আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুলে যাওয়া ভুত : ইউনিট ৭৩১

ক্ষুদ্র পরিসরের এই জীবনটাকে আমি ইচ্ছেমত উপভোগ করব। নিষিদ্ধ গলিতে প্রবেশ করে আমি শুদ্ধ হয়ে বের হব। । বি দ্রঃ দুর্বলচিত্তরা দুরে থাকুন। এটি কোন রম্য ভুতের গল্প না।

"We removed some of the organs and amputated legs and arms. Two of the victims were young women, 18 or 19 years old. I hesitate to say it but we opened up their wombs to show the younger soldiers. They knew very little about women – it was sex education. (আমরা কিছু অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করেছিললাম এবং কেটে আলাদা করেছিলাম। বলি হওয়া দুইজন ছিল নারী যাদের বয়স ছিল ১৮ বা ১৯। আমি দিদ্বান্বিত ভাবে বলছি, আমরা তাদের জরায়ু খুলে ফেলেছিলাম তরুন সৈনিকদেরকে দেখানোর জন্য, তারা নারী সম্পর্কে খুব কমই জানত। এটা ছিল তারে যৌন শিক্ষা " - Unit 731[১] কি এই Unit 731? Unit 731 একটি জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির জন্য জাপানি রাজকীয় সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত গুপ্ত গবেষণা সংস্থা। আমি দ্বিতীয় শিনো জাপানি যুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার (১৯৩৭-৪৫) কথা লিখছি।

কিন্তু এই ইউনিটটির বিশেষত্ব কি? এখানে মানুষ নিয়ে গবেষনা করা হত। বায়োলজিক্যল বা রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির জন্য এই বিরাট গবেষনাগারে মানুষ ছিল পরীক্ষার উপাদান। আর কিভাবে পরীক্ষাকরা হত তা উপরের উদ্ধৃতি দেখেই বুঝতে পারছেন মনে হয়। কালো অধ্যায়ের সুচনা কিভাবে? ১২৪ তম জাপানি সম্রাট , আসলে সম্রাট না, স্বয়ং খোদা। জাপানিদের ধারনা ছিল তাদের সম্রাটেরা ছিল স্বর্গজাত।

এইকারনে জাপানি সম্রাটের শুধু জাপান না সারা পৃথিবী শাসন করার অধিকার ছিল। আমি যাকে নিয়ে কথা শুরু করেছি তিনি Hirohoto. সম্রাটের পাশাপাশি তিনি ছিলেন জীববিজ্ঞানী। সারা পৃথিবী শাসনের জন্য প্রয়োজন ক্ষমতা, জীববিজ্ঞানী সম্রাট জীবনের না মৃত্যুরও চর্চা করতে থাকলেন, সাথে থাকল জীববিজ্ঞান। খুনীর সজ্ঞী সর্বদাই ছিল বিজ্ঞান। এখনই বা থাকবেনা কেন? তিনি জৈব গন বিদ্ধংসী অস্ত্রকে তার শাসনের হাতিয়াার মনে করলেন।

প্রতিষ্ঠা পেল Unit 731. সম্রাট হিরুহুতো তার আশ্রিত রাজ্য Manchuko এর সবচেয়ে বড় শহর Harbin জেলাতে Epidemic Prevention and Water Purification Department নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যা ছিল Kwantung Army এর নিয়ন্ত্রনাধীন। Manchuko বর্তমান China এর দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থিত। এটি ছিল পুরোপুরি কমান্ডার Shiro Ishii এর সরাসরি তত্বাবধায়নে। কি করা হত এখানে? প্রশ্নটাতে কিছুটা সংশোধন করলে ভাল হত। হওয়া উচিৎ ছিল কি করা হত না এখানে? "they were logs to me. logs were not to be considered to be human. they were already dead. so now they die a second time. we just executedd a death sentence."-Toshimmi Mizobuchi Training Officer Unit 731 পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে জাপানী সেনাবাহিনী দ্বারা।

এটি এশীয় অসউইজ(Auschwitz ) নামে পরিচিতি লাভ করে। এখানে মানুষকে সরাসরি বিভিন্ন জীবানুর দ্বারা আক্রান্ত করা হত, জীবিত থাকতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ কেটে আলাদা করে ফেলা হত, বিষ্ফোরক দ্বারা আঘাত করা হত। এসব কিছুর পরে আক্রান্ত কাউকে কোন প্রকার ব্যথা কমার ওষুধ দেয়া হত না এতে যেই জীবানু কারো শরীরে দেয়া হয়েছে তার ফলাফল পরিবর্তিত হতে পারে এরকম ধারনা থেকে। কোন জীবানু মানব শরীর ডিসেক্ট করা শুরু হত। এমনকি এভাবেই ফেলে রাখা হত, আর দেখা হত মানুষটি কতদিন বেচে থাকতে পারে।

