মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘ মোল্-লা’রা ক’ন হাত নেড়ে’, ‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে!
ধর্মীয় ব্যাখা:
জাকাত একটি ফরজ ইবাদত। মাহে রমজান এর এই পুণ্য মাসে যে কোন ইবাদতেই আল্লাহ্ পাক সত্তর গুন বেশী নেকী বান্দার আমলনামায় দিয়ে থাকেন। তাই অনেকেই এই মাসে তাদের জাকাত আদায় করে থাকে। জাকাত নিয়ে স্বল্প পরিসরে কয়েকটি কথা:
নামাজ-রোজাসহ অন্যান্য ফরজ ইবাদত আদায় করার পদ্ধতি যেমন কোরআন-হাদিসে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তেমনি জাকাত আদায়ের পদ্ধতি অর্থাৎ জাকাত ব্যয় করার খাতগুলোও পবিত্র কোরআনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাফসিরে ইবনে কাসিরের ভাষ্যমতে, সূরা মুয্যাম্মিলের ২০ নম্বর আয়াতের এই অংশ ‘সুতরাং নামাজ কায়েম করো ও জাকাত আদায় করো’।
পবিত্র কোরআনে জাকাত ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হল- ‘জাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন—তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য—এই হলো আল্লাহ্র নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। ’ (সূরা তাওবা, আয়াত ৬০)। উপরিউক্ত খাতগুলোর ব্যাখ্যায় মুফাসিসররা বলেন, ফকির হলো যার সহায়-সম্বল কিছুই নেই এবং মিসকিন হলো যে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়।
কারো নিকট সাড়ে সাত ভরি (৮৫ গ্রাম) স্বর্ণ বা ৫২ তোলা রুপা বা ন্যুনতম তার সম পরিমান অর্থ এক বছর কাল যাবত থাকলে তার উপর যাকাত দেয়া ফরজ।
যাকাত যোগ্য সম্পদের উপর 2.5% হারে যাকাত দিতে হয়।
আমাদের করনীয়:
আমি যখন দেশে ছিলাম তখন বিশেষ করে শীতের রাতে রাস্তায় বের হতাম। রাস্তার ফুটপাতে জবুথবু হয়ে শুয়ে থাকা লোকটিকে দেখে বুকে হাহাকার জেগে উঠত। শ'য়ে শ'য়ে পরিবার যাদের জীবন কেটে যায় ঐ ফুটপাতে, ডাষ্টবিনের পাশে, শীত নিবারনের তাদের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা দেখে বাসায় ফিরে এসে ঠিক ঘুমাতে পারতাম না। সেই থেকে সবসময় তাদের জন্য কিছু করার তীব্র ইচ্ছা বুকে লালন করি।
সেই কাজে আমার কাছের কিছু বন্ধুকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
আপনারা যারা দেশে আছেন, যারা জাকাত দিতে সক্ষম এবং জাকাত দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন, তারা শুধুমাত্র শাড়ি/লুঙ্গি/পাঞ্জাবীর মত কাপড়ের মাধ্যমে জাকাত আদায় সীমাবদ্ধ রাখবেন না। আপনাদের আশেপাশের এই লোকদের সেবায় এগিয়ে আসুন। অন্তত একটি পরিবারকে খুঁজে বের করে সেই পরিবারটিকে পুনর্বাসন করি। সেই পরিবারের জন্য উপার্জনের ক্ষেত্র তৈরী করে দেন, যেন পরবর্তী সময়ে তাকে আর জাকাতের জন্য কাহারো দুয়ারে ধর্ণা দিতে না হয়।
অনেকেই মসজিদ/মাদ্রসায় উদার হস্তে জাকাতের অর্থ দিয়ে থাকেন। সেখানে অনেক সময়ই "অতি বৃষ্টির বন্যা হয়", আর ঐদিকে ভূমিহীন হতদরিদ্রের সবসময় "অনাবৃষ্টির খড়া চলতে থাকে"। তাই জাকাতের অর্থের সুষম বন্টন হয় না। আপনি সরলমনে মসজিদ/মাদ্রসায় দান করছেন ঠিকই, কিন্তু আপনি জানেন না, সেই টাকায় মসজিদের উন্নয়ন হচ্ছে, নাকি মসজিদের ইমামের/মাদ্রসার হুজুরের বাড়ির/দালান কোঠার উন্নয়ন হচ্ছে! তারপর দিনশেষে তারা আপনার টাকায় ঘি, মাখন খেয়ে, আপনার মা, বোনকে অশিক্ষিত বানিয়ে রাখতে বলবে, গৃহবন্দি করে রাখতে বলবে। আপনাদের মধ্যে যাদের বাবা ছোটবেলায় মারা গেছে বা বাবা অসুস্হ অথবা সীমিত আয়ের সংসার, আপনার মা/বোন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শত প্রতিকুলতার মধ্যে টাকা-পয়সা রোজগার করে আপনাকে বড় করেছে।
আর এই ধর্মান্ধ মৌলবাদগুলো আপনার মা/বোন চাকরি করা নিয়ে মিথ্যে অপবাদ দিবে। ধর্মের উছিলায় মানুষকে বিভ্রান্ত করে সারাদেশে বোমাবাজি করবে, অন্য ধর্মের লোকদের উপাসনালয়ে হামলা করে আমাদের শান্তিপ্রিয় ধর্ম সম্পর্কে বিশ্বের কাছে ভুল ধারনা পাঠাবে। তাই আপনার জাকাতের অর্থ অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যায় হচ্ছে কিনা, কোন জঙ্গি সংগঠনকে দিচ্ছেন কিনা, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার দ্বায়িত্ব আপনার।
সবশেষে, জাকাতের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সমাজে ধনী-গরিবের পার্থক্য দূর করে একটি অর্থনৈতিক ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং ধনী-গরিবের মধ্যে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা। কারণ, বিত্তবান লোকেরা যদি স্বেচ্ছায় তাদের সম্পদের একটি নির্ধারিত অংশ গরিবের মধ্যে বণ্টন করে দেয়, তা হলে স্বাভাবিকভাবেই গরিবদের মধ্যে ধনীদের প্রতি একধরনের কৃতজ্ঞতাবোধ ও হূদ্যতা সৃষ্টি হওয়ার কথা।
অপর দিকে জাকাতের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারলে সমাজে বেকার ও পরনির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে একটি সুখী-সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।