চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ি। গত ৩১ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হলো, ধূমপানমুক্ত দিবস। এটি একটি বদভ্যাসের পর্যায়ে পড়ে। বরং বলা যায় আরও বেশি, খুব বাজে একটি নেশা। শুধু নিজের ক্ষতি তা নয়, এতে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন বদভ্যাসও।
যেমন, যেখানে সেখানে ছাই ফেলা, সিগারেট খেয়ে ছুঁড়ে ফেলা, ফলে অনেক সময়ে আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সর্বোপরি, ধূমপানের নেশা একবার যাকে ধরেছে, সে দুনিয়া ছাড়তে রাজি হলেও ধূমপান ছাড়তে রাজি নয়। কিন্তু ধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য নিয়ে তো আর হেলাফেলা করা যায় না। তাই সম্প্রতি বাজারে ছাড়া হয়েছিল ইলেকট্রনিক সিগারেট, সংক্ষেপে ই-সিগারেট। ধূমপানমুক্ত দিবসের প্রধান টক অব দ্য ডে, ই-সিগারেট ও ই সিগারেটের জনককে নিয়ে আজকের ফিচারটি লিখেছেন প্রাঞ্জল সেলিম
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সিগারেটের বিকল্প হিসেবে বাজারজাত ই-সিগারেটের গুণের শেষ ছিল না।
আসল সিগারেটের মতোই এর স্বাদ, তবে বাড়তি পাওনা ছিল—এতে আসল সিগারেটের ধোঁয়ায় যে বিকট গন্ধ রয়েছে, এটিতে তা নেই, তা ছাড়া সত্যিকারের সিগারেটের তামাকের চেয়ে এতে প্রায় চার হাজার রকমের রাসায়নিক কম পরিমাণে রয়েছে। তামাক ও কার্বন মনোক্সাইডের মতো মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদানগুলোও এতে অনুপস্থিত। এতে ছাই হয় না, নেই আগুন লাগার ভয়ও। সবচেয়ে বড় কথা, আসল সিগারেটের চেয়ে এর খরচও অনেক কম। এসব কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই ধূমপায়ীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ই-সিগারেট।
তবে এবার ই-সিগারেটপ্রেমীদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এখন বলছে, আসল গত কিছুদিনে ই-সিগারেটের স্বাস্থ্যগত ইস্যুটি নিয়ে কয়েকটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। সেসব গবেষণায় বলা হয়েছে, ই-সিগারেট যে আসল সিগারেটের চেয়ে নিরাপদ, এর সপক্ষে এখনো পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দুজন গ্রিক গবেষক সতর্ক করে বলেছেন, জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও ই-সিগারেট তেমন নিরাপদ নয়। সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে বলা হয়েছে, আরও তথ্য হাতে পাওয়ার আগে এটি আসল সিগারেটের চেয়ে ভালো না মন্দ, তা বলা কঠিন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আরও কিছু সংগঠন জানিয়েছে, ই-সিগারেটে তামাক না থাকলেও এতে ভোক্তার শরীরে বাষ্পের সঙ্গে নিকোটিন প্রবেশ করে, যা বেশ ক্ষতিকর। বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ই-সিগারেট ব্যবহার করা উচিত হবে না। ই-সিগারেটের বড় বাজার ব্রিটেনের সরকার বিতর্কের এ প্রেক্ষাপটে ই-সিগারেট ভোক্তাদের ‘সতর্কতা অবলম্বন’ করার পরামর্শ দিয়েছে। অন্যান্য দেশের সাথে ই-সিগারেট গবেষণায় তাল মিলিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। সমপ্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা জানিয়েছেন, ইলেকট্রনিক সিগারেটও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
সাধারণ সিগারেটের মতোই এর নিকোটিনও সরাসরি ফুসফুসে চলে যায়।
আসলে কী এই ই-সিগারেট
ইলেকট্রনিক সিগারেট তামাক পোড়ানো ছাড়াই নিকোটিন গ্রহণের সুযোগ দেয়। এটি তৈরি হয় একটি ব্যাটারি, একটি অ্যাটোমাইজার এবং প্রোপিলিন গ্লাইকলসহ নিকোটিনের একটি কার্টিজ ব্যবহার করে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, যখন কেউ ই-সিগারেট পান করে, তখন একটি সেন্সর ব্যাটারিকে সক্রিয় করে এবং ডিভাইসটির মাথার দিকে লাল হয় ধোঁয়া তৈরি করে এবং অ্যাটোমাইজারকে গরম করে তোলে। এই পদ্ধতিটি প্রোপিলিন গ্লাইকলকে বাষ্প করে তোলে।
এই সিগারেটে টান দিলে তখন নিকোটিনের স্বাদ পাওয়া যায় এবং তা সাধারণ সিগারেটের মতোই ফুসফুসে চলে যায়। এবারে জেনে নেওয়া যাক, এই বহুল আলোচিত ই-সিগারেটের আবিষ্কারক সম্পর্কে কিছু কথা।
আবিষ্কারক হন লিক
ইলেক্ট্রনিক সিগারেটের ধারণা প্রথম দুনিয়ার সামনে নিয়ে আসেন যে ব্যক্তিটি তিনি একজর ফার্মাসিস্ট। চিনে তার জন্ম। এবং সেখানকার এক ডিস্পেন্সারিতে কাজ করেন।
২০০৩ সালের শেষদিকে, হন লিক নামের এই চাইনিজ ফার্মাসিস্ট আবিষ্কার করেন ইলেক্ট্রনিক সিগারেট, সংক্ষেপে ই-সিগারেট। এর ঠিক পরের বছরই তিনি বিশ্ব বাজারের সাথে এই ই-সিগারেটের পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি ‘গোল্ডেন ড্রাগন হোল্ডিংস’ নামের একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলিয়ে ‘রুয়ান’ রাখা হয়েছে। এর অর্থ হলো বিকল্প সিগারেট।
তিনি তার এই প্রোডাক্ট ২০০৫ ও ২০০৬ সালের দিকে বাজারে ছাড়া শুরু করেন। পরবর্তীতে, ২০০৭ সালে তিনি এই প্রোডাক্টের পেটেন্ট লাভ করেন। আর এই ২০১১ সালে এসে এই ই-সিগারেট একটি বহুল জনপ্রিয় সিগারেট। তরুণ প্রজন্মের একটি বড় আকর্ষণ। তবে এ সিগারেট আসল সিগারেটের থেকে বেশি ক্ষতিকর না কম ক্ষতিকর সেটা নিয়ে এখনও কোনো গবেষণা করা হয়নি।
এই কারণেই বিষয়টি সবার আলোচনার মূলে উঠে এসেছে। তবে, একটা কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ই-সিগারেট কমবেশি যাই ক্ষতিকর হোক না কেন, ধূমপান একটি নেশা, আর নেশা মানেই ক্ষতিকর। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।