শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক সদস্য মনসুর আলমের বিরুদ্ধে। আর তিনি দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনাকে পৃথক্করণ (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) কাজে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।
অথচ ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে তাঁর সম্পৃক্ততা চিহ্নিত করেছিল। আর সরকারের নির্দেশে তাঁর বিরুদ্ধে এখন বিভিন্ন অভিযোগের অধিকতর তদন্ত করছে বিএসইসি।
জানা গেছে, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের জন্য ডিএসই নিযুক্ত মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েল গ্রিন ক্যাপিটাল মার্কেট লিমিটেড মনসুর আলমকে এ কাজে নিযুক্ত করেছে।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি আবদুল হকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েল গ্রিন ক্যাপিটাল ডিমিউচুয়ালাইজেশনের কাজের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর এ বিষয়ে মনসুর আলমকে পরামর্শক নিয়োগ দেন। নিজের প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে (আউটসোর্সিং) বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়। তাঁরই পরামর্শে ডিমিউচুয়ালাইজেশন-সংক্রান্ত নথিপত্র ডিএসইতে জমা দেয় রয়েল গ্রিন ক্যাপিটাল। মনসুর আলম ছাড়াও রয়েল গ্রিন ক্যাপিটালের সঙ্গে এ কাজে যুক্ত ছিল ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি নলেজ ম্যানেজমেন্টের একাধিক বিশেষজ্ঞ।
ডিএসইর একাধিক কর্মকর্তা মনসুর আলমের সম্পৃক্ততার বিষয়টির নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে ডিএসইর সভাপতি আহসানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিমিউচুয়ালাইজেশন কাজে ডিএসইর সঙ্গে মনসুর আলমের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ডিএসই কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছ থেকে কোনো ধরনের মতামত গ্রহণ করেনি। রয়েল গ্রিনের পক্ষ থেকে উনাকে পরামর্শক হিসেবে রাখা হলেও এ বিষয়ে আমরা তাঁর কোনো পরামর্শ গ্রহণ করিনি। ’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়েল গ্রিন ক্যাপিটালের অন্যতম স্বত্বাধিকারী ও ডিএসইর সাবেক সভাপতি আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরুতে পরামর্শক হিসেবে মনসুর আলমের নাম ছিল। আসলে মূল কাজটি আমরা করেছি ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
’
জানা গেছে, রয়েল গ্রিন ক্যাপিটালের পক্ষ থেকে মনসুর আলমকে পরামর্শক নিয়োগ করা হলে ডিএসইর ভেতরে সমালোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে এ কাজের সঙ্গে মনসুর আলমকে সরাসরি যুক্ত না রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকেও অনানুষ্ঠানিকভাবে ডিএসইকে বলা হয়, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের কাজের সঙ্গে এমন কোনো ব্যক্তিকে সম্পৃক্ত করা যাবে না, যাঁকে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। পরে এ-সংক্রান্ত নথিপত্র থেকে মনসুর আলমের নাম বাদ দেওয়া হয়।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে শেয়ারবাজারে ধস নামে।
এর আগে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারকে না জানিয়ে মনুসর আলম শেয়ার লেনদেনের বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেন। যে কারণে পরবর্তীকালে তাঁকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। এরই জের ধরে তিনি বিএসইসি থেকে পদত্যাগ করেন। পরে পুঁজিবাজারবিষয়ক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে মনসুর আলমের সম্পৃক্ততা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেয়ারবাজারে অনৈতিকতাকে বৈধতা প্রদান প্রক্রিয়ায় মূল ঘটকের ভূমিকায় ছিলেন মনসুর আলম।
এমনকি একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তার নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ আনুগত্য দেওয়ার অভিযোগও তুলে ধরা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। সে জন্য তাঁর ব্যাপারে নিবিড় তদন্তের সুপারিশ করা হয়।
ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পরে পুনর্গঠিত কমিশনকে মনসুর আলমের ব্যাপারে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিএসইসির অবসরপ্রাপ্ত, পদত্যাগকারি বা অন্য কোনোভাবে অপসারিত কর্মকর্তাদের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক, উপদেষ্টা বা অন্য কোনভাবে পূর্ণ বা খণ্ডকালীন নিয়োগ ও পুঁজিবাজার সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে পরামর্শ সেবা প্রদানে সম্পৃক্তকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।