দেখা গেছে বিভিন্ন অঙ্গহীন অবস্থায়ও মানুষটিকে কয়েকসপ্তাহ রেখে দেয়া হয়েছে। Unit 731 এর এক গবেষকের উদ্ধৃতি পড়ুন-" আমাকে ঐ ব্যক্তির শরীর স্পেশাল টিমের লোকজন তাকে উলঙ্গ করে ডিসেকশন কক্ষে নিয়ে যাবার আগে ব্রাশ দিয়ে ধুয়ে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, প্রথমবার আমি কেঁপে উঠেছিলাম। একজন সদস্য স্থেটোস্কপ দিয়ে হৃদস্পন্দন দেখছিল, এবং অপরজন ছুড়ি হাতে দাড়িয়ে ছিল। যখনই কান থেকে স্থেটোস্কোপ নেমে গেল, একটি ছুড়ি শরীরটির দিকে এগিয়ে গেল। আমি জানতাম না, কিন্তু ডাক্তারদের মতে এইবিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ণ ছিল।

কারন সময় ভুল হলে রক্ত আমাদের সবার উপর ছিটকে পড়ত এবং আমরা সবাই আক্রান্ত হতে পারতাম। "[২] পরীক্ষার জন্য যেই মানুষগুলোকে ব্যবহার করা হত তাদেরকে Maruta নামে এক কোড নেমে ডাকা হত। এদেরকে logs নামেও ডাকা হত। Maruta শব্দটি একটি জার্মান শব্দজাত। [৩] এজন্য উপরের উদ্ধৃতিতে আমরা log শব্দটির ব্যবহার দেখি।

এক যুদ্ধবন্দীকে অপরের দ্বারা ধর্ষিত করা হত, এমনকি জাপানী ডাক্তাররাও ধর্ষকের ভুমিকায় অভিনয় করতেন। ইচ্ছামুলক ভাবে বিভিন্ন যৌন রোগ যেমন সিফিলিস, গনরিয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সুস্থ মানুষের সঙ্গমে বাধ্যা করা হত। কত দ্রুত জীবানু ছড়াতে পারে এটা দেখার জন্য। এমনকি তাদের উপর অস্ত্রের পরীক্ষাও করা হয়েছে। গ্রেনেড, ফ্লেমথ্রোয়াার(আগুন নিক্ষেপ করার মেশিন), জীবানু বোমা এমনকি রাসায়নিক বোমাও পরীক্ষা করা হয়েছে মানুষের উপর।

জাপানিরা বন্দীদেরকে প্লেগ, কলেরা, বটুলিজম, পক্স ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত করত এবং এর ফলাফল দেখত। তারা জৈব বোমাও তৈরি করেছিল এবং তা দ্বারা কোন এলাকার শস্যক্ষেত, খাবার পানি ইত্যাদি কলুষিত করে ঐ এলাকায় রোগ ছড়িয়ে দিতে পারত। চীনের Quzhou রাজ্যে যখন জাপানী বোমা পড়ে তখন কেউ বুঝতে পারেনি কি ঘটতে চলেছে। এটি ব্লাস্ট না হয়ে চাল, গম আর ক্ষুদ্র জীবানু ছড়িয়ে দিতে থাকে। সপ্তাহান্তে বোঝা যায় যখন দেখা যায় Bbubonib Plague এর উপদ্রব শুরু হয়।

[৪] এই নির্মমতার শিকার কারা? এখানে প্রায় ৩০০০ থেকে ১২০০০ হাজার মানুষ নির্মতার শিকার হয়েছে যাদের প্রায় ৬০০ থেকে সাতশ প্রতিবছর Kempetai(জাপানী সেনাবিনী পুলিশ) সরবরাহ করত(উপাত্তটি উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া)। এখানে নারী, শিশু, বৃদ্ধ সবার উপর এক্সপেরিমেন্ট করা হত। ৭০ শতাংশ মানুষই ছিল চীনা। বাকীরা জাপান সম্রাজ্য বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন, যুদ্ধবন্দী (২য় বিশ্বযুদ্ধ ও ২য় শিনো জাপানী যুদ্ধ) হিসেবে এখানে আসে। এখানকার গবেষকদের পরিনতি? [৫] এখানে প্রায় তিন হাজারের মত ডাক্তার তৎকালীন সময়ের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এখানে মারনাস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত ছিল।

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অনেকেই নিজ পেশায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। কিছু ডাক্তার যারা সোভিয়েতের নীকট আত্মসমর্পনে বাধ্য হয় তাদেরকে Khabarovsk War Crime Trials এ বিচারের আওতায় আনা হয়। আর কিছু আমেরিকান ফোর্সের কাছে আত্ম সমর্পন করে। এদের পরিনতি সম্পর্কে আমরা কিছুটা আচ করতে পারি বোধহয়। তারা এভাবে অর্জিত জ্ঞান United States biological weapons development program এর জন্য সহায়ক দেখতে পেল।

Douglas MacArthur যৌথ বাহিনীর কমান্ডার ১৯৪৭ সালের ৬ মে ওয়াশিংটনে লেখেন- "additional data, possibly some statements from Ishii probably can be obtained by informing Japanese involved that information will be retained in intelligence channels and will not be employed as 'War Crimes' evidence." The deal was concluded in 1948. এই বাক্যটা দিয়ে উইকিপিডিয়ার প্যরাটা শেষ। কিন্তু আমি কোনভাবেই এটা মেনে নিতে পারছি না। ইতিহাস বড় অদ্ভুত। আমরা তারচাইতেও বড় অদ্ভুত। জাতীয়তাবাদ আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আমি জোকারের সাথে পুরোপুরি একমত।

এখন আর খাটের নিচে ভুত খোজার দরকার নেই। কারন ভুত আমাদের ভিতরই বর্তমান। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.