হতাশা আর দু;খ ব্যাথা যাদের দেখে থমকে দাঁড়ায় আজকে তাদের খুব প্রয়োজন, বিশ্ব এসে দু হাত বাড়ায়।
যাকাত একটি ফরজ এবাদাত।
মাহে রমজান আমাদের মাঝ থেকে বিদায়ের পথে। অনেকেই এই মাসে তাদের যাকাত আদায় করে থাকে। জাকাত নিয়ে স্বল্প পরিসরে কয়েকটি কথা, হয়তো কারো কাজে লাগতে পারে
নির্ধারিত পরিমান সম্পদের মালিক হয়ে থাকলে যাকাত ফরজ হয়।
কারো নিকট সাড়ে সাত ভরি (৮৫ গ্রাম) স্বর্ণ বা ৫২ তোলা রুপা বা ন্যুনতম তার সম পরিমান অর্থ এক বছর কাল যাবত থাকলে তার উপর যাকাত দেয়া ফরজ। বর্তমান বাজার মুল্যে ৫২ তোলা রুপার সম পরিমান অর্থ আনুমানিক ৩৩০০০ টাকা। অর্থাত এই পরিমান টাকা থাকলে তার উপর যাকাত দেয়া ফরজ। যাকাত যোগ্য সম্পদের উপর 2.5% হারে যাকাত দিতে হয়।
সম্পদের যথাযথ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।
আনুমানিক থোক বরাদ্দের মত আন্দাজে একটি পরিমান নির্ধারন করা ঠিক নয়।
সাড়ে সাত ভরির কম সোনা থাকলে তার উপর কোন যাকাত নাই। সাড়ে সাত ভরির বেশি স্বর্ণ থাকলে পুরো পরিমানের উপর যাকাত দিতে হবে। অর্থাত দশ ভরি স্বর্ণ থাকলে দশ ভরির বিক্রয় মুল্যের উপর শতকরা আড়াই পার্সেন্ট হারে যাকাত দিতে হবে। তেমনি রুপার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম হবে।
আপনি যেদিন সম্পদের হিসাব করবেন সেদিন আপনার মালিকানাধীন পুরো সম্পদের হিসাব করতে হবে, যদিও কিছু সম্পদের বয়স হিসাবের দিন একবছর পূর্ণ নাও হয়। ধরুন আপনি যেদিন হিসাব করছেন সেদিন আপনার এক লাখ টাকা আছে, এর একটি অংশ হয়ত বিগত ৬ মাসের সঞ্চয়, যার এখনো এক বছর হয় নি। যদি আপনার নিসাব পরিমান অর্থ একবছর থেকে থাকে (৩৩০০০ টাকা) তাহলে পুরো এক লাখ টাকার উপর উপর যাকাত দিতে হবে।
আপনার ব্যাঙ্কে জমানো টাকা, সঞ্চয় পত্র-লাইফ ইন্সুরেন্স-শেয়ারে বিনিয়োগ বা অন্য কোন ব্যাবসায় বিনিয়গ করলে তার উপর যাকাত হিসাব করতে হবে। যাকাত হিসাবের দিন ঐ খাতে ক্যাশযোগ্য টাকা যাকাত যোগ্য সম্পদ হিসাবে গন্য হবে।
ধরুন আপনার শেয়ার কেনা আছে, যাকাতের হিসাবের দিন ওই শেয়ারের বিক্রয়মুল্য আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবে গণ্য করেতে হবে। তেমনি আপনার ডিপিএস একাউন্ট আছে, যাকাত হিসাবের দিন ঐ একাউন্ট ভাংলে যে টাকা পাওয়া যাবে তা আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যোগ হবে।
ব্যাবসার উপকরনের উপর কোন যাকাত নাই। তবে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা মজুদ কাঁচামালের মুল্যের যাকাত দিতে হবে। ধরুন আপনার একটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রী আছে।
এখানে বিল্ডিং করার জন্য, মেশিনারিজ কিনার জন্য যে টাকা খরচ করেছেন তার উপর কোন যাকাত নাই, যদিও এটি এখন আপনার সম্পদ। আপনার কাছে কাপড়/সুতা ইত্যাদি কাচামাল থাকে যা দিয়ে বিক্রয়যোগ্য প্রোডাক্ট তৈরি হবে, তাহলে ওই কাচামালের ক্রয়মুল্য আপনার যাকাত যোগ্য সম্পদ হিসাবে গন্য হবে।
বাড়ি-গাড়ি-জমি-আসবাব পত্র-পোষাক কিম্বা অন্য কোন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রাদির উপর যাকাত নেই।
আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স) দিলেও তা যাকাত থেকে বাদ যাবে না। উল্লেখ্য ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় ইনকামের উপর আর যাকাত দিতে হয় সঞ্ছিত সম্পদের উপর।
আপনি অন্যকে ঋণ দিয়ে থাকলে তা আপনার যাকাত যোগ্য সম্পদের হিসাবে গণ্য হবে। তবে যদি কোন ঋণ মন্দঋণে (অর্থাত টকা না পাবার সম্ভবণা থাকে) পরিণত হয় তা যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ দিতে পারেন।
আপনার ঋণ থাকলে তা যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে।
প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা যাকাত যোগ্য সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে না। যেহেতু এই টাকা আপনার ইচ্ছামত এনক্যাশ করার সুযোগ নেই।
যাকাত বিতরনঃ আলাহ বলেনঃ “ যাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষন করা প্রয়োজন তাদের, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তের জন্য, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য (যারা সফরে যেয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছে)—এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ-প্রজ্ঞাময়। সুরা তাওবাহ, আয়াত-৬০
এই আয়াতে নির্ধারিত আট টি খাতে যাকাতের টাকা ব্যয় করা যায়।
আপনার কাছের আত্মীয় স্বজন যারা আর্থিক ভাবে দুর্বল তারা আপনার যাকাতের বেশী হকদার।
১০০ জন কে খুচরা টাকা, শাড়ি-লুঙ্গি না দিয়ে একজন কে স্বাবলম্বী হবার মত ব্যাবস্থা করে দিতে পারলে (যেমন একটি দুধের গাভী কিনে দিলেন, দোকান করে দিলেন, অন্য কোন ব্যাবসার পুজি করে দিলেন) তা দারিদ্য বিমোচনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।
পিতা-মাতা-দাদা-নানা-স্ত্রী-সন্তান এদের কে জাকাত দেয়া যায় না। মসজিদ নির্মানে জাকাত দেয়া যায় না।
জাকাত রমজান মাসেই দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি আপনার সুবিধামত বছর নির্ধারন করে নিয়ে প্রতি বছর সে ভাবে হিসেব করে যাকাত আদায় করতে পারেন।
আমি যতটকু বুঝি তা লিখলাম, আল্লাহ ভাল জানেন।
আসুন আমরা যাকাত আদায় করি। যাকাত সম্পদ কে পবিত্র করে, সম্পদ বৃদ্ধি করে। পরিকল্পিতভাবে ব্যাবহার করতে পারলে যাকাত দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।
বিস্তারিত জানতে এই ওয়েব সাইট দেখতে পারেন: http://www.zakatguide.org
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।