কথা কম, কাজ বেশি!!!! এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। এ নদী পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় তানার বদনাতলী পাহাড় থেকে সৃষ্ট হয়ে ফটিকছড়ির রাওজান, হাটহাজারীর কালুরঘাট স্থান অতিক্রম করে কর্ণফুলী নদীতে মিশে গেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫ কিলোমিটার। এর পানির উৎস মানিকছড়ি, ধুরং, বারমাসিয়া, মন্দাকিনী, লেলাং, বোয়ালিয়া, চানখালী, সর্ত্তা, কাগতিয়া, সোনাইখাল, পারাখালী, খাটাখালীসহ বেশকিছু ছোট ছোট ছড়া। নদীটির গভীরতা স্থান বিশেষ ২৫ থেকে ৫০ ফুট।
হালদা নদী থেকে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ প্রভৃতি কার্প জাতীয় মাছের সরাসরি ডিম সংগ্রহ করা হয়। গত শতকের পঞ্চাশ দশকে দেশের মোট মৎস চাহিদার ৭০ ভাগ পুরুন করতো হালদা নদীর পোনা। কিন্তু রাষ্ট্রের সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও সঠিক পদক্ষেপের অভাব, মা-মাছ শিকার, নদীর বাঁক কাটাসহ বিভিন্ন কারণে হালদা নদীর ঐতিহ্য আজ ধ্বংসপ্রায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হালদা নদীর ৪টি বাঁক কেটে ফেলা, অপরিকল্পিতভাবে সুইচগেট নির্মাণ, মা-মাছ নিধন, হালদা সংলগ্ন এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠাই এ নদীতে মাছের প্রজনন কমে যাচ্ছে। ১৯৪৬ সালের হিসাব অনুযায়ী হালদা নদী ৪ হাজার কেজি ডিম দেয়।
এখান থেকে ডিম আহরণ করা হয়েছে ১৯৯৭ সালে ৩শ কেজি, ২০০৫ সালে ১শ ৫০ কেজি, ২০০৭ সালে এর পরিমাণ বেড়ে ৩শ পঞ্চাশ কেজিতে উন্নতি হয়। মৎস বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রতিটি ডিম প্রদানের উপযোগী মাছের ওজন পাঁচ কেজি থেকে এক মণ পর্যন্ত। হালদা নদীতে মাছের রেণু সংগ্রহ করার প্রধান মৌসুম হল বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবশ্যা এবং পূর্ণিমার প্রবল বর্ষণ এবং মেঘের গর্জন মুহূর্তে। এ সময় মা-মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। তখন নাজিরহাট, সাত্তারঘাট, আজিমারঘাট, বৈদ্যেরহাট, রামদাশ মুন্সীরহাট প্রভৃতি পাশ্ববর্তী এলাকার নৌকা, জাল দিয়ে হালদা নদীর কুলে মাছের রেণু সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করে।
মাছ ডিম ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশারির নেট (বিশেষভাবে তৈরি এক ধরনের জাল) দিয়ে মাছের ডিম নৌকায় তুলে নেয়। ডিমগুলো নৌকার ভিতরে মধ্যাংশে কাঠের তক্তা ও মাটি দিয়ে তৈরি ছোট কৃত্রিম পুকুরে রেখে দেয়। এ পুকুরে মিহি সুতার তৈরি জালের আবর্তন থাকে। ডিম ধরার পর পাশ্ববর্তী এলাকায় মাটির তৈরি এক ধরনের বিশেষ অগভীর কুয়ায় ডিম ছেড়ে দেয়া হয়। ডিম ফুটানোর জন্য ২/৩ ঘন্টা অন্তর নাড়াচাড়া করতে হয়।
এভাবে ১৭/১৮ ঘন্টা পর ডিম থেকে রেণুগুলো জালের পানির নিচে চলে যায়। এ সময় রেণুর রঙ থাকে সাদা। এক পর্যায়ে মাছের ছোট রেণুগুলো ভিন্ন কুয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়। নতুবা কুয়ার পানি পরিবর্তন করা হয়। রেণুগুলোর স্বাভাবিক বেড়ে উঠার জন্য এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন।
এক সপ্তাহের মধ্যে রেণুগুলো পরিপক্ক হয়ে উঠে। তখন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মাছের বেপারীরা নগদমূল্যে মাছের পোনা কিনে নিয়ে যায়। তবে ডিম সংগ্রহকারীরা রেনু উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে হালদা নদীর পানি থেকে যে সকল মাছের রেণু সংগ্রহ করা হয় তার মধ্যে ৯০ শতাংশ কাতলা, রুই ও মৃগেল ৯ শতাংশ, কালিবাউশ এবং অন্যান্য মাছের পরিমাণ ১ শতাংশ। ১৫/ থেকে ২০ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ একবারে ৪০ লক্ষ ডিম দিতে পারে।
১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের রুই মাছ ২০ লক্ষ ডিম দিতে পারে। ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজরীর বাড়িঘোনা অংশকে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে ‘অভয়াশ্রম’ ঘোষণা দেয়া হয়। মাছের জন্য তখন সারা দেশে ৯টি ‘অভয়াশ্রম’ ছিল। হালদা নদীর মৎস প্রজনন ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ২০০৭ সালে ‘হালদা পুনরুদ্ধার’ নামে একটি প্রকল্প নিয়েছে। এর আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
হালদা নদীর মাছের প্রজনন ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত চট্টগ্রামের অসংখ্য নারী-পুরুষ জীবিকা নির্বাহ করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।