জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী। পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা। সিরাজগঞ্জ-২ (সদর) আসন থেকে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী রোমানা মাহমুদের কাছে পরাজিত হন। নির্বাচনে পরাজিত হয়েও গত চার বছরে বিভিন্ন কারণে আলোচনায়ে উঠে এসেছেন। ইতোপূর্বে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে আলোচিত হলেও এবার আলোচনায় এসেছেন নিজ বাসায় গোলাগুলির কারণে।
গত বুধবার গভীর রাতে হেনরীর বাসায় জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র সেলিম আহমদ গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ কর্মীরা রাতেই হেনরীর সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কের বাসভবন অবরোধ করে রাখে। তবে তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। হেনরীর লাইসেন্সকৃত বন্দুকটি পরীক্ষার জন্য পুলিশের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
বুধবার রাতের ওই ঘটনা সম্পর্কে জানতে শুক্রবার বিকালে হেনরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কথা বলতে রাজি হননি। জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ছিলেন জেলা শহরের একটি মধ্যম মানের হাইস্কুলের শিক্ষক। বছর চারেক আগেও তার জীবনযাপন ছিল খুবই সাদামাটা। চলাচল করতেন রিকশায়। মধ্যবিত্ত আর দশ জনের মতোই সাদামাটা জীবনযাপন ছিল তার।
মহাজোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরই রাতারাতি পাল্টে যেতে থাকে হেনরীর জীবন। সাধারণ স্কুল শিক্ষক থেকে হয়ে যান শত কোটি টাকার মালিক। শিক্ষক থেকে হন রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। সিরাজগঞ্জ শহরের সবুজ কানন হাইস্কুলের শিক্ষক হেনরী ২০০৯ সালে সোনালী ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক নিযুক্ত হন। মালিক হন বিপুল পরিমাণ অর্থ-বিত্তের।
গাড়ি-বাড়ি আর সামাজিক অবস্থানেরও রাতারাতি পরিবর্তন হয়। জেলা আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদারের পুত্রবধূ হিসেবে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান হেনরী। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী রুমানা মাহমুদের কাছে পরাজিত হন। কথিত আছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের যথাযথ সমর্থন না পাওয়াতেই তাকে পরাজিত হতে হয়। জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হতে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন হেনরী।
কিন্তু তার কর্মকাণ্ডের কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন কিনা এ ব্যাপারে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। গত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দেয়া হলফনামায় হেনরী তার মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছিলেন। হলফনামা অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর কাছে নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা ছিল। স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছিলেন ৪ বিঘার কিছু কম। যার মূল্য ৬ লাখ টাকারও কম।
বর্তমানে বাড়ি-গাড়ি আর বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হেনরী। চার বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে হেনরীর অবস্থান। অভিযোগ রয়েছে, সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ঋণপ্রদান, চাকরি বাণিজ্য, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও বদলি, ঋণ মওকুফ, শাখা খোলাসহ বিভিন্ন তদবির-বাণিজ্য করেন হেনরী। গত সাড়ে চার বছরে হেনরী প্রায় শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এসব কাজের লিয়াজোঁ করার জন্য একজন প্রতিনিধিও তার নিয়োগ করা ছিলো।
এ বিষয়ে হেনরীকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে বরাবরই তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জান্নাত আরা হেনরী রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় ‘রজনীগন্ধা’ নামে এক বাড়িতে ফ্ল্যাট কিনেছেন। ঢাকার উত্তরায় ৫ কাঠার প্লট কিনেছেন। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে প্রায় কোটি টাকা মূল্যে একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-১৭৫৫) জিপ ও একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার (নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-২৭-৩৬০০) কিনেছেন।
দুইটি গাড়ি তিনি নিজে ব্যবহার করলেও একটি নিজ মালিকানায় রয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার গজারিয়ায় ৭ বিঘা জমিতে (প্রতি শতক ২০ হাজার টাকা মূল্যে) শ্বশুর-শাশুড়ির নামে সখিনা-মোতাহার ফ্লাওয়ার মিলের কাজ শুরু করেছেন বেশ আগেই। সদানন্দপুর এলাকায় তার পৈত্রিক বাড়িতে বাবা আব্দুল হামিদের মালিকানায় হেনরীর সহযোগিতায় একটি পাঁচতলা বাণিজ্যক ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সিরাজগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে থাকার জন্য সবকিছু অত্যাধুনিকভাবে সুসজ্জিত করেছেন। অপর একটি সূত্র জানায়, ঢাকা-সিরাজগঞ্জ রুটে ২টি অত্যাধুনিক বাস রয়েছে হেনরীর।
ডেসটিনিতে প্রায় এক কোটি টাকার শেয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে তার। সব কিছুকে ছাপিয়ে বুধবার রাতে নিজ বাসায় গোলাগুলির ঘটনায় আবারো আলোচনায় উঠে এসেছেন হেনরী।
তথ্যসূত্র
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।