট নেই।
তবুও,
তবুও তুমি একদিন বলেছিলে
ভেজা মেঘের মতো
অবুজ আকাশে উড়তে উড়তে
জীবনের সুতোয় যদি টান পরে কখনো?
চলে এসো, চলে এসো
বুক পেতে দেব-আকাশ বানাবো
আর হাসনা হেনা ফুটাবো।
সুতোয় আমার টান পরেছে অনন্ত,
তাই আজ আমার সবকিছু,
আমার এক রোখা জেদ,
তুমি হীনা শুখী অনেক স্বাপ্ন!
সব, সবকিছু জলাঞ্জলী দিয়ে-
তোমার সামনে আমি নত জানু
আমায় তোমাকে আর একবার ভিক্ষে দাও।
কথা দিচ্ছি- তোমার অমর্যাদা হবে না কোনদিন।
অনন্ত, আমি জানি
এখন তুমি একলা পাষান কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াও,
প্রচন্ড এক অভিমানে
ক্ষনে ক্ষনে গর্জে উঠে অগ্নিগিরি।
কেউ জানে না, আমি জানি
কেন তোমার মনের মাঝে মন থাকে না,
ঘরের মাঝে ঘর থাকে না,
উঠোন জোরার উপর কলস
তুলসি তলের ঝড়া পাতা,
কুয়ো তলার শূন্য বালতি
বাসন-কোসন, পূর্নিমা-অমাবর্ষা,
একলা ঘরে এই অনন্ত
একা শুয়ে থাকা।
কেউ জানে না, আমি জানি
কেন তুমি এমন করে কষ্ট পেলে
সব হরিয়ে বুকের তলের চিতানলে
কেন তুমি নষ্ট হলে?
কার বিহনে চুপি চুপি, ধীরে ধীরে
কেউ জানে না, আমি জানি
আমিই জানি।
আগামি শনিবার ভোরের ট্রেনে তোমার কাছে আসছি।
অনন্ত, আমার আর কিছু না দাও- অন্তত শাস্তিটুকু দিও।
ভালো থেকো!
তোমারি হারিয়ে যাওয়া মিথিলা। ” -------এটা পড়তে পড়তে অনন্তের গলাটা ধরে এলো।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই কবিতা কার লেখা। আমি নিজেও জানিনা।
তাই তার নামটা আমি দিতে পারলাম না। তবে কবিতাটি আমার খুব প্রিয় একটা কবিতা।
এই কবিতাটিই মূলত আমাকে এরকম একটা গল্প তৈরি করতে সাহায্য করেছে। যদি পারতাম এই কবিতাটি নিয়েই একটা নাটক রচনা করতাম!!!!!!!!!!!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